প্রতিদিনই অফিসে কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ, প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ, ফাঁদ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি। দক্ষ কর্মকর্তা হতে আপনাকে এসব চ্যালেঞ্জে উতরে যেতে হবে যোগ্যতার সঙ্গে। তার জন্য প্রয়োজন পরে বিশেষ কিছু গুণাবলির। সে জন্য মেনে চলতে পারেন এই ১০টি পরামর্শ।
এক. দূরদর্শিতা
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবচেয়ে জরুরি দূরদর্শিতা। সে জন্য আপনাকে সব সময় চারপাশের ঘটনাগুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেগুলো বিশেষণ করে বোঝার চেষ্টা করুন, কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন ঘটনা ঘটতে পারে। তাহলে আপনি আগে থেকেই আঁচ করতে পারবেন সামনে কী ঘটতে চলেছে। তাহলে দ্রুত এবং সঠিকভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারেন।
দুই. নথিপত্র ও তথ্যের সুশৃঙ্খল সংরক্ষণ
অনেকেই অফিসে নিজের ডেস্ক গুছিয়ে রাখেন না। ফলে সময়মতো দরকারি ফাইল বা নথি খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। এমনটি হলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা আরো কঠিন হয়ে পরে। তাই আপনার কাজসংক্রান্ত সব নথি সুশৃঙ্খলভাবে গুছিয়ে রাখুন। যথা সময়ে যথা ফাইলটি যেন হাত বাড়ালেই পেয়ে যান।
তিন. চেইন অব কমান্ড
নিজের বসকে ডিঙিয়ে অন্য কারো সঙ্গে কাজ করা বা তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করা অফিসের আচরণের অন্তরায়। তাই অফিসের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে নির্দেশনার সঠিক ক্রম অনুসরণ করতে বলা হয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য এই গুণটিও আপনার মধ্যে থাকা অত্যন্ত জরুরি। সম্পর্ক রাখবেন সবার সঙ্গে কিন্তু একান্ত প্রয়োজন না হলে নিজের সরাসরি বসকে টপকে কোনো কাজ করবেন না।
চার. বুদ্ধিমত্তা
এ বিষয়টি কিছুটা প্রকৃতিপ্রদত্ত আর কিছুটা চর্চার সংমিশ্রণ। চট করে আপনার কর্তব্য বুঝে ফেলা আর সে অনুযায়ী কাজ করে ফেলা সহজ বিষয় নয়। এটা অনেকটাই প্রকৃতিপ্রদত্ত দক্ষতার ব্যাপার। পাশাপাশি প্রয়োজন চর্চা। মনে রাখবেন, দুঃসময়ে আপনার বুদ্ধিমত্তাই আপনার সবচেয়ে বড় ভরসা।
পাঁচ. সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক
সহকর্মীদের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক থাকে না তাদের পদে পদে ঝামেলায় পড়তে হয়। শুধু তা-ই নয়, তারা ঝামেলায় পড়লে কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্যকারীও পাওয়া যায় না। অফিসে এমন অনেক ঝামেলা আছে, যেগুলো স্রেফ সাক্ষীর জোরেই উতরে যাওয়া যায়। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। এটা আপনাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একধাপ এগিয়ে রাখবে।
ছয়. শুভাকাঙ্ক্ষী ও শত্রু চেনা
অফিসে কে আপনার আসল শুভাকাঙ্ক্ষী, কে শত্রু, আর কে শুভাকাঙ্ক্ষীবেশী শত্রু তা চেনা অত্যন্ত জরুরি। না হলে আপনি সহজেই ফাঁদে পড়ে যাবেন। কাজেই এদের চেনার চেষ্টা করুন। নিজেকে নিরাপদ রাখুন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হচ্ছে প্রমাণিত শুভাকাঙক্ষী ছাড়া সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখা। নিশ্চিত শুভাকাঙ্ক্ষী না হলে বিপদে সাহায্য চাইবেন না। সে শুভাকাঙ্ক্ষীবেশী শত্রু আপনাকে উদ্ধারের পরিবর্তে আরো বড় বিপদে ফেলে দিতে পারে।
সাত. প্ল্যান বি
এমনও হতে পারে, আপনি যে উপায়ে সমস্যার সমাধান হবে বলে ভেবেছিলেন, তাতে কাজ হলো না। তখন কী করবেন? সে কারণে সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিকল্প উপায় বা প্ল্যান বি ঠিক করে রাখবেন। এটা আপনাকে শুধু সাহসই দেবে না, বিপদে সমাধানের সন্ধানও দেবে। যারা আরো সতর্ক থাকতে চান, তাঁরা প্ল্যান সিও মাথায় রাখতে পারেন।
আট. প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে চলা
যতই দিন যাচ্ছে সমস্যার ধরন পাল্টাচ্ছে। ধরন পাল্টাচ্ছে সমাধানেরও। তাই এই প্রতিবন্ধকতা টপকাতে আপনাকেও প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে চলতে হবে। আপনি যত দক্ষ হয়ে উঠবেন ততই দ্রুততার সঙ্গে সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। কাজেই যতভাবে পারেন নিজেকে আরো দক্ষ ও যোগ্য করে তুলুন।
নয়. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
সুস্থ থাকা কতটা জরুরি তা শুধু একজন অসুস্থ ব্যক্তিই বুঝতে পারেন। সুস্থ অবস্থায় তা সেভাবে অনুভব করা যায় না। বিশেষ করে অফিসে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সময় এটা আরো বেশি করে প্রয়োজন হয়। এবং এই সুস্থতা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও বটে। কারণ অফিসের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয় ঠান্ডা মাথায়, ধীরস্থির থেকে।
দশ. চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকা
মনে রাখবেন, বিপদ যেকোনো সময় আসতে পারে। তৈরি হতে পারে অযাচিত প্রতিবন্ধকতা। তাই আপনাকে সব সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে যখনই চ্যালেঞ্জ আসুক না কেন, আপনি ব্যাপারটিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারবেন। হতবিহবল অবস্থা কাটিয়ে দ্রুত সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন। না হলে বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে উঠতেই সংকট আরো গভীর হয়ে যাবে।