বিশেষ খবর



Upcoming Event

শিল্পনগরী থেকে শিক্ষানগরীর রূপকার

ক্যাম্পাস ডেস্ক বিশেষ প্রতিবেদন
img

বস্ত্রনগরী খ্যাত নরসিংদীকে শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত করে তোলার অগ্রনায়ক থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদির মোল্লা। শিক্ষা বিস্তারে গড়ে তুলেছেন চারটি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটিই দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায়। ভালো স্কুল মানেই রাজধানী ঢাকার প্রতিষ্ঠান। চিরাচরিত সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে রাজধানীর সেরা স্কুলগুলোকে পেছনে ফেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় দশম সেরার আসনটি নিয়েছে নরসিংদীর এন কে এম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস। এ বছর এসএসসিতে ৫৪ জন পরীক্ষা দিয়ে সবাই জিপিএ ৫ পেয়েছে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগের বছরগুলোতে স্কুলটি ভালো ফল অর্জন করেছিল। কীভাবে এত ভালো ফল করল মফস্বলের স্কুলটি? সাফল্যের সেই রহস্যগুলো জানতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবদুল কাদির মোল্লার সঙ্গে প্রকৃত মানুষ ও সুনাগরিক গড়ার লক্ষ্যে মানসম্মত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত নরসিংদীর এন কে এম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ২০১১ সালের জেএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি শতভাগ উত্তীর্ণসহ ঢাকা বোর্ডে ১৬তম স্থান দখল করে। ২০১৪ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ১৪তম স্থান অর্জন করে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি ঢাকা বোর্ডে যৌথভাবে দশম স্থান অর্জন করেছে। এই অর্জন আমার একার নয়। এটা নরসিংদীর সর্বস্তরের মানুষের অর্জন। এই সাফল্যে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। পাশাপাশি এই জেলার যেসব মানুষ শিক্ষাকে ভালোবাসেন, রয়েছে তাঁদের অনেক আশীর্বাদ। আমরা চাচ্ছি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানসম্মত স্কুল এবং কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে নিজের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এন কে এম হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস স্থান দখল করবে -এটা আমার বিশ্বাস। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যতটুকু শ্রম ও মেধা প্রয়োজন তার কোনো ঘাটতি রাখছি না। আমরা ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছি। এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি না, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সর্বক্ষেত্রে আদর্শিক ও মানসম্মত শিক্ষায় যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। শুধু পুঁথিগত শিক্ষা প্রদান নয়, গুণগত শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি, যা একজন শিক্ষার্থীকে আলোকিত মানুষ করতে সাহায্য করবে।
পাঠদানের পদ্ধতি
বিদ্যালয়ের দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন ৬০ জন শিক্ষক। ডিসেম্বর মাসে বিদ্যালয়ের পাঠ পরিকল্পনা করা হয়। আর সেই পরিকল্পনার মধ্যে কোন্ পরীক্ষা কখন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সেটা তৈরি করা হয়। বছরের প্রথমেই শিক্ষার্থীদের হাতে সিলেবাসের মাধ্যমে সব তথ্য পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের তাদের প্রতিটি কার্যক্রম সম্পর্কে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তারপর শিক্ষকরা কোন্ সপ্তাহে কী পড়াবেন সেই সম্পর্কে পরিকল্পনা করা হয় এবং সে অনুযায়ী পাঠদান ও পরীক্ষা নেয়া হয়। ১ জানুয়ারি থেকে সরকার কর্তৃক পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আমরা পাঠদান শুরু করি। সরকারি ছুটি ব্যতীত অন্য কোনো কারণ আমাদের শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় না। এমনকি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলো হয় সাধারণত ছুটির দিনে। শ্রেণিকক্ষে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তৈরি করা হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকরা প্রতিটি বিষয়ের বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় সুন্দরভাবে পড়িয়ে থাকেন এবং কোনো অসুবিধা থাকলে প্রতিটি শাব্দিক অর্থসহ সব বিষয়ের বর্ণনা করে থাকেন। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারে। প্রতিটি অধ্যায় পড়ানো শেষে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষককে ৮ বা ১০ জন করে শিক্ষার্থীর দায়িত্ব দেয়া হয়। শিক্ষকরা তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের দুর্বলতাগুলো সারিয়ে তোলেন। আমাদের মূল পুঁজি শৃঙ্খলা ও নিবিড় পরিচর্যা। বিদ্যালয়টিতে কঠোর শৃঙ্খলা ও সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। যার কারণে পড়াশোনায় গ্যাপ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। তাছাড়া বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তাৎক্ষণিক অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কারণ সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হয়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের বোধগম্যতা ও ধারণক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য ও মানসিক বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলকে অবগত করেন গাইড শিক্ষকরা। আমাদের এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটা বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশ রয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের একটা আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান সম্ভব হয়। এক কথায়, বিমূর্ত বিষয়গুলো আমরা শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত সুন্দর উদাহরণের মাধ্যমে বোঝাতে চেষ্টা করি। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা। তাঁদের আসার সময় নির্ধারিত থাকলেও যাওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় নেই। তাঁরাও এই প্রতিষ্ঠানকে এবং কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ভালোবেসে সময় দেন। তাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করছেন। আমাদের যে সাফল্য-এটার দাবিদার আমি একা নই। এই সাফল্যের মূল কারিগর এখানকার তরুণ শিক্ষকরা। যাঁরা বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার মতো যোগ্যতা থাকার পরও একটি গ্রুপের নেতৃত্বে জাতিকে কিছু দেয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে স্কুলটি ঢাকা বোর্ডে সেরা দশে স্থান করে নিল। আর কলেজ তো বরাবরই বোর্ডে স্থান দখল করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সব দিক থেকে মানসম্মত আদর্শিক শিক্ষায় এগিয়ে নিতে পারি-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সাফল্যের রহস্য 
শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে। এর রহস্য কী? আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে নিজের মতো করে ভালোবাসে সে যে স্থানেই প্রতিষ্ঠান করুক, তাঁর সেই প্রতিষ্ঠান সুন্দর ও আশানুরূপ ফল বয়ে আনবে। এজন্য নিজের মধ্যে প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং সততা, ধৈর্য ও সাহসের প্রয়োজন হয়। এগুলো বিদ্যমান থাকলে যেকোনো জায়গায়ই সুন্দর কিছু করা সম্ভব। আমি যে প্রতিষ্ঠান করছি, সেটাই সফল হয়েছে। এর অর্থ-আমি ভালো কিছু করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শিক্ষা নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। এখন দেশের চাকরির বাজারে সাধারণ শিক্ষায় চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। সেই হিসেবে আমরা কর্মমুখী শিক্ষা নিয়ে পরিকল্পনা করছি। সেটা কারিগরি, মেডিক্যাল বা অন্য যেকোনো সহশিক্ষা হতে পারে; যা মানুষের জীবনকে গতিশীল করবে। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তা আমাদের রয়েছে। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি আরো মানসম্মত পর্যায়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এই মানদন্ডের চেষ্টাটা যদি আমরা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলেই আমরা সব দিকে সফল হব।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img