বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তার অনন্য উদ্যোগ
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদুরপ্রসারী ও গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম ভূ-খন্ডের জম্ম লাভ করে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তথা সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত একটি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ষাটের দশকে তৎকালীন নন-লাইফ বীমা কোম্পানী আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে ‘কন্ট্রোলার অব এজেন্সীস’ পদে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জাতীয়করণের অংশ হিসেবে ১৯৭২ সনে সর্বমোট ৫টি (লাইফ ও নন-লাইফ সমন্বয়ে) বীমা কর্পোরেশন গঠিত হলেও পরবর্তীতে উক্ত আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীসহ পূর্ব পাকিস্তান অংশের ৪৯টি বীমা কোম্পানী এবং পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের (পিআইসি) সমন্বয়ে (পূর্ব পাকিস্তান অংশ) ১৯৭৩ সালে ‘The Insurance Corporation Act VI, 1973, ১৯৭৩’ বলে নন-লাইফ বীমা ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব জনাব গোলাম মাওলাকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রথম ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের স্বর্ণালী ইতিহাস
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (এসবিসি) সরকারি মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর অধীনে ৫০ মিলিয়ন টাকা অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ১৪ মে ১৯৭৩ তারিখে এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার
ঐতিহাসিক পটভূমি
১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তানে মোট ৮১টি বিভিন্ন বীমা কোম্পানি রেজিস্ট্রিকৃত হয়। এসব কোম্পানির মধ্যে ৪০টি দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবশিষ্ট ৪১টি ছিল বিদেশি কোম্পানি। পাকিস্তানিদের মালিকানাধীন ৪০টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ১০টি পূর্ব পাকিস্তানে এ অঞ্চলের উদ্যোক্তাগণ প্রতিষ্ঠা করে। অবশিষ্ট ৩০টি কোম্পানি পশ্চিম পাকিস্তানিদের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিবন্ধিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। সমগ্র পাকিস্তানে কার্যরত মোট ৪১টি বিদেশি বীমা কোম্পানির মধ্যে ২১টি ব্রিটেন, ৮টি ভারত, ৫টি আমেরিকা, ৩টি নিউজিল্যান্ড, ১টি অস্ট্রেলিয়া, ১টি কানাডা, ১টি ফ্রান্স এবং ১টি ছিল হংকং ভিত্তিক কোম্পানি। ৪০টি পাকিস্তানি বীমা কোম্পানির মধ্যে ২০টি জীবন বীমা, ২১টি জীবন ও সাধারণ বীমা এবং ৯টি বিবিধ বীমা ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল। পক্ষান্তরে বিদেশি কোম্পানিগুলি জীবনবীমা ব্যতীত অন্যান্য বীমা ব্যবসায়ে অধিকতর সম্পৃক্ত ছিল।
দেশ স্বাধীন হলে যেভাবে সৃষ্টি হয়
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন
পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত ও নিবন্ধিত ১০টি কোম্পানিসহ স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে পাকিস্তানের এ অঞ্চলে মোট ৭৫টি বীমা কোম্পানি ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২-এর মাধ্যমে দেশের পুরো বীমা ব্যবসায় রাষ্ট্রীয়করণ করে। জাতীয়করণকৃত ৭৫টি বীমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণের জন্য সরকার ৫টি বিভিন্ন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত করে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত বীমা কর্পোরেশনগুলি ছিল বাংলাদেশ জাতীয় বীমা কর্পোরেশন, কর্ণফুলি বীমা কর্পোরেশন, তিস্তা বীমা কর্পোরেশন, সুরমা জীবনবীমা কর্পোরেশন এবং রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন। সরকার ১৯৭৩ সালে দেশের বীমা শিল্পকে বিশেষায়ন ও সমন্বিতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই বছরে সুরমা জীবনবীমা কর্পোরেশন ও রূপসা জীবনবীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে ‘জীবন বীমা কর্পোরেশন’ এবং কর্ণফুলি বীমা কর্পোরেশন ও তিস্তা বীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে সরকার জাতীয় বীমা কর্পোরেশনকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন-এর সাথে একত্রিত করার মাধ্যমে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে আরও শক্তিশালী করে।
আশির দশকে অনুমোদিত মূলধন ও
পরিচালনা পর্ষদ কাঠামো
