হাঁটি হাঁটি পা পা করে চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে দুই যুগ পার করল দেশের প্রথম ও স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)। চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়েই আজ নর্থ সাউথ দেশের উচ্চ শিক্ষায় অনন্য শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং স্বীকৃতি লাভ করেছে। এর কর্ণধাররা নিরলস কাজের মধ্য দিয়ে একে তুলে এনেছেন অনন্য উচ্চতায়। মাত্র ১৩৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী এখন ২০ হাজারেরও বেশি। এদিকে দুই যুগের পথপরিক্রমায় অর্জিত সাফল্য তুলে ধরতে ১০ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ‘গৌরবের দুই যুগ পূর্তি’ উদযাপনে থাকবে আকর্ষণীয় সব কর্মসূচি।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের সিন্ডিকেট হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আয়োজনের নানা দিক তুলে ধরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আরও ভাল করার অঙ্গীকার করেছেন। একই সঙ্গে আশা প্রকাশ করেছেন ২৫০ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করা হবে নর্থ সাউথের আবাসিক ক্যাম্পাস। ইতোমধ্যেই এ লক্ষ্যে ৫০০ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে আকর্ষণীয় লোকেশনে প্রয়োজনীয় জমি। সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজন করা হয়েছিল মতবিনিময় সভাটি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি, সম্ভাবনা এবং দুই যুগ পূর্তির কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম। দীর্ঘ পথপরিক্রমার নানা দিক তুলে ধরেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদ, মোঃ শাহজাহান, এম এ হাশেম, সদস্য রেহানা রেহমান, ইয়াসমীন কামাল, মাহবুবুর রহমান। কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নর্থ সাউথের কর্ণধাররা বলেছেন, এ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রভাব ও ডিজিটাল হিউম্যানিটিজসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। পাবলিক লেকচার দেবেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্কলার ও শিক্ষাবিদরা। এ ছাড়াও পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে থাকছে সাংস্কৃতিক, কালারফুল র্যালি, খেলাখুলা, অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দলকে সংবর্ধনা, আন্তর্জাতিক বিতর্ক, ড্রামা ইন্টারন্যাশনাল ইভিনিং, কনফুসিয়াস, বুক পাবলিশিং, ক্লিন ঢাকা সিটি এ্যাওয়ারনেস, সিএসআরসহ নানা আয়োজন। এসব অনুষ্ঠানে সরকারের বেশ কয়েক মন্ত্রী, এমপি, ঢাকা সিটির মেয়র, সিনিয়র নাগরিক এবং দেশি-বিদেশি শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখবেন।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তার সাফল্য ও অর্জনের এই পর্যায়ে এসেছে। আর এতে মিডিয়ার ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। এ সাফল্য ও জয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একার নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের। ২৪ বছরে আমরা এমন কিছু করেছি যা অনেক দেশে ১০০ বছরেও হয় না। আমাদের এই অর্জনকে তুলে ধরতেই ১০ দিনব্যাপী গৌরবের দুই যুগ পূর্তি উদযাপনের এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ২২ হাজার শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে মেধাবী ও গরিব ছাত্রদের টিউশন ফি মওকুফ। বর্তমানে ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বিনা পয়সায় পড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি খাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে শত শত শিক্ষক দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আরও নিচ্ছেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এ সাফল্যের পথিকৃৎ।
নর্থ সাউথের শিক্ষা কার্যক্রমে সব সময় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ও রিচার্স সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এ্যাডভাইজারি বোর্ড। এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগই পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার মতো পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা শেষ করে অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর ও দায়িত্বশীল পদে কর্মরত রয়েছেন, যা আমাদের জন্য গৌরবের।
ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম এ হাশেম জানান, আমরা এখন কাজ করতে যাচ্ছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উন্নতমানের আবাসিক ক্যাম্পাসের জন্য। এ জন্য আমরা ইতোমধ্যেই আকর্ষণীয় লোকেশনে ২৫০ বিঘা জমি ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কিনেছি। তবে একজন বিতর্কিত সদস্য এ উন্নয়নের বিরোধিতা করে মামলা করায় আমরা কিছুটা বিব্রত। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও আরও এগিয়ে যেতে চাই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অন্য সদস্যরাও।
কালের কণ্ঠ সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২৪ বছর পার করেছে। আমি মনে করি এই ইউনিভার্সিটি আমার নিজেরই ইউনিভার্সিটি। কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন কখনই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। আমরা আমাদের কাগজে এর ভাল দিক নিয়ে লিখতে চাই। এর সুনাম এতদিন যেভাবে ধরে রেখেছেন আমি আশা করব এটা যেন দিন দিন বৃদ্ধি পায়।
এদিকে শিক্ষার মান নিয়ে বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথপরিক্রমায় শিক্ষার মান নিয়ে আছে নানা বিতর্ক, যার অবসান তো দূরের কথা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বরং মানের সঙ্গে করেছে আপোশ। বিক্রি হচ্ছে সনদ থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত। কিন্তু আজ পর্যন্ত মানের প্রসঙ্গে আপোশ করেনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।
মূল আলোচনার পরে আলাপকালে ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদ ও মোঃ শাজাহান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা দানের বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলছিলেন, শিক্ষার মান নিয়ে কোনো আপোশ করতে আমরা রাজি নই।