॥ সাবা ইকবাল ॥
ফেসবুক মিডিয়াটা আমরা কম-বেশি সবাই ব্যবহার করি। কিছু কিছু ব্যবহারকারী বলা যায় বেশি আসক্ত, আবার কেও কেও খুব কম ব্যবহার করে। যেমন কেউ আছে সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হওয়াতো দূরের কথা, দিনের সকালটা ফেসবুকের পিছে ব্যয় করে। এতে কি তারা সময় অপচয় করে, নাকি কাজে লাগায়? এটা ভাবার বিষয়! অনেকে আছে নিউজ ফলো করে বেশি; তাই সকালে উঠেই দেশ-বিদেশের খবরগুলো জেনে নেন আবার অনেকে বন্ধু-বান্ধব্দের কার কি খবর, কে কি আপলোড করলো দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকে।
একদিক দিয়ে যদি দেখা যায়Ñ ফেসবুক কিন্তু আমাদের বন্ধুর মতো। বন্ধুরা যেমন আমাদের সাথে থাকে, পাশে থাকে; ঠিক তেমনি ফেসবুকও আমাদের সাহায্য করে, আমাদের বিনোদন দেয়। যদি অন্যভাবে দেখা যায়Ñ উন্নিশ দশকে কিন্তু এক দেশ থেকে আরেক দেশে যোগাযোগ করা কঠিন ছিল। মানুষ ভাবতেও পারেনি যে, এমন এক যুগ আসবে যখন দেশে-বিদেশে কল দেয়া থেকে শুরু করে ভিডিও কল পর্যন্ত করা যাবে। আরো কত রকম আবিষ্কার যে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য কে জানে?
ফিরে যাই ফেসবুক প্রসঙ্গে। এই এক ফেসবুক যেমন ভিন্ন দেশে থাকা বাবা-মা, ভাই- বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে খুব কাছে এনে দিয়েছে। দিয়েছে সেই স্কুল-পড়া বন্ধুকে খুঁজে বের করে দিতে, আবার দিয়েছে লাখো মানুষকে ব্যবসা করার সুযোগ। দিয়েছে সুযোগ ঘরে বসে নিজের মতো করে স্বাবলম্বী হওয়ার। যারা নতুন অনলাইনে ব্যবসা করে তারা কত সহজেই তাদের পণ্য পৌঁছিয়ে দিতে পারছে গ্রাহকদের কাছে। তারা খুব সহজাত পদ্ধতিতে তাদের ব্যবসা ও পণ্য প্রচার করতে পারে ফেসবুকের মাধ্যমে।
ফেসবুকের যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি আছে অপকারিতা। এমন এক উপকারিতা হলোÑ সংগ্রহ বা রক্ষা। ফেসবুকের অন্যতম কাজ হলো স্মৃতি সংগ্রহণ করে রাখা। যেমনÑ যারা ছবি তুলতে পছন্দ করেন, তারা তাদের হাজার হাজার ছবি ফেসবুকে আপলোড করে রাখে ও রাখতে পারে। ঠিক যেমন আমরা ফটো অ্যালবামে ফটো ভরে রাখি। সেই ছবি শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা না, করা যাবে আবার শেয়ারও। যেমন এক বন্ধু ছবি শেয়ার করে ট্যাগ করলে অন্য বন্ধু সেটা দেখতেও পাবে ও নিজ প্রোফাইলে রাখতেও পারবে। আর শুধু ছবি কেন? পারবে ভিডিওসহ অনেক কিছু সংগ্রহ করে রাখতে।
ফেসবুক যেমন দিয়েছে অনেক সুবিধা, আবার করেছে অনেক কিছুতে জটিলতা। যেমনÑ ফেসবুকের অন্যতম প্রধান উদ্বেগ ও অসুবিধা হলোÑ ফেসবুকের গোপনীয়তা। প্রথম প্রথম ফেসবুকের গোপনীয়তা নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিল ব্যবহারকারীরা। কিন্তু ব্যবহারকারীদের দিকে বিবেচনা করে তারা তাদের অনেক সেটিংয়ে পরিবর্তন করেছে; যেমনÑ আগে প্রোফাইল লক করা যেত না, কিন্তু বেশ কিছু বছর ধরে কেউ চাইলে নিজের পুরো প্রোফাইলই লক করে রাখতে পারবে। আবার চাইলে ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা ব্যক্তিদের মাঝেও নিজের ছবি, ভিডিও, স্ট্যাটাস, পোস্ট হাইড করে রাখতে পারবে।
আরেক উদাহরণে দেখা যায়, কিছু মানুষ অন্যের নাম দিয়ে ফেসবুক প্রোফাইল খুলে। সেটা সাধারণ কারো হোক বা হোক কোনো তারকার প্রোফাইল। এই রকম ভুয়া প্রোফাইলের (ভধশব ঢ়ৎড়ভরষব) কোনো সীমা নেই। সেটা সামলাতে যেমন কাজ করছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ, তেমনি কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন কার্যকর করেছে। সেখানে উল্লেখযোগ্য অপরাধগুলোÑ মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনকের বিরোধে প্রচার, আপত্তিকর পোস্ট, সাইবার সন্ত্রসবাদ ও মানহানিসহ অনেক অপরাধ।
যেখানে সুবিধা আছে, সেখানে কিছু অসুবিধাও আছে। ফেসবুক এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে জ্ঞানও অর্জন করা যায় আবার উশৃঙ্খলতা করে জেলেও যাওয়া যায়। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কীভাবে ফেসবুক ব্যবহার করবেন? অযথা সময় নষ্ট করবেন, নাকি নিজের মূল্যবান সময়টা কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করবেন? নাকি ভালো কোনো কাজে ব্যয় করবেন? সঠিক উপায়ন্তরটা আপনার।