ইন্সুরেন্স অধ্যাদেশ ৮, ১৯৮৬র মাধ্যমে এই কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন পূর্ববর্তী ৫০ মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। এতে করে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন দাড়ায় ২০০ মিলিয়ন ও পরিশোধিত মূলধন ১০০ মিলিয়ন টাকা এবং তা সম্পূর্ণভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিশোধিত।
এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সরকার কর্তৃক মনোনীত ৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা বোর্ডের উপর ন্যাস্ত। উক্ত বোর্ডে একজন চেয়ারম্যান (খন্ডকালীন) ও পাঁচজন পরিচালক (খন্ডকালীন) ছাড়াও একজন সার্বক্ষণিক ম্যানেজিং ডিরেক্টর সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ম্যানেজিং ডিরেক্টর অত্র সংস্থার মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।
নব্বইয়ের দশক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে
কাঠামোগত পূর্ণতা পায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশন
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এককভাবে সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা হিসাবে নন-লাইফ বীমা ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। সরকারের বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ১৯৮৪ সালের অর্ডিন্যান্স খ-১ এর মাধ্যমে বেসরকারি খাতে বীমা কোম্পানি গঠনের অনুমতি দেয়া হয় এবং অনুমতিপ্রাপ্ত বীমা কোম্পানিসমূহকে বেসরকারি খাতের বীমা ব্যবসা সংগ্রহ এবং পুনঃবীমার ১০০ ভাগ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে করার অধিকার দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯০ সালে ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-এর বলে সরকার বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলিকে সরকারি খাতের ৫০ ভাগ বীমা ব্যবসা করার অধিকার প্রদান করেন। কিন্তু এই ব্যবস্থায় জটিলতা দেখা দেয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তক্রমে সরকারি খাতের বীমা ব্যবসার ১০০ ভাগই সাধারণ বীমা কর্পোরেশন করে থাকে। তবে এই খাতের অর্জিত প্রিমিয়ামের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলির মধ্যে সমহারে বণ্টন করে দেয়া হয়। উল্লেখিত অ্যামেন্ডমেন্ট (১৯৯০)-এর মাধ্যমে পুনঃবীমার ক্ষেত্রে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলি তাদের প্রয়োজনীয় পুনঃবীমার ৫০ ভাগ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে ও অবশিষ্ট ৫০ ভাগ দেশে-বিদেশের বীমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি পুনঃবীমা করার অধিকার প্রদান করা হয়। সরকারের বেসরকারিকরণ নীতি অনুযায়ী বেসরকারি খাতে বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ফলে ১৯৮৪ সাল থেকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ৪৩টি বেসরকারি সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করে সফলতার সাথে বীমা ব্যবসা করে আসছে। ইন্সুরেন্স অ্যাক্ট-২০১০ এবং ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি অ্যাক্ট-২০১০ কার্যকর হওয়ার ফলে বীমা বাজার আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী হয়েছে।
শাখা ও জনবল কাঠামো
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এর অধীনে ছয়টি জোনাল, দুইটি রিজিওনাল অফিসসহ অন্যান্য শাখা, উপ-শাখা ও ইউনিট অফিস নিয়ে সর্বমোট ৮৮টি অফিস রয়েছে। এই অফিসসমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী মোট জনবল সংখ্যা ২,০১০ জন।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমসমূহ
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ঝুঁকির আওতায় থাকা বাড়ি, গাড়িসহ নানা সম্পদের সুরক্ষা ও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে পূনর্গঠনে সাহায্য করে। সংস্থাটির আয়ের উৎস সাধারণ বীমা সংক্রান্ত সকল বীমা ব্যবসা, পুনঃবীমা ব্যবসা এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট ও ডিভিডেন্ড। জীবন বীমা ব্যতীত সাধারণ বীমা সংক্রান্ত সকল বীমা যেমন অগ্নি, নৌ-কার্গো, নৌ-হাল, এভিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, মটর, বিবিধ ইত্যাদি প্রচলিত বীমার ঝুঁকি গ্রহণ; এছাড়া ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা, মটর বীমার আওতায় সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত ব্যক্তিদের বীমা, মারাত্মক ব্যাধি বীমা, বাংলাদেশিদের বিদেশে অবস্থানকালীন চিকিৎসা ব্যয় বীমা এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টির ঝুঁকিও গ্রহণ করে থাকে। আবার কিছু অপ্রচলিত বীমা যেমন শস্য বীমা, গবাদিপশু বীমা, গার্মেন্ট কর্মীদের স্বাস্থ্য বীমা, প্রতিবন্ধিদের জন্য বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা, জনতা দূর্ঘটনা বীমাও করে থাকে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন একদিকে সরকারি সম্পদের বীমা দায় গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান এবং অপরদিকে জাতীয় পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
