বিশেষ খবর



Upcoming Event

সদ্য প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর ড. এ কে আব্দুল মোমেন

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রতিক্রিয়া
img

জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষণ ভাবতেন জনগণের মঙ্গলের জন্য কী প্রয়োজন; আর মুহিত ভাই সেটা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ, পদক্ষেপ গ্রহণ ও নানারকম উপায় খুঁজে বের করতেন - পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর ড. এ কে আব্দুল মোমেন

বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অর্থমন্ত্রী ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সংগ্রামী, খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, সর্বোপরি একজন সফল মানুষ ছিলেন। তিনি আমার সহোদর, শ্রদ্ধেয় বড়ভাই। মুহিত ভাইয়ের প্রয়াণে আমি কেবল নিজের বড় ভাইকে হারিয়েছি তা নয়, আমি হারিয়েছি একজন প্রকৃত বন্ধু ও সহকর্মীকে এবং দেশ হারিয়েছে অমূল্য এক সম্পদ। আমাদের অনেকেরই মেন্টর ছিলেন তিনি। অসাধারণ মেধাবী ও দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন মুহিত ভাই। পরীক্ষায় সবসময় প্রথম হতেন। তাঁকে অনুসরণ করে আমরাও বেশি বেশি করে পড়াশুনা করতাম ভালো করার জন্য। আমাদের পরিবারের সবার পছন্দের এবং অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন মুহিত ভাই। তাঁর সাথে আমার খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমাদের মধ্যে পার্থক্য ছিল শুধু বয়সে। ৮০’র দশকে এবং ৯০’র দশকে তিনি খানিকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কেননা, সে সময়ে দেশে এরশাদ সাহেবের শাসন চলছিল। এরশাদ সাহেবের পর এলো খালেদা জিয়ার যুগ। দেশের গণতন্ত্রের কী হবে, উন্নয়ন অর্থনীতি কোন পর্যায়ে যাবে- এসব বিষয়ে তিনি নিরাশ হয়ে পড়েন। আমি তাঁকে উৎসাহ দিতে থাকি। বলি, দেশের অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। গণতন্ত্র ফিরে আসবে। সে সময়ে ১৯৯১ সালে তাঁর লেখা বই ‘বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও জাতীয় ঐক্যমত্য’ বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি তিনি আমাকে উপহার দেন। বইয়ের ভেতরের পাতায় তিনি লিখে দেন, ‘আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই বই লেখা। নিরাশার সময়ে নির্ভর বহুমুখী প্রতিভাবান অনুজ মোমেনকে।’

যেকোনো লেখা লিখলেই সেগুলো আমার কাছে পাঠাতেন। আমি সেই লেখাগুলো খুব আকর্ষণ নিয়ে পড়তাম। মুহিত ভাইয়ের সেই লেখার মধ্যে সুদূরপ্রসারী চিন্তা ছিল, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনা ছিল। তিনি দেশের মঙ্গল তথা উন্নয়নের জন্য অনেক গবেষণা করেছেন, দেশকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত অনেক প্রবন্ধ ও রচনা তিনি লিখে গেছেন।

মুহিত ভাই সবদিক থেকেই একজন পরিপূর্ণ ও সফল মানুষ ছিলেন। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধেও তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেন। রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি হিসেবে তিনি সবসময়ই পরিচিত ছিলেন। ছাত্র জীবনে ১৯৫৫ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুতরাং রাজনীতির হাতেখরি তাঁর সেই ছাত্র জীবন থেকেই।

