শীতসকালের নরম রোদ গায়ে মেখে যে কিশোর ছেলেটি পলাশের ভিরিন্দা গ্রামের শিশিরভেজা আলপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেত আনমনে; সে কি তখন ভেবেছিল যে, একদিন সে হবে যুগশ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক! গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে এগিয়ে চলা সেই অদম্য কিশোরই আজ ঢাকার জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম!
সম্প্রতি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৯ এর জন্য শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হন মোঃ শহীদুল ইসলাম। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষভাবে অবদান রাখার জন্য টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
বর্ণিল গুণাবলির কর্মযোগী শহীদুল ইসলাম টাঙ্গাইলের ৪২ লাখ মানুষের মাঝে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা ছাড়াও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ায় জেলায় তাঁর সুনাম বৃদ্ধি পায়। সাংবাদিকবান্ধব জেলা প্রশাসক হিসেবে সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য তিনি একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। নির্মাণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার টাঙ্গাইলে আধুনিক ও নান্দনিক স্মারকস্তম্ভ।
জানা যায়, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসকগণের ‘প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদান’ যাচাই-বাছাই করে ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি যাচাই-বাছাই ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলামকে দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠদের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। জানা যায়, প্রতি বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ২০১৯ সালের প্রাথমিক শিক্ষা পদক ঘোষণা করা হয়নি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধিদল শিক্ষার অত্যুজ্জ্বল এই আলোকবর্তিকা মোঃ শহীদুল ইসলাম এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকের শ্রেষ্ঠত্বে ভূষিত হওয়ায় তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁর সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক মনোনীত হওয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঢাকা জেলার কীর্তিমান জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৯ এর জন্য শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হওয়ায় আমি অবশ্যই আনন্দিত। তবে আমি যতটা আনন্দিত হয়েছি, তারচেয়ে এখন অনেক বেশি রেসপনসিবিলিটিতে ঘেরা মনে করছি নিজেকে। তাই আমার আনন্দটুকু এখন দায়িত্ববোধে রূপান্তরিত হয়েছে। মানুষের এক্সপেকটেশন, বিদ্যালয়গুলোর এক্সপেকটেশন বা আকাঙ্খা আমার প্রতি অনেক বেড়ে গিয়েছে। সবাই আমার কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করছে, ফলে আমার আনন্দটা আরও বেশি দায়িত্বে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আপনি কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দক্ষ প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন আমি ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি ৮ জুলাই ২০২০। ৪ মাস অতিবাহিত হলো। করোনা মহামারি প্রতিরোধ এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনে এর বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠাই এ মূহুর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনা প্রাদুর্ভাব এর Second Wave প্রতিরোধে একটু ভিন্নরূপ টার্গেট নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোরদার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, মাস্ক ব্যবহারে গণমানুষকে সচেতন করে তোলা। মাস্ক বিতরণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই মোবাইল কোর্ট এর মূল উদ্দেশ্য। আইন প্রয়োগ বা জেল জরিমানা থাকছে এর সহায়ক শক্তি হিসেবে।
