বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি সবার ক্ষেত্রেই চির অম্লান। সর্বোচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্র-ছাত্রীরা বর্ণিল জীবনের স্বপ্ন দেখে। যৌবনের উত্তাল সময়ের স্বপ্নিল শিক্ষাজীবন শেষে প্রবেশ করে কর্মজীবনে। কঠোর বাস্তবতার কর্মজীবনে ফেলে আসা রূপালী আভার স্বর্ণালি সেই দিনগুলোর কথা নিত্যনতুন ঘটনার ভারে চাপা পড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই স্মৃতি উঁকি দেয়ার সুযোগ পেলেই ফিরে যেতে মন চায় ছাত্র-জীবনের সেই মধুরতম সময়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র স্থাপনের লক্ষ্যে পূর্বসূরিদের শিক্ষা-জীবনের স্মৃতিকথা প্রথমে ক্যাম্পাস পত্রিকার নিয়মিত কলামে, অতঃপর গ্রন্থ আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রাক্তন ছাত্রদের কাছে তাঁদের ছাত্র-জীবনের স্মৃতি রোমন্থনের আহ্বান জানালে অনেকেই ব্যক্ত করেন তাঁদের অব্যক্ত স্মৃতির কথা; যেখানে উঠে আসে সে সময়কার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ, ছাত্র-রাজনীতির ধরন, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, ঘনিষ্ঠ সহপাঠীদের কথা, শ্রদ্ধাভাজন ছাত্রবৎসল শিক্ষকদের ভূমিকা, আবাসিক হল ও ডাইনিংয়ের কথকতা ইত্যাদি।
স্মৃতিচারণের এ কলাম অব্যাহত থাকবে পরবর্তী সময়েও। তাই আগ্রহীগণ তাঁদের স্মৃতিকথা, ছবি ও জীবন বৃত্তান্ত পাঠাতে পারেন কিংবা ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ (০১৯২৬-৬৭৭৫৬৫) অথবা রাজিব গুপ্ত (০১৭১৬-৪৪৩৭৬৭) এর কাছে সরাসরি স্মৃতিকথার সাক্ষাৎকার প্রদান করতে পারেন।
৮০’র দশকের প্রথমদিকেও ছাত্র-রাজনীতির মধ্যে আদর্শবাদিতা ছিল। তখনকার ছাত্রনেতারা ছিলেন মেধাবী; তাদের সততা, নৈতিকতা, আনুগত্য ও কমিটমেন্টের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিল না
এস এম কুদ্দুস জামান, জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা
আমি ১৯৭৮ সালে রাজবাড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি এবং বছরের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি অনার্সে ভর্তি হই। আমি ছিলাম সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র। আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ১৪৫ নং রুমে ছিলাম। অনার্সের রেজাল্ট বের হবার পূর্বেই আমি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করেছিলাম। পরীক্ষার পরে রেজাল্ট হল, আমি চাকরিতে জয়েন করলাম। আমার প্রথম পোস্টিং হল ফরিদপুরে। ১৯৮২ সালে আমরা ২২ জন বন্ধু একসাথে পাস করলাম, একসাথেই চাকরিতেও ঢুকে গেলাম। তখন আমরা ভাইস চ্যান্সেলর এ কে আজাদ চৌধুরীর সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাদের উৎসাহিত করলেন এবং উচ্চতর পড়াশুনাও চালিয়ে যেতে বললেন। আমি খুবই সৌভাগ্যবান চাকরিরত অবস্থায় রেগুলার ছাত্র হিসেবেই মাস্টার্স করার সুযোগও পেয়ে গেলাম। জীবনে আইনজীবী হবার ইচ্ছা থাকলেও সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার কারণে আমি ল’য়ার হতে পারিনি। আমি ল’য়ার না হয়ে জজ হয়ে গেলাম।