সততা ও ন্যায়পরায়ণতার মূর্ত প্রতীক মুহিত ভাই যখন ওয়াশিংটনে ছিলেন, সেখানে কি কি হয়েছে সেগুলো নিয়েও তিনি একাধিক বই লিখেছিলেন। যেমন সত্তুরের দশকের একটি ঘটনা; তাঁর লেখা বইয়ের একটি পান্ডুলিপি তিনি আমাকে পাঠালেন। এটি পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমি তাঁকে জানালাম, এটি খুবই সমৃদ্ধ একটি ডক্যুমেন্ট। তোমার এটি প্রকাশ করা উচিৎ। তখন তিনি বললেন, তুমি ভালো প্রকাশক পেলে এটি প্রকাশের ব্যবস্থা করো। আমি তখন মতিঝিলে গিয়ে ইউনিভার্সিটি প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেড এর সাথে কথা বলি। সেখানকার এক ভদ্রলোক ড. মনজুরুল ইসলাম। তিনি বললেন, তাদের একটি এডিটরিয়াল বোর্ড আছে, কোনো বই প্রকাশ করতে হলে সেই বোর্ডের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়। পরবর্তীতে অবশ্য বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও এটি প্রকাশ করতে এডিটরিয়াল বোর্ড অনেক সময় নিয়েছিল। বইটির নাম ছিল ‘দ্যা ইমারজেন্স অব বাংলাদেশ’। এছাড়াও ‘আশি ও নব্বই’র দশকে বাংলাদেশের সংস্করণ’, ‘জেলায় জেলায় জেলা সরকার: স্থানীয় সরকার আইনসমূহের একটি পর্যালোচনা’ এ ধরণের বইয়ের সাথেও আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি এগুলো পড়তাম এবং পড়ে সেগুলোর উপর মুহিত ভাইকে আমার মতামত জানাতাম। এগুলো তিনি নিউইয়র্কে বসে লিখতেন।

তিনি যখন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হলেন, আমি তখন তাঁর এ মন্ত্রী হওয়ার ঘোর বিরোধিতা করি। কারণ তিনি যেরূপ মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণার মানুষ ছিলেন, তাঁর সাথে মিলিটারি সরকারে মন্ত্রিত্ব ঠিক যায় না। আমি আপত্তি করায় তিনি বললেন, আমি একটা শর্তে এখানে জয়েন করেছি, আর তা হচ্ছে অনতিবিলম্বে আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাব, We will give democratic system. কিন্তু দু’বছর হয়ে যাওয়ার পরও যখন এরশাদ সাহেব গণতন্ত্র দিচ্ছেন না এবং প্রথমত জাতীয় ফ্রন্ট, জাগোদল এবং দ্বিতীয়ত জাতীয় পার্টি গঠন করেন; তখন আমি মুহিত ভাইকে বললাম, এই দেশ আবার পাকিস্তান হয়ে যাবে। কারণ মিলিটারি শাসক ক্ষমতায় একবার আসলে সহজে ক্ষমতা ছাড়ে না, আর এক্ষেত্রে তুমি হবে সেই অপশাসনের অংশীদার; যা মোটেই কাম্য নয়। প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, They assured me, they will give democracy. আর যদি তা না হয় তাহলে আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিব, এই শর্ত দিয়েই আমি মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছি। মুহিত ভাই কথামতো ঠিক তাই করেছিলেন। এরশাদ সরকার যখন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দিচ্ছিলেননা এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলেন, তখন তিনি অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আমি একটি প্ল্যাটফরম তৈরির কাজ শুরু করি। তারই ধারাবাহিকতায় Committee for Democratic Bangladesh নামে একটি কমিটি গঠন করি। এর মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে থাকি এবং ১৯৮৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের উপর শোনানীর আয়োজন করি। মুহিত ভাইকে অনুরোধ করি সেখানে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। প্রথমে তিনি তা করতে সম্মত হননি। মুহিত ভাই বললেন, আমি এরশাদ সরকারের অধীনে চাকরি করেছি, সুতরাং আমার এধরণের সাক্ষ্য দেয়া ঠিক হবে না। আমি ও নূরুল ইসলাম অনু ভাই তাঁকে বুঝিয়ে বললাম, তুমি হলে গণতন্ত্রের অগ্রসৈনিক। তাছাড়া তুমি ছিলে এরশাদ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী, তাই তুমি সাক্ষ্য দিলে মানুষের কাছে আমাদের এ কর্মসূচির গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়বে। তখন তিনি সাক্ষ্য দিতে রাজি হলেন। একাজে আমি তিনজনকে বাছাই করেছিলাম, তন্মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম। বাকী দু’জনের একজন হলেন জুনিতা কলেজের অধ্যাপক Craig Baxter (তিনি একসময় ঢাকায় US-AID এ কাজ করতেন) ও অন্যজন হচ্ছেন ড. জিল্লুর রহমান। এদের মধ্যে মুহিত ভাই সবচেয়ে ভালো সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এই ব্যাপারটি এরশাদ সরকারকে খুব ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিল। সেই সময় থেকে তিনি আমাদের সাথে Restoration of Multiparty Democracy, এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তবে ঢাকায় ফিরে এসে হঠাৎ করে কি এক চিন্তা থেকে যেন তিনি গণফোরামে যোগ দিলেন, যা আমরা জানতাম না। যদিও পরে তিনি সেখান থেকে সরে আসেন।