আর্থিক খাতে সাম্প্রতিক সময়ে
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অর্জন
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ২০২১ সালে অগ্নি, নৌ ও বিবিধ খাতে মোট ১৬১১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে। পূর্ববতী বছরে এই আয়ের পরিমান ছিল ১২৯৫.৩৮ কোটি টাকা। একই বছরে সরকারকে লভ্যাংশ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি টাকা যা ২০২১ সালে এসে ৩ কোটি বেড়ে দাড়ায় ৬৩ কোটি টাকায়।
সরকারকে ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সাধন করেছে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। ২০২১ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে ট্যাক্স পরিশোধ করে ১২৯.২৩ কোটি টাকা যা পূর্ববর্তী বছর থেকে ৩৪.৯৭ কোটি টাকা বেশি। ধারাবাহিকভাবে এই বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। একইভাবে ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রেও এই বৃদ্ধি চলমান রয়েছে। ২০২১ সালে এসবিসি সরকারকে ভ্যাট প্রদান করে ৯৮.৫৩ কোটি টাকা যা পূর্ববর্তী বছর থেকে ১০.৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর্থিক ভিত শক্তিশালী থাকার কারণে কর্পোরেশনটি তার অবলিখিত ঝুঁকির একটি বড় অংশ নিজেই ধারণ করে।
এই কর্পোরেশন একই বছরে বিনিয়োগ ও বিবিধ খাত হতে ৩৫৯.৩৯ কোটি টাকা আয় করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত, কোম্পানিসমূহের শেয়ার ও ডিবেঞ্চার ক্রয়-বিক্রয় করে এ আয় হয়েছে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন SBC Securities & Investment Ltd. নামে একটি সাবসিডিয়ারী কোম্পানী গঠন করেছে, যেটি দেশের মুদ্রাবাজারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে অবদান রাখছে।
দাবী পরিশোধের ক্ষেত্রে কর্পোরেশন সবসময় স্বল্প সময়ের মধ্যে দাবী নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। ২০২১ সালে দাবী পরিশোধ বাবদ ১০৩ কোটি টাকা প্রদান করে। অপরপক্ষে একই বছরে প্রতিষ্ঠানটির রিজার্ভের পরিমান ছিল প্রায় ৮৯০ কোটি টাকা।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য
যা এ প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক ভিতকে মজবুত করেছে
১। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।
২। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নিজস্ব সম্পদ এটির মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তির অন্যতম কারণ।
৩। বাংলাদেশের একমাত্র পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠান।
৪। অফিসসমূহ বিস্তৃত নেটওর্কের আওতাভূক্ত।
৫। প্রচুর প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি।
৬। বড় আকারের বিনিয়োগযোগ্য অর্থ।
৭। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী এবং সিলেটে থাকা প্রচুর স্থাবর সম্পত্তি।
৮। বহুতল বিশিষ্ট সাধারণ বীমা টাওয়ার রাজধানীর বুকে একমাত্র গাড়ি রাখার টাওয়ার।
৯। ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বাংলাদেশ, শিল্প উন্নয়ন সংস্থা এবং লিজিং কোম্পানি, জাতীয় চা কোম্পানি লিমিটেড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, আরামিট লিমিটেডসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার সাধারণ বীমা কর্পোরেশন।
১০। বিচক্ষণতার সাথে সকল প্রকার কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে থাকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন।
১১। বৃহৎ কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
১০। বিগত ২০১৮ হতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ০৩ (তিন) বছরে প্রায় ২২৫ জন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। মানব-সম্পদ উন্নয়নের আওতায় বিগত ০৩ (তিন) বছরে ২৩৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী’কে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