আমার প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে হুমায়ুন কবির, এ কে কামরুদ্দিন এবং নুরুল হুদা স্যারের কথা খুব মনে পড়ে। নুরুল হুদা স্যার নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন; কিন্তু খুবই আন্তরিক ছিলেন। উনিও আমার মতো জুডিসিয়াল সার্ভিসে ছিলেন, চাকরি ছেড়ে দিয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। এ কে কামরুদ্দিন ছিলেন ডিন। উনার মতো এত ভালো শিক্ষক পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। উনি ছিলেন মুরুব্বি ও অভিভাবক, অত্যন্ত সংবেদনশীল একজন মানুষ। ছাত্রদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ছিল। উনার সমর্থন, সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণায় আমরা প্রায় ২৫-৩০ জন জজ রেগুলার ছাত্র হিসেবেই মাস্টার্স শেষ করতে পেরেছিলাম। আর হুমায়ুন কবির পার্টটাইম শিক্ষক ছিলেন, পরে পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন, আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আরেকজন স্যারের কথা না বললেই নয়, উনি হলেন ড. রফিকুর রহমান, স্যার এভিডেন্স এ্যাক্ট পড়াতেন। এতো ভালো পড়াতেন যে, এখনো মনে হয় তাঁর পাঠদান আমাদের মধ্যে জাগ্রত আছে। উনি এখন সুপ্রীম কোর্টে প্রাকটিস করেন, বয়স হয়ে গেছে। আমি স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
ড. রফিকুর রহমান স্যার খুব কড়াকড়ি করতেন, নিরস ও কঠিন সাবজেক্ট ছিল বলে আমরা ফাঁকি দিতে চাইলেও উনি কিছুতেই সে সুযোগ দিতেন না। কোনো একটি পরীক্ষা আমরা সবাই বয়কট করেছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা কাকে ফাঁকি দিচ্ছ? নিজের সাথে নিজে প্রতারণা করছ। তিনি এমনভাবে বুঝালেন যে, যা’ শুনে অনেকের চোখে কান্না এসে গেল। আমরা বললাম, স্যার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে পারিনি। উনি বললেন, ঠিক আছে আগামী সপ্তাহে তোমরা পরীক্ষা দিয়ে দিও।
আমার বন্ধুদের অনেকেই বিচারক, একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদের অধ্যাপক, একজন সুপ্রীম কোর্টের জজ, আর হাইকোর্ট ডিভিশনে আছেন জাস্টিস রিফাত আহমেদ। ড. শাহজাহান সাজু নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রংপুরে মনজুরুল বাসিত, মানিকগঞ্জে জাহাঙ্গীর সরকার, গোপালগঞ্জে দলিল উদ্দিন মিলন।
১৯৮৪ পর্যন্ত আমি দেখেছি, ছাত্ররাজনীতির মধ্যে একটা আদর্শবাদিতা ছিল। ছাত্রনেতারা ছিলেন মেধাবী। তারা নিয়মিত লেখাপড়া না করলেও তাদের সততা, নৈতিকতা, আনুগত্য ও কমিটমেন্টের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিল না। দৃঢ়চেতা-সাহসী ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের কারণে তারা সাধারণ ছাত্রদের আকর্ষণ করতে পারতেন, সবার শ্রদ্ধেয় ছিলেন। আমাদের ক্যাম্পাসে বাম রাজনীতির (সেকুল্যার সোস্যালিস্ট পলিটিক্স) একটা প্রাধান্য ছিল। পাশাপাশি প্রাধান্য ছিল ছাত্রলীগের। আমরা চলে আসার পর পরবর্তীকালে পরিবেশটা পাল্টে যায়। আমাদের সময় ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না। ছোটখাটো মারামারির ঘটনা ঘটলেও তা ব্যাপক ছিল না।
আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল ছিল খুব সমৃদ্ধ। ডাকসু তখন কার্যকর ছিল। ডাকসুর নেতৃত্বে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়মিতভাবেই চলতো। নাটক, চিত্রকলা, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠান চলতেই থাকত। তখন ডাইনিংয়ে আমরা যে নাস্তাটা করতাম তা মানসম্মতই হতো। ১ টাকা দিয়ে নাস্তা করতাম আর ২ টাকা দিয়ে লাঞ্চ বা ডিনার করতাম। খাবারের মান খুব ভাল ছিল বলব না, তবে খাওয়া যেত।
আমার সময় দীর্ঘদিন প্রভোস্ট ছিলেন সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ। উনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর যথেষ্ট আন্তরিকতা ও ভালোবাসা ছিল। উনার সময় সলিমুল্লাহ হলে একটা শৃঙ্খলা ছিল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল।