২০০১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা একদিন আমাকে ফোন করলেন। আমি তখন সৌদি আরব অবস্থান করছি। নেত্রী আমাকে জানালেন, তৎকালীন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করায় সিলেটের সেই আসনে যোগ্য প্রার্থী দরকার। আমি নেত্রীকে বললাম, আপনি চাইলে আমার কাছে যোগ্য প্রার্থী আছে। আমার কথা শুনে নেত্রী জানতে চাইলেন, কে সেই প্রার্থী। আমি বললাম, আমার বড় ভাই এএমএ মুহিত। নেত্রী আমার কথা শোনার সাথে সাথেই বললেন, না না তিনি খুব রাগী মানুষ, আমি তাকে বলতে পারবনা। আমি নেত্রীকে আশ্বস্ত করে বললাম, আপনি দায়িত্ব দিলে আমি বড় ভাইকে বুঝিয়ে বলব এবং রাজি করাব। নেত্রী তখন বললেন, হাতে খুব বেশি সময় নেই। নির্বাচনের মাত্র ১ মাস সময় আছে। আমি নেত্রীর কাছে ৭ দিন সময় চাইলে মুহিত ভাইকে রাজি করানোর জন্য তিনি আমাকে ৫ দিন সময় দিলেন। আমি এই বিষয়ে মুহিত ভাইকে বলার পর তিনি প্রথমে আগ্রহ দেখালেননা। তখন তিনি নিউইয়র্কে থাকেন। পরিবার থেকেও এবিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলো। আমি তখন তাঁকে রাজি করাতে বিভিন্ন মাধ্যমকে কাজে লাগালাম। আমার বড় বোন শাহলা খাতুন, আমার ভাগ্নী জামাই ড. আহমেদ আলি কবীর, অপর বড় ভাই সুজন-এ-মুইজ, শেলী মুবদি এবং যারা মুহিত ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, যেমন এস মাহমুদ, নাসির চৌধুরী, নূরুল ইসলাম, লন্ডনের কোরেসী ভাই; তাদেরকেও আমি অনুরোধ করে বললাম- নেত্রীর প্রস্তাবে মুহিত ভাইকে রাজি করানোর চেষ্টা করতে। পাশাপাশি এটিও বললাম- তারা যেন মুহিত ভাইকে বুঝিয়ে বলেন, তিনি যেন অন্তত একবার নেত্রীর সাথে দেখা করেন। কারণ আমি নেত্রীকে কথা দিয়েছি। তা না হলে এটি আমার জন্য খুবই লজ্জার একটি বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে নেত্রীকে বললাম- মুহিত ভাই যদি দলে আসেন, তাহলে তিনি হবে আপনার জন্য মূল্যবান একটি এসেট। কারণ আপনার এবং মুহিত ভাইয়ের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। আমি তাঁর লেখা বইগুলো পড়েছি, আপনারগুলোও পড়েছি। তিনি দেশকে নিয়ে অনেক ভাবেন, যেমনটি আপনি ভাবেন। তাঁকে পেলে আওয়ামী লীগ অনেক উপকৃত হবে। মুহিত ভাইকে রাজি করানোর ব্যাপারে বেবী মওদুদও আমাকে সাহায্য করেছিল। আমি বেবীকে বলেছিলাম, বেবী তুমি নেত্রীকে বলে সময় বাড়াও। এভাবে কয়েকদিন চলে যাওয়ার পর হঠাৎ আবার নেত্রীর ফোন। তিনি গিয়েছিলেন ইতালির মিলানে। সেখান থেকে আমাকে ফোন লাগিয়ে দিলেন আমার বন্ধু রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন এবং নেত্রী ফোনে বললেন, কী ব্যাপার আপনিতো আমাকে কিছু জানালেন না? আমি তখন নেত্রীকে বললাম, আমি এটি নিয়ে কাজ করছি। অতি শীগ্রই আমি আপনাকে জানাব। এখানে বলে রাখা ভালো যে, মুহিত ভাইয়ের পক্ষে শেখ রেহানাও খুব সমর্থন দিয়েছিলেন। তাঁর প্রতি রেহেনার খুব কনফিডেন্স ছিল। অবশেষে আমরা মুহিত ভাইকে রাজি করালাম। সবাই বলার পর তিনি নেত্রীর সাথে দেখা করলেন এবং নেত্রীকে জানালেন প্রথমে তিনি এলাকায় যেতে চান, এলাকার মানুষের মনোভাব বুঝতে চান। এভাবে একপর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন এবং ২০০১ সালে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন। দূর্ভাগ্যবশত: তিনি সেই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন।

