বিশেষ খবর



Upcoming Event

বিইউএফটি ভিসি ড সৈয়দ মাসুদ হোসেন এর সাক্ষাৎকার

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রিয় মানুষের মুখোমুখি
img

প্রফেসর ড. সৈয়দ মাসুদ হোসেন বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে কর্মরত আছেন। তিনি বিইউএফটিতে যোগদানের পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগে সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হিসেবে চার বৎসর দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৬১ সনে সরকারি ল্যাবরেটরী স্কুলে প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় কমার্স বিষয় থেকে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক লাভ করেন। সরকারি ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৯ সনে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য অনুষদের বি.কম (সম্মান) এর ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৫ সনে (১৯৭৩ সনের ডিগ্রি) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর ফলাফল প্রকাশের ১ মাসের মধ্যে মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ সনে তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন।
শিক্ষাজীবনে তার সবগুলো অর্জনই প্রথম শ্রেণির। ১৯৭৭ সনে তিনি আইন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ভারত সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৮৩ সনে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯২ সনে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ব্যবসায় শিক্ষা ও গবেষণায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৩ সনে দক্ষিণ এশিয়ায় Who is Who in Management এর তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সিনিয়র ফুলব্রাইট ফেলোশিপ নিয়ে তিনি কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্টডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন।
তিনি তাঁর নিজ বিষয়ে স্বনামধন্য গবেষক ও সুলেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ কর্মজীবনে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য জার্নালে তার ৩৯টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার সরাসরি নেতৃত্বে ৪টি এবং সহযোগী গবেষক হিসেবে ৫টি গবেষণা সম্পন্ন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নের জন্য তিনি ৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২জন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মেলনে ২০টিরও বেশি গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেছেন যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল মূল প্রবন্ধ। তিনি দেশি-বিদেশি ৩১টি সম্মেলনে ডেলিগেট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১২টিরও বেশি গবেষণা কাজে পরামর্শক ও সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন, তন্মধ্যে ২টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট রিপোর্ট ও ৩টি কেস স্টাডি আছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য গবেষণা পদ্ধতি শিক্ষাদানে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন প্রশিক্ষক। তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি প্রণয়নেও দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে ড. সৈয়দ মাসুদ হোসেন নেদারল্যান্ড সরকারের NICHE/BGD/199) সহায়তা প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশের প্রকল্প পরিচালক। এ ছাড়া নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের SMART 2020-EU প্রজেক্টের অন্তর্গত বিশ্বের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ অংশের পরিচালক। দু’টি প্রকল্পই বর্তমানে বিইউএফটিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি বিভিন্ন শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য; তন্মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাউন্টিং এলামনাই (DUAA), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি (BEA) এবং ওল্ড ল্যাবরেটরিয়ানস এসোসিয়েশন (OLSA) অন্যতম। তাছাড়া তিনি IAT এর ফেলো এবং CFE, USA এর সহযোগী সদস্য। ২০১৫ সালের মে মাসে তিনি উচ্চতর শিক্ষাক্ষেত্রে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ সমিতি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন। প্রফেসর ড. সৈয়দ মাসুদ হোসেন বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে ১৯৫২ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নীলুফা হোসেন এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। পারিবারিক জীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) এর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সৈয়দ মাসুদ হোসেন এর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকায় সম্প্রতি দেয়া সাক্ষাৎকার পাঠকের জন্য উপস্থাপন করা হলো-
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করবেন কী?
সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে আমার কর্মের পরিধি ছিল ছোট, অর্থাৎ একটি বিভাগের শিক্ষক এবং একটি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরিসর ছোট হলেও আমি আমার মেধা এবং শ্রম দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে অবদান রেখেছি এবং সতীর্থ শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছি। সৃজনশীল প্রকাশনা ও গবেষণা পরিচালনা, সময়ানুবর্তিতা এবং প্রশাসক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকা আমার বৈশিষ্ট্য ছিল।
বর্তমানে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি এর মতো একটি বড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় আমার কাজের পরিসর ও পরিধি অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যেহেতু আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় একটি বিভাগে তিন বছর যাবৎ চেয়ারম্যান, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর যাবৎ ডিন এবং বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলাম, তাই বর্তমান দায়িত্ব আমার কাছে মোটেও কঠিন মনে হয়নি। আমি বর্তমান দায়িত্বকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যা কিছু করা দরকার তা করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছি।
দায়িত্ব গ্রহণের পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো -সিলেবাস ও কারিকুলাম ঠিক করা, বিভাগ ও অনুষদগুলোর জন্য যোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বেঁধে দেওয়া শর্তসমূহ প্রতিপালন। বিশেষ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসের উন্নয়ন সম্ভবত আমরা স্বল্পতম সময়ে করতে পারবো। বলতে গেলে নতুন পুরাতন সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমার বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। মাত্র সাড়ে তিন বছরে এর নাম ও খ্যাতি যেভাবে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে আমি গর্বিত। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা আমি এখানে কাজে লাগাচ্ছি এবং নিশ্চিতভাবেই সফল হবার আশা করছি।
বি ক্যাঃ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোজনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকলে আশির দশকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলাম। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন যে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ না করলে অবকাঠামো ও শিক্ষা উপকরণ উন্নত মানের করা যায় না। আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শতভাগ ভর্তুকি তুলে নিলে বোঝা যেত যে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য কত টাকা আদায় করা প্রয়োজন হতো। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বিদেশে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশে পাঠাতেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সে সমস্যার সমাধান করেছে। সময়ের সাথে সাথে বোঝা যাচ্ছে যে, কোনটি ভালো এবং কোনটি খারাপ বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি খাতে খারাপ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অবস্থাতেই টিকে থাকতে পারবে না। তাদের মৃত্যু সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উন্নত হওয়া এবং ছাত্র-অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করাই টিকে থাকার শর্ত। আমি মনে করি আমাদের জন্য এটা অনেক ভালো হয়েছে। ভালো প্রতিষ্ঠানকে পরিচর্যা ও খারাপটিকে শাস্তি বিধানের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রের দৈন্য ও অব্যবস্থা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। বি ক্যাঃ বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে কী?
সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ক্লাসরুম ও ল্যাবরেটরিকে স্মার্ট বানাতে হবে। প্রতিটি কক্ষে ল্যাপটপ, ওয়াই ফাই ইন্টারনেট এবং ওভারহেড প্রজেক্টরসহ অন্যান্য আধুনিক শিক্ষা উপকরণ থাকতে হবে। কাগজের ব্যবহার কমিয়ে বইপত্র এবং অন্যান্য অডিও ভিজুয়াল উপকরণ নিজ নিজ ল্যাপটপের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা সংরক্ষণ করবে। শিক্ষক-ছাত্র/ছাত্রী-বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষসমূহের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হবে ই-মেইল/স্কাইপের মাধ্যমে। ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ছাত্রজীবন শেষে ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণ পর্যন্ত সবকিছুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারের মাধ্যমে সফ্টওয়ার দ্বারা পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে মেনু এবং লিংক এর মাধ্যমে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী তার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সব ধরনের সেবা পাবে। তথ্য প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার ছাড়া ভবিষ্যতে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় কল্পনাও করা যায় না। বি ক্যাঃ গুণগত শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষকের স্বল্পতা প্রতীয়মান, এ সমস্যা মোকাবিলায় করণীয় সর্ম্পকে বলবেন কী?
সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ এটি এমনই এক সমস্যা যা থেকে সহসাই মুক্ত হওয়া যাবে না । মেধাবী শিক্ষক আকর্ষণ করতে হলে ভালো বেতন ও আর্কষণীয় পরিবেশ দিতে হবে। গবেষণার সুযোগ করে দিতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এত বেশি ক্লাস দেওয়া হয় যে তাতে শিক্ষকতার মান বজায় থাকে না গবেষণা তো দূরের কথা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা করার আগে প্রশিক্ষণেরও কোনো সুযোগ নেই। ভালো ছাত্র হলেই সব সময় ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। শিক্ষক হতে গেলে কিছু অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়। আশার কথা এই যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে আজকাল শিক্ষাছুটি এবং গবেষণা ফান্ড দেয়া হচ্ছে (যেমন আমরা করছি)। প্রকাশনার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তার শিক্ষকতার মূল্যায়ন গ্রহণ করা হচ্ছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত অবদান রেখে চলছে। তরুণ মেধাবীরা এবং বিদেশে শিক্ষা গ্রহণ শেষে আগতরা অধিক সংখ্যক এ পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি পরবর্তীতে একসময় আসবে যখন উচ্চ মেধাসম্পন্ন ও যোগ্য ব্যক্তিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নেয়াকে প্রাধান্য দেবে।
বি ক্যাঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় এক্রিডিটেশন কাউন্সিলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলবেন কী?
সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন HEQEP প্রজেক্টের অধীনে এক্রিডিটেশন কাউন্সিল এ্যাক্ট চূড়ান্ত করেছে এবং তা বর্তমানে সরকারের সম্মতির অপেক্ষায় আছে। এটি চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ায় আমরা অনেকেই অংশগ্রহণ করেছি এবং এটির যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে মান বজায় না রেখে যারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা এতে আটকে যাবেন। প্রতিটি প্রোগ্রাম ও ডিগ্রির সিলেবাস, শিক্ষকবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ একটি মানদন্ডে ফেলে যাচাই করা হবে এবং স্বীকৃতি দেয়া হবে। স্বীকৃতি দেবেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ সমন্বয়ে গঠিত কাউন্সিল। যারা স্বীকৃতি পাবেন না তারা বলতে পারবেন না যে তাদের প্রোগ্রাম স্বীকৃত। যারা স্বীকৃতি পাবেন ছাত্র-ছাত্রীরা শুধুমাত্র তাদেরকেই গ্রহণ করবে। এই গ্রহণ এবং বর্জন প্রক্রিয়াই পরিশেষে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিশোধন করবে। আমি জোরালোভাবে এটি সমর্থন করি। বিদেশে এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং এর মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্রমাগত চাপে রাখা হয় যাতে তারা শিক্ষার মানের সাথে সমঝোতা করে অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুঁকে না পড়ে।
বি ক্যাঃ ঢাকা ইউনিভার্সিটি একাউনিন্টং এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে দু’একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের কথা জানাবেন কী? সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত থাকার সময় আমি একাউন্টিং এলামনাই এর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই বৎসর দায়িত্ব পালন করি। সে সময় আমার সাথে জেনারেল সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বি.কম. (সম্মান) ও এম.কম হিসাববিজ্ঞানের ১ম ব্যাচের এলামনাই এবং আমার প্রাক্তন ছাত্র কামরুল ইসলাম, এফসিএ। অত্যন্ত গোছালো প্রকৃতির কামরুলের কাজ ছিল অত্যন্ত নিখুঁত এবং এলামনাই এসোসিয়েশনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমরাই প্রথম সিদ্ধান্ত নেই যে, কার্যকরী কমিটির দুই বৎসর মেয়াদে একবার হবে পুনর্মিলনী এবং আরেকবার হবে পিকনিক। সেই থেকে সেটাই চালু আছে। আমাদের সময় এলামনাই এসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হয় এবং ব্যাচভিত্তিক এলামনাই গঠনকে উৎসাহিত করা হয়। ব্যাচভিত্তিক সংগঠনগুলোর জন্য আলাদা বিধিবিধানের খসড়া করা হয়। এলামনাই এসোসিয়েশনে বিভাগের সম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়। এখানে একজনের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, তিনি হচ্ছেন একাউন্টিং এলামনাইয়ের উদ্যোক্তা এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট ড. এম হারুনুর রশীদ। তার পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা ছাড়া এই সংগঠন এই পর্যায়ে আসতে পারতো না। এখনও তিনিসহ আমরা এর পরামর্শক হিসেবে প্রয়োজনে ভূমিকা পালন করে থাকি।
বি ক্যাঃ ঢাবি একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি এবং স্থায়ী তহবিল সৃষ্টি করাই আমাদের এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। কিছু কিছু কার্যক্রম, যা শুধুমাত্র এসোসিয়েশনের নিজস্ব তহবিল দিয়ে পরিচালনা করা উচিৎ যেমন, বৃত্তি প্রদান। স্থায়ী তহবিলের মুনাফা থেকে এর ব্যয় নির্বাহ করতে হবে। আবার পুনর্মিলনী ও পিকনিক সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে করতে হবে। এই দুটি অনুষ্ঠানে চাঁদার পরিমাণ তা-ই হওয়া উচিৎ, যাতে এগুলোর ব্যয় সম্পূর্ণভাবে মেটানো সম্ভব। ভর্তূকি দিয়ে অথবা কোনো সদস্যের কাছ থেকে দান গ্রহণ করে তা করা উচিৎ নয়। আর্থিক শক্তি যেকোনো সংগঠনের মৌলিক ভিত্তি এবং এটাই পরবর্তীতে সংগঠনের স্থায়িত্ব এবং বেড়ে ওঠার নিয়ামক। এ ব্যাপারে আমার বিশদ চিন্তা মার্চ ২০১৩ এর পুনর্মিলনী স্যুভেনিরে লিখিত আকারে প্রকাশ করেছিলাম (পৃঃ ১১-১৪)। সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারা আমাদের অন্যতম ব্যর্থতা। বর্তমান কমিটির উচিৎ হবে ফলাফল প্রকাশের সাথেসাথে বিভাগের সহায়তায় প্রতিটি এম.বি.এ. উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীর নাম আজীবন সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।
বি ক্যাঃ বিইউএফটি’র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার মূল্যবান পরামর্শ বলবেন কী?
সৈয়দ মাসুদ হোসেনঃ আমি মনে করি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি আলাদা মান ও সংস্কৃতি গঠনের লক্ষ্যে সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাবৃন্দকে নিরলসভাবে ও সততার সাথে কাজ করতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একে আপন ভাবতে হবে এবং এর সাফল্য-ব্যর্থতার অংশীদার হতে হবে। বিইউএফটি একটি উদীয়মান বিশ্ববিদ্যালয় যার অত্যন্ত ভালো শুরু আমরা করে দিয়েছি কিন্তু এটিকে উন্নত থেকে উন্নতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিক্ষকবৃন্দের ওপর। প্রত্যেক শিক্ষকের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ সময়ক্ষেপণ না করে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা ও বিদেশের একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষকবৃন্দ যদি নিজেদেরকে উন্নত করে উচ্চতর পর্যায়ে এবং পদে নিয়ে যেতে না পারেন তবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। যিনি শিক্ষকতা করে আনন্দ না পান তিনি কোনদিনও ভালো শিক্ষক হতে পারবেন না। বর্তমানে আমাদের সাথে যে অনেকগুলো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা স্মারক রয়েছে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বহুমাত্রিক রূপ দিতে হবে। শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন এবং বিতরণ নয় বরং এটিকে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img