আমি যে রুমে ছিলাম সেখানে আমি ছিলাম সবচেয়ে জুনিয়র। তিনজনই আমার সিনিয়র ছিলেন। আমাকে ১৪৫নং রুমে স্থান সংস্থান করে দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান যিনি অবসরে গেলেন কিছুদিন আগে। আমাদের সময়, হুমায়ুন আহমেদের নাটক শুরু হত তখন হলে একটা হৈ চৈ পড়ে যেত। টিভি রুমে গাদাগাদি করে বসতে হত। কে এসে আগে বসবে এ নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা চলতো। বিনোদনের একটাই মাধ্যম ছিল টিভিতে বিটিভির অনুষ্ঠান। সবাই দৌড়ে এসে তাড়াহুড়া করে সিট রাখার চেষ্টা করত। বিরাট ভিড় হত, জায়গা পাওয়া যেত না। আমি অবশ্য কখনো দেখতে যেতাম না।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে, তারা সবসময় মনে রাখবে আমরা উচ্চশিক্ষা লাভ করে উন্নত মানুষ হতে এসেছি। তাই আমাদের মনমানসিকতা, ধ্যান-জ্ঞান সুন্দর হওয়া উচিৎ।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দিনগুলো ছিল খুব আনন্দের, অনুভূতিময়, রোমাঞ্চকর
প্রফেসর ড. আবু বক্কর ছিদ্দিক, সাবেক চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৭৫ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগে। মানুষকে জানা এবং বোঝার জন্য মনোবিজ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, এটি বিজ্ঞান ও মানবিকের সমন্বয়মূলক বিষয়।
আমার বিভাগে অনেক জ্ঞানী-গুণী শিক্ষক ছিলেন; এঁদের মধ্যে ড. রওশন আলী স্যার অন্যতম। তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন, তাঁর সাথে আমার এখনও ঘনিষ্ঠতা আছে। আমি ভেবে খুব আনন্দ পাই, আমার প্রিয় শিক্ষক এখনও আমাকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখেন। রওশন আলী স্যারের ক্লাসে পাঠদান আমাদেরকে খুব আকৃষ্ট করত। ১৯৭৫ সালে আমরা ৯০ জন মানবিক বিভাগে ভর্তি হই। ধীরে ধীরে অন্য ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফারের কারণে এ সংখ্যা কমতে থাকে। তখন শায়লা জামান নামে একজন শিক্ষক ছিলেন, তিনি নাটকে অভিনয় করতেন; বর্তমানে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। লাকি ওয়াদুদ, হুমায়ূন কবির, কবির আহমেদ স্যারের সাথে এখনও যোগাযোগ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক স্মৃতি মনের কোণে ভেসে বেড়ায়, কারণ বন্ধুদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের কথা ভোলা যায় না। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অনেক বন্ধুর সাথে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। পুরোনো দিনের স্মৃতি -যা ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল, তা আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আমাদের সময়ে ছাত্র-রাজনীতি ছিল আদর্শের প্রতীক। ‘ডাকসু’ তখন সক্রিয় ছিল। এর নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র-সমাজ তাদের মতামত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করত। দেশের বর্তমান অনেক জাতীয় নেতা ডাকসু’র ফসল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সে সময়ও ছাত্র-রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর অর্থনীতির চাকা পেছন দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হলো। ‘ডাকসু’ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলো; ছাত্র-রাজনীতিকে কলুষিত করা হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৫ সালে ভর্তি হই, ১৯৮১ সালে মাস্টার্স করি, পরে বেরিয়ে যাই