গত ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস পরিচালিত ফ্রি সেমিনার অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড এর ৩৩তম পর্ব। ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উক্ত সেমিনারের বিষয় ছিল Know Thyself. অর্থাৎ নিজেকে জানো।
শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা এবং ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি)। ব্যক্তিসত্তার যথার্থ বিকাশ, মানবিক মূল্যবোধ ও আত্মশক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের প্রক্রিয়া হিসেবে সিএসডিসি নিয়মিত পরিচালনা করছে ফ্রি প্রোএকটিভ সেমিনার।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলালের সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে মূল বক্তা ছিলেন প্রোএকটিভ এটিচিউডের ক্যারিশমেটিক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান।
ড. আলমাসুর রহমান
নান্দনিক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান বলেন, পবিত্র ধর্মগন্থে উল্লেখ আছে নিজেকে জানতে পারলে স্রষ্টাকে জানতে পারবে। আগে ঘরে মোমবাতি জ্বালাও, তারপরে মসজিদে। জগৎ বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন Know thyself নিজেকে জানো। নিজেকে না জানলে আত্মোন্নয়ন ঘটবে না, প্রকৃত মানুষ হতে পারবে না। ড. আলমাস বলেন আমরা অনেক কিছুই জানি, যেমন সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পথ, অহংকার পতনের মূল; কিন্তু তারপরও আমরা অসৎ কাজ করি, অহংকার দেখাই। এর কারণ আমরা অনেক কিছু জানলেও নিজেকে জানি না।
ড. আলমাস বলেন আমরা বলতে শুনি, লোকটি জ্ঞানী; লোকটার অনেক জ্ঞান আছে। কীভাবে বোঝা যায় লোকটি জ্ঞানী! What is Knowledge? Knowledge is the collector of information. জ্ঞানের কাজ হলো তথ্য সংগ্রহ করা। যে যত জানে, সে তত জ্ঞানী। তবে এই জানা হতে হবে গভীরভাবে। শুধু তাকালে হবে না, নিবিষ্টভাবে দেখতে হবে; শুধু শুনলে হবে না, মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। একই শিক্ষকের লেকচার শুনে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন ফল পায় কেন? কারণ লেকচার শোনার সময় মনোযোগের তারতম্য ছিল; ফলে লেকচারের বিষয়বস্তু হৃদয়ঙ্গমের ক্ষেত্রেও তারতম্য হয়েছে। তাই ফলাফল ভিন্ন হয়েছে। এভাবে যেকোনো বিষয়ে যে মন-প্রাণ দিয়ে আত্মস্থ করে, তার মধ্যে সৃষ্টি হয় শক্তির স্ফুরণ। তার চেষ্টা ও সাধনার মধ্যে সাফল্যের বীজ লুক্কায়িত থাকে।
স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ বিজয়ী হবে, সফল হবে -এটাই স্বাভাবিক। মানুষ Victim হতে আসেনি, সব বাধা-বিপত্তি জয় করে মানুষ Victor হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমরা নিজেদেরকে চিনি না বা জানি না বলে নিজ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি না। তাই বিজয়ী ও সফল হতে হলে নিজকে জানতে হবে। নিজ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে।
জীবনকে সাফল্যের সড়কে তুলে দিতে হলে নিজেকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাইলে তিনটি জিনিস থাকতে হবে। সংক্ষেপে যাকে ADA বলে। A for Ambition যা মানুষকে স্বপ্ন দেখাবে, আত্মশক্তি জাগ্রত করবে, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করবে। D for Decesion যা চয়েস বা পরিকল্পনা করার উৎসাহ যোগাবে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যোগাবে শক্তি। সর্বশেষ A for Action সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। এ ৩টি জিনিস সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে মানুষ ব্যর্থ হতে পারে না। এ ৩টি জিনিসের সমন্বয়ে মানুষের জীবন সাফল্যের সুষুমায় ভরে ওঠে। বিশ্বসেরাদের তালিকায় যারা নাম লিখিয়েছেন তাদের মধ্যে অউঅ পুরোপুরি কার্যকর ছিল। তাদের স্বপ্ন ছিল, তারা সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে।
স্বপ্ন থাকলে এবং সাধনায় নিমগ্ন থাকলে মানুষের জীবন সোনালি আভায় ভরে ওঠে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বারাক ওবামা যখন স্কুলে, তখন শ্রেণিশিক্ষক ছাত্রদের প্রশ্ন করেছিলেন তোমরা জীবনে কে কি হতে চাও? অনেকে অনেক কিছু হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। বারাক ওবামা ইচ্ছা প্রকাশ করেছে আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চাই। সত্যিই তিনি দু’বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তিনি জনপ্রিয় মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যতম।
ভারতের মুকেশ আম্বানির পিতা তেলের পাম্পে ছোটখাটো কাজ করতেন। তাঁর অসনরঃরড়হ ছিল তেল পাম্পের মালিক হবেন না, তিনি তেল কোম্পানির মালিক হবেন। সত্যিই তিনি তা-ই হয়েছিলেন।
ড. আলমাস বলেন নানাভাবে পরীক্ষিত যে, এক মাইল দৌঁড়াতে মানুষের সময় লাগে সর্বনিম্ন ৪ মিনিট। এটি ৪ Minute Barrier বলে বিশ্বব্যাপী গৃহীত সত্য ছিল। ১৯৫৩ সালে সেই প্রতিষ্ঠিত ধারণাই ভেঙে রজার ব্যানিস্টার ৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে তা অতিক্রম করে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেন। রজার দীর্ঘদিন সাধনা করেই এটা সম্ভব করে তুলেছিলেন।
ড. আলমাস বলেন নেগেটিভ চিন্তা, না পারার ভয় মন থেকে মুছে ফেলতে না পারলে প্রবল বাধা অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সর্বপ্রথম এভারেস্ট বিজয়ী এডমন্ড হিলারিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? তিনি জবাবে বলেন ঐ খাড়া পর্বত আমাকে ভাবায়নি, পথের কষ্টও আমাকে দুর্বল করতে পারেনি, তুষার ঝড় আমাকে বিভ্রান্ত করেনি। সবচেয়ে কষ্টসাধ্য ছিল আমার মনকে বোঝানো। প্রতি মুহূর্তে আমার মনকে বোঝাতে হয়েছে যে আমি পারি, আমি পারব।
ড. এম হেলাল
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল বলেন, ছাত্র-যুব উন্নয়নে ক্যাম্পাস মাল্টিডায়মেনশনাল ২৪টি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। যার অন্যতম হলো প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড সেমিনার। হতাশা, রিএকটিভ ও নেগেটিভ এটিচিউড দূর করে আত্মশক্তি ও সৃজনশীলতা বিকাশের মাধ্যমে বিশ্বসেরা জাতি গঠনে ক্যাম্পাস ছাত্র-তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রোএকটিভ ও পজিটিভ এটিচিউডের দুর্বার চেতনা।
ড. হেলাল বলেন আজকের আলোচ্য বিষয় Know Thyself. আশা করি, উপস্থিত ছাত্র-তরুণরা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে নিজের ভেতরের শক্তিকে জাগ্রত করবে। তারা জানবে I am Great, I am Genious. আমি পারি, আমি পারব। এ চেতনা ধারণ করে তারা পৌঁছে যাবে বিশ্বশীর্ষ আসনে।
ক্যাম্পাস’র পরবর্তী প্রোএকটিভ সেমিনার হবে ৫ জুলাই; ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে বিকাল সাড়ে ৫টায়। বিষয়ঃ Key to Success.