যুবশক্তির উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-সেবায় অনন্য অবদান লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল
আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা, বিশ্বের সকল প্রান্তে যার শিকড় বিস্তৃত, যার কার্যক্রম বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করেছে সে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল প্রথমে ব্যক্তিউদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১৭ সালের ৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতিষ্ঠাতা মেলভিন জোন্স, যিনি ছিলেন চিকাগোর একজন ব্যবসায়ী। এর প্রধান কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস এর ওয়াক ব্রুকে।
ক্লাবের যাত্রা শুরু হয় ধর্ম নিরপেক্ষ সেবা ক্লাব হিসেবে। সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যাতে এতে সম্পৃক্ত হতে পারে এজন্য শুরু থেকেই একে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, মানব কল্যাণব্রতী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
মেলভিন জোন্সকে তাঁর সহকর্মীগণ প্রশ্ন করেছিলেন যারা নিজেদের উদ্যোগ, মেধা এবং উচ্চাকাক্সক্ষা গুণে সফলতা অর্জন করবেন, তারা তাদের মেধাকে কমিউনিটির উন্নয়নে কাজে লাগাবেন কি? জবাবে মেলভিন বলেছিলেন তোমরা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবে না, যদি তোমরা অন্যদের জন্য কিছু না করো। সাফল্যকে ব্যক্তিস্বার্থের মধ্যে ধরে না রেখে একে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে ছড়িয়ে দেয়ার কথা সেদিন উচ্চারিত হয়েছিল। সে থেকেই কমিউনিটি উন্নয়নের তত্ত্ব সমাজসেবীদের চিন্তায় জাগ্রত হয়। বিশ্বের লায়ন্সরাও কমিউনিটি সেবাকেই প্রধান উপজীব্য করে তাদের কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
লায়ন্স এর মটো হলো আমরা সেবা করি। স্থানীয় ক্লাবগুলো ডায়বেটিস সচেতনতা, যুব উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পরিবেশ বিষয়ক ইস্যু এবং অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে থাকে।
লায়ন আন্দোলনের উদ্দেশ্য
১। লায়ন্স ক্লাব নামে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবসমূহের কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি গড়ে তোলা;
২। লায়ন্স ক্লাবের কর্মসূচি এবং প্রশাসনের কাজের ধারার উন্নয়নের সমন্বয় করা;
৩। বিশ্বের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ার চেতনাকে উজ্জীবিত ও পৃষ্ঠপোষকতা করা;
৪। সুশাসন ও সুনাগরিকত্ব -এ আদর্শকে ধারণ করা;
৫। কমিউনিটির নাগরিক, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ;
৬। বন্ধুত্বের বন্ধন, সুসম্পর্ক এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে ক্লাবগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা;
৭। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা, অবশ্য এতে বিতর্কিত রাজনীতি এবং ধর্মীয় ভেদাভেদের ওপর আলোচনা থাকবে না;
৮। কোনো রকম ব্যক্তিগত আর্থিক পুরস্কারের আশা না করে সেবাধর্মী যে সব মানুষ কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করতে চায় তাদেরকে উৎসাহিত করা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, পেশা, গণকল্যাণমূলক কাজ এবং বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির উৎসাহ দান এবং উচ্চ নৈতিক মান প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা।
দাতব্য কর্মকান্ড
সার্ভিস ক্লাব সংগঠন হিসেবে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল -এর বিদেশ দৃষ্টি থাকে কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে লায়ন্স ক্লাব যে তহবিল গড়ে তোলে তা দাতব্য কাজে ব্যয় হয়, প্রশাসনিক ব্যয় কড়াকড়িভাবে আলাদা রাখা হয় যা সদস্যগণের চাঁদা থেকে বহন করা হয়। কোনো ক্লাবের দাতব্য হিসাব-এর জন্য সংগৃহীত টাকা অন্য কোনো একক ক্লাবের স্থানীয় কমিউনিটির কল্যাণে নির্দিষ্ট প্রকল্পে পাঠানো হয়।
সেবা প্রকল্প
লায়ন্স ক্লাব ব্যাপকভিত্তিক সেবা প্রকল্পের পরিকল্পনা করে এবং তাতে অংশ নেয় যা আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাবের উদ্দেশ্যের সম্পূরক এবং স্থানীয় কমিউনিটির প্রয়োজন মেটায়। আন্তর্জাতিক প্রয়োজনেও তহবিল সংগ্রহ করা হয়। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সংঘটিত ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি মেটানোর কাজে টাকা পাঠানো হয়।
অন্ধদের ব্যাপারে লায়ন্স তার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে। এ দিকটা তাদের বিশেষ নজরে আসে যখন মহীয়সী নারী হেলেন কেলার ১৯২৫ সালের ৩০ জুন সেডার পয়েন্ট ওহিওতে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে ভাষণ দেন -যেখানে তিনি লায়নদের নাইটস অব দ্য ব্লাইন্ড হবার আহ্বান জানান।
কমিউনিটির মানুষের শ্রবণ সমস্যা এবং ক্যান্সার স্কীনিং প্রকল্পের ক্ষেত্রে লায়ন্স দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ৩০ বছরের উপর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে লায়ন্স। ২০০১ সালে লায়ন্স ইয়ার এন্ড হিয়ারিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। লায়ন্স পার্থ-এ লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। ব্রিসবেন, কুইন্সল্যান্ড-এ লায়ন্স মেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বেশ কয়েকজন গবেষকের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করছে। গবেষক ইয়ান ফ্রেজারের প্রাথমিক গবেষণার ফলাফলে এইচআইভি ভ্যাকসিন -এর উন্নয়ন হয়েছে।
১৯৪৫ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations) এর প্রতিষ্ঠা লগ্নে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, যেটি ছিল অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (NGO), ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইউনাইটেড নেশনস চার্টার ড্রাফ্টিং এর ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিল। লায়ন্স ক্লাব ব্রিজ হলো আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন-এর মটো হলো- লায়ন্স লায়ন্সদের সাহায্য করছে মানবতার সেবা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে। লোকাল লায়ন্স ক্লাবের পক্ষে মানব কল্যাণমূলক ব্যাপক ব্যয়বহুল কর্মসূচি -সেগুলোতে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল আর্থিক সহযোগিতা দান করে। লায়ন্স ফাউন্ডেশন লায়ন্স ক্লাবগুলোতে সহযোগিতা দেয়, যাতে স্থানীয় কমিউনিটির ওপর এর প্রভাব পড়ে এবং আশে পাশের এলাকায়ও এর প্রভাব বিস্তার হয়।
লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের প্রধান প্রকল্প হলো হৃ চাইল্ডহুড ব্লাইন্ড প্রজেক্ট; হৃ লায়ন্স আই হেলথ প্রোগ্রাম; হৃ রিভার ব্লাইন্ডনেস/ট্র্যাকোমা; হৃ সাইট ফার্স্ট চায়না এ্যাকসন; হৃ সাইট ফর কিড্স।
অন্যান্য সাইট প্রোগ্রাম
- ক্রোর ৪
প্রিস্কুল,
- ভিশন স্ক্রীনিং।
ডিজেবেলিটি প্রোগ্রাম্স
-লায়ন্স ওয়ার্লড
সার্ভিস ফর দি ব্লাইন্ড;
- ডায়বেটিস
প্রিভেনশন/ট্রিটমেন্ট;
- হেবিটাট ফর
হিউম্যানিটি পার্টনারশিপ;
-লায়ন্স
এ্যাফোর্ডেবল হিয়ারিং এইড প্রজেক্ট;
- লো ভিশন, স্পেশ্যাল অলিমপিক ওপেনিং আইজ।
ইয়থ প্রোগ্রাম
- লিও ক্লাবস,
- লায়ন্স কোয়েস্ট,
- লায়ন্স কাব্স।
মেম্বারশিপ
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এর গঠনতন্ত্র এবং উপধারা অনুসারে ‘কেবলমাত্র আমন্ত্রিত’ ব্যক্তি মেম্বার হওয়ার দরখাস্ত করতে পারবেন যাকে লায়ন্স সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য স্পন্সর করবেন। বোর্ড অব ডাইরেক্টরস এর সভায় মেম্বারশিপ অনুমোদন করা হয়। মাসিক অথবা পাক্ষিক হিসেবে আয়োজিত সভায় উপস্থিত থাকতে হয়।
১৯৮৭ সালে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের গঠনতন্ত্রের কিছু সংশোধন হয় যাতে নারীদের জন্য ক্লাবে যোগদানের সুযোগ দেয়া হয়। এরপর থেকে অনেকগুলো ক্লাব মহিলা সদস্য গ্রহণ করেছে, অবশ্য সবাই পুরুষ সদস্য -এমন ক্লাবেরও অস্তিত্ব রয়েছে। ২০০৩ সালে ১৭ সদস্যের লায়ন্স ক্লাব অর্চেসটর -এর ৮ জন সদস্য পদত্যাগ করেন মহিলা সদস্য যোগদানের প্রতিবাদে। এ বিপর্যয়ের পরও ক্লাবটি ১৯ সদস্য নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে যার মধ্যে ৭ জন মহিলা। লায়ন্স ক্লাবসমূহে মহিলাদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