সেই নির্বাচনের আগে মুহিত ভাইয়ের একটা ভয় ছিল যে, নির্বাচন করতে অনেক টাকা লাগে, এত টাকা তিনি পাবেন কোথায়। আমি বললাম, তুমি নির্বাচন করো, টাকা আমি ব্যবস্থা করব। সুতরাং প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী সেই টাকার সংস্থান করার জন্য আমি একটি একাউন্ট খুলি, সেখানে কিছু টাকাও জমা হয়। এটি জানতে পেরে ‘মানবজমিন’ পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে ‘বিশ্ব চাঁদাবাজ ড. মোমেন’ এরকম শিরোনামে বিশাল একটি স্টোরি ছাপায়। পূর্বেও আমি আমেরিকায় Dukakis Presidential Campaign করেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তদানুযায়ী এই একাউন্টটি আমি খুলেছিলাম। কিন্তু মানবজমিনের সেই রিপোর্টের জন্য আমাকে তখন সেই একাউন্ট বন্ধ করে দিতে হয়, অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। সাইফুর রহমান সাহেবের দলবল আমার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তখন ঐ একাউন্টটি বন্ধ করে দিতে হয়। তাছাড়া পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদ আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, মোমেন তুমি এসব কি করছো? চাঁদা তোলা আমাদের আইনে নিষিদ্ধ। তাছাড়া আমরা এখানে একটা নিয়ম বেঁধে দেই যে, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ করতে পারবে, এর বেশি কেউ খরচ করতে পারেনা। আমি তখন বললাম, ইতোমধ্যে এ কাজটা আমি বন্ধ করে দিয়েছি, যদিও আপনাদের এই আইনটি সঠিক নয়। কোথা থেকে টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে, নির্বাচনে কে কত দান করেছে এ সম্পর্কে আপনারা জানতে চাইলে তা জানানো যেত। আমেরিকায় যেটা হয় তা হচ্ছে, কোথা থেকে ক্যাম্পেইন ফান্ডে টাকা জমা হচ্ছে এবং কোন খাতে তা ব্যয় করা হচ্ছে সেই হিসেব প্রতি তিন মাস পরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হয়। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী ক্যাম্পেইন ফান্ডের টাকা অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যায় না অর্থাৎ এ ফান্ডের টাকা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য কিংবা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় করা যায় না। ডুকাকিস ক্যাম্পেইনে কিছু টাকা বেঁচে গিয়েছিল, যা পরে কয়েকটা ইউনিভার্সিটিতে দান করা হয়েছিল। যাই হোক যেহেতু বাংলাদেশে নির্বাচন, তাই বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে। তাই আমি ক্যাম্পেইন একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলাম। সেই নির্বাচনে মুহিত ভাই হেরে গিয়েছিলেন। তখন সেই সময়ে আমি একটি আর্টিকেল লিখলাম 2001 Rigged election in Bangladesh। তখন মুহিত ভাই আমার আর্টিকেলসহ আরও কয়েকটি আর্টিকেল নিয়ে একটি বই বের করলেন 2001 Rigged election in Bangladesh. এর পরপর মুহিত ভাই মূলত নেত্রীর সাথে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করলেন আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করলেন। আওয়ামী লীগ সামনে ক্ষমতায় আসলে কি দরকার, কিরূপে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে এজাতীয় রূপরেখা সেসময়ে তৈরি করা হলো। দেশনেত্রী শেখ হাসিনা সিআরআই তৈরি করলেন। মুহিত ভাই তখন সুধাসদনে কাজ করতেন; তিনি ছিলেন সেই সিআরআই এর সদস্য। সাথে আরও দুইজন সাথী তিনি নিয়ে গেলেন। একজন এইচ টি ইমাম ও অন্যজন ড. মসিউর রহমান। নেত্রীর এই তিন ত্রয়ী দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলেন। এখানে অবশ্যই বলতে হবে, তখনকার সেই চিন্তা ও পরিকল্পনার বাস্তব প্রতিফলনই আমরা আজকের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে দেখতে পাই। সেসময়টাতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষণ ভাবতেন জনগণের কী প্রয়োজন, কীভাবে তাদের মঙ্গল করা যায়; মুহিত ভাই সেটা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ, পদক্ষেপ গ্রহণ ও নানারকম উপায় খুঁজে বের করতেন। যার ফলশ্রæতিতে সেসময়ে পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘দিন বদলের সনদ’ নামে একটি মেনিফেস্টো তৈরি করা হয়। এভাবেই দূরদর্শী চিন্তার সফল প্রয়োগে ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে গেছেন আমাদের মুহিত ভাই। নিঃসন্দেহে তিনি প্রখর মেধাবী ছিলেন, এটা সর্বজনবিদিত। আজকের বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের পেছনে মুহিত ভাইয়ের সেই সময়কার অবদান গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। সর্বদা নেত্রীর রয়েছে দুর্দান্ত সাহস আর সেই সাহসে সহযোগী হিসেবে প্রেরণা যুগিয়েছেন, বুদ্ধি যুগিয়েছেন মুহিত ভাই। এই দু’য়ে মিলে দেশের উন্নয়নে চমৎকার কাজ করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা মুহিত ভাইকে কাজের সুযোগ দিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়ায় মুহিত ভাই তাঁর লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে পেরেছেন। সেজন্যে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্তি পান, তখন মুহিত ভাইসহ আরো কয়েকজন রাওয়ালপিন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে কাজ করেন। তাঁরা ৩৬ পৃষ্ঠার একটি কনসেপ্ট নোট তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে দেয়ার জন্য আমাকে দেন। আমি সেটা বঙ্গবন্ধুর হাতে পৌঁছে দেই।