১১। গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস্ প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে বীমা দাবীর নিষ্পত্তির হার ৬৫% এ উন্নীত করা হয়েছে।
১২। দাবী সংক্রান্ত সকল নথি-পত্র প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে প্রায় ৭৫% পুনঃবীমা দাবী পরিশোধ/সমন্বয় করা হচ্ছে।
১৩। NDD Trust এর সাথে একটি MoU স্বাক্ষরিত হয়েছে যার মাধ্যমে Bangabandhu Surokasha Bima for Neuro Deveplopmental Disabled Persons দের সুরক্ষা প্রদান করা যাবে।
১৪। জাপান সরকারের JFRP-এর আওতায় পরিচালিত প্রকল্পগুলির মধ্যে WIBCI প্রকল্পটি বেস্ট প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
১৫। সংস্থার বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি, এন্টি মানিলন্ডারিং (AML), ই-ফাইলিং ও শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
১৬। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পসমূহ যেমন:
ক) পদ্মা বহুমুখী সেতু; খ) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র; গ) কর্নফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল; ঘ) মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র; ঙ) মেট্রোরেল প্রকল্প; চ) এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প; ছ) পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর; জ) দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মানাধীন মেগা প্রকল্প; ঝ) পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বীমা কভারেজ প্রদান করছে।
১৭। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অনুদান প্রদানের পরিমান বৃদ্ধি করা হয়েছে।
১৮। কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের সকল বিভাগ রিনোভেশনের আওতায় আনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে পুনঃবীমা বিভাগ, বোর্ড বিভাগ ও ট্রেনিং ইনস্স্টিটিউটের রিনোভেশনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ট্রেনিং ইনস্স্টিটিউটে স্থাপিত লাইব্রেরীতে বঙ্গবন্ধুর জীবনী এবং বীমা সংক্রান্ত অনেক নতুন বই সংযুক্ত করা হয়েছে।
১৯। কর্পোরেশনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ অগ্রীম বিধিমালা সংশোধন করে ফ্লাট/বাড়ী নির্মাণের সেলিং বৃদ্ধি করা হয়েছে।
২০। সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসে আসা-যাওয়ার জন্য ০৩ (তিন) টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কোস্টার, ০৫ (পাঁচ) টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ১৬ সিটের মাইক্রোবাস ও ১৭ (সতের) টি প্রাইভেট কার ক্রয় করা হয়েছে।
২১। সংস্থার কিছুসংখ্যক স্থাপনার (জমি সহ) দলিল পত্র আপডেট ও মিউটেশন করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট স্থাপনার (জমি সহ) দলিল পত্র আপডেট ও মিউটেশন করা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
২২। সংস্থার নিজস্ব স্থাপনার যে অংশ ভাড়া প্রদান করা হয়েছে সে সকল অংশের বেশ কিছু অনাদায়ী/বকেয়া ভাড়া আদায় করা হয়েছে যার ফলে বাড়ী ভাড়া বাবদ আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট বকেয়া ভাড়া আদায়ের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
২৩। বীমা বিষয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারনা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সকল অফিস অন-লাইন সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে বীমা খাতে আরও বেশী প্রশিক্ষিত জনবল তৈরীর জন্য দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ও হচ্ছে।
২৪। নতুন বীমা পণ্য বাজারজাতকরণসহ ডিজিটাল সেবা প্রদান করা; SDG বাস্তবায়নের আওতায় সকল মানুষের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্য বীমা প্রচলন বিবেচনাধীন আছে।
২৫। Delivery Channel NGO`S এর মাধ্যমে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে চালুকৃত “বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা” পলিসি ও সকল ক্ষুদ্র বীমা পলিসি ব্যাপকভাবে প্রচলনের মাধ্যমে গণমানুষের সুরক্ষায় দূর্ঘটনাজনিত ঝুঁকি হ্রাসকরণের প্রয়াস অব্যাহত রাখা হয়েছে। এছাড়াও Health Insurance for Govt. Employees-এর প্রস্তাবনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২৬। অতি শিঘ্রই ঢাকার মহাখালিতে নিজস্ব জমিতে ১০ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন ও খুলনাতে ১৫ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মান করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