বিশ্বব্যাপী লায়ন্স ক্লাব
১৯২০ সালের ১২ মার্চ কানাডার প্রথম ক্লাব অন্টারিও-এর উইন্ডসরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর লায়ন্স ক্লাবের আবেদন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সারা বিশ্বে এখন লায়ন্স ক্লাবের সংখ্যা ১ কোটি ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৬৮৩টি।
লিও ক্লাবস
কমিউনিটি সার্ভিস এবং বিভিন্ন উদ্যোগে যুব বয়স থেকে যোগদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে লিও ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রকৃতপক্ষে এটি লায়ন্স ক্লাবের কর্মপরিধির সম্প্রসারণ। কোনো প্যারেন্ট লায়ন্স ক্লাবকে লিও ক্লাব প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে হয়। লিও ক্লাব স্কুল-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, সদস্যদের বয়সসীমা ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ১৩৯ টি দেশে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার লিও ক্লাব লায়ন্স ক্লাবের স্পন্সরে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক কনভেনশন
বিশ্বের বিভিন্ন শহরে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় যাতে বিভিন্ন ক্লাব সদস্যরা পরস্পরের সাথে মিলিত হতে পারে, পরের বছরের জন্য কর্মকর্তা নির্বাচন করতে পারে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। কনভেনশনে লায়ন সদস্যগণ নির্বাচন, প্যারেড, ডিসপ্লেতে অংশ নিতে পারে, ফান্ডরেজার ও সার্ভিস প্রজেক্ট সম্পর্কে আলোচনা করতে পারে, ট্রেড পিন ও অন্যান্য সুভ্যেনির সম্পর্কেও মতামত ব্যক্ত করতে পারে। প্রথম কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় ১৯১৭ সালে টেক্সাস এর ডালাসে। ২০০৬ সালের কনভেনশন নিউ অরলিন্স -এ অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন ক্যাটারিনার কারণে ভেন্যু পরিবর্তিত হয়ে তা অনুষ্ঠিত হয় বোস্টন-এ।
লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর যাত্রা
চট্টগ্রামে ১৯৫৮ সালে এম আর সিদ্দিকীর উদ্যোগে লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে লায়ন্স ক্লাবের কার্যক্রমের সূচনা ঘটে। একই সময়ে ঢাকায় লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল এর আরেকটি ক্লাব গঠন করা হয় এটির নাম ছিল লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ১৯৫৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই ক্লাবটিকে এবং একই বছরের ২ এপ্রিল চট্টগ্রাম লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালকে বিধিবব্ধ ক্লাবের মর্যাদা প্রদান করে। উল্লেখ্য, ঐ সময়ে এ দু’টি লায়ন্স ক্লাব লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট ৩০৫ (পাকিস্তান) এর আওতাধীন ছিল।
১৯৬২-৬৩ সালে ৩০৫ নম্বর ডিস্ট্রিক্টকে একটি মাল্টিপল ডিস্ট্রিক্ট এ রূপান্তরিত করে দু’টি সাব ডিস্ট্রিক্ট যথা ৩০৫ ডব্লিউ (পশ্চিম পাকিস্তান) এবং ৩০৫-ই (পূর্ব পাকিস্তান) গঠন করা হয়। লায়ন এম আর সিদ্দিকী ছিলেন ৩০৫-ই সাব ডিস্ট্রিক্ট এর প্রথম সাময়িক ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর। তিনি ১৯৬২-৬৩ এবং ১৯৬৩-৬৪ সালে পরপর দুই মেয়াদে এই পদ অলংকৃত করেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি মাল্টিপল ডিস্ট্রিক্ট এর চেয়ারম্যান ছিলেন।
স্বাধীনতাত্তোরকালে লায়ন এম আর সিদ্দিকী পুনরায় বাংলাদেশে লায়ন আন্দোলন সংগঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাবডিস্ট্রিক্টকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিস্ট্রিক্ট এ উন্নীত করে এর সাময়িক ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর হিসাবে তাঁকে ১৯৭২-৭৩ এবং ১৯৭৩-৭৪ মেয়াদের জন্য নিয়োগ করা হয়। লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ ঐ সময়ে বাংলাদেশের ৩৭টি লায়ন্স ক্লাব নিয়ে গঠিত হয়েছিল। ক্লাবগুলির সদস্য ছিলেন ১,২৫০ জন লায়ন। ১৯৭৪-৭৫ সালে নতুন ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হন এম এ খালেদ। লায়ন্স ক্লাবগুলোর সদস্য সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশে এগুলির কার্যক্রমও বিস্তৃত হতে থাকে। লায়ন্স আন্দোলনের দ্রুত বিস্তৃতির ফলে ১৯৮৭-৮৮ সালে লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট ৩১ কে বিভক্ত করে ৩১৫এ ও ৩১৫বি নামে দু’টি সাব-ডিস্ট্রিক্ট গঠন করা হয়। লায়ন মোসলেম আলী খান এবং লায়ন শফিউর রহমান যথাক্রমে এ দু’টি শাখার প্রথম ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নিযুক্ত হন।
বাংলাদেশে লায়ন আন্দোলনের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত হওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯৯৫-৯৬ সালে সেগুলিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ কে পুনরায় দু’ভাগে বিভক্ত করে ৩১৫এ-১ ও ৩১৫এ-২ নামকরণ করা হয়। লায়ন জাকের আহমদ এবং লায়ন এ আর আতিক যথাক্রমে নবসৃষ্ট এ দু’টি ডিস্ট্রিক্ট এর প্রতিষ্ঠাতা গভর্নর নিয়োজিত হন। এর আগে ১৯৯৩-৯৪ সালে ৩১৫বি ডিস্ট্রিক্ট বিভক্ত করে ৩১৫বি-১ এবং ৩১৫বি-২ ডিস্ট্রিক্ট গঠন করা হয়। আতাউল করিম ৩১৫বি-১ ডিস্ট্রিক্ট এবং কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ৩১৫বি-২ ডিস্ট্রিক্টের প্রতিষ্ঠাতা গভর্নর ছিলেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-১ কে ভেঙ্গে নতুন আরেকটি ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-৩ গঠন করা হয়। আহসান নাজির এই ডিস্ট্রিক্টের প্রথম গভর্নর নির্বাচিত হন। পরের বৎসর অর্থাৎ ১৯৯৭-৯৮ সালে একই প্রয়োজনে ৩১৫বি-২ ডিস্ট্রিক্ট বিভক্ত করে লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-৪ গঠিত হয়। এর প্রথম গভর্নর হয়েছিলেন লায়ন আব্দুল গাফফার দোভাষ। বর্তমানে বাংলাদেশে লায়ন আন্দোলন কার্যক্রম একটি মাল্টিপল ডিস্ট্রিক্ট এবং ৬টি ডিস্ট্রিক্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এগারো হাজারেরও অধিক লায়ন সদস্য এবং প্রায় তিন হাজার লিও সদস্য এতে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। উল্লেখ্য, লায়ন্স ক্লাবগুলির সাথে যুবকদের সম্পৃক্ত করতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে পৃথকভাবে লিও ক্লাবগুলিকে সংগঠিত করা হয়।
লায়ন্স ক্লাবগুলির সেবা কার্যক্রম ও বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকায় ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) প্রতিষ্ঠা। এই ফাউন্ডেশন একটি আশি শয্যার বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল ও স্নাতকোত্তর চক্ষু চিকিৎসা ইনস্টিটিউট পরিচালনা করে আসছে। দেশের ৬টি লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট এর শীর্ষ সংগঠন মাল্টিপাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অংশে সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিক্ট ও ক্লাবগুলির সেবা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত প্রকল্পগুলির মধ্যে নরসিংদীর লায়ন্স প্রোগ্রেসিভ আই হসপিটাল, টাঙ্গাইলে লায়ন নজরুল ইসলাম কলেজ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লায়ন ফিরোজুর রহমান রেসিডেনশিয়াল একাডেমি উল্লেখযোগ্য।
সকল লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট এলাকায় মানবিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ইউনিটের পৃথক পৃথক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ-১ এর আওতাধীন এলাকায় যশোরে কপোতাক্ষ লায়ন্স আই হসপিটাল, খুলনা লায়ন্স হাইস্কুল, দিনাজপুরে ডিস্ট্রিক্ট আই হসপিটাল, রংপুরে লায়ন্স শিশু নিকেতন এতিমখানা এবং লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ এবং সৈয়দপুরে সৈয়দপুর লায়ন্স হাইস্কুল পরিচালিত হচ্ছে। ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-১ এর আওতায় রয়েছে সিলেটে মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার (সাফা হাসপাতাল) এবং ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-৪ এর অধীনে চট্টগ্রামে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের চক্ষু হাসপাতালটি ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেবামূলক কার্যক্রমের বাইরে বাংলাদেশের লায়ন্স ক্লাবগুলির অন্যতম সাফল্য হচ্ছে এম আর সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ঢাকায় ১৯৮৯ সালে ১৭তম আফ্রিকা ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের লায়ন্স ফোরাম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।
সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে বর্তমানে প্রায় ৪৬০টি লায়ন্স রোটারী ক্লাব তৎপর রয়েছে। এগুলির এগারো হাজারেরও বেশি নারী এবং পুরুষ সদস্য লায়ন্স আন্দোলনের আদর্শ বাস্তবায়নে নিবেদিত রয়েছেন। এ সকল সদস্যের চাঁদা বাবদ প্রদত্ত কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বিশেষ করে নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও অন্ধত্ব নিবারণের কাজে ব্যয় করা হয়। অসংখ্য মানবসেবাধর্মী কর্মতৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশে লায়নবাদ দিনদিন জোরদার হচ্ছে।
এডুকেশন ফর এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে লায়ন্স ক্লাবের নয়া ৬ ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর
এডুকেশন ফর এক্সিলেন্স বা উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা এ থিম ধারণ করে বাংলাদেশে লায়নিজম আন্দোলনে গতিবেগ সঞ্চারিত হচ্ছে। ২০১৫-’১৬ লায়ন বর্ষের জন্য নির্বাচিত বাংলাদেশের ৬ লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর শিক্ষা উন্নয়নে এ প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুউন্নত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে শিক্ষাকে মূল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা সকলের জানা যে, বর্তমান যুগকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বলে অভিহিত করা হয়।
সাফল্যের দ্বার খুলতে শিক্ষাই হলো একমাত্র চাবি। শিক্ষা আমাদেরকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে। মানুষের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, জীবনে বাস্তবতার মোকাবেলা করা, সাফল্য কিংবা ব্যর্থতাকে সহজভাবে গ্রহণ করার মনোবল একমাত্র শিক্ষাই দিতে পারে। শিক্ষা জ্ঞানের জন্য মানুষের মনে অহংকার জাগ্রত করতে পারে, যা মানুষকে সাফল্যের মাঝে বেঁচে থাকার জন্য প্রস্তুত করে। শিক্ষা আমাদের ভেতরের আত্মশক্তিকে জাগিয়ে তোলে, অন্তর্নিহিত দক্ষতাকে লালন করে, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে শেখায় এবং আমাদের নিজস্ব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর বের করতে সাহায্য করে। শিক্ষা সমাজকে অধিকতর উৎপাদনমুখী করে তোলে। শিক্ষিত তরুণরা সেবা কার্যক্রমে উদ্যোগী হয়; কারণ তারা যা অর্জন করেছে, তারা তার প্রসার করতে জানে।
বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের অগ্রসর হতে হচ্ছে। আমাদের সংবিধানের ১৭ ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে সমাজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান, জাতির প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত এবং উদ্বুদ্ধ নাগরিক সৃষ্টি করা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা দীর্ঘ ৩৩ বছর থেকে শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাই লায়ন গভর্নরগণের কোয়ালিটি শিক্ষা প্রসারে প্রত্যয়দৃঢ় ঘোষণা আমাদের আকৃষ্ট করেছে। আমাদের বিশ্বাস, ক্যাম্পাস এবং লায়ন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠান একই অঙ্গনে হাতে হাত ধরে কল্যাণমূলক কাজ করতে পারে। সেই প্রত্যাশায় বাংলাদেশে নবনির্বাচিত লায়ন্স গভর্নরদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ সাক্ষাৎ করে তাঁদের মতামত সংগ্রহ করেন, যা ক্যাম্পাস পত্রিকার কন্ট্রিবিউটর মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে এখানে সন্নিবেশিত হলো।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এমনই প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে
-ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ১, বাংলাদেশ
বিশিষ্ট সমাজ সেবক, শিক্ষানুরাগী, শিক্ষাদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব UCC গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী পিএমজেএফ লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ-১ বাংলাদেশ এর ২০১৫-’১৬ লায়ন্স বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন।
ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ভাটরা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী পাটওয়ারী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মোঃ আবদুল লতিফ পাটওয়ারী, মাতা রাহিমা খাতুন। এম এ হালিম পাটওয়ারীর শৈশব কেটেছে ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড় শ্যামল বাংলার বিস্তৃত অঙ্গনে।
ড. পাটওয়ারী প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন ভাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায় অতিবাহিত করেন পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিরোজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৯ম ও ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন হাজীগঞ্জ আমিন মেমোরিয়াল হাইস্কুলে; এ স্কুল থেকে ১৯৭৯ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এইচএসসি পাস করেন স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠান হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে ১৯৮৫ সালে অনার্স এবং ১৯৮৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন কৃতিত্বের সাথে। এরপর Institute of Accounting Technicians of Bangladesh থেকে (FAATB) ফেলো ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে MBA এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. হালিম পাটওয়ারী ২০০৩ এবং ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজির্স্টাড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
ছাত্র অবস্থা থেকেই শিক্ষকতা পেশার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে সহায়তাদান করে নিজের শিক্ষকতার ভিতকে সুদৃঢ় করেন। ১৯৮৬ সালে নীলক্ষেতস্থ আইসিএমএবি ভবনে UCC নামের প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয়। দেশের প্রায় সব ক’টি জেলায় UCC এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়ে ১০৭টি শাখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির শিক্ষা-সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অজর্ন করে।
ড. হালিম পাটওয়ারী আইডিয়াল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের স্বপ্ন দিয়ে তিনি গড়তে চান একটি বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধাবিকাশের সুযোগ পাবে, সুস্থ মূল্যবোধ লালনের মাধ্যমে খাঁটি মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে।
ড. হালিম পাটওয়ারী আইন শিক্ষা ও আইন চর্চার পাদপীঠ হিসেবে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আইডিয়াল ল’ কলেজ (ILC)। তিনি একটি অত্যাধুনিক আইডিয়াল ল’ চেম্বারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। উক্ত চেম্বার থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা কোর্টে প্রবেশ করার পূর্বেই প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে।
শিক্ষাব্রতী ড. এ হালিম পাটওয়ারী আবদুল হালিম পাটওয়ারী ফাউন্ডেশন (এএইচপিএফ) এর ফাউন্ডার ও চেয়ারম্যান। তিনি UCC গ্রুপের আজ্ঞাধীন আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (IIS), আইডিয়াল ল’ কলেজ (ILC), আইডিয়াল কমার্স কলেজ (ICC), আইডিয়াল ইউনিভার্সিটি (প্রস্তাবিত) এর ফাউন্ডার ও চেয়ারম্যান।
