॥ ওয়াসির হেলাল ॥
৪র্থ শ্রেণি, সহজপাঠ স্কুল, ঢাকা
২০১৮ সালে আমি বাবার সাথে প্রথমবার দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে গিয়েছিলাম। তখন প্যালেস রিসোর্ট আমার এত বেশি ভালো লেগেছিল আর এত বেশি মজা পেয়েছিলাম যে, বাবার কাছে আবার প্যালেস রিসোর্টে যাবার বায়না ধরি। বাবা বলেছিলেন আচ্ছা ঠিক আছে, তোমাকে আবারও প্যালেস রিসোর্টে নিয়ে যাবো।
বাবা খুবই ব্যস্ত মানুষ। তারপরও আমার কথা কখনো ফেলেন না। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও বাবা ঠিকই আমার জন্য সময় বের করেন এবং পরের বছরই (২০১৯ সালে) আমাকে আবারও প্যালেস রিসোর্টে নিয়ে যান।
প্যালেস রিসোর্ট ঢাকা থেকে অনেক দূরে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পুটিজুরির পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। সেখানে আছে পাহাড় ও টিলার মাঝে আশ্চর্য সুন্দর মনোরম পরিবেশে চা বাগান, রাবার বাগান, কমলালেবুর বাগান, ঝর্ণা আরও কত্ত কি!
বাবা আর আমি ঢাকা থেকে গ্রীনলাইন লাক্সারিয়াস এসি দোতলা বাসের একদম সামনের সিটে বসে প্যালেস রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হই। বাসের সিটগুলো ছিল প্লেনের সিটের মতো গর্জিয়াস। বাস যখন ছুটে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল যেন আমি প্লেনে করে ছুটে যাচ্ছি। আমি বাবার পাশে সেই লাক্সারিয়াস সিটে আরাম করে বসে চারদিকের দারুণ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম।
এবারের জার্নিটা গতবারের চেয়ে ভালো ছিল। গতবার আমরা আমাদের প্রাইভেট কার এ গিয়েছি; তবে বাবার সেল্ফ ড্রাইভিংয়ে নয়, ড্রাইভার ছিল। সিকিউরিটির নিশ্চয়তায় এবং পরিবেশ দূষণ রোধে রিসোর্টের ভিতরে গেস্ট-কার চলাচল নিষেধ। রিসোর্টের ভিতরে তাদের নিজস্ব পরিবহনে (ইলেকট্রিক কার) ঘুরতে হয়। তাই এবারে আমরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে যাইনি। সৌভাগ্যক্রমে বাসের দোতলায় একদম সামনের বড় বড় দু’সিটে আরামে বসে-শুয়ে চারপাশের সব দৃশ্য মনের আনন্দে উপভোগ করতে থাকি।
চা বাগান আর পাহাড়-টিলার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে একসময় আমাদের বাস হবিগঞ্জের বাহুবলে এসে পড়লো। আমরা বাস থেকে নেমে সিএনজি নিয়ে প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে যাবার জন্য রওনা হলাম। চারিদিকে চমৎকার পাহাড়, টিলা আর চা বাগানের মাঝখান দিয়ে আঁকাবাঁকা কি সুন্দর রাস্তা! সিএনজির দু’পাশ দিয়ে পাহাড়-টিলা ও চা বাগানের মায়াজড়ানো পথ ধরে আমরা চলে এলাম আমার ভালোবাসার প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের বিশাল এলাকায়।
প্যালেস রিসোর্ট মনে হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাকৃতিক ও আধুনিকতা মিলিয়ে অত্যাধুনিক একটি রিসোর্ট। এখানে আছে ওয়াটার পার্ক, সুইমিং পুল, গেইম এরিয়া, আর্কেড এরিয়া ইত্যাদি। সবুজে ঘেরা পাহাড়, গিরিখাদ, সরোবর, ঝর্ণা আর হাজারো গাছের সমারোহে প্যালেস রিসোর্টের দেড়শ’ একর জায়গাকে দারুণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চা বাগান, আনারস বাগান, রাবার বাগান আর লেবু বাগান ঘিরে রেখেছে পুরো প্যালেস রিসোর্টটাকে। চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ, সবুজের সমারোহ! এতো সবুজ দেখে মন ভালো হয়ে যায়।
প্যালেস রিসোর্টে পৌঁছে বাবা চেক-ইন সেরে আমাদের জন্য ঠিক করে রাখা রুমে আমাকে নিয়ে গেলেন। রুমটা ছিল বিশাল বড় আর লাক্সারিয়াস! দারুণ সুন্দর করে সাজানো-গোছানো। বাথরুমটা ছিল অত্যাধুনিক। মাস্টারবেডটা ছিল অনেক বড়! আর ছিল রিডিং টেবিল ও দারুণ আরামদায়ক কুশন চেয়ার। সেই রিডিং টেবিলে প্যালেসের স্টাফরা একটা দারুণ মজার কেক এবং কিছু ফ্রুটস রেখে দিয়েছিলো। কেকের প্রায় পুরোটিই আমি খেয়ে ফেলেছি। আমার পছন্দের কেক বলে বাবা খুব সামান্য টেস্ট করেন। বাকি পুরোটা আমাকে খাইয়ে দেন।