ঢাকা জেলার প্রশাসনে দীর্ঘদিনের সমস্যা ভূমি ব্যবস্থাপনায় জন হয়রানি, ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত প্রদানের মাধ্যমে জনহয়রানি রোধ ও ভূমি সেবা তরান্বিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী একই পরিবারের সদস্য, এ চেতনায় ঞবধস ঝঢ়ৎরঃ জাগ্রত করে দ্রুত সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঢাকা জেলার উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কাজ হলো খাস জমি বন্দোবস্ত কিংবা ভূমি অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর। আমরা সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি এবং শিল্প সকল সেক্টরের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ এবং দ্রুততম সময়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বরাবরে হস্তান্তরের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুরো প্রক্রিয়া ঙহষরহব সম্পাদন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আপনার জেলা প্রশাসনে কিংবা আপনার অধীন প্রতিষ্ঠান/সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাবে সৃজনশীল কর্মযোগী শহীদুল ইসলাম বলেন ভূমি ব্যবস্থাপনায় সকল অঈ খধহফ ঙভভরপব এ নামজারী প্রক্রিয়া ঙহষরহব এ সম্পাদন করা হচ্ছে। ই-নামজারী ঢাকা জেলার সর্বত্র শতভাগ কার্যকরভাবে চলমান রয়েছে।
অতি সম্প্রতি জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় জমি রেজিস্টার করার সাথে সাথে জমির নামজারির সম্পাদন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের জটিলতা সমাধানে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব রেজিস্টার অফিস এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন অঈ খধহফ ঙভভরপব এর মধ্যে নীবির সম্পর্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এতে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানে ACPS (Acquisition Compensation Payment) সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে আবেদন করা থেকে শুরু করে চেক ইস্যু পর্যন্ত সকল ধাপ ঙহষরহব এ সম্পন্ন হয়। এতে মানুষের দুর্ভোগ হয়রানি দীর্ঘসূত্রিতা কমে আসছে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোন প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার উন্নয়নে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব শহীদুল ইসলাম বলেন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ৩০টির মতো ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হয়, বিভিন্ন রকমের সরকারি সেবা দিতে হয়। সেখানে আমি মনে করি, টপ প্রায়োরিটি হওয়া উচিত প্রাইমারি এডুকেশন। কারণ, আমরা সবাই ফিউচার জেনারেশনের জন্য কাজ করি; আর ফিউচার জেনারেশনের শক্ত ভিত্তি তৈরি করে দেয় প্রাথমিক শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরই আমরা লেখাপড়া করি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায়। তখন আমরা বিকশিত হই, আমাদের ডেভেলপমেন্ট হয়। কিন্তু এই যে আমাদের ডেভেলপমেন্ট, এই ডেভেলপমেন্টের মূল কারিগর বা আর্কিটেক্ট হলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা। তারাই ছাত্রদের মনের ভেতরের ছাঁচ তৈরি করে দেন। ছাত্ররা পরবর্তীতে কেমন মানুষ হবে; ভালো মানুষ হবে, নাকি খারাপ মানুষ হবে তার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষকদের গড়ে দেয়া ছাঁচটার ওপরেই শিক্ষার্থীরা ডেভেলপ হয় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। তাই প্রাইমারি এডুকেশন সবসময় আমার কাছে টপ প্রায়োরিটি পায়। আমি যতোদিন টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করেছি, সবসময় প্রাইমারি স্কুল ও প্রাইমারি এডুকেশনকে টপ প্রায়োরিটি দিয়েছি। আমার যেকোনো ভিজিটে প্রাইমারি স্কুল ছিল সবার আগে। তাদের সাথে আমি সকল কাজে একাকার হয়ে, তাদের তদারককারী একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি।
শিক্ষা উন্নয়নে আপনার অর্জিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বৃহত্তর ঢাকা জেলায় কিভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সততা ও নীতিনিষ্ঠায় প্রোজ্জ্বল, নিষ্ঠাবান চৌকস জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করায় প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দূর-দূরান্ত এলাকায় অবস্থিত। এমনকি অনেক স্কুলের জায়গা, বিদ্যালয় ভবন ইত্যাদি নিয়ে নানাধরণের কনফ্লিক্ট থাকে। অনেকক্ষেত্রে স্কুলের জায়গা-জমি নিয়ে নানাধরণের মামলা-মোকদ্দমাও চলে। আমি সেসব মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে জমির মালিকানা স্কুলের নামে হস্তান্তর করে দিই। এরকমভাবে জায়গা-জমির মালিকানা ফিরে পেয়ে স্কুলগুলোর মধ্যে ব্যাপক কনফিডেন্স তৈরি হয়। এর ফলে তাদের মধ্যে যে আস্থা তৈরি হয়, তাতে পরবর্তীতে ভালো কিছু করার জন্য স্কুলের সবাই উজ্জীবিত হয়।
