বিশেষ খবর



Upcoming Event

সততা ও নীতিনিষ্ঠায় প্রোজ্জ্বল, সরকারের ডায়নামিক ও কর্মযোগী কর্মকর্তা সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
img

সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এক অনুপম ব্যক্তিত্ব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী পদ্মা সেতুর সাথে ইতিহাসের পাতায় অমর কাব্যে উঠে এসেছে সরকারের এ চৌকস-কর্মযোগী সচিবের নামও।

পদ্মা সেতুর স্বপ্নটা ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, যা দীর্ঘসময় ধরে ছিল শুধুই অধরা এক স্বপ্ন। তাই সেই স্বপ্নকে দ্রুত বাস্তবে রূপদানের তাড়না ভিতর থেকেই অনুভব করেছেন। কেননা দীপ্তিমান-কালজয়ী শেখ মুজিবের স্নেহের পরশে যে ছোট্ট বেলাতেই প্রদীপ্ত-আলোকিত হয়েছেন তিনি! জাতির পিতার আশীর্বাদপুষ্ট ও স্নেহধন্য সেই ছোট্ট বেলায়েত হোসেন আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বুকে ধরে দেশের আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের সোনালী ফসল পদ্মাসেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব।

পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত আছেন সেতু বিভাগের সচিব, নৌপথনির্ভর বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছেন অভূতপূর্ব পরিবর্তন। তাঁর অহর্নিশি নিরলস পরিশ্রমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, সাবওয়ে-সহ মেগাপ্রকল্পসমূহের কাজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে ধাপে ধাপে এগুচ্ছে দেশ তাঁরই কর্মযজ্ঞের পথ ধরে। শুধু তাই নয়, বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর বর্ণিল গুণাবলির কর্মযোগী বেলায়েত হোসেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর সমাজসেবার হাত। হাসপাতাল, মুজিববর্ষে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ, স্কুল-কলেজ-মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানসহ বহুক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর উদারপ্রাণ মানসিকতার স্বাক্ষর।

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তিমান ও দেশপ্রেমী ছাত্র মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের সাথে সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধিদল। সেই সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তথা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনে আপনার অনূভূতি জানতে চাচ্ছি।

মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনঃ সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনে আমার অনুভূতি অত্যন্ত আনন্দের ও অপরিসীম গর্বের। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের সময় সকলেরই স্বপ্ন থাকে জেলা প্রশাসক হওয়ার, সচিব হওয়ার। সেতু সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে আমি ৪ মাস বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। ২৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে আমি সেতু বিভাগে যোগদান করি। আমি পদাধিকারবলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনে আমার অনুভূতি অবশ্যই আবেগের ও গৌরবের।

বি ক্যাঃ সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছেন?

বেলায়েত হোসেনঃ বর্তমানে সেতু বিভাগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ মেগাপ্রকল্প হচ্ছে পদ্মাসেতু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপের সোনালী ফসল হচ্ছে এই পদ্মাসেতু। আর এই বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মেগাপ্রকল্প পদ্মাসেতুর কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম নদীর তলদেশে টানেল অর্থাৎ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ আমাদের সেতু বিভাগের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরেও আমি গর্বিত বোধ করছি। একই সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজগুলোও আমাদের সেতু বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, সাবওয়ে জরুরিভাবে নির্মাণ করতে হবে। তাই সেগুলোর ফিজিবিলিটি স্টাডি অর্থাৎ সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কাজগুলোর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। একইসাথে আমার জীবনে এই কাজগুলো আজীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান স্মৃতি হিসেবে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে। যতদিন বেঁচে থাকি, এইসব কাজের মহামূল্যবান স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা শহরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে সাবওয়ে নির্মাণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এই মেগা প্রকল্পগুলোর কাজের গতি বাড়িয়ে কীভাবে বাস্তবায়ন আরও ত্বরান্বিত করা যায়, সে লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি সেতু বিভাগে যোগদান করার পর ২০২০ সালের মার্চ থেকে কোভিড প্যানডেমিক পরিস্থিতির মধ্যেও পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল এইসব মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ থাকেনি, কাজ চলমান ছিল। তবে কাজ যে গতিতে হওয়ার কথা ছিল, সেই গতি অনুযায়ী হয়নি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা হলো, ২০২২ সালের জুনের আগেই পদ্মা সেতু জনসাধারণের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে উদ্বোধন করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু টানেলও ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগেই জনসাধারণের যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একটি পিপিপি প্রকল্প, যা হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২০২২ সালে চালু করা হবে।

বি ক্যাঃ আপনার দৃষ্টিতে এ বিভাগে কী কী সমস্যা ও সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয়েছে, বলবেন কী?

বেলায়েত হোসেনঃ সমস্যা আসলে প্রত্যেক বিভাগেই আছে। সেতু বিভাগ এবং সেতু কর্তৃপক্ষ দু’টির কাজই আমি দেখে থাকি। সেতু বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। আর ‘যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হয় ১৯৮৫ সালে, পরে ‘বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। তখনই এখানে কিছু জনবল নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আমাদের যে চাহিদা, সে চাহিদা অনুযায়ী জনবল সেখানে খুব কমই ছিল। আমি যোগদানের পরেই ইতোমধ্যে তিন পর্যায়ে জনবল নিয়োগ করেছি। আমরা ১৯ জন সহকারী প্রকৌশলী এবং ১২ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগ করেছি। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং অফিস সহায়কও নিয়োগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৫ জনের মতো জনবল আমার এক বছর ছয় মাসের কর্মকালীন সময়ে সেখানে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনবলের যে ঘাটতি, জনবল সংক