ড. আবদুল হালিম পাটওয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মেম্বার, মাসিক দি আইডিয়েল এর সম্পাদক, বাংলাদেশ কলেজ টিচার্স এসোসিয়েশনের ট্রেজারার, কী অফ নেশনস এ্যাওয়ার্ড, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন এর এডজাংক্ট মেম্বার, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির মেম্বার এবং AATB, ঢাবি রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট, ঢাবি এলামনাই, বিএলএফ, বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ ট্রাস্ট, অল কমিউনিটি ক্লাব লিঃ, চাঁদপুর জেলা সমিতি, গ্রেটার কুমিল্লা সমিতি এবং জাতীয় নজরুল সমাজের আজীবন সদস্য।
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা যে সর্বোৎকৃষ্ট, তা এম এ হালিম মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। সংবাদপত্র নিপীড়িতের কন্ঠস্বর, সমাজের দলিল এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি প্রকাশ করছেন ‘মাসিক দি আইডিয়াল’ যা ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
শিক্ষাব্রতী ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী ব্যবসায় শিক্ষায় আধুনিকতার ছোঁয়া মূলমন্ত্র ধারণ করে আইডিয়াল কমার্স কলেজ, স্বাস্থ্য সেবায় গড়ি দক্ষ কারিগর সেøাগান নিয়ে আইডিয়াল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিজ এলাকার মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন আবদুল হালিম পাটওয়ারী ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্স; যে কমপ্লেক্সে থাকছে স্কুল-কলেজ, মসজিদ এবং হাসপাতালসহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও তিনি গড়ে তুলেছেন আবদুল হালিম পাটওয়ারী ফাউন্ডেশন (AHPF); ইউনিভার্সেল ডেভেলপার্স এন্ড বিল্ডার্স লিঃ (UDBL)।
ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী সমাজসেবা ও সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বিভিন্নভাবে। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল নামক আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থায় লায়ন্স জেলা ৩১৫এ১ এ যোগ দেন। তিনি লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা গ্রীন রাজধানীর চার্টার প্রেসিডেন্ট। জেলার পাশাপাশি ক্লাব সংগঠনেও রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লিও ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্মুক্ত করেন মেধা ভিত্তিক লিও ইজমের পথ। তাঁর স্পন্সরশিপে প্রতিষ্ঠিত হয় লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা আইডিয়াল গ্রিন, লায়ন্স ক্লাব অব গাজীপুর আইডিয়াল। ২০০১-০২ লায়ন্স বর্ষে লাভ করেন জেলা গভর্নর স্বর্ণপদক। লায়নইজমে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ Lions Clubs International থেকে MJF এবং পরবর্তীতে PMJF পদকলাভ করেন।
ড. এম এ হালিম তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সংবর্ধিত হয়েছেন, লাভ করেছেন বিরল স্বীকৃতি ও সম্মাননা। বিশ্ববিশ্রুত মানবহিতৈষী সংগঠন লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনাল হতে শুরু করে দেশ-বিদেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রজ্জ্বোল কর্মজীবনের স্বীকৃতিদান করে তাঁকে করেছে গৌরবান্বিত। নিম্নে তাঁর অর্জিত কিছু স্বীকৃতি ও সম্মাননার তথ্য সন্নিবেশিত হলো।
-আন্তর্জাতিক পদক মেলভিন জোনস্ ফেলো (MJF) ২০০০ সাল ;
-আন্তর্জাতিক পদক প্রোগ্রেসিভ মেলভিন জেনস্ ফেলো (PMJF) ২০০৪ সাল, লায়ন্স ক্লাবস ইন্টরন্যাশনাল;
-সফেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদক ২০০২
-আন্তর্জাতিক ইসলামী সংগঠন WAMY পদক ২০০৩
-বৃহত্তর ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি ও ঢোলক (একটি ললিতকলা একাডেমি) স্বর্ণপদক ২০০৩
-ফুলকুঁড়ি আসর সম্মাননা পদক২০০৩
-কবি ফখরুখ আহমদ সম্মাননা পদক২০০৩
-কুমিল্লা সংস্কৃতিক ফোরাম সম্মাননা পদক২০০৩
-টেলিভিশন দর্শক ফোরাম এওয়ার্ড২০০৩, ২০০৪, ২০০৫
-শিশু-কিশোর সংগঠন তারকাঙ্গন স্বর্ণপদক২০০৪
-ফিন্যান্সিয়াল মিরর বিজনেস এওয়ার্ড২০০৪
-কথা ললিতকলা একাডেমি পদক২০০৪
-স্বাধীনতা সংসদ পদক২০০৪
-জতীয় কবি নজরুল সমাজ পদক২০০৭
-টেলিভিশন রিপোর্টাস এসেসিয়েশন শিক্ষা সম্মাননা পদক২০০৮
-চাঁদপুর জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকা শিক্ষা সম্মাননা পদক২০০৮
-Education Award(For ICC) ২০০৮
-Education Award (For UCC) ২০০৮
-দৈনিক চাঁদপুর জমিন শিক্ষা সম্মাননা পদক ২০০৮
-বাংলার মুখ সোসাইটি শিক্ষা সম্মাননা পদক ২০০৮
ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রাম্যমাণ প্রফেসর হিসেবে তিনি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর ও মালয়েশিয়া সফর করেন। এছাড়া অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া ভ্রমণ করেন। তিনি ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধনমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত প্রথম ICT বিশ্ব সম্মেলন ২০০৩-এ যোগ দেন। ড. পাটওয়ারী পবিত্র হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার সৌদী আরব গমন করেন।
ড. হালিম পাটওয়ারীর স্ত্রী দিলারা বেগম এমএ (ডিইউ) গৃহিণী। তাঁরা দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক-জননী। মেয়ে তানজীম হালিম লামিয়া এবং ছেলে লাফসান হালিম লাজিম ও আহনাফ বিন হালিম। তারা এখনও অধ্যায়নরত।
বরেণ্য শিক্ষাব্রতী লায়ন ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী
ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন
এ দিনটির অপেক্ষায় আমি দীর্ঘ ২০ বছর শ্রম দিয়েছি। চেষ্টা করেছি মানবতার সেবায় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার। আমার এ প্রাপ্তিতে আজ আমি আনন্দিত, সেইসাথে আমার লায়ন্স জেলার সকল সদস্যের প্রতি রইল লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।
ছাত্রাবস্থায় দেশ-সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করার একটা সদিচ্ছা আমার মনে কাজ করতো। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার প্রেরণা থেকে এ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম।
তিনি বলেন এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, দুস্থ মানুষের উন্নতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে জনগণের জন্য কাজ করা যায়। ক্লাবের সদস্যগণ নিজেদের অর্জিত আয়ের একটা অংশ কন্ট্রিবিউট করি; সব সদস্যের কন্ট্রিবিউশন একত্র করে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকি। তবে এ বছর আমরা ৬ ডিস্ট্রিক্ট মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি Education for Excellence প্রতিষ্ঠায় কাজ করব। তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পুঁথিগত শিক্ষায় ভালো করলেও তাদের নৈতিক শিক্ষায় স্খলন ঘটেছে, যা জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই আমার ডিস্ট্রিক্ট এর মাধ্যমে আমি নৈতিক শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করব।
লায়নিজমে মধ্যবিত্তদের সম্পৃক্ত হবার সুযোগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ড. হালিম পাটওয়ারী বলেন, মধ্যবিত্তদের সম্পৃক্ত হবার সুযোগ রয়েছে। মধ্যবিত্তদের বিত্ত কম থাকলেও চিত্ত থাকলে তিনিও সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন। মধ্যবিত্তদের নিজ চাহিদার অতিরিক্ত কিছু সময় থাকলে তিনি লায়নিজমে যোগ দিতে পারেন, কন্ট্রিবিউট করতে পারেন। তাই আমি সমাজের মধ্যবিত্ত ও স্বচ্ছলদের আহ্বান করব আসুন, আমরা সবাই লায়ন্স এর পতাকাতলে একত্রিত হয়ে মানবতার সেবায় কাজ করে নিজকে গৌরবান্বিত করি।
লায়ন্স ক্লাবের কর্মসূচি ছাত্র ও যুবসমাজকে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করবে
-স্বদেশ রঞ্জন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ২, বাংলাদেশ
জনকল্যাণে স্থিরলক্ষ্য, স্বদেশপ্রেমী ও সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব স্বদেশ রঞ্জন সাহা লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫এ-২ বাংলাদেশ এর ২০১৫-’১৬ লায়ন্স বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। রঞ্জন সাহা ১৯৯৭ সালে লায়ন আন্দোলনে যোগ দেন। লায়ন ক্লাব অব ঢাকা ইম্পেরিয়াল তাঁর হোম ক্লাব।