দ্বিতীয়তঃ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের যে রিলেশনশীপ, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক ক্লাসে যাওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সাথে তার Eye Contact হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা শিক্ষককে বুঝতে হবে। কিন্তু এই বোঝার মতো পরিবেশ, কন্সেন্ট্রেশন দেয়ার মতো অবস্থা আমাদের অনেক প্রাইমারি স্কুলেই নেই। ফলে একজন শিক্ষার্থী কন্সেন্ট্রেশনের অভাবে স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ে। এইক্ষেত্রে প্রয়োজন হলো, ছাত্রদের মতো শিক্ষকদেরও নিয়মিত স্কুলে যেতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে যারা কর্মকর্তা, তাদের মনিটরিং করতে হবে, যাতে প্রাইমারি স্কুলের সকল শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকে। আরেকটা বিষয় হলো, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা কিন্তু ম্যাচিউরড না। তারা যখন বাসা থেকে বের হয়ে স্কুলে আসে, তখন তারা মা-বাবাকে ছেড়ে স্কুলে গিয়ে একাকীত্ব বোধ করে। তখন একজন শিক্ষক যদি মা-বাবার আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা দিয়ে শেখাতে চেষ্টা করে; তখন সে মা-বাবার কথা, বাসার কথা, একাকীত্ব ইত্যাদি সবকিছুই ভুলে যায়। তা না হলে শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে থাকতে চাইবে না, বাসায় চলে যেতে চাইবে। এভাবেই স্কুলের প্রতি শিশু শিক্ষার্থীর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। পারিবারিক পরিবেশ, মায়ের মতো আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালোবাসা এসব যেন প্রাথমিক শিক্ষকদের আচরণের মধ্যে থাকে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে। তাহলে শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে আগ্রহী হবে, পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। তারা তখন স্কুলের কথা ভাবলেও আনন্দিত হবে, বাসার চেয়ে স্কুলে থাকতেই বেশি পছন্দ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের শিক্ষার যে মেথড, সেই মেথডটা চেঞ্জ হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদেরকে আনন্দের সাথে পড়াশোনা করাতে হবে। শুধু মুখস্থ না করিয়ে ছাত্রদের গল্প বলে পড়াশোনার সাথে রিলেট করতে হবে, তাদের ক্লাসে মনোযোগী করতে হবে। ক্লাসে ঢোকার আগেই সেই প্ল্যানগুলো শিক্ষকদের করতে হবে। সেই প্ল্যান মতো পড়ালে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগী হবে এবং ক্লাসে আসার আগ্রহ তৈরি হবে। শিক্ষকরা ছাত্রদের পড়াবে, এটার চেয়ে বেশি জরুরি শিক্ষকরা ছাত্রদের পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি করবে। আর পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি হলে শিক্ষার্থীরা তখন যেখানে যাবে, সেখানেই নিজে থেকে পড়বে। এটাই শিক্ষকদের মূল কাজ। এসব যদি সুনিশ্চিত করা যায়, তাহলেই মানসম্মত শিক্ষা সম্ভব হবে।
একজন গর্বিত জেলা প্রশাসক হিসেবে ঢাকা জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে আপনার অনুভূতির কথা বলবেন কী? এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কর্মযোগী জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন আমার গর্বিত হওয়ার কিছু নেই। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও শিক্ষকবৃন্দ মূল দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের একনিষ্ঠ কাজের ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমি তাদের সাথে সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করেছি মাত্র। আমার অবস্থান থেকে যে মোটিভেশান দেয়া দরকার ছিল, সেটা আমি দিয়েছি। জেলা প্রশাসক হিসেবে সরকারি সহায়তা, আমার অবস্থান থেকে সমর্থন ও সহযোগিতা আমি তাদের দিয়েছি। আমি মনে করি, গর্ব করার কথা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের। প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করতে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করি। তাই আমি আগামীতেও প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ। অন্য ডিপার্টমেন্টের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কাজ করার তৃপ্তি আমার অনেক বেশি।
