২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পাস পরিচালিত ডায়নামিক কম্পিউটার কোর্সের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান। ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস মেনুফেকচারারস এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশান (বিজিএমইএ) এর সুযোগ্য প্রেসিডেন্ট, স্টার্লিং গ্রুপের ডায়নামিক চেয়ারম্যান, বিইউএফটি ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য, বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষা ও সমাজসেবায় নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক ও ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (CSDC) এর মহাসচিব ড. এম হেলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটির সদস্য, পল্লীসঞ্চয় ব্যাংকের পরিচালক ও বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ; সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংক বিষয়ক কনসালটেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড-ওয়াইড ফ্যামিলি লাভ মুভমেন্টের চেয়ারপার্সন তাজকেরা খায়ের; এনএসআই’র অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ শামসুল আমিন; বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক আলী ইস্কান্দার আহমেদ; কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উপদেষ্টা ছড়াকার মোহাম্মদ মোস্তফা প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ আনতারা রাইসা ও মাহীর হেলাল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে পুষ্পমাল্যে বরণ করে নেয়া হয় এবং তাঁকে উপহার হিসেবে অর্পণ করা হয় ক্যাম্পাস’র জ্ঞানমেলা সিরিজে প্রকাশিত সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, আত্মোন্নয়ন ও জাতি জাগরণমূলক বিভিন্ন বইয়ের সেট; ক্যাম্পাস’র নিজস্ব গবেষণায় প্রকাশিত ২টি মডেল, বিভিন্ন সিডির সেট ও স্যুভেনির।
নেতৃত্বদান ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও প্রত্যুতপন্নমতিতার জন্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোঃ সিদ্দিকুর রহমানকে ক্যাম্পাস’র সম্মাননা ক্রেস্ট অর্পণ করেন সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল।
কম্পিউটার কোর্স সম্পন্নকারীরা যেন স্মার্ট এন্ড গ্লোবাল ইয়থ জেনারশেনরূপে দেশ ও জাতির অন্ধকার দূরীকরণে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে, সে কামনায় প্রধান অতিথির হাতে আশা-জাগানিয়া মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। এরপর প্রধান অতিথি কম্পিউটার কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন। সনদ বিতরণ শেষে শুরু হয় বক্তৃতাপর্ব।
ক্যাম্পাস একটি অনন্য সাধারণ প্রতিষ্ঠান, ছাত্র তরুণদের স্বপ্নপূরণের ঠিকানা, আমাদের আশ-ভরসার প্রতীক
-মোঃ সিদ্দিকুর রহমান
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদানকারী প্রগতিশীল শিল্পপতি, বিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন ক্যাম্পাস একটি অনন্য সাধারণ প্রতিষ্ঠান, ছাত্র-তরুণদের স্বপ্নপূরণের ঠিকানা। ড. হেলাল ও ড. নাজনীনের যৌথ পরিচালনায় দুর্দান্তভাবে এগিয়ে চলা ক্যাম্পাস আমাদের আশা-ভরসার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
ছাত্র-তরুণদের উদ্দেশ্যে সিদ্দিকুর রহমান বলেন আপনারা সবসময় সৎ থাকবেন; মায়ের সেবা করবেন, মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন না। আপনারা তরুণ বয়সেই ক্যাম্পাস-কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এটি আশার কথা। এ প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে নিজেদের উন্নতি করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন করবেন এটি আমাদের প্রত্যাশা। আপনারা মানুষকে ভালোবাসবেন, তাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহ মানুষকে সহজ পথ দেখান, মানুষ জটিল পথে চলে যায়।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে ভাবছিলাম- কি ব্যবসা করব? সামনে ছিল ৩টি বিকল্প গার্মেন্টস, মিনারেল ওয়াটার অথবা চানাচুর। এগুলো থেকে কোনো একটি বেছে নিতে হবে। গার্মেন্টস বেছে নিলাম। ৬০ জন শ্রমিক নিয়ে শুরু, যা এখন ৬০০ জনে উন্নীত হয়েছে। শুরুর দিকে সমস্যা দেখা দিল, প্রতিমাসে লোকসান। ভাবলাম, শেষপর্যন্ত কি বিক্রি করে দিয়ে ফিরে যেতে হবে! শেষে মত পাল্টালাম, আবার শুরু করলাম সাহস আর আত্ম¡বিশ্বাস নিয়ে। অল্প কিছুদিন পর সুফল পেতে থাকলাম, আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আমরা কারখানার শ্রমিকদের সাথে আন্তরিক ছিলাম, নিজ হাতে ট্যাগ লাগিয়েছি, কার্টন বানিয়েছি।
তিনি বলেন চারিদিকে কত ঋণ খেলাপী হচ্ছে, কিন্তু আমার লেনদেন স্বচ্ছ; কারো কাছ থেকে বাকিতে কিছু আনিনি, কেউ আমার কাছে কিছু পাবেও না।
তিনি বলেন, বিপদে পড়ে উপায়ন্তর না দেখে গ্রামের মেয়েরা নানা রকম অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য গার্মেন্টস এ আসে। বর্তমানে গার্মেন্টস এ ৭০% শ্রমিকই নারী; ৪৪ লক্ষ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এ শিল্পে -এটি সহজ কথা নয়। পোশাক শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি লোক জড়িত।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে যতগুলি নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেছে তা এ শিল্পের শ্রমিকরা করেনি, করেছে বাইরের ভাড়াটিয়া গুন্ডা ও বিদেশিদের এজেন্টরা।
আলী ইস্কান্দার আহমেদ