প্যালেস রিসোর্টের এই ট্যুরে আমি খুব মজা করেছি। সবচেয়ে বেশি মজা করেছি ওয়াটার পার্কে। সেখানে অনেকগুলো ওয়াটার কামান ছিল, সেগুলো দিয়ে আমি খেলেছি। মাঝে মাঝে বাবাও পানিতে নেমে আমার সাথে খেলেছেন। বাবার সাথে সেই খেলাগুলো খুব এনজয় করেছি। এছাড়া ওখানে অনেক ওয়াটার সøাইডও ছিল। সেগুলোতে আমি অনেক রাইড করেছি। রাইডগুলো আমার খুব খুব ভালো লেগেছে। ওয়াটার পার্কের পাশে সুন্দর সুইমিংপুলও ছিল। একটা ছোটদের সুইমিংপুল, একটা জাকুজি আর একটা বড়দের সুইমিংপুল ছিল। বড়দের সুইমিংপুলটা ছিল অনেক বড়! জাকুজিটা ছিল মিডিয়াম আর বাচ্চাদের সুইমিংপুলটা ছিল ছোট্ট।
আমি বাচ্চাদের সুইমিংপুলে সাঁতারের পর জাকুজিতে রিল্যাক্স করি। তারপর বড়দের সুইমিংপুলেও সাঁতার করেছি; তবে বেশি করি নাই। ওখানে আরেক রকম মজা লেগেছিলো; কারণ আমি ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাচ্ছিতো, তাই।
এরপর আমি আর্কেডিয়া এরিয়াতে গিয়েছিলাম। আর্কেডিয়া এরিয়ায় অনেক গেইম ছিল। ওখানে একটা বিশাল বড় ঠজ ছিল। তা দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ এর ভিতরের এমন অনেক এনিম্যাল ছিল, যারা আমাকে খপ্ করে ধরতে আসছিল। বাবা আমার পাশে বসে থেকে বারবার বলতেছিলেন ভয়ের কিছু নেই, ওগুলোতো রিয়েল এনিম্যাল না; এগুলো যে তোমার কাছে রিয়েল বলে মনে হবে কিংবা এতেই যে তুমি ভয় পেয়ে যাবে, সেটাইতো ঠজ খেলা। তখন আমি সাহস পাই। আর্কেডিয়ায় শুটিং গেম ছিল। পিস্তলের আসল গুলির মতো গুলি ছিল সেখানে। তবে সেগুলো আসল গুলি না; শুধু দেখতে আসল গুলির মতো। সেখানে গুলির গেম দিয়ে আমি হান্ট খেলেছি।
আর্কেডিয়া এরিয়ার পাশেই ছিল গেইমিং এরিয়া। গেইমিং এরিয়াটাও অনেক সুন্দর! সেখানে একটি ছোট্ট গাড়ির ট্র্যাক ছিল। কিন্তু সেখানে আগেরবারেই গাড়ি চালিয়েছিলাম বলে এবারে আর গাড়ি চালাইনি। গেইমিং জোনে এক্সবক্স, পিএস-৪ এরকম অনেক গেইম ছিল। কিন্তু আমি এক্সবক্স, পিএস-৪ এসব গেইম খেলতে পারি না; তাই খেলি নাই। কেননা, পিএস-৪ টিভির সাথে খেলতে হয়;আর এক্সবক্স কম্পিউটার ও ল্যাপটপ দিয়ে খেলতে হয়।
তারপর বাবা আর আমি একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছি। ওখানে বুফে ছিল। তাতে খুব মজা করে খেয়ে পুরো প্যালেস রিসোর্টের চারিদিকে আবার ভালো করে ঘুরে দেখে আমরা বাসে করে ঢাকায় ফিরে আসি। কিন্তু এখনও প্রায়দিনই আমার প্যালেস রিসোর্টের কথা খুব মনে পড়ে। মনে হয়, আবার যদি বাবার সাথে মনোমুগ্ধকর সেই প্যালেস রিসোর্টে যেতে পারতাম!
একটা কথা বলতে এখন খুব লজ্জা হচ্ছে, তারপরও বলে ফেলি। দি প্যালেস রিসোর্টে আমি আমার বাবার সাথে দু’বার গিয়েছি। দু’বারই যাওয়ার সময়ে আনন্দে ও এক্সাইটিংয়ে গিয়েছি; কিন্তু ফিরে আসার সময়ে আমি এতই মন খারাপে ছিলাম যে, প্যালেস থেকে বের হবার সময় থেকে ঢাকায় পৌঁছা পর্যন্ত পুরো পথেই আমি বাবাকে অন্তত ১০০০ বার বলেছি বাবা, আমি ঢাকায় ফিরে যাব না। আমি এখানে আরো কয়েকদিন তোমার সাথে থাকবো। পথে পথে বলতে বলতে এমনকি কাঁদতে কাঁদতেও বলেছি বাবা, আমাকে আবার নিয়ে চলো, প্লিজ প্লিজ প্লিজ। আমার কান্নার জন্যে বাস ভর্তি কত মানুষকে যে বাবা বার বার ঝড়ৎৎু বলেছেন। আমার জন্যে বাবার কত যে ধৈর্য, তা আমি এখন এসব লিখতে গিয়ে ভালো করে বুঝতে পারছি। আমার বাবা একটা আশ্চর্য মানুষ; উধফ রং সু ডড়হফবৎ!
মন যেতে চায় বাবার সাথে বারবার
প্যালেস রিসোর্টে ঘুরে বেড়াবার!