ঢাকা জেলার ব্যাপ্তি ও বিশালতা অন্যান্য সাধারণ জেলার চেয়ে অনেক বেশি, এই বিশাল ব্যাপ্তির অঞ্চলে জেলা প্রশাসক হিসেবে অনুভূতি জানতে চাইলে বর্ণিল গুণাবলির জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন অন্য জেলার থেকে ঢাকা জেলার ব্যাপ্তি সত্যিই অনেক বিশাল। অন্য জেলার চেয়ে ঢাকা পুরোপুরি ভিন্ন মাত্রার। এখানকার কার্যক্রম, পরিস্থিতি, অবস্থান, মর্যাদা সবকিছুই অন্য সকল জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। এখানে দায়-দায়িত্বও অনেক বেশি। রাজধানী হিসেবে ঢাকায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও অনেক বেশি। অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর ঢাকায়। তাই ঢাকার জেলা প্রশাসক হিসেবে আমাকে আরও অনেক বেশি তৎপর ও কর্মকুশল হতে হবে।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা উত্তরসূরি জেলা প্রশাসকগণ কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন, সে বিষয়ে বিশেষ কোনো পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনামূলক কিছু বলবেন কী? এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে শিক্ষাণুপ্রাণ ও প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব শহীদুল ইসলাম বলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে ডিও পত্র দেয়া হয় এবং পত্র যোগাযোগের মাধ্যমেও বলা হয়, যাতে প্রাথমিক শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জেলা প্রশাসকের সম্পর্ক যেন সবসময় সুদৃঢ় এবং অটুট থাকে, কোনো অবস্থাতেই যেন শিথিল না হয়, যেন খুব ইন্টিমেট থাকে সে বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়। শিক্ষার সবক্ষেত্রে; যেমন ভর্তি, ক্লাস, পরীক্ষা, শিক্ষকদের নিয়োগ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকগণ কেন্দ্রীয় অবস্থানে থেকে কাজ করেন। সরকারও জেলা প্রশাসকের ওপর এসকল ক্ষেত্রে নির্ভর করে। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম। আমার সন্তানকে যদি আমি বলি যে বাবা এভাবে অংকটা করো; তখন সে বলে যে, না আমার শিক্ষক ওভাবে করতে বলেছেন। বাবা-মা’র চেয়ে বেশি গুরুত্ব সে শিক্ষককে দেয়, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষককে। ঐসময় শিক্ষক তাকে যা শেখায়, তাই সে সত্যি মনে করে। এইজন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আমি মনে করি, শিক্ষকদের, শিক্ষা ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের মোটিভেশান দেয়া, তাদের এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করানো গুরুত্বপূর্ণ যে একজন শিক্ষক যখন ক্লাসে পড়া নেন, পড়াতে যান, তখন যেন তিনি মনে করেন, এরা আমার ছেলে-মেয়ে। জেলা প্রশাসকগণ যখন এসব বিষয়ে ভূমিকা গ্রহণ করেন, তখন সহজেই শিক্ষকরা মোটিভেট হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন। একারণেই জেলা প্রশাসকদের ইনভলভমেন্ট হওয়াটা বেশি প্রয়োজন। আর জেলা প্রশাসকদের সরাসরি সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করা সম্ভব।
শিক্ষাজীবনের স্মরণীয় স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে গুণী এই জেলা প্রশাসক বলেন নব্বই দশকের মাঝামাঝি আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়নরত। একদিন ক্লাসরুমে ক্লাস নিচ্ছেন খন্দকার আশরাফ হোসেন স্যার। হঠাৎ করে বাইরে শুনা গেল গুলির আওয়াজ, থেমে থেমে চলছে। আমরা আতংকিত হলাম। স্যার বললেন, তোমরা বস, আমি আসছি। ১০ মিনিট পর গুলির শব্দ বন্ধ হলো। স্যার ক্লাসে ফিরলেন আরো কিছুক্ষণ পর। পুনরায় ক্লাস শুরু হল। নিজে থেকেই বললেন এ গুলো ঝবৎরড়ঁং কিছু নয়। তোমাদের এ নিয়ে ভাবনার দরকার নেই। আমরা ক্লাসে নিমগ্ন হলাম। তখনও ছাত্রদের আচরণ শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকরা ক্লাসরুম তথা শিক্ষার পরিবেশ সযতেœ আগলে রাখতেন। এখন মনে হয় এ অবস্থার কিছুটা বিচ্যুতি ঘটেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের অভিভাকত্ব এবং ছাত্রদের শিক্ষানুরাগ আরো গভীর ও নিবিড় হওয়া উচিত।
একজন সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষক হিসেবে দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা শুধু শিক্ষক নয়, তারা নিজের সন্তানের মত সকল ছাত্রদের অভিভাবক হওয়া উচিত। অভিভাবকত্বের শ্বাশত অনুভূতি তাদের মধ্যে জাগ্রত থাকলে ছাত্রদের পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শিক্ষাঙ্গণে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং তা চর্চায় অভ্যস্থ হওয়া জরুরি। শিক্ষাঙ্গণে শিক্ষা বহির্ভূত অন্যকোনো কার্যক্রমের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।
ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম
আমাদের দেশে হবে
সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে
কাজে বড় হবে?