অনেক সময় মুহিত ভাইয়ের সাথে আমার মতের অমিলও হতো। বিশেষ করে সরকারি কর্মচারীদের ১০০ ভাগ বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার সাথে আমার মতপার্থক্য হয়েছিল। তবে এর পূর্বে আমি যখন নিউইয়র্কে এম্বাসেডর হলাম, তখন সেখানকার সহকর্মীরা আমাকে বলল, তাদের বেতন খুব কম। আমি অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করে দেখলাম আসলেই তাই। তখন আমি অর্থমন্ত্রীকে বললাম, আমার এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়াতে হবে। তিনি বললেন, কত বাড়াতে হবে? আমি বললাম ৫০ ভাগ। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। তবে বললেন, শুধুমাত্র তোমার ঐখানে বাড়ানো সম্ভব নয়, বাড়ালে সবজায়গায় বাড়াতে হবে। তুমি এক কাজ করো, তোমার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বিষয়টি জানাও আর একটা পিটিশন দাও। সেসময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ডাঃ দীপু মনি এমপি। পিটিশন দেয়ার পরে অর্থ সচিব কোনো মতেই তাতে ২৫ ভাগের বেশি দিতে রাজি নয়। পরে অবশ্য সেটি ৪০ ভাগ করা হয়েছিল। কোন দেশে লিভিং কস্ট কেমন, সেই অনুযায়ী একটা জরিপ করা হয়েছিল এবং তদানুযায়ী ইনডেকসিং দেখে যেমন ইউএনএ প্রচলিত আছে সে অনুযায়ী বেতন বাড়ানো হয়েছিল; যা পূর্বে ছিলনা। এই ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন।

