মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে। বোর্ডের অর্ডিন্যান্স অনুসারে রংপুর বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের তদারকি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাবলিক পরীক্ষাসমূহ পরিচালনা ও উন্নয়নের জন্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; যা পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ East Pakistan Ordinance No. XXXIII of 1961, Section 3A(1) ও এর ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ষোড়শ এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের সপ্তদশ সংশোধনী দ্বারা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত। এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ জেলাসমূহ হচ্ছে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট।
বোর্ডের অধীনে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়, সেগুলো হচ্ছে সনদপত্র উত্তোলন, নম্বরপত্র উত্তোলন, নাম সংশোধন, যেকোন বিষয়ের ফলাফল সংশোধন, ভর্তি বাতিল, এক কলেজ থেকে ভর্তি বাতিল করে নতুন কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ।
বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কৃতী শিক্ষা-ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আহমেদ হোসেন। যিনি বোর্ডের অধীনস্থ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষামান উন্নয়নে স্থিরলক্ষ্য হয়ে এগিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর অনুভূতি জানতে একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন। তাঁদের আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে এখানে সন্নিবেশিত হলো।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে প্রফেসর আহমেদ হোসেন বলেন এ বোর্ডের অধীন ৮টি জেলা রয়েছে। এসব জেলার সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের তদারকি আমাকে করতে হয়। এজন্য আমি আনন্দিত। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, আমি যেন আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে পারি, সে তৌফিক তিনি আমাকে দেন। আমি সমাজের জন্য, দেশের জন্য, সর্বোপরি শিক্ষার উন্নয়নে কিছু কাজ করে যেতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আর এ বিষয়ে দিনাজপুুুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে আহ্বান জানাতে চাই আসুন, সবাই মিলে আন্তরিকভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি, যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করি তাহলে যেকোনো কর্মসূচি সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমি একা কিছু করতে পারব না। তাই আপনারা দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করবেন এটি আমার প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, এ বোর্ডের শিক্ষার মানোন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য। কোয়ালিটি শিক্ষা ছাড়া মেধার বিকাশ হবে না, দেশ এগোতে পারবে না। আমি বোর্ডের অধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এমনকি তাদের অভিভাবকদেরও আহবান জানাই আসুন, শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা সাধ্যমতো ভূমিকা রাখি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কল্যাণকর, যুগোপযোগী, প্রগতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন করে চলেছেন তাকে সমবেত প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিয়ে যাই।
শিক্ষকদের শিক্ষামান, উন্নত প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হতে হবে। আমাদের বোর্ড নতুন, স্বভাবতই আমরা কামনা করব দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড অন্যান্য বোর্ডের সমকক্ষ হোক, শিক্ষার প্রসার হোক, গুণগত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হোক।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে কোনো সমস্যা আছে কিনা এমন জিজ্ঞাসায় আহমেদ হোসেন বলেন, এখানে অবকাঠামোগত সমস্যা ছিল; বর্তমানে ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন নির্মিত হলে এ সমস্যার নিরসন হবে। এছাড়া শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন অফিস বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকার কারণে তাদের পারফরমেন্সের ওপর নজর রাখা সহজ নয়। একই ভবনে স্থাপিত হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন, তারা শিক্ষাবিস্তার ও শিক্ষার মানোন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান পরামর্শ রেখে বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ হোসেন বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের মূল লক্ষ্য অধ্যয়ন। তারা শিক্ষা-জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাবে। অর্থহীন কাজে মূল্যবান সময় নষ্ট করবে না। তারা রাজনীতি-সচেতন হবে, দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিধারা পর্যবেক্ষণ করবে। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির কোনো ইস্যু ক্যাম্পাসে টেনে আনবে না। ছাত্ররা থাকবে ছাত্রস্বার্থ সংশ্লিষ্ট রাজনীতি নিয়ে। এতে তাদের শিক্ষাজীবন অর্থপূর্ণ হবে, দেশেরও কল্যাণ হবে।
ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হবে শুধু সার্টিফিকেট লাভের জন্য নয়, তাদেরকে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে প্রবেশ করতে হবে বৃহত্তর কর্মজীবনে। তারা দেশপ্রেমী হবে, দেশকে ভালোবাসবে, নিজস্বার্থের ওপর স্থান দিবে দেশের স্বার্থকে। বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে তাদের পূর্বসুরীরা এ দেশ স্বাধীন করেছেন এটা তাদের মনে রাখতে হবে এবং অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিল্প-বাণিজ্যে, অর্থনীতিতে এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর। তাহলেই ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সার্থক হবে।