রূপসী বাংলা’র কবি জীবনানন্দ দাশের মা কবি কুসুমকুমারী দাশ তাঁর ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় ‘কাজে বড় হবে’ ছেলের যে কথা বলেছেন, সেই ছেলে আজ আমরা ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদল দেখে এলাম ঢাকার জেলা প্রশাসকের চেয়ারে সমাসীন। তাঁর নিরলস কাজের মাধ্যমেই আজ তিনি এদেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক হওয়ায় গৌরব অর্জন করেছেন! জেলা প্রশাসকের শত কাজের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি ভোলেননি তাঁর ভিরিন্দা গাঁয়ের সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা! আর তাইতো আজ তিনি প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন তথা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে তিনি আত্মনিবেদিত হয়ে অহর্নিশি শুধু কাজ আর কাজ করে চলেছেন। প্রাইমারি স্কুলের জায়গা-জমি নিয়ে সাহসিকতা ও বিরল দায়িত্বশীলতার সাথে মামলা মোকদ্দমার লড়াই করে বিদ্যালয়কে দখল বুঝিয়ে দেন তিনি, যাতে শিক্ষকদের পাঠদানে কোনো ব্যাঘাত না হয়; তাঁরা মন দিয়ে পড়াতে পারেন এবং কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা কোনো বিঘœ ছাড়াই উৎসাহ নিয়ে পড়তে পারে। শিক্ষার প্রতি তাঁর এই মমত্ববোধ ও অনুপম আগ্রহ আজ আমাদের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অসীম মহানুভবতা ও শিক্ষার প্রতি সেই অনুপম আগ্রহের কথাই মনে করিয়ে দেয়!
বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর, বর্ণির গুণাবলির কর্মযোগী, দক্ষ-চৌকস ও সৃজনশীল জ্ঞানে প্রোজ্জ্বল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের মহোত্তর হৃদয়ের কাছে ধনী-গরীব সবাই সমান। সবাই তাঁর কাছে অনায়াসে যেতে পারে। কাউকেই তিনি খালি হাতে ফেরান না, এমনই সুবিশাল তাঁর হৃদয়! প্রায় সব শ্রেণির মানুষের সারি অপেক্ষমান থাকে, কখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হবে এমনটি খুব কম ডিসির অফিসেই আমরা দেখেছি।
সময়জ্ঞানও খুবই প্রখর এই চৌকস সরকারি কর্মকর্তার। ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের জন্য সাক্ষাৎসময় দিলেন কাঁটায় কাঁটায় ৯টায়, অর্থাৎ অন্য সরকারি অফিসের মতো ৯টা-১০টায় খেয়ালখুশি মতো কাজ শুরু করেন না তিনি। সঠিক টাইমেই শুরু হয় তাঁর কর্মযজ্ঞ। সেলফ্ ড্রাইভিংয়ে পৌঁছেও গেলাম আমরা সঠিক সময়ে। কিন্তু ডিসি’র কার্যালয়ে গিয়ে আমরা শুনি তিনি নেই। একটু হতচকিত হলেও খোঁজ নিতে জানা গেল মিরপুরে আগুন লেগেছে রাতে, সেখানে গিয়েছেন তিনি। তাঁর কার্যালয় থেকে বলা হলো, দুপুর ১টার আগে অফিস আসতে পারবেন না তিনি। যেহেতু জেলা প্রশাসক হঠাৎই জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে বের হয়েছেন, আর আমাদের ৯টায় সাক্ষাৎ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসতে লাগলাম আমরা ক্যাম্পাস অফিসে। প্রায় পৌছে গিয়েছি, সেই মূহুর্তে ডিসি’র অফিস থেকে ফোন, ডিসি নিজ কার্যালয়ে এসে পৌঁছে গেছেন। কারণ তিনি যে ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎসময় দিয়েছিলেন, সেটি তাঁর মাথায় ছিল। আর যেহেতু তিনি কথা ভাঙতে পছন্দ করেন না, তাই কথা রাখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেই তড়িৎ চলে এসেছেন গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলো শেষ করতে। এসেই খোঁজ নিয়েছেন আমরা কোথায় আছি। তখনি গাড়ি ঘুরালাম আবার ডিসি কার্যালয়ের দিকে। অফিস টাইমের জ্যাম ঠেলে পুনর্বার ডিসি’র কার্যালয়ে পৌঁছাতে সময় নষ্ঠ হলো বেশ কিছুক্ষণ।
ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের সাথে। আমরাও কালক্ষেপণ না করে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুরু করলাম আমাদের ইন্টারভিউ নেয়া। তাঁর কথাতেই আর কর্মকান্ডের বিবরণেই বোঝা যায়, কেন তিনি শ্রেষ্ঠ ডিসি! ইন্টারভিউ পর্ব শেষে জেলা প্রশাসক ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদলকে ঘুরিয়ে দেখালেন নতুন স্থাপিত মুজিব কর্ণার। পরিদর্শন শেষেই দৃঢ়ভাবে অনুরোধ করলেন যেন অবশ্যই চা খেয়ে যায় ক্যাম্পাস প্রতিনিধিরা। ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের কথা তিনি রেখেছেন, তাই তাঁর কথাও এবার রাখতেই হবে। তাঁর এহেন অনুরোধ উপেক্ষা করা দূরুহ। এছাড়া ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হয়ে গেলেও স্টাফদের সাথে পূর্বের কথোপকথনের কৌতুহল যায়নি তখনো আমাদের। চা খেতে খেতে কর্মচারীদের সাথে আলাপকালে আমরা ডিসি শহীদুল ইসলামের অসামান্য হৃদয়ের পরিচয় পেলাম আবারও। নতুন জেলা প্রশাসককে নিয়ে সেখানকার কর্মচারীদের উচ্ছ্বাস ছিল অকল্পনীয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কয়েকজন স্টাফের সরলসিধা জবানিতেই শোনা যাক তাঁর মহোত্তম সুকীর্তির অনুপম বয়ান।
আমাদের স্যার সর্বকালের সেরা ডিসি
আব্দুর রহমান রতন
জেলা প্রশাসকের সহকারী
ডিসি স্যারের কাছে ধনী-গরীব, ফকির, মিসকিন, কোর্টপ্যান্ট কিংবা লুঙ্গিপড়া যেকোনো ধরনের মানুষই আসুক না কেন, স্যারের কথা হলো, সবাইকে তোমরা যতœ করে বসাবে। আমার সাথে দেখা না করে কেউ যেন ফিরে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখবে। যদি কেউ স্যারের কাছে আসে, আর তার কাজটা যদি স্যারের কাছে নাও থাকে, তাহলেও স্যার খোঁজ নিয়ে দেখেন যে কাজটা কার কাছে আছে। তখন তিনি সেখানে ফোন করে বলে দেন কাজটা করে দেয়ার জন্য। কিংবা অনেকসময় লিখে আমাদের দিয়ে পাঠান কাজটা করে আনার জন্য। আগের ডিসি স্যাররা এভাবে কাউকে লিখে দিতেন না, তারা ধারাবাহিক সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে কাজ করতেন, এতে কতদিন সময় লাগে লাগুক, তারা এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। বর্তমান জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম স্যার যেকোন কাজে সাথে সাথে একশন নেন, এক সেকেন্ডও তিনি দেরি করেন না। যে ম্যাজিস্ট্রেটের বা কর্মকর্তার যেই কাজ, তাকে ডেকে সেই কাজ বুঝিয়ে দিয়ে সাথে সাথে করে আনতে বলেন। অনেক সময় আমাদের বলেন, এটা এখন এন্ট্রি করা লাগবে না, আগে কাজটা করে নিয়ে এসো। এমন কাজ-পাগল ডিসি স্যার আমি আমার জীবনে আর দেখি নাই।
