৩১ মে ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে
অনুষ্ঠিত হয় ফ্রি সেমিনার
অন প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড
এর ২৫তম পর্ব।
সেমিনারের বিষয় ছিল How
to Develop Relationship, অর্থাৎ
সম্পর্ক তৈরি ও উন্নয়ন
করা যায় কীভাবে।
হতাশামুক্ত উচ্ছল-উজ্জ্বল আলোকিত
জাতি গঠনে পরিচালিত ক্যাম্পাস’র ফ্রি প্রোএকটিভ
এন্ড পজিটিভ এটিচিউড সেমিনার
ইতোমধ্যে ছাত্র-তরুণ তথা
যুব সমাজের মধ্যে বেশ
সাড়া জাগিয়েছে। তাই
প্রোএকটিভ এটিচিউড আন্দোলনের উৎসাহী এমনই কিছু
তরুণ উদ্যোগী হয়ে ক্যাম্পাস’র
সাথে আয়োজন করে উক্ত
সেমিনার। অর্থাৎ
এবারের সেমিনারের আয়োজক হচ্ছে ক্যাম্পাস;
আর উদ্যোক্তা হচ্ছে উচ্ছল-উজ্জ্বল,
আলোকিত কয়েক তরুণ; এদের
মধ্যে অনুপম কুমার বিশ্বাস,
কাজী সামিয়া মোন্নাফ সাম্য
ও শারমিন সুলতানা পালন
করেন বিশেষ ভূমিকা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং ক্যাম্পাস সোস্যাল
ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) এর মহাসচিব এম
হেলালের সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে মুখ্য
বক্তা ছিলেন প্রোএকটিভ এটিচিউড
আন্দোলনের জনপ্রিয় প্রবক্তা, গবেষক ও চিত্তাকর্ষক
উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান।
ড. আলমাসুর রহমান
নান্দনিক উপস্থাপক ড. আলমাসুর রহমান
বলেন, সবার সাথে সম্পর্ক
রাখতে হবে। অনেকে
সম্পর্ক তৈরি করতে পারে,
কিন্তু তা ধরে রাখতে
পারে না। এ
ব্যর্থতার জন্য সাফল্য তার
কাছে ধরা দেয় না। অন্যের
সাথে যিনি যত বেশি
সম্পর্ক গড়তে পারবেন, তিনি
তত সফল হবেন।
ড. আলমাস বলেন, গবেষণায়
দেখা গেছে IQ এর চেয়ে
EQ যাদের বেশি, সম্পর্ক স্থাপনের
ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত সফল। ইমোশন,
আবেগ-অনুভূতিকে বোঝার দক্ষতাই হলো
EQ. উদারহরণস্বরূপ দু’জন ম্যানেজারের
প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক
ম্যানেজারের কাছে তার একাউন্টেন্ট
ছুটি নিতে গিয়ে বললেন
অফিসে আসার সময় দেখেছি,
আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ;
এখন টেলিফোন পেলাম, তাকে ডাক্তারের
কাছে নিতে হবে; বাকি
বেলা আমাকে ছুটি দিন
স্যার। ম্যানেজার
তার কথা কানেই তুললেন
না। ভাবখানা
স্ত্রীর অসুখ তাতে হয়েছে
কি! স্ত্রী থাকলে অসুখ
হবেই। বললেন,
এখন যান হাতের কাজ
শেষ করে বিকেলে ঘন্টাখানেক
আগে চলে যাবেন।
একাউন্টেন্ট বিষন্ন মনে ফিরে
গেলেন। ম্যানেজারের
কাছ থেকে এতটুকু সহযোগিতা,
সহানুভূতি পেলেন না।
অন্য এক ম্যানেজারের কাছে
তার একাউন্টেন্ট একই কথা বলে
ছুটি নিতে গেলে তিনি
উল্টো একাউন্টেন্টকে বকা দিলেন আপনি
স্ত্রীকে অসুস্থ দেখেও অফিসে
চলে এসেছেন! এখন তাড়াতাড়ি বাসায়
চলে যান; টাকা-পয়সা
যদি লাগে নিয়ে যাবেন,
আর দরকার মনে করলে
অফিসের গাড়ি নিয়ে যেতে
পারেন। ফোনে
আপনার স্ত্রীর অবস্থা জানাবেন।
একাউন্টেন্ট গভীর প্রশান্তি নিয়ে
ফিরে গেলেন, তার মাথা
থেকে টেনশনের এক বিরাট বোঝা
নেমে গেলো। এ
ম্যানেজারের অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করবে। আর
এর মাধ্যমে এই ম্যানেজার সাফল্যের
দিকে এগিয়ে যাবেন।
তার ঊছ বেশি বলেই
তিনি সম্পর্ক স্থাপনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পেরেছিলেন। অন্যদিকে
প্রথম ম্যানেজার যিনি স্টাফের বিপদে
সহানুভূতি না দেখিয়ে তাকে
কাজের জন্য চাপ দিয়ে
নির্মমতার পরিচয় দিয়েছেন, তার