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক, স্পষ্টবাদী, সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব আলী ইস্কান্দার আহমেদ বলেন ক্যাম্পাসকে একটি উন্নতমানের পরিচ্ছন্ন পত্রিকা হিসেবেই শুধু জানতাম; কিন্তু তাদের কর্মকান্ড যে এত ব্যাপক, তা এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না।
ট্রেইনিদের উদ্দেশ্যে আলী ইস্কান্দার বলেন আপনাদের জীবনে টার্গেট নির্ধারণ করবেন এবং সে টার্গেট পূরণের লক্ষ্য নিয়ে জীবন পরিচালনা করবেন, তাহলে আপনাদের স্বপ্ন পূরণ হবেই। ক্যাম্পাস থেকে আপনারা দেশ ও মানুষকে ভালোবাসার, দেশগড়ার শিক্ষালাভ করবেন এ আমার বিশ্বাস।
ড. নাজনীন আহমেদ
স্বাগত বক্তব্যে ক্যাম্পাস’র অনারারি রিসার্চ ডিরেক্টর ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাস ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সময়োপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে বিনামূল্যে ট্রেনিং দিয়ে থাকে। কম্পিউটার ট্রেনিং তার মধ্যে অন্যতম। গত ১০ বছরে ১৩৬টি ব্যাচে ৪ হাজারের অধিক ছাত্র-যুবক ক্যাম্পাস থেকে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ছাড়াও ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে শিক্ষানবিশ কর্মসূচিসহ যুগোপযোগী ডায়নামিক নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ছাত্র-যুবকরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজেদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারছে। ক্যাম্পাস’র এসব কল্যাণকর কর্মসূচিতে আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির সহৃদয় অংশগ্রহণ কামনা করছি।
ড. নাজনীন বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গার্মেন্টস শিল্পের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। আমাদের রপ্তানি আয়ের ৯০% আসছে গার্মেন্টস থেকে এটি স্বর্ণডিম্ব প্রসবিনী হাঁসের তুল্য। গার্মেন্টস রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। তিনি বলেন প্রধান অতিথি সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাননি; আত্মবিশ্বাস, শ্রম ও সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আজকের এ অবস্থানে এসেছেন। বর্তমান অবস্থানে তিনি ছাত্র-তরুণদের কাছে একজন আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। প্রধান অতিথি তাঁর মূল্যবান সময় ব্যয় করে ছাত্র-তরুণদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে এ অনুষ্ঠানে এসেছেন, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি আমাদের শিক্ষার্থীরা তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত হবে।
তাজকেরা খায়ের
ওয়ার্ল্ড-ওয়াইড ফ্যামেলি লাভ মুভমেন্টের চেয়ারপার্সন, বিশিষ্ট সমাজসেবী তাজকেরা খায়ের বলেন, সমাজ-সচেতনতা বৃদ্ধিতে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে প্রচার করা ক্যাম্পাস’র স্টিকারগুলো আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। তীব্র উদ্দীপক, মর্মস্পর্শী, বিবেক জাগ্রতকারী এসব স্টিকারের মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতি, পরীক্ষায় নকল, ধূমপানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে ক্যাম্পাস। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের কথা বিভিন্ন জায়গায় শুনি; ক্যাম্পাস এ আসলে এর বাস্তবরূপ দেখা যায়।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাস মানে আলোয় আলোয় সম্মিলন। এক আলো থেকে লক্ষ আলোর বিস্তার ঘটাচ্ছে ক্যাম্পাস। উষর মরুর ধূসর বুকে একটি শহর গড়ার চেয়েও একটি মানুষকে মানুষ করা অনেক কঠিন। ক্যাম্পাস সে কঠিন কাজটিই করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাস’র অগ্রযাত্রায় আমাদের সবার শামিল হওয়া উচিত।
এম শামসুল আমিন
এনএসআই’র অতিরিক্ত পরিচালক এম শামসুল আমিন বলেন ক্যাম্পাস অফিসে এলে তরুণ হয়ে যাই, যৌবনের স্পর্শ পাই। ক্যাম্পাস’র কর্ণধার ড. এম হেলাল ছাত্র-জীবনেই সমাজ উন্নয়নের যে মিশনে নেমেছিলেন, তাতে তিনি লেগে আছেন, এ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হননি। তিনি দেশ ও সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছেন, দিচ্ছেন।
তিনি বলেন ক্যাম্পাস সবসময় আপওয়ার্ডস, কখনও ডাউনওয়ার্ডস নয়। আপনারা ট্রেইনিরা ভাগ্যবান, ক্যাম্পাস থেকে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা ছোটবেলায় এত সুযোগ-সুবিধা পাইনি। ক্যাম্পাস কম্পিউটার প্রশিক্ষণে এ পর্যন্ত ১৩৬টি ব্যাচ সম্পন্ন করেছে। এতে ক্যাম্পাস’র অগ্রগতির ধারা অনুমান করা যায়। বর্তমান বিশ্বে ইংরেজি ভাষা আর কম্পিউটার ছাড়া চলা দুষ্কর। ক্যাম্পাস অন্যান্য কর্মসূচির সাথে এ দুটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে আমাদের ছাত্র-যুবকদেরকে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ক্যাম্পাসকে কম্পিউটার প্রদান করে ক্যাম্পাস’র এসব কল্যাণকর কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবেন বলে বিশ্বাস।
ড. এম হেলাল
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জীবন সংগ্রামে জয়ী মানবিকতায় পূর্ণ এক মানুষ। তিনি শূন্য থেকে শুরু করে সততা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে কাজ করেছেন। তাই সাফল্য তাঁর কাছে ধরা দিয়েছে।
ড. হেলাল বলেন ক্যাম্পাস ছাত্র-যুবকদেরকে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলছে, তাদের চিন্তার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদেরকে উন্নততর মানুষরূপে গড়ে তুলছে ক্যাম্পাস।