সফল এ উদ্যোগের পর পরই মুহিত ভাই সরকারি কর্মচারিদের বেতন ১০০ ভাগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ আরেকটি উদ্যোগ নিলেন। আমি তখন এই বেতন বৃদ্ধির তীব্র বিরোধিতা করলাম, এমনকি তাঁর সাথে একপ্রকার ঝগড়া শুরু করলাম। আমি বললাম, আমেরিকাতে যেখানে প্রতি তিন বছর পর মাত্র ৫ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করে, সেখানে তুমি চাইছ ১০০ ভাগ বাড়াতে? গ্রীস যেখানে দেওলিয়া হয়ে যাচ্ছে, আয়ারল্যান্ড যেখানে চরম সমস্যায় আছে, ইতালিতে বেলসকনি সরকারের পতন হওয়ার উপক্রম এই বেতন বাড়ানোকে কেন্দ্র করে, সেখানে বাংলাদেশে এত বড় ঝুঁকি তুমি নিতে যাচ্ছ; তুমিতো দেশটাকে দেওলিয়া বানিয়ে ফেলবে। দেশের ঘাটতি বেড়ে ৫% থেকে ১০% হয়ে যাবে। তিনি তখন আমাকে বললেন, তোমার এই চিন্তা সম্পূর্ণ অলীক। তুমিতো চাইছ ডেফিসিট যেন ৫-৬% এর বেশি না হয়, সেটা থাকবে। আমিতো বাজেট বাড়িয়ে দিচ্ছি। সুতরাং এটি ৫ ভাগের বেশি হবেনা। তাছাড়া বাজেট বড় হওয়ায় মানুষের হাতে টাকা বেশি আসবে; আর মানুষ বেশি টাকা পেলে, বেশি খরচ করবে। এতে দেশের Effective Demand বাড়বে। তুমি ল্যাটিন আমেরিকার দিকে তাকাও, তাদের দেশে স্টেগফ্লেশড। তাছাড়া দেখো আমেরিকা এত উন্নত হচ্ছে কীভাবে? আমেরিকার মার্কেট ডমেস্টিক মার্কেট। তাদের আভ্যন্তরীন চাহিদা অনেক বেশি। সেকারণে জিনিসপত্র তৈরি হয় বেশি, বিক্রিও হয় বেশি, অর্থনীতিও উন্নত হচ্ছে। তাই আমিও বেতন বাড়াতে চাই, এতে অন্যান্যরাও বেতন বাড়াবে। ফলে মানুষের হাতে টাকা আসবে, মানুষ খরচ করবে বেশি। আমি তাঁর কথায় তখন কনভিন্সড হলাম কিন্তু তাঁর সাথে অনেক বিতর্ক হলো। আমি বললাম, তাহলে ২০% করে ধীর গতিতে পাঁচ বছরে ১০০% বাড়াও। তখন মুহিত ভাই বললেন না, আমি মার্শাল প্লেনের মতো বিগ পুশ করতে চাই। তিনি আরও একটি বিষয় চিন্তা করেছিলেন, বেতন বাড়ালে সরকারি কর্মচারীরা আর দুর্নীতি করবেনা। তাঁর এ সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে, এসব কর্মকান্ডের পেছনে তাঁর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল, ভবিষ্যত বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর পরিষ্কার একটা ধারণা ছিল। তিনি স্পষ্ট জানতেন বাংলাদেশকে তিনি কোথায় নিয়ে যেতে চান, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুহিত ভাই ১২ বার বাজেট দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীবের বন্ধু এবং তাঁর উদ্যোগে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় ৬,০০০ কোটি থেকে ১১৩,০০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গ্রামের বিধবা নারী, বয়স্ক মানুষরা যেন ঘরে বসে টাকা পায় সেই ব্যবস্থা তিনি করেছেন। উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জনে তাঁর গৃহীত কৌশল এবং কৌশল বাস্তবায়নে তাঁর সফলতা অবিস্মরণীয়। দূরদর্শী পরিকল্পনার সফল প্রয়োগের কারণে সর্বদা হাসিমাখা তাঁর মুখখানি জনসাধারণের কাছে হয়ে যায় ‘গুড ফেস অব গভর্নমেন্ট’। আমাদের দেশের রাজনীতিতে উচ্চশিক্ষিত, সৎ, চরিত্রবান, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দেশপ্রেমিক ও মানবিক গুণাবলির মানুষ হিসেবে মুহিত ভাই ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি দেখিয়ে গেছেন- সততা, আন্তরিকতা, ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকলে দেশের জন্য, মানুষের জন্য যেকোন ভালো কাজ করা সম্ভব। জ্ঞানের দিক থেকে তাঁকে বিশ্বকোষের সাথে তুলনা করা যায়। পৃথিবীর সকল ভালো ভালো আইডিয়া তিনি গ্রহণ করতেন এবং দেশের জন্য সেগুলো কাজে লাগাতেন।