ঊছ শূন্যের কোঠায়; তিনি সফল
হতে পারবেন না।
ড. আলমাস বলেন, একজন
সর্বোচ্চ বেতনধারী জিএম এর সাফল্যের
রহস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি
জানান আমি আমার স্টাফদের
ভালোবাসি, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক
রাখি, তাদের সুখ-দুঃখের
সাথী হই, আমার আনন্দ
তাদের সাথে শেয়ার করি। এজন্য
তারা প্রাণান্ত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানকে টপ
পজিশনে নিয়ে এসেছে।
আর আমি তাদের মাধ্যমে
সফল হয়েছি।
ড. আলমাস বলেন, সম্পর্ক
গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি
বাধা হচ্ছে Judgemental Attitude. আমাদের ৮০%
কথা জাজমেন্টাল তথা সিদ্ধান্তপ্রদায়ী! এজন্য
আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে
তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমরা
ভুলে যাই আমরা মতামত
দিতে পারি, কিন্তু সিদ্ধান্ত
নয়। কথা
বলার আগে ভাবতে হবে
এর প্রভাব কোথায় যাচ্ছে,
কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। সিদ্ধান্তমূলক
আচরণ, রায় দেয়ার অভ্যাস
যাদের রয়েছে তাদেরকে মানুষ
পছন্দ করে না।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন,
বন্ধুদের আড্ডায় আপনি বললেন
কালো কাপড় একদম খারাপ!
কিন্ত একই আড্ডায় কেউ
কেউ কালো কাপড় পছন্দ
করেন। এক্ষেত্রে
আপনার সাথে অন্যদের দ্বিমত
সৃষ্টি হলো, সম্পর্কেও চিড়
ধরলো। কালো
কাপড় খারাপ না বলে
আপনি যদি বলতেন, কালো
কাপড় আমার পছন্দ না। অর্থাৎ
আপনি সিদ্ধান্ত না দিয়ে যদি
মতামত জানাতেন, তাহলে অন্যদের সাথে
আপনার সম্পর্ক রক্ষা পেত।
Divided Attention বা বিভক্ত মনোযোগও সম্পর্ক
স্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। হ্যান্ডশেক
করার সময় দেখা যায়
ঝাঁকুনি ঠিকই দিচ্ছেন, কিন্তু
দৃষ্টি অন্যদিকে। অন্তরের
অন্তস্থল থেকে হ্যান্ডশেকের কম্পন
না আসলে তা প্রাণবন্ত
হবে কীভাবে!
ড. আলমাসুর রহমান বলেন, সম্পর্ক
গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জবংঢ়বপঃ
বা শ্রদ্ধাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার
প্রতি শ্রদ্ধা যত বেশি, তার
প্রতি সুমধুুর ব্যবহারও তত বেশি; সম্পর্কও
তত ভালো। আর
যার প্রতি শ্রদ্ধা কম,
তার প্রতি ব্যবহারও তত
খারাপ, সম্পর্কও ভালো না।
তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তিকে
প্রথম দর্শনেই তার সম্পর্কে মনের
মধ্যে একটা ইমেজ গড়ে
ওঠে। কারো
সাথে কীরকম ব্যবহার হতে
পারে তা নির্ভর করে
ঐ ব্যক্তি নয়, উক্ত ব্যক্তি
সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন বা
ধারণা। মনের
মধ্যে কারও সম্পর্কে তৈরি
হওয়া ইমেজই হবে ঐ
ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের
প্রতিফলন। প্রাইমারি
শিক্ষক আমাদের মানুুষ করেছেন,
তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা
থাকতে হবে। বর্তমানকার
উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে
প্রাইমারি শিক্ষককে ভুলে গেলে, তার
সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তা
হবে চরম অমানবিক।
সবাইকে যখন Respect করতে পারা
যাবে, তখন সম্পর্কের প্রসার
ঘটবে।
পিতা-পুত্রের সম্পর্কের ওপর একটি ভিডিওচিত্র
দেখান ড. আলমাস।
তাতে দেখা যায় একটি
পার্কে পিতা-পুত্র পাশাপাশি
বসা। এমন
সময় একটি পাখি এসে
বসল সেখানে। পিতা
তার পুত্রকে বললেন, এটা কি?