লায়ন স্বদেশ রঞ্জন সাহা ১৯৬০ সালের ১০ মে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানার ঐতিহাসিক সোলাকিয়া ঈদগাঁহ মাঠ সংলগ্ন চর সোলাকিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রমেশ চন্দ্র সাহা স্কুল-শিক্ষক, মাতার নাম চিনু রানী সাহা। স্বদেশ রঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমকম; পরবর্তীতে এফসিএ, এফসিএস, এফএমএএটি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনে তিনি মালেক সিদ্দিকী ওয়ালী চার্টার্ড একাউন্টট্যান্টস এর পার্টনার; সেটকম আইটি লিঃ, সেটকম আই সেন্টার লিঃ, এক্সিস রিসোর্সেস লিঃ এর ভাইস-চেয়ারম্যান; সেটকম কম্পিউটার লিঃ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আলফা রেটিং লিঃ ও সেটকম এগ্রো প্রসেসিং লিঃ এর ডাইরেক্টর হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা ইম্পিরিয়াল কলেজের ফাউন্ডার ও জিবি মেম্বার, আইসিএবি, আইসিএসবি এবং আইএটিবি এর ফেলো মেম্বার, ডিসিসিআই, বিসিএস এবং বিএএসআইএস (বেসিস) এর মেম্বার, বিএলএফ, জগন্নাথ হল এবং কিশোরগঞ্জ সমিতির জীবন সদস্য, ডিইউ একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের এডজাংক্ট মেম্বার, ঢাকা ইউনিভার্সিটি রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট হিসেবে সমাজসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
স্বদেশ রঞ্জন সাহার স্ত্রী মায়া রানী সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করে বর্তমানে ব্যবসায়ের সাথে জড়িত রয়েছেন। তাঁরা দুই পুত্র সন্তানের জনক-জননী ছিলেন। বর্তমানে পুত্র ত্রিদিব কুমার সাহা যুক্তরাষ্ট্রের পারদু ইউনিভার্সিটির পিএইচডি’র ছাত্র। অন্য পুত্র সৌমিক কুমার সাহা অকাল প্রয়াত।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চেতনায় উজ্জীবিত লায়ন স্বদেশ রঞ্জন সাহা ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে আমার মনে এ অনুভূতি জেগেছে যে, সমাজসেবা ও মানবকল্যাণে আমাকে নিবেদিত হয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য আমি আমার ডিস্ট্রিক্ট এর সম্মানিত লায়নদের সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, লায়নদের শিক্ষা ও যুবউন্নয়নমূলক কর্মতৎপরতা আমাকে এ সংগঠনের প্রতি বিশেষ আগ্রহী করে তুলেছে। এমন একটি দায়িত্বে আসার মনোবাসনা বহুপূর্বেই আমার ছিল। অবশেষে তাতে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। লায়নরা নিজেদের নিয়ে ভাবেন না, পরের জন্য কাজ করেন। ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। মানবতাবাদী কবির এই অবিস্মরণীয় উক্তিটি ধারণ করে আমি বৈষয়িক জীবনের পাশাপাশি সামাজিক জীবনে কল্যাণমূলক কাজেও সক্রিয় রয়েছি।
স্বদেশ রঞ্জন সাহা বলেন, ছোটবেলা থেকেই ভালো কাজ করার প্রতি আমার একটা ঝোঁক ছিল। মনে আশা পোষণ করেছিলাম যে, বড় হয়ে মানুষের উপকারে যেন কাজ করতে পারি। লায়ন ডিস্ট্রিক্ট এর গভর্নর নির্বাচিত হবার পর আমার সে সুযোগ এসেছে, আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি পরিকল্পনা মাফিক এগোতে। লায়ন সংগঠনে থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছি, যেগুলো ছাত্র ও যুবসমাজকে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করবে।
একাউন্টিং বিষয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিত্ব স্বদেশ রঞ্জন বলেন, বাংলাদেশে কয়েক লক্ষ ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছেন, কোটিপতি রয়েছেন লক্ষাধিক। এদের মধ্যে অনেকেই লায়নিজমে যোগ দিতে পারেন, কিন্তু তাদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। লায়ন্স ক্লাব ছাত্র-তরুণদের লিও ক্লাবের মাধ্যমে সংগঠিত করছে; তারা পরবর্তী ধাপে লায়ন্স ক্লাবে কাজ করবে, লায়ন আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
লায়ন্স ক্লাবসমূহ বাংলাদেশের নবনির্বাচিত ৬ ডিস্ট্রিক্ট গভর্নরের সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে ২০১৫-’১৬ বর্ষকে Education for Excellence ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবেন। সেই শিক্ষা হলো কোয়ালিটি শিক্ষা। প্রচলিত শিক্ষা দিয়ে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার গুণগত উন্নয়নে আমার ডিস্ট্রিক্ট এর পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। শিক্ষার প্রসারে আমার ডিস্ট্রিক্ট এর সকল ক্লাব ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, এ বছর ক্লাব এরিয়াতে অবস্থিত সকল প্রাইমারি স্কুলের গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে।
লায়ন্স ক্লাবের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরে লায়ন স্বদেশ রঞ্জন সাহা বলেন, লায়ন ক্লাবের বৈশিষ্ট্য হলো এটি অসাম্প্রদায়িক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ এতে যোগ দিতে পারে। রাজনীতি এবং ধর্মীয় কোনো বিষয় আলোচনার উপজীব্য হতে পারে না; লায়ন্স ক্লাব ধর্মনিরপেক্ষও বটে। এজন্য এ সংগঠনে বিতর্কিত কোনো কিছু ঢুকতে পারে না, সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে না। এজন্য লায়ন আন্দোলন এত সুষ্ঠু, সুন্দর ও সার্থকভাবে কাজ করে যেতে পারছে, মানুষ ও সমাজের সেবায় এবং দেশের কল্যাণে নির্বিঘেœ কাজ করে যেতে পারছে।
লায়ন্স ক্লাবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে আমার ডিস্ট্রিক্টকে এগিয়ে নেব
-এ এস সালাহ্উদ্দিন আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি১, বাংলাদেশ
পেশার প্রতি একনিষ্ঠ এ এস সালাহ্উদ্দিন আহমেদ লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-১ বাংলাদেশ এর ২০১৫-’১৬ লায়ন্স বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি লায়ন আন্দোলনে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে। লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা ডাউন টাউন তাঁর হোম ক্লাব।
এ এস সালাহ্উদ্দিন আহমেদ ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ শরীয়তপুর জেলার গোসাইহাট থানার মহিষকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা- মরহুম সিরাজউদ্দিন আহমেদ, মাতার নাম মরহুমা হালিমা বেগম।
সালাহ্উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি (রসায়ন) এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ম্যানেজমেন্ট সম্পন্ন করেন। তিনি রিসার্স ওয়ার্কার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ইস্ট রিজিওনাল ল্যাবরেটরিজ পিসি এসআইআরএ, বর্তমানে যা বিসিএসআইআর নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন ইপিআইডিসি-তে ক্যামিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সালে সুগার মিল্স এর প্রধান/জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। প্রায় ১৭ বছর সুগার মিলের প্রধান (জিএম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বেস্ট ম্যানেজার বিবেচিত হন এবং মে ডে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ইপিআইডিসি/বিএসএফআইসি প্রতিষ্ঠানে ক্যামিস্ট, জেনারেল ম্যানেজার, সেক্রেটারি, ডাইরেক্টর, চেয়ারম্যান হিসেবে ৩৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মসফল এ ব্যক্তিত্ব সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে নিজকে জড়িয়ে রেখেছেন। বর্তমানে তিনি রসায়ন নগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, শরীয়তপুর জেলা সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যামিস্ট এন্ড ক্যামিকেল টেকনোলজি বোর্ড অব গভর্নস এর মেম্বার, এপিও সোসাইটি বাংলাদেশ এর ইসি মেম্বার, বাংলাদেশ ক্যামিকেল সোসাইটি, বিএলএফ এবং শরীয়তপুর শিক্ষা ট্রাস্টের লাইফ মেম্বার।
পারিবারিক জীবনে স্ত্রী সায়েদা সালাহ্উদ্দিনকে নিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবনে তাঁরা এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক-জননী। কন্যা ড. শায়েলা সালাহ্উদ্দিন, এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস এ কর্মরত আছেন। পুত্র ড. সাইফ সালাহ্উদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বার্কলে ইউনিভার্সিটির এসোসিয়েট প্রফেসর।
