প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৪ বছর বয়সে পা দিলেন। ২৫ বছর আগে যে হাসিনা প্রথম ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন, তিনি এখন বয়স, অভিজ্ঞতা সব দিক থেকেই সমৃদ্ধ। সারা দেশ এখন করোনাগ্রাসে পতিত। এটা দেশবাসীর সৌভাগ্য, এই আপৎকালে একজন প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ, দেশদরদি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেশের পরিচালনা ন্যস্ত রয়েছে। করোনাপীড়িত বিশ্বের অন্যান্য দেশের, এমনকি উন্নত দেশগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, তাদের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা কিছুটা ভালোই রেখেছেন শেখ হাসিনা। শুধু করোনা নয়, বাংলাদেশে একই সময়ে দেখা দিয়েছে মহাপ্লাবন। একই জেলায় এক বছরে তিন তিনবার প্লাবন হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ জলবন্দি। গবাদি পশু, কৃষিজাত পণ্য ধ্বংস হয়েছে। এ ধরনের অবস্থায় দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। মানুষ মরে। কিন্তু হাসিনা সরকার এক হাতে কোভিড এবং অন্য হাতে মহাপ্লাবন রুখছে। গত মৌসুমে দেশে কৃষি উৎপাদন ভালো হয়েছিল। বন্যা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির সেই ফসল কেটে কৃষকের গোলায় তুলে দেয়ার ফলে সরকারের হাতে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার আশঙ্কা কম। যদি বন্যার ফলে খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা দেখাও দেয়, তাহলে হাসিনা সরকার তা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারবে, তা নিশ্চিত।
গোদের ওপর বিষফোড়া। কোভিড, বন্যা, তার ওপর হঠাৎ দেখা দিল পেঁয়াজ সংকট। কথা নেই, বার্তা নেই ভারত কোনো আগাম নোটিশ না দিয়েই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশে লাফ দিয়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় এবং পেঁয়াজ সংকট দেখা দেয়। মনে হচ্ছে, ভারত সরকার নয়, ভারতের একটি কুচক্রী মহল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছে। অবশ্য এ জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অকর্মণ্যতা, অযোগ্যতাও দায়ী। অবস্থা আগাম পর্যালোচনা করে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে তারা গড়িমসি করেছে। নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে। এই সংকটেও প্রধানমন্ত্রীকেই হাত বাড়াতে হয়েছে। তাঁর নির্দেশনায় তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানির ফলে সমস্যা এখন সমাধানের পথে।
করোনা এবং অন্যান্য কারণে বিদেশ থেকে লাখ লাখ বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসছে। তার ফলে বাংলাদেশ যে শুধু তাদের উপার্জনের বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা-ই নয়, এ দেশে ফিরে আসা মানুষেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এটা দেশের অর্থনীতির ওপর এক বিরাট চাপ। এই চাপের ওপর রয়েছে বহিরাগত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দান, খাওয়ানো-পরানো। শেখ হাসিনা এই দায়িত্বও হাসিমুখে গ্রহণ করে সারা বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছেন। এই রোহিঙ্গা সমস্যার কবে সমাধান হবে, রোহিঙ্গারা কবে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর গুরুতর চাপ থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে সাময়িক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন।
শেখ হাসিনা আগেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মঙ্গা ইত্যাদি যেভাবে সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন, এবারও তিনি আরো মহাবিপদ কভিড ও পৌনঃপুনিক মহাপ্লাবনের বিরুদ্ধে তার চেয়েও বেশি সাহস ও ধৈর্য্যরে সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছেন। একজন ব্রিটিশ সাংবাদিকের চোখে শেখ হাসিনার এই সাহস ‘চার্চিলিয়ান কারেজ’, হিটলারের আক্রমণের মুখে ব্রিটেন যখন বিপর্যস্ত, তখন যে দুর্দমনীয় সাহস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চার্চিল নাৎসি হামলাকে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন, সেই একই কারেজ বা সাহস আজ দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনার মধ্যে। তিনি যে এই যুদ্ধেও জয়ী হবেন, সে সম্পর্কে আমি আশাবাদী।
শেখ হাসিনার মধ্যে যে বিরল নেতৃত্বগুণ, যত সাহস তা ‘চার্চিলিয়ান কারেজ’ কি না জানি না, আমার ধারণা, এই সাহস ও দেশপ্রেম তিনি পেয়েছেন পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। বর্তমান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার তুল্য কোনো নেতা আছেন কি? প্রশ্নটির উত্তর আমার জানা নেই। তার ৭৩তম বর্ষপূর্তির দিবসটিতে প্রার্থনা করি, তিনি শতায়ু হোন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আরো দীর্ঘদিন থাকুন। তাহলে বাংলাদেশের মঙ্গল, গণতন্ত্রের মঙ্গল। আজকের ইতিহাস শেখ হাসিনার সম্পর্কে যা-ই বলুক, ভবিষ্যতের ইতিহাসে তাঁর নামটি তিনটি কারণে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক. তিনি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রকাঠামো থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করেছেন।
খ. বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি দিয়েছেন।
গ. একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দিয়েছেন। এত বড় সাফল্য পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রনায়কের আছে কি না আমি জানি না। ইতিহাসে হাসিনার শাসনকাল হাসিনাইয়া বা হাসিনা যুগ নামে পরিচিত হবে, সে সম্পর্কেও আমি নিশ্চিত।
-লেখকঃ গবেষক, কলামিস্ট