স্যারের কাছে যে কেউ আসুক না কেন, স্যার আগে জিজ্ঞেস করেন যে, আমি আপনার কী সেবা করতে পারি? আমরা এসব দেখে খুব আশ্চর্য হয়ে যাই। আমি আমার ২৩ বছরের দীর্ঘ চাকরিজীবনে কোনো ডিসি স্যারকে এরকম করতে দেখি নাই! আমি এই ডিসি স্যারের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত! আমি মন খুলে দোয়া করি, স্যারকে আল্লাহ যেন আরও অনেক বড় বানায়। স্যার যেন এইভাবে সারাজীবন মানুষের সেবা দিতে পারেন। আল্লাহর কাছে মনেপ্রাণে সবসময় এই দোয়া করি, যেন আল্লাহ তাঁকে সুস্থ রাখেন এবং নেক হায়াত দান করেন।
কালকে স্যার সারাদিন নবাবগঞ্জ ভিজিট করছেন। রাতে ফিরে আসার পর বাসায়ও ঢুকতে পারেননি। আগুন লাগার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই আবার ছুটে বেরিয়ে গেছেন। ভোরে এসে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেননি, সকালে আবার অফিসে জরুরি মিটিং, কত শত মানুষের সাথে কাজ নিয়ে আলাপ। স্যার এত ব্যস্ততার মধ্যে আপনাদেরকেও সময় দিয়েছেন। সময়ের ব্যাপারে স্যার খুব কড়া। এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করেন না। কেউ সময় নষ্ট করলে বকা দেন।
স্যার খুবই সৎ ও নিষ্ঠাবান একজন জেলা প্রশাসক। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য তিনি অলটাইম রেডি থাকেন। তিনি ঢাকার জন্য খুবই যোগ্য একজন জেলা প্রশাসক। আমরা তাঁর অধীনে কাজ করার সৌভাগ্যলাভে নিজেদের ধন্য মনে করি। তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক হিসেবে ভূষিত হওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত! শুধু শিক্ষা কেন, স্যার সবদিক দিয়েই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ডিসি বলে আমরা মনে করি। তিনি সর্বকালের সেরা ডিসি!!
কাজের প্রতি এমন নিবেদিতপ্রাণ ডিসি আমি আর দেখিনি
নজরুল ইসলাম
চেইনম্যান, জেলা প্রশাসকের দপ্তর
আমার অনেক ডিসি’র সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এমন ডিসি আমি আর দেখিনি। তিনি দীর্ঘসময় ধরে অফিস করেন। দিন-রাত যখনই যেখানে তাঁকে প্রয়োজন, সেখানেই ছুটে যান। তাঁর কাছে কোনো কাজ যাওয়া মানেই সেই কাজ দ্রুতগেিত শেষ হওয়া -এমনই নিষ্ঠাবান তিনি। আমার বিশ্বাস, তিনি যেখানেই যাবেন, সেখানেই দ্রুত সাফল্য লাভ করবেন। কাল-পরশু মিলিয়ে ঢাকার তিন জায়গায় বস্তিতে আগুন লেগেছে, অনেক ক্ষতি হয়েছে সেখানকার মানুষের। খবর পাওয়া মাত্রই ডিসি স্যার মাঝরাতেই ছুটে গেছেন সেখানে। অন্য কারো জন্য বসে থাকেননি। অনেক সময় স্যার ঠিকমতন ঘুমানোর সময়টুকুনও পাননা। এরকম সরকারি কর্মকর্তা অত্যন্ত বিরল। তাঁর কাছে ধনী-গরিব সবাই সমান। একজন ভিক্ষুকও স্যারের দুয়ারে এসে অন্তত এক কাপ চা না খেয়ে যেতে পারে না। ঢাকার জন্য তাঁর চাইতে ভালো ডিসি পাওয়া হয়তো আর সম্ভব নয়। আমি সবসময় স্যারের জন্য দোঁয়া করি, তিনি যেন দেশকে আরো অনেক কিছু দিতে পারেন। আমরা সবাই যেন তাঁর নির্দেশমত কাজ করে যেতে পারি।