সমাজসেবার স্বপ্নে বিভোর লায়ন এ এস সালাহ্উদ্দিন আহমেদ ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এর ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নিযুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত। এতদিন সমাজসেবার যে স্বপ্ন লালন করে আসছিলাম, এখন আমার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এসেছে। আমি লায়ন্স ক্লাবের বিভিন্ন কার্যক্রমকে সক্রিয় করে আমার ডিস্ট্রিক্টকে এগিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করার মধ্যে অপার আনন্দ; তাই লায়নরা মানবকল্যাণে নিবেদিত। জীবে দয়া করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর। মহাপুরুষের এ বাণী লায়নদের মনে অনুরণিত হয় সবসময়।
তিনি আরও বলেন, লায়ন্স ক্লাবের ২০১৫-’১৬ বর্ষের সেøাগান Education for Excellence বা উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা। নবনির্বাচিত ৬ গভর্নর এ লক্ষ্যে কাজ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তরুণ-সমাজ যাতে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে, সে ব্যাপারে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ প্রণয়নকল্পে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে আলোচনা সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন করবে আমার ডিস্ট্রিক্ট।
তাছাড়া দরিদ্র ও হতদরিদ্র স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ছাড়াও মেধাবী গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা-বৃত্তি প্রদান করা হবে। এছাড়া আমরা নিউট্রেশন নিয়েও কাজ করতে চাই। এতে অপুষ্টিতে ভোগা দরিদ্র শিশুদের মাঝে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ডিম ও দুধ সরবরাহ করবে ডিস্ট্রিক্ট বি১ এর ক্লাবগুলো।
ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার আনন্দ-স্ফূরণ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই
-এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাবর, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি২, বাংলাদেশ
দক্ষ সংগঠক ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাবর লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-২ বাংলাদেশ এর ২০১৫-’১৬ লায়ন্স বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন।
ওয়াহিদুজ্জামান বাবর লায়ন আন্দোলনে যোগ দেন ১৯৮৬ সালে, লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা ব্লুজ তাঁর হোম ক্লাব। এ ক্লাবে যোগদানের পর থেকে লায়নিজমের মাধ্যমে বিপন্ন মানবতার সেবায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাবর ঢাকার হাজারিবাগে ১৯৫৮ সালের ১ জানুয়ারি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- মরহুম এম এ জামান, মাতার নাম মরহুমা বেগম বদরুন নেসা।
ওয়াহিদুজ্জামান বাবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম (সম্মান) ও এম কম ডিগ্রি অর্জন এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) হতে চার্টার্ড একাউন্টেন্সি কোর্স শেষ করে তিনি ডাচ এইডিং এজেন্সিতে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে বর্তমানে যুক্তরাজ্যভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা প্র্যাকটিকেল একশন বাংলাদেশ-এ Head of Finance, Admin, HR & IT তে কর্মরত আছেন। পরবর্তীতে ইউকে থেকে ডেভলপমেন্ট ম্যানেজমেন্টে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও ইউকে, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে উন্নয়ন সেক্টরের ওপর বিশেষায়িত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়াহিদুজ্জামান বাবর পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ২০১৪-১৭ সালের জন্য সরকার মনোনীত বোর্ড মেম্বার, ঢাবি বিশ্ববিদ্যালয় একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশন এর সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট, ইনস্টিটিউট অব একাউন্টিং টেকনিশিয়ানস অব বাংলাদেশ এর ফেলো মেম্বার, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর লাইফ ফেলো মেম্বার এন্ড এক্স ট্রেজারার, নুরানী জামে মসজিদ হাজারিবাগ, ঢাকা এর প্রেসিডেন্ট, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বায়তুজ জামান জামে মসজিদের চিফ এডভাইজর। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি ফর টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন এর লাইফ মেম্বার এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর মেম্বার।
ওয়াহিদুজ্জামান বাবর মানবতা এবং পেশাগত ওয়ার্কশপে সেবাদান উপলক্ষে ইউকে, ইতালী, ইউএই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভারতবর্ষ সফর করেন।
ওয়াহিদুজ্জামান বাবর ১৯৮৩ সালে মিসেস মাশুকা জামানের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান। কন্যা তৌহিদা জামান শেভরন বাংলাদেশে এইচইএস স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত। পুত্র তৌফিক জামান ঢাকায় স্টেট ইউনিভার্সিটির বিবিএ ক্লাসের ছাত্র।
সেবার মানসিকতায় নিবেদিত লায়ন এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাবর ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নরের দায়িত্ব পেয়ে আমি আনন্দিত। এ আনন্দের স্ফূরণ আমি দেশের কাজে, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই। দেশের মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচি হাতে নেব। শিক্ষা, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নেব। এছাড়াও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করব।
তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটি থেকে বের হবার পর আমি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলাম; ছাত্রাবস্থায় দেশ, সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করার একটা সদিচ্ছা আমার মনে কাজ করত। আমি দেখলাম লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে উন্নয়নে কাজ করার এমন সুযোগ রয়েছে, যার সীমা-পরিসীমা নেই। সমাজের বিত্তবানদের সাথে নিয়ে সমাজের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নে কাজ করা যায়। পড়ালেখা শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করে ভেবেছি দেশের মানুষ সাবসিডি দিয়ে আমাদেরকে পড়িয়েছে আমাদের ওপর জনগণের দাবি আছে; তাদের জন্য আমাদের কিছু করণীয় আছে; সেই দায়বদ্ধতায় আমি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল সংগঠনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অংশগ্রহণ করছি।
এখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, দুস্থ মানুষের উন্নতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে জনগণের জন্য কাজ করা যায়। সেজন্য আমি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালকে উন্নয়নের একটা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। তারা বিশ্বে অনেক কল্যাণমূলক, সেবামূলক কাজ করে; আমরা ক্লাবের সদস্যগণ নিজেদের অর্জিত আয়ের একটা অংশ কন্ট্রিবিউট করি; সব সদস্যের কন্ট্রিবিউশন একত্র করে লায়নিজমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকি। আমাদের বাজেটের প্রয়োজন হয় না, নিজ উপার্জিত আয়ের কন্ট্রিবিউশন থেকে আমরা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করি। লায়ন্স এর সবগুলো বড় প্রকল্প হলো সাসটেইনেবল প্রকল্প। এ পর্যন্ত ২০টির ওপর চক্ষু হাসপাতাল বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা হয়েছে; এছাড়া আরও কিছু স্পেশিয়ালাইজড হসপিটাল এবং এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট লায়ন্স এর আছে। এ ধরনের বড় প্রকল্পগুলো লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল হেড অফিসের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমরা যেমন সাসটেইনেবল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি; তেমনি যখন যেখানে যা প্রয়োজন, তাতে ইনস্ট্যান্ট সহযোগিতা দিয়ে থাকি।
