বিশেষ খবর



Upcoming Event

যেভাবে শুরু হয়েছে ছোট্ট ওয়াসিরের স্কুলজীবন!

ক্যাম্পাস ডেস্ক শিশু ক্যাম্পাস
img

॥ মাহীর হেলাল ॥
৮ম শ্রেণি, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল 

আমার ছোট্ট ভাই ওয়াসিরের বয়স এখন মাত্র ৪ বছর। এ বছর সে লিটল জুয়েল্স স্কুলে ভর্তি হয়েছে। পুরানা পল্টনে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই সুন্দর স্কুলে আমিও পড়েছি।
এখন থেকে প্রায় দু’মাস আগে ভর্তি পরীক্ষা হিসেবে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সাথে ওয়াসির’র ওহঃবৎারবি হয়। School Fear এর দিন ওয়াসির কৌতুহলী ও আগ্রহী হয়ে বাবা ও মা এর সাথে স্মার্টলি প্রিন্সিপাল মহোদয়ের অফিসে যায়। মজার ব্যাপার হলো, টিচার ওকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ও সালাম দিয়ে বলে আপনার বাসা কোথায়? তখন টিচার নিজের বাসার স্থান বলে ওয়াসিরকে ওর বাসা কোথায় তা জিজ্ঞেস করেন। ওয়াসির উত্তর দেয় আমাদের বাসা সেগুনবাগিচা হাই স্কুল; আপনি আমাদের বাসায় আসলে আপনার খুব ভালো লাগবে..; আমিও আপনার বাসায় যাব..। ওয়াসির’র এরূপ কথা শুনে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম খুশি হন! আবার ওয়াসিরকে বাবার নাম জিজ্ঞেস করলে ও বলে, বাবার নাম এম হেলাল আর মামনির নাম ডক্টর নাজনীন আহমেদ। অর্থাৎ বাবার নামের সাথে মা’র নামও একবারে বলে দিয়েছে, তাও আবার পুরো নাম। ওর ছোট মুখে এত এত সুন্দর কথা শুনে আর কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ভর্তি কনফার্ম হয়ে গেল।
স্কুলে ক্লাস শুরু হলেও হরতাল অবরোধের কারণে ইতোমধ্যে মাত্র কয়েকটি ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। সপ্তাহের সাধারণ খোলা দিনগুলোতে স্কুল বন্ধ থাকে, আর বন্ধের দিন তথা শুক্র ও শনিবার স্কুল হয়। খুবই অদ্ভুত! আমরা যারা একটু বড় হয়েছি, তাদের কাছে ছোট্ট একটি বাচ্চার স্কুলে যাওয়াটা সাধারণ ব্যাপার হলেও ওয়াসিরের জন্য স্কুল হলো একটি আলাদা জগৎ। তাই আমার এই লেখায় আমি ওয়াসিরের স্কুল-অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখছি।
প্রথমদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য ওয়াসির বেশ আগ্রহী ছিল। তাকে স্কুলে নিয়ে যান বাবা ও মা। আমার অনেক মজা লাগছিল যখন ওয়াসিরকে তার স্কুল-ইউনিফর্মে দেখছিলাম এবং ভাবছিলাম কত বড় হয়ে গেছে ছোট্ট ভাইটা আমার চোখের সামনে। স্কুলে পৌঁছানোর পর দেখা গেল প্রায় সব বাচ্চাই কাঁদছে, যা স্কুলের প্রথম দিনের খুব স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু ওয়াসির স্কুলে যাওয়ার পর একটু-আধটু কাঁদলেও সাথে সাথে আবার ঠিক হয়ে যায় এবং যখন টিচার এসে সব বাচ্চাকে ক্লাসে নিয়ে গেলেন, তখন ওয়াসির না কেঁদে বরং স্মার্ট হয়ে ক্লাসে চলে যায়।
ওয়াসির না কাঁদলেও স্কুলের ভেতর থেকে মা-বাবার জন্য অন্য বাচ্চাদের চিৎকার করে কান্না শুনে আমার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। আজকাল বাচ্চারা অনেক কম বয়সে স্কুল শুরু করে। কিন্তু স্কুলগুলোতে ৩-৪ বছর বয়সি বাচ্চাদের যেভাবে স্কুল জীবনে প্রাথমিক অভ্যস্ত করানো হয়, তা আমার কাছে ভালো লাগে না। যেমন প্রথম দিন ক্লাসে কিংবা স্কুলের ভেতরে শিশু-শিক্ষার্থীদেরকে মা কিংবা বাবাসহ ঢুকতে দেয়া উচিৎ। এর ফলে নতুন পরিবেশের সাথে শিশুর খাপ খাওয়ানো সহজতর হয়। কিন্তু স্কুলিং এর প্রথম দিনই দারোয়ান-পিওনরা বাচ্চাদের যেভাবে মা-বাবার কাছ থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যান, তা কেবল বাচ্চাদের নিকটই নয়, যেকোনো দর্শনার্থীর নিকটও নিষ্ঠুর বলে মনে হয়। এর ফলে বাচ্চাদের মনে ঝপযড়ড়ষ ঋবধৎ বা স্কুলে যাওয়ার প্রতি ভীতি কিংবা Negative Attitude তৈরি হয়ে যায়; যার কারণে দ্বিতীয় দিন থেকে সে স্কুলে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাছাড়াও স্কুলে যেসব System  করা উচিৎ তা হলো
একসাথে ১৫ জনের বেশি Student  ক্লাসে না থাকা। এতে বাচ্চাদের ভেতর এক ধরনের আতংক তৈরি হয়। আর বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকলে এত ছোট শিশুকে স্কুলে ভর্তি না করাই ভালো।
ওয়াসির’র স্কুলটি অনেক ভালো। সেখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ওয়াসিরও তার স্কুলটাকে পছন্দ করেছে ঠিকই, কিন্তু প্রথম দিনের ভীতির কারণে বাসায় প্রায়ই বলে আমি স্কুলে যেতে চাই না, স্কুলে যেতে ভয় লাগে। অবশ্য বাবা তাকে প্রতিদিন কয়েকবার বিভিন্ন কাউন্সেলিং দিয়ে ও কোলে-কাঁধে করে স্কুলে পৌঁছিয়ে এবং মা বহু ইনসেনটিভ দিয়ে স্কুলে নেয়া-আনা করতে করতে সে এখন স্কুলিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে; ইতোমধ্যে সবাই তাকে স্মার্ট বাচ্চাও বলছে। কারণ ওয়াসির না কেঁদে সাহসী হয়ে টিচারের সাথে ভেতরে ঢুকে যায়। তোমরা সবাই দোয়া করো, যাতে ওয়াসির’র স্কুল-জীবন তথা শিক্ষা-জীবন আনন্দের হয়, সফল হয়।

লেখকের ওয়েবঃ www.maheer.helal.net.bd
ই-মেইলঃ maheer7helal@gmail.com


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img