যে কারও সাথে আলোচনার সময় মুহিত ভাই প্রচুর রেফারেন্স দিতেন। কোনো আর্গুমেন্ট করার সময় রেফারেন্স ছাড়া কথা বলতেন না। I am an Economist, he is not but he is a Practicing Economist. তাই অর্থনীতি নিয়ে তাঁর সাথে আমার প্রচুর আলোচনা, বিতর্ক হতো। খুব ভালো সময় আমি তাঁর সাথে অতিবাহিত করেছি। আমাকে অবশ্যই বলতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করানো সম্ভব হয়েছে তাঁর কারণে এবং যিনি তাঁকে এই কাজের ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন সেই দেশনেত্রী শেখ হাসিনার কারণে। We are thankful to all. শেখ হাসিনা যদি তাঁকে পছন্দ না করতেন, তাঁকে গ্রহণ না করতেন তাহলে তার প্রতিভারও বিকাশ ঘটানো সম্ভব হতনা। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা কখনোই তাঁর উপর খবরদারি করতেন না। পরস্পরের প্রতি তাঁদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাবোধ ছিল।

এখানে আরেকটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাই, একটা সময় শেখ হাসিনা চাচ্ছিলেন কৃষকদের ভর্তুকী দিবেন। তখন প্রতি বস্তা সারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, কৃষকদের আমরা যদি কৃষি উপকরণ দিতে পারি, সার দিতে পারি, বীজ দিতে পারি তাহলে তারা আমাকে মিরাকেল দেখাতে সচেষ্ট হবে; আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো। ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি তখন আমরা খাদ্যশস্য আমদানি করি। এরূপ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকী দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। নেত্রী চাইলেন ৭০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে সেটি ১৬ টাকা করতে। অর্থমন্ত্রী আমাকে আমেরিকান ও ইউরোপিয়ানরা কত ভর্তুকি দেয় তার হিসাব জানতে বল্লেন এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনার প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রীও রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু বাধ সাধলেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফ। তারা বললো, না এভাবে ভর্তুকি দেয়া উচিৎ হবেনা। অর্থমন্ত্রী ও শেখ হাসিনা তাদের মতামত অগ্রাহ্য করলেন এবং সেই হারে কৃষকদের ভর্তুকী দিলেন। একারণে আইএমএফ পরবর্তী ১ বছর আমাদের এফডিআর উত্তোলন করতে দেয়নি। সেসময়ে শহরের মানুষদের বিদ্যুৎ না দিয়ে গ্রামে কৃষকদের সেঁচের জন্য বিদ্যুৎ দেয়া হতো। শেখ হাসিনা, আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্ঠার ফলে পরবর্তীতে আমরা প্রকৃতই মিরাকেল দেখতে পাই। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ খাদ্যে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ।

অপরদিকে পদ্মা সেতুর কথাই যদি বলি, বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে দাড়াল, তখন আমার ড্রাইভার বলছিল, সে তার জমানো টাকা পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য দিয়ে দিতে চায়। এরকম অনেকেই আমাকে বলল- পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য তারা টাকা দিবে। আমি তখন মুহিত ভাইকে বললাম, পদ্মা সেতুর জন্য আমি ফান্ড কালেক্ট করতে চাই। তিনি তখন আমাকে নিষেধ করে বললেন, We will manage it. সেসময়ে অনেকেই ছিল, যারা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার বিষয়ে প্রবল বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্দান্ত সাহসের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হলো। সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে।