লায়নিজমে মধ্যবিত্তদের সম্পৃক্ত হবার সুযোগ আছে কী এমন প্রশ্নের জবাবে লায়নিজমে প্রাগ্রসর ব্যক্তিত্ব লায়ন ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন, লায়নিজমে শুধু উচ্চবিত্তরাই থাকবেন তা কিন্তু নয়; এখানে মধ্যবিত্তদেরও সম্পৃক্ত হবার সুযোগ রয়েছে। বিত্ত থাকলে চলবে না, চিত্তও থাকতে হবে। মধ্যবিত্তের বিত্ত কম থাকলেও চিত্ত থাকলে তিনিও সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন। মধ্যবিত্তের নিজ চাহিদার অতিরিক্ত কিছু থাকলে তিনি লায়নিজমে যোগ দিতে পারেন, কন্ট্রিবিউট করতে পারেন।
লায়নিজম সম্পর্কে দেশের মানুষকে জ্ঞাত করে লায়ন আন্দোলনে দৃঢ়চিত্ত সমাজকর্মী ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন সমাজে যেসব মানুষের চিত্ত ও বিত্ত আছে, তাদেরকে নিয়ে আমরা লায়নিজমের মাধ্যমে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে থাকি; অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। এখানে সব ক্ষেত্রেই কাজ করার সুযোগ আছে; বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বে চক্ষু চিকিৎসা সেবায় আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। শুধুমাত্র আমাদের লায়ন্স ডিস্ট্রিক্টে এ বছর ৫ হাজার লোকের চক্ষু অপারেশন করে চোখের আলো ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করবে। এছাড়া বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের আইসাইট টেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করব। গ্রামে-গঞ্জে আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি; গ্রামে-গঞ্জে চক্ষুশিবিরের মাধ্যমে চিহ্নিত রোগীদের আমাদের চক্ষু হাসপাতালে ছানি অপারেশন এবং চক্ষুসেবা দিয়ে থাকি; যাদের অপারেশন প্রয়োজন নেই, তাদেরকে নিরাময়ের জন্য ঔষধ সরবরাহ করি। এছাড়া স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা করে গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে মানুষদের সুস্থ করে তুলছি; বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, বিশেষায়িত স্কুলের উন্নয়নে ফান্ডের ব্যবস্থা করি। জাতীয় দুর্যোগ-ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সময় আমরা বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করে থাকি, মাদ্রাসা ও এতিমখানাতে সাহায্য করি, এতিম শিশুদের খাদ্য, পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজন মিটাই। পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে আমাদের ডিস্ট্রিক্টের অধীনে গতবছর প্রচুর গাছের চারা রোপণ করেছি। অন্ধকল্যাণ সমিতিগুলোর সাথে কাজ করে আমরা অন্ধ পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করি। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।
বিভিন্ন হাসপাতালে যেমন বারডেম হাসপাতাল, মেটারনিটি হাসপাতাল, পঙ্গুহাসপাতাল, শিশু হাসপাতালগুলোকে বিভিন্ন রকম সাহায্য দিয়ে থাকি। বিভিন্ন এনজিও যারা শিশু, যুব ও নারী উন্নয়নে কাজ করে তাদের কাজেও আমরা সহযোগিতা করি। শৈত্যপ্রবাহের সময় আমাদের লায়ন্স ডিস্ট্রিক্টে এবং ঢাকার বাইরে শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করি।
একজন দক্ষ ও সফল সংগঠক হিসেবে ঢাবি একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের উন্নয়নে সভাপতি হিসেবে কী কী কাজ করতে সক্ষম হয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সমাজ-সেবায় অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন, আমার সময়ে একাউন্টিং এসোসিয়েশনের ৪৫টি ব্যাচের সমন্বয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করণে কাজ করেছি, যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ঢাকা ইউনিভার্সিটি একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রাক্তন ছাত্রগণ যারা সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদে আসীন অথবা নিজেই সুপ্রতিষ্ঠিত, তাঁদের সাথে যোগাযোগ করে এ সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট করে তাঁদের অনেককে এ সংগঠনের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সমর্থ হয়েছিলাম। আমরা বাংলাদেশের বাজেট এবং ফাইন্যান্স এ্যাক্ট এর ওপর ২/৩টি সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেসব সেমিনারে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে সরকারকে বাজেট প্রণয়নকালীন কিছু পরামর্শও দিয়েছিলাম, যা জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়া এসোসিয়েশনের যারা সদস্য, তাদের অসুস্থতার সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলাম; প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছিলাম। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী কিন্তু অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০টির অধিক বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এছাড়াও একাউন্টিং শিক্ষায় যেসব ছাত্র-ছাত্রী সর্বোচ্চ ফলাফল করেছে, তাদেরকে এসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত দু’টি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গোল্ড মেডেল প্রদানে উৎসাহিত করারও ব্যবস্থা করেছিলাম। যারা একাউন্টিংয়ে এমফিল কিংবা পিএইচডি করেছেন, তাদের রিসার্চে আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছিলাম।
মানব সম্পদ উন্নয়নে কী ধরনের কাজ করছেন জানতে চাইলে লায়ন ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন আমি ২০১০-’১১ সালে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষের পদ অলংকৃত করেছি এবং এখনও আমি এ সংগঠনের লাইফ ফেলো মেম্বার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ সোসাইটির মাধ্যমে বাংলাদেশের হিউম্যান রিসোর্স এক্সপার্টদের সাথে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নে অবদান রাখার চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, মানব সম্পদ উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামগ্রিকভাবে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর হিসেবে আমার রুটিন কাজতো করবই এবং আরও ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করব
-এ জেড এম শামসুল হুদা, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৩, বাংলাদেশ
মানবকল্যাণকামী সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব এ জেড এম শামসুল হুদা লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-৩ বাংলাদেশ এর ২০১৫-’১৬ লায়ন্স বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি লায়ন আন্দোলনে যোগ দেন ২০০৫ সালে। লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা তুরাগ তাঁর হোম ক্লাব।
লায়ন এ জেড এম শামসুল হুদা ১৯৪৬ সালের ১৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ্ব এ কে এম আলাউদ্দিন মিয়া, মাতার নাম আলহাজ্ব হাজেরা খাতুন।
ফোনঃ ০১৭১১৫৬৮৩৩৮। পেশোয়ার থেকে ফরেস্ট্রিতে এমএসসি। নেদারল্যান্ডস থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করার পর ১৯৭০ সালে এ্যাসিসট্যান্ট কনজারভেটর অব ফরেস্ট হিসেবে ফরেস্ট সাভির্সে যোগদেন। বিভাগীয় বন-কর্মকর্তা, বন-সংরক্ষক এবং উপ-প্রধান বন-সংরক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন সুনামের সাথে কাজ করার পর ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি (এফএও) এর সাবেক ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট, ইউএসএইড এর আওতায় ইউনরক ইন্টারন্যাশনাল এর কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লায়ন শামসুল হুদা বিসিএস ফরেস্ট্রি এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট এবং কমনওয়েলথ ফরেস্ট এসোসিয়েশনের মেম্বার ছিলেন।
শামসুল হুদা’র স্ত্রী লায়ন দিল আফরোজ হুদা। তাঁরা দু’কন্যা ও এক পুত্রের জনক-জননী। কন্যা রাফিয়া আফবিন ও ফারিয়া তাসনিম এবং ছেলে আলভি শাফকাত হুদা।
লায়নিজম আন্দোলনে নিবেদিত লায়ন এ জেড এম শামসুল হুদা ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, মানবকল্যাণ ও দেশোন্নয়নের যে স্বপ্ন এতদিন দেখেছি, লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হওয়ায় সে স্বপ্ন পূরণের একটা সুযোগ এসেছে; এজন্য আমি আনন্দিত। আমি আমার দায়িত্বলাভকে স্রষ্টার করুণা বলে মনে করি। স্রষ্টাই কেবল মানুষকে সম্মানদান করতে পারেন। এখন আমার দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেছে।
