॥ রাইসা হেলাল ॥
দ্বাদশ শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড
কলেজ
আমার বাবা এম হেলাল,
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং একজন সমাজসেবী। তিনি
অনেক গুণের অধিকারী; অত্যন্ত
সৎ, নিষ্ঠাবান ও পরোপকারী।
তাই তিনি সর্বদা সবাইকে
বিশেষত ছাত্র-যুব সমাজকে
আদর্শ ও উন্নত জীবনের
সন্ধান ও পরামর্শ দিয়ে
যাচ্ছেন। এককথায়
মানুষের উপকার করাই তাঁর
নেশা ও পেশা।
তাইতো ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে
একাউন্টিংয়ের মতো কঠিন সাবজেক্টে
পড়াশোনা করেও তিনি সেই
আকর্ষণীয় পেশার সাথে যুক্ত
না হয়ে দেশ ও
দশের উপকারে প্রতিষ্ঠা করেছেন
ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র।
বাবা আমাদেরকে ছোটবেলা থেকেই সততা ও
ন্যায়ের চর্চা শেখান, প্রকৃত
ও প্রাকৃত (Accurate and Natural)
হতে বলেন। এর
পাশাপাশি আমাদেরকে সময়ানুবর্তিতা, সত্যবাদিতা, শৃঙ্খলাবোধ, প্রোএকটিভ ও পজিটিভ এবং
সৃজনশীল হওয়ার কৌশলও শেখাচ্ছেন। বাবা
সবসময় আমাদের বলেন কখনো
কোনো কিছু নিয়ে Confused না
হতে। তাঁর
মতে, সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে এবং গতিশীল জীবনের
পথে Confusion বিরাট বাধা।
তাই তিনি সবকিছুর একটা
Conclusion বা সমাপ্তি টানতে বলেন।
এছাড়াও বাবা আমাদের Accept-ability অর্থাৎ গ্রহণ
করার ক্ষমতা বা ধারণ
ক্ষমতা বাড়ানোর উপদেশ দিয়ে থাকেন। এরূপ
ক্ষমতা কম থাকলে মানুষ
রিএকটিভ হয়ে যায়, অস্থিরতা
ও অসুস্থতা বেড়ে যায়।
তাই বাবা আমাদেরকে সর্বদাই
Flexible বা নমনীয় থাকতে বলেন। তাঁর
মতে, ডায়নামিক হবার পূর্বশর্ত হচ্ছে
Flexibility অর্থাৎ নমনীয়তা। তিনি
বলেন, Rigid বা Static মানুষরা যেকোনো পরিবেশের সাথে
নিজকে খাপ খাওয়াতে পারে
না বলে তারা ডায়নামিক
নয় এবং বড় হতে
পারে না। এদের
ধৈর্য-সহ্য ক্ষমতা কম
বলে এরা অসুখ-বিসুখ
ও রোগ-বালাইয়ে সহজেই
আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
ফলে এরা নিজেদের শান্তি
নিজেরাই নষ্ট করে এবং
চারপাশের মানুষদেরকেও অশান্তির মধ্যে রাখে।
বাবার মতে, দৃষ্টিভঙ্গি বা
চিন্তার ধরন তথা Belief system এ সমস্যা
থাকার কারণে এরা সাফল্যের
পথে বেশিদূর এগুতে পারে না। তিনি
বলেন, চিন্তাই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি;
চিন্তায় পজিটিভ বা নেগেটিভ
হবার কারণে সমাজে মানুষ
বড় বা ছোট, সফল
বা ব্যর্থ, সুস্থ বা অসুস্থ
এরূপ বিভিন্নভাবে বিভক্ত। তাই
তিনি মানুষের Belief system বা চিন্তার ধরনকে
বিজ্ঞানমনষ্ক ও আধুনিক করার
জন্য লেখালেখি ও উদ্বুদ্ধ করে
যাচ্ছেন; মানুষকে প্রোএকটিভ ও পজিটিভ এটিচিউডে
অনুপ্রাণিত করতে পরিচালনা করছেন
বিভিন্ন কর্মসূচি।
আমার বাবার প্রিয় বিষয়
মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা। যেকোনো