ছেলে জবাব দিল পাখি। দ্বিতীয়বার
জিজ্ঞেস করলে ছেলে একই
জবাব দিল। তৃতীয়বার
বাবা যখন জানতে চাইলেন,
তখন ছেলে রাগত স্বরে
বলল তুমি দেখতে পাচ্ছো
না এটি একটি পাখি!
বাবা উঠে গিয়ে একটা
ডায়রি নিয়ে এসে নির্দিষ্ট
পৃষ্ঠা ছেলেকে পড়তে দিলেন। সেখানে
লেখা ছিল এ ছেলেটিই
যখন সাড়ে তিন বছর
বয়সের, তখন এই পার্কে
বাবার সাথে বেড়াতে আসে। তখন
একটা পাখি দেখে বাবাকে
জিজ্ঞেস করেছিল, এটা কি? বাবা
জবাব দিয়েছিলেন পাখি। এভাবে
২১ বার ছেলেটি তার
বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল। বাবা
বিরক্ত না হয়ে ২১
বারই জবাব দিয়েছিলেন এটা
একটা পাখি। কিন্তু
আজ ছেলে তিন বারেই
চরম বিরক্তি প্রকাশ করল।
ছেলে ডায়রি পড়ে ভীষণ
দুঃখিত ও লজ্জিত হলো;
বাবার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা
চাইল। বাবা
তাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। নষ্ট
হওয়ার হাত থেকে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক রক্ষা পেল, আরও
দৃঢ় হবার আভাস ফুটে
উঠলো দুজনের মুখমন্ডলে।
এম হেলাল
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র
মহাসচিব এম হেলাল বলেন,
আজকের আলোচ্য বিষয় How
to Develop Relationship এর
গুরুত্ব ছাত্র-তরুণরা অনুধাবন
করবে। কেননা
Relationship ছাড়া সমাজ ও জাতীয়
পর্যায়ে সফল হওয়া যাবে
না। Relationship
তৈরি করতে হবে সবার সাথে,
এমনকি বস্তিবাসীদের সাথেও; কারণ কোনো
কারণে পুলিশের তাড়া খেলে বস্তিতেও
আশ্রয় নিতে হতে পারে। Relationship
Build up এর ক্ষেত্রে
কথা বলার চেয়ে কথা
শোনার অভ্যাস আয়ত্ত করতে
হবে বেশি। কারণ
সম্পর্ক সুন্দর হয় কথা
বলার ওপর নয়, কথা
শোনার ওপর।
এম হেলাল বলেন ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে আজকের এ সেমিনার
আয়োজন প্রমাণ করে যে,
আমাদের ছাত্র-যুব সমাজ
অনেক Constructive & Creative. তারা ভালো চিন্তা
করে, ভালো হতে চায়,
বড় হতে চায়।
তাই আমরাও পারব প্রোএকটিভ
এটিচিউডের বিশ্বশীর্ষ জাতি গড়ে তুলতে। এক্ষেত্রে
ছাত্র-তরুণদের দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে; তাদের
মনে এ দৃঢ়চিত্ততা থাকবে
যে ও I will conquer the world. আমি বিশ্বজয়ী
হব, আমি সব পারব।
ক্যাম্পাস পরিচালিত পরবর্তী প্রোএকটিভ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে ৪ আগস্ট
২০১৫ মঙ্গলবার, বিকালে; সেমিনারের বিষয় Know Thyself.