শামসুল হুদা বলেন, আমাদের জেলায় বিগত ২ বৎসর কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছিল। সেজন্য আমরা সঠিকভাবে কিছু কিছু কাজ সুসম্পন্ন করতে পারিনি। আমাদের বিদায়ী গভর্নর লায়ন শামসুল আলম খোকনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সকল সংকট কাটিয়ে উঠেছি এবং বর্তমানে আমাদের জেলা সুদৃঢ় স্থানে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের পি.ডি.জি ও জি.এম.টি লিডার ওয়াহেদুর রহমান আজাদ এর ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন আমি আশা করছি, আগামী বছরে আপনাদের সবাইকে নিয়ে সকল রুটিন কাজ তো করবই বরং আরও ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করব। ইতোমধ্যে অনেকেই আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, তারা আই ক্যাম্পসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। আমি বছরের শুরুতেই সবাইকে নিয়ে একটি ইয়ার প্লান তৈরি করব। তবে এ বছর আমরা সব গভর্নররা মিলে ঠিক করেছি এ বছর শিক্ষাই হবে আমাদের মূল প্রোগ্রাম। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষা বলতে কেবলমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বুঝায় না। বিখ্যাত নেতা মাও সে তুং বলেছেন প্রকৃত শিক্ষা তাকেই বলে, যে শিক্ষা মানুষকে শ্রম-বুদ্ধি ব্যবহার করে মানবকল্যাণে ব্যবহার উপযোগী পণ্য উৎপাদন করতে শেখায়।
১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খেলাঘরের জাতীয় সম্মেলনের অনুষ্ঠানের জন্য বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। আমি তখন সেখানে এসডিএফও। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় খেলাঘরের শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের চরিত্র এখনো কলুষিত হয় নাই। তাদের সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য চরিত্র গঠন করতে হবে। ত্যাগ ও মানবিক দিককে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমাদের অনেকের চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। একবার চরিত্র নষ্ট হলে সেটা ঠিক করা মুশকিল। তাই শিশুদের সুশিক্ষার জন্য চারিত্রিক শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আমি ১৯৮৪ সালে আমেরিকার ওয়াশিংটনে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে একটি ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলাম। তখন বাংলাদেশের এ্যাম্বাসেডর ছিলেন এজেডএম ওবায়েদুল্লাহ্ খান এবং আমার এক মামা হালিম চৌধুরী
ছিলেন ফার্ষ্ট সেক্রেটারি। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যার কথা হয়েছিল। এক পর্যায়ে মামা বললেন স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু দেয় না। বাংলাদেশের উন্নতি বাংলাদেশীদেরই করতে হবে এবং সেজন্য দরকার ৩টি জিনিস; তা হলো শিক্ষা, শিক্ষা এবং শিক্ষা।
তিনি বলেন, একটি জাতি এবং দেশের উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কোয়ালিটি এডুকেশন এবং তার সঙ্গে প্রয়োজন চারিত্রিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা এবং মানবিক শিক্ষা। আমাদের শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে, অনেক শিক্ষিত হয়েছি, মাস্টার্স, পিএইচডি এর কোনো অভাব নাই। তবে চারিত্রিক, নৈতিক এবং মানবিক দিক থেকে আমরা তেমন আগাতে পারি নাই বরং পিছিয়েছি।
তিনি আরও বলেন প্রকৃত শিক্ষা প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা, মানবিক শিক্ষা এবং চারিত্রিক শিক্ষা যা সার্বিক উৎকর্ষ সাধনে অপরিহার্য। প্রকৃত শিক্ষা যেমন বিশ্বকে স্বর্গ-রাজ্যে পরিণত করতে পারে, তেমনি শিক্ষার অপব্যবহার সব অর্জনকে নসাৎ করে দিতে পারে। তাই সকলের উচিত প্রকৃত শিক্ষায় উৎকর্ষ লাভ করে লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা মানব কল্যাণে ব্যবহার করা, যা আগামী বিশ্বে সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
তাই আমরা লায়ন্স ক্লাবের ৬ গভর্নরই ১টি কল ঠিক করেছি, যা আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আর সেই কলটি হলো “Education for Excellence”
লায়ন্স ক্লাবে যোগদানের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের কল্যাণে সাংগঠনিক ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করার সুযোগ এসেছে
-মোঃ মোস্তাক হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪, বাংলাদেশ
বিশিষ্ট ব্যাংকার মোঃ মোস্তাক হোসেন লায়ন ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি-৪ বাংলাদেশ এর ২০১৫-’১৬ লায়ন্স বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি লায়ন আন্দোলনে যোগ দেন ১৯৯০ সালের মার্চে। লায়ন্স ক্লাব চিটাগং সেন্টাল তাঁর হোম ক্লাব।
লায়ন মোঃ মোস্তাক হোসেন ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার বন্দর থানার মধ্য হালিশহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম হাসান মাহমুদ, মাতার নাম মরহুমা হালিমা খাতুন।
মোস্তাক হোসেন শিক্ষা-জীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম (একাউন্টিং), এলএলবি, সিএ (ইন্টার) সফলভাবে সম্পন্ন করে ১৯৮৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস লিঃ এ ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে ওয়ান ব্যাংক লিঃ এ যোগ দেন। সেখানে সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট/ম্যানেজার হিসেবে চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ শাখায় কর্মরত থেকে উৎকর্ষ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যেসব পুরস্কার লাভ করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো আমেরিকান এক্সপ্রেস এক্সিল্যান্স এওয়ার্ড (চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস ব্যাংকের স্টাফদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এ পুরস্কার লাভ করেন)। আমেরিকান এক্সপ্রেস বেস্ট পারফরমেন্স এওয়ার্ড, বেস্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ওয়ান ব্যাংক লিঃ, বেস্ট ব্যাংক ম্যানেজার ২০০৬ (উইকলী ইন্ডাস্ট্রি প্রদত্ত)।
সফল ব্যাংকার মোস্তাক হোসেন চিটাগাং কলেজিয়েট স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি, চিটাগাং ইউনিভার্সিটির একাউন্টিং এসোসিয়েশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, হালিশহর সেন্ট্রাল কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, হালিশহর এডুকেশন এন্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারি, হাজী চাঁদ মিয়া সওদাগর হাই স্কুল গভর্নিং বডির মেম্বার, চিটাগাং লায়ন্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য।
সফল সংগঠন মোস্তাক হোসেন এর স্ত্রী নায়ার সুলতানা বিকম (অনার্স) এমকম (ম্যানেজমেন্ট), বি-এড। একমাত্র পুত্র সন্তান এহশান মাহমুদকে নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার।
লায়নিজম আন্দোলনে নিবেদিত লায়ন মোঃ মোস্তাক হোসেন ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, পেশাগত জীবনে বিশিষ্ট ব্যাংকার মোঃ মোস্তাক হোসেন বলেন লায়ন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবার পর এ দায়িত্বে একদিন আসব, এ ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। লায়ন আন্দোলনে যারা কাজ করেন তারা একদিন না একদিন মূল্যায়িত হন। গভর্নর নির্বাচিত হবার পর আমি গভীর সন্তুষ্ট। দেশ ও মানুষের সেবার একটা সূত্র খুঁজে পেয়েছি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কল্যাণকাজ করেছি। তবে সাংগঠনিক ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করার সুযোগ এসেছে লায়ন্স ক্লাবে যোগদানের মাধ্যমে। লায়ন্স ক্লাবের গভর্নর হিসেবে এ সুযোগটা কাজে লাগাতে চাই।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে লায়ন আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং একে কল্যাণমুখী কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হলে লিও ক্লাবের মাধ্যমে এ আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। তরুণরাই বিভিন্ন ধরনের বাধা অপসারণ করে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে। তাই আমি লায়ন সহকর্মী ও লিও তরুণদের সহযোগিতা চাই।