চাপ থেকে মুক্ত হয়ে
স্বাধীন ও সৃজনশীল জীবন
যাপনের জন্য তিনি পরামর্শ
দেন। সেইজন্য
সব শিক্ষার্থী যেখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা
দিচ্ছে, সেখানে বাবা আমাকে
বলেন তুমি স্কুল-সিলেবাসের
চাপে না থেকে স্বাধীন
চিন্তায় যতটা পার, ততটা
পড়াশোনা করো। স্কুলের
পড়ার পাশাপাশি তোমাকে বিভিন্ন বই
ও পত্রপত্রিকা অবশ্যই পড়তে হবে। এতে
ভালো সার্টিফিকেটধারী না হলেও তোমার
সাধারণ জ্ঞান ও সৃজনশীলতা
অধিকতর বৃদ্ধি পাবে।
বাবার মতে পরীক্ষার ফলাফলে
কত সিরিয়ালে আছ, সেটার চিন্তা
না করে তুমি কতটা
বুঝতে-লিখতে-বলতে বা
প্রকাশ করতে পার, তুমি
কতটা সৃজনশীল ও প্রতিভাবান, তুমি
কতটা মান-হুশ হয়েছ
সেটিই আমার কাছে বিবেচ্য। চাকরির
জন্য বা পয়সা কামানোর
জন্য তোমাকে পড়াশোনা করতে
হবে না। উন্নত
জীবনের জন্য, যোগ্য লিডার
হবার জন্য যেসব বিষয়ের
পড়া বা চর্চা করা
দরকার, তাই করো।
রোগ-শোক বা যেকোনো
সমস্যার সহজ সমাধান দিতে
পারেন আমার বাবা।
বেশ কিছুদিন থেকে আমি স্বাস্থ্যগত
কিছু অস্বস্তি ও অসুবিধাবোধ করি,
এজন্য ডাক্তারি পরামর্শও নিয়েছিলাম। কিন্তু
উপশম না হওয়ায় একদিন
বাবা আমাকে ডেকে বলেন
তুমি আজ থেকে ওয়াটার
থেরাপি শুরু করে দাও;
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো, খুব
সকালে ঘুম থেকে উঠে
সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত প্রচুর
পানি খেতে থাক....।
বাবার এসব পরামর্শ পালনের
পর আমি এখন আল্লাহর
রহমতে শারীরিক ও মানসিক অনেক
সমস্যা থেকেই মুক্ত।
বাবার পরামর্শে আমার দাদু জীবতি
কালে ৭৫ বছর বয়সেও
বিভিন্ন প্রাকৃতিক চর্চার মাধ্যমে অর্থাৎ
ঔষধ ছাড়া আমাদের সাথে
সুস্থ ও সুন্দর জীবন
কাটিয়েছেন।
এভাবেই আমার বাবা তাঁর
নিজ চিন্তায় অর্জিত সব ধরনের
ভালো গুণ সর্বদা আমাদের
শেখানোর চেষ্টা করেন।
কেবল আমাদের ক্ষেত্রেই নয়,
তাঁর অফিসের ও আশপাশের
মানুষের ভেতরের শক্তি জাগিয়ে
তোলার জন্যও সর্বদা লেগে
আছেন তিনি।
এতকিছুর মাঝেও বাবার একটি
ত্রুটি আমার চোখে ধরা
পড়ে, তা হল তিনি
মাঝেমাঝে রেগে যান; বিশেষ
করে পূর্বে বলা কথার
পুনরাবৃত্তি হলে। অর্থাৎ
ইতিপূর্বে আলোচিত কোনো বিষয়ে
আমি তাঁর সাথে একমত
হয়ে পরবর্তীতে যদি সেই কথার
বরখেলাপ করি, তাহলে সেক্ষেত্রে
তিনি রাগ করেন।
কেবল বাবার এ রাগটুকু
আমার পছন্দ নয়।
এছাড়া আর সকল বিষয়ে
তিনি আমার প্রিয় মানুষ। তাই
সবসময় চেষ্টা করি বাবার
ভালো কথাগুলো মেনে চলতে, যেন
আমার ওপর বাবার কোনো
রাগ না হয়।
আমি বাবাকে খুব ভালোবাসি
এবং শ্রদ্ধা করি। বাবার
সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা
করি, যেন তিনি মানুষের
কল্যাণে এবং দেশ ও
জাতির উন্নয়নে আরো বেশি কাজ
করতে পারেন।
লেখকের ওয়েবঃ www.raisa.helal.net.bd
ই-মেইলঃ nazneen7ahmed@yahoo.com