এ পদ্মা সেতুকে ঘিরে অনেক ষড়যন্ত্রও হয়েছে। মন্ত্রীসভা থেকে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ, এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন এর কারাবরণসহ অন্যান্যদের সাথে যা ঘটেছিল, তা ছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে সন্তুষ্ট করার জন্য। বিদেশীরা তাদের সন্তুষ্ট করার জন্যে অনেক চাপ দেয়, এতে কাজ হাসিল হলে তারা সব ভুলে যায়। পরে দেখা গেল সেই সকল অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। একটা ক্যামোফ্লেজ করে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। এখন পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করতে যাচ্ছে জনগণ; কিন্তু পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্টে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ নানা মহলের নেতিবাচক ক্যারিকেচারে ক্ষতিগ্রস্তগণ বিশেষত পদত্যাগী যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অনেকেই হয়তো থেকে যাবেন প্রবঞ্চিত। তবে সুখের বিষয় পদ্মা সেতুতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বিরত হওয়ায় আমরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাই।

আমার বড় ভাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত অত্যন্ত সৎ ও আন্তরিক একজন মানুষ ছিলেন। যা বলতেন তাই তিনি করতেন। সারা জীবনই তিনি কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। আরেকটি ব্যতিক্রমী বিষয় তাঁর মধ্যে ছিল, সারাদিনই তিনি যা আলাপ আলোচনা করতেন দিনশেষে সব বিষয় তিনি কম্পিউটারে লিখে রাখতেন। তিনি হচ্ছেন এমন একজন মন্ত্রী, যিনি স্বেচ্ছায় এরশাদ সরকারের সময়ে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। বাংলাদেশে সাধারণত কোনো মন্ত্রী সহজে ক্ষমতা ছাড়েননা। এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আমরা পরিবারের সবাই মুহিত ভাইয়ের জন্য গর্বিত।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত প্রচেষ্টার একনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে মুহিত ভাইয়ের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। মুহিত ভাই সারাজীবন দেশের কল্যাণে, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই মুহিত ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমাদের প্রতিজ্ঞা করা প্রয়োজন- আমরা যেন দেশের জন্য সততার সাথে কাজ করি এবং সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠনে নিজেদের অবস্থান থেকে সর্বাতœক চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ পরপারে মুহিত ভাইকে যেন উত্তম প্রতিদান দেন এবং তাঁকে বেহেশতবাসী করেন- এই প্রার্থনা করি।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img