২৭। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও সরকারের অর্থায়নে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা প্রকল্প (WIBCI) এর আওতায় রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলায় পরীক্ষামূলক শস্য বীমা প্রকল্প শেষ হয়েছে। সারা দেশ ব্যাপি ব্যাপক আকারে শস্য বীমা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
২৮। বীমা গ্রহীতাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে মার্কেটিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
২৯। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে Access to Information (A2i) প্রকল্পের আওতায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের E-নথির মাধ্যমে অধিকাংশ নথি নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
৩০। “Right to Information Act” এর আওতায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের তথ্য আদান-প্রদানের নিমিত্তে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সকল জোন, রিজিওনাল অফিস, শাখা অফিসে “তথ্য প্রদান ইউনিট” গঠন করা হয়েছে।
৩১। জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান বৃদ্ধির জন্য বীমা কভারেজের জন্য জনসাধারণের সচেতনতা তৈরি করা এবং জিডিপিতে বীমার অবদান বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
৩২। বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমার পলিসি সারা দেশে জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টা চলছে।
৩৩। সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘Dread deases’ বীমা পলিসি প্রসারিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
৩৪। রপ্তানিকারকদের আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে ECG ঝুঁকি প্রকল্প সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।
৩৫। সংস্থার কর্মক্ষমতা জোরদার করার জন্য ১৫১ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগের চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
৩৬। দেশে নতুন বীমা স্কীম চালু করার প্রক্রীয়া গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন:- ক্যান্সার ও কিডনি রোগের চিকিৎসা কভারেজ, বিশেষ করে যারা নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা ভাতা নিচ্ছেন তাদের জন্য হাসপাতালে ভর্তি বীমা, চাকরি/কর্মসংস্থান হারানো বীমা, পেশাগত দায়বদ্ধতা বীমা এবং যে কোন অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের জন্য জাতীয় দুর্যোগ কভারেজ ইত্যাদি। এছাড়াও Capita Market এ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ সুরক্ষা বীমা প্রচলনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
৩৭। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন Annual Performance Agreement (APA) এর মূল্যায়নে সাধারণ মান থেকে উত্তম মানে উন্নিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। গ্লোবালাইজেশনের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিছু দিন পূর্বেও বীমা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারনা থাকলেও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে জনগণের মধ্যে ইতিবাচক ধারনা তৈরী হতে শুরু করেছে। এখন আর আগের মত এনালগ পদ্ধতিতে পলিসি তৈরী হচ্ছে না। অনেক কিছুতেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে গ্রাহকদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে আভ্যন্তরীন সুশাসনের ফলেই কার্যকর এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে এবং এর সুফল ভোগ করছে দেশের জনগণ। এভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিকতর সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের গ্রাহক সেবার মান আগের তুলনায় অনেক ভালো। সময় মত গ্রাহকদের বীমা দাবী পরিশোধ করে যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকলেও বর্তমান প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বের কারণে তা অনেকাংশে কমে এসেছে। জীর্ণ অবস্থা থেকে ঘুরে দাড়ানোর এক অনন্য উদাহরণ সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। একটি দক্ষ ও যোগ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে বছর শেষে ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সাথে স্বীকৃতি পেয়েছে সেরা কর দাতার। সামনের দিনগুলোতেও প্রতিষ্ঠানটির এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এই প্রত্যাশা সকলের।