প্রিয় শিক্ষাঙ্গন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম এক বছর বাইরে থেকে ক্লাস করেছি, তবে দ্বিতীয় বছর থেকে কবি জসীমউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। বাসাবাড়িতে যেভাবে রান্না-বান্না হয়, সেরকম রান্না-বান্না বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে হতো না; সে রকম আশাও করা যায় না। মাছ আলাদাভাবে রান্না হতো, তরকারি আলাদা হাঁড়িতে। তবে পরিবেশনের সময় বাটিতে তরকারি দিয়ে তার উপর মাছের একটা টুকরা দেয়া হতো। তবে ডালের বিষয়টা ছিল ব্যতিক্রম। বড় ডেকচিতে ডাল রান্না করা হতো, এক কেজি দিয়ে ৫শ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা থাকত, তাই খাওয়ার সময় ডালের পানিই পেতাম, ডাল পেতাম না। ডাল না থাকলেও ডালের ভিটামিনতো ছিল -এটা অস্বীকার করা যায় না। হল জীবনের অনেক স্মৃতি, যা বলে শেষ করা যাবে না। তবে একটি কথা সত্য, হলের খাবারের মান তেমন ভালো না হলেও হলের পরিবেশ ভালো ছিল; কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ছিল। আমরা বেশ সচ্ছন্দ ও স্বাধীনভাবে হলে থেকেছি। অনেক রাতঅবধি কথাবার্তা গল্পগুজবে কাটিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার মধ্যে একটা আনন্দ ছিল। বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিয়েছি অবাধে। জসীমউদ্দীন হলের ৩১০ নম্বর রুমে আমি অবস্থান করতাম, মনে হয় আমি এখনও হলের সেই কক্ষেই আছি। আর্টস বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায় আমাদের মনোবিজ্ঞানের ক্লাস নেয়া হতো। আবাসিক হলের ৩য় তলা থেকে নেমে একাডেমিক ভবনের ৩য় তলায় ওঠার মধ্যে একটা সুন্দর যোগসূত্র ছিল; ৩ আমাকে ছাড়েনি! বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো ছিল খুব আনন্দের, অনুভূতিময়, রোমাঞ্চকর। আমরা গরিব দেশের শিক্ষার্থী, কিন্তু ক্লাসে প্রবেশ করলে সে গ্লানির কথা মনে আসত না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দেখে মনে হতো এটি বিদেশের কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস। আমি আমার অনুজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলব, তোমরা শিক্ষা কার্যক্রমে একনিষ্ঠ হবে; এর কোনো বিকল্প নেই। শ্রেণিকক্ষে যে পাঠদান করা হয় তাতে নিবিষ্ট হয়ে মনোযোগ দিতে হবে, লেকচার ফলো করে পরে নোট নিতে হবে, তাহলে পরীক্ষার খাতায় যে উত্তর দেবে তা ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ; এমন কোনো বই বা জার্নাল নেই, যা এ লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে না। এ লাইব্রেরি ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করে, নোট নিয়ে পড়ালেখা করলে তোমরা অনেক সমৃদ্ধ হবে, তোমাদের মেধার বিকাশ ঘটবে।
তোমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে পড়ালেখা শেষ করে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হবে, আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণে কাজ করবে। উদার মন-মানসিকতা থাকলে কর্মজীবনের ফাঁকে ফাঁকে সামাজিক কাজ করা কঠিন কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রপত্রিকা যারা বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ রচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভান্ডার পূর্ণ করার কাজ করছে, সেসব পত্রপত্রিকা নিয়মিত পড়তে হবে। এতে তোমরা অনেক সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। তোমাদের মধ্য থেকে গড়ে উঠবে ভবিষ্যৎ কর্ণধার।
-অনুলিখনেঃ মোহাম্মদ মোস্তফা