বিশ্বব্যাংক এর নির্মমতায় এদেশের মানচিত্রের গভীরে সৃষ্ট ক্ষত থেকে নি:সৃত এক সমুদ্র রক্তের জমাট চিহ্ন এ পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মানে সরকার যখন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছিল এমন একট পর্যায়ে এসে বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন শর্ত দিয়ে অবশেষে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করা থেকে সরে আসে। বিশ্বব্যাংকের এই ধরণের আচরণ দেশবাসীকে তথা বিশ্ববাসীকে আহত করেছে। মিথ্যা অপবাদে একজন মন্ত্রীকে কেবিনেট থেকে বিদায়, শতভাগ নিরপরাধ একজন সচিবকে জেলে যাওয়া, দেশ প্রেমিক প্রবীন একজন উপদেষ্টাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পরও বিশ্বব্যাংক যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে তা এ জাতি কোনদিন ভুলবেনা।
সেসময়ে দেশের মানুষের মাঝে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাড়ানোর একটা প্রবণতা আমরা পরিলক্ষিত করি। সেই প্রেক্ষাপটে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে আমরাই সর্বাগ্রে আমাদের বেতন থেকে একটা অংশ পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সমর্পনের ঘোষণা দেই। তদ্রুপ অন্যান্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংঘটন এবং পেশাজীবীরাও বেতন কিংবা আয়ের একট অংশ প্রদানের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ যোগানোর অনুরূপ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমি মনে করি, সেসময়ে অর্থ সরবরাহের সেসব প্রতিশ্রুতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিজস্ব সক্ষমতায় পদ্মা সেতু নির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
যখনই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের ঘোষণা সামনে আসে তখন অনেকের মনেই আবার নানা ধরণের সঙ্কা কিংবা প্রশ্নের উদয় হয়। অনেকে মনে করেছিল এতে করে চাকরিতে বেতন বৃদ্ধি হবেনা, অনেকে মনে করেছিল বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হবে। আবার অনেকে মনে করেছিল এর ফলে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম সংকুচিত হবে ও স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় সংকোচন করা হবে। এই ধরণের যখন আশঙ্কা বিরাজ করছিল, সেসময়ে আমরা দেখলাম পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সরকারকে কোনো ধরণের সংকোচন নীতি অবলম্বন করতে হয়নি। পাশাপাশি অন্যান্য সব মেগা প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রমও যথাযথভাবে চলমান ছিল, চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল এবং সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রমও যথারীতি চালু ছিল। এসবে সরকারের বরাদ্দও পর্যাপ্ত ছিল। একইভাবে করোনার ভয়াল সময়গুলোতেও পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ কোনরকম বাধাগ্রস্ত হয়নি। যেটা ছিল আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের কাউকে বঞ্চিত করে এই পদ্মা সেতু নির্মান করেননি।
আমরা দেশবাসী গর্বিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন আমরা কারও করুণার পাত্র নই। আমরাও পারি। এই সেতু বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। সেইসাথে এই উদাহরণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বাঙালি জাতি অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা রাখি।