পর্যায়ক্রমে সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা রয়েছে সরকারের। সে ক্ষেত্রে আগে খোলা হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যদি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয় তাহলে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ পরিকল্পনায় বাদ সাধছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই থাকেন আসাবিক হলে। দেশের নানা প্রান্তে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা হলে জায়গা না পেলে ঠাঁই গাড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন সংখ্যার তিন-চার গুণ বেশি শিক্ষার্থী থাকেন হলগুলোতে। চারজনের একটি রুমে আট থেকে ১২ জন থাকারও নজির আছে। আবার প্রতিটি হলে রয়েছে একাধিক গণরুম। সেসব রুমে একসঙ্গে থাকেন ৪০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী। আর মেসেও এক রুমে তিন-চারজনের কম শিক্ষার্থী থাকেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে এই শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মানা বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলের যে রুমে চারজন থাকার কথা সেই রুমে থাকে ছয় থেকে আটজন। গণরুমে থাকে ৩০ থেকে ৪০ জন পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে বিভিন্ন উপায়ে ক্লাসরুমে হয়তো সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু আবাসিক হলে সম্ভব নয়। সেখানে একজনের করোনা হলে দশজন আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য আমরা আরো পর্যবেক্ষণ করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, তবে যাদের আবাসিক হল নেই বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পক্ষে অবশ্য বিষয়টি ম্যানেজ করা সম্ভব। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা আছে। আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা পাব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দুই-তিন ভাগে ভাগ করে সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে হয়তো ক্লাসের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। তবে সরাসরি ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনেও কিছু ক্লাস অব্যাহত রেখে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এতে বড় ধরনের সেশনজট থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের আবাসন বড় সমস্যা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের কঠিন বাস্তবতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। জনস্বাস্থ্য এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি, বাস্তবতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হচ্ছে। এটা না মেনে অন্তত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সুযোগ নেই। আর খুলতে হলে সব ছাত্রকে এক দিনে আনা যাবে না। অনলাইন ক্লাসও অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এখনো আক্রান্তের সংখ্যা কমছে না। সংক্রমণ শূন্য অবস্থায় না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিস্থিতি দেখছেন না বলে মত দেন তিনি।
করোনার প্রাদুর্ভাবের জেরে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে করোনাভীতি কাটিয়ে দেশের বেশির ভাগ খাত খুলে গেছে। অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলছে কার্যক্রম। এ অবস্থায় ৩১ আগস্টের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস চললেও সব শিক্ষার্থীর পক্ষে অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ নেই। অনেকেই উচ্চদামের ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে অপারগ। আবার মফস্বলের অনেক জায়গায় ইন্টারনেটের গতি কম। ফলে ডিভাইস থাকলেও শিক্ষার্থীদের একাংশ অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। এতে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশাও দেখা দিয়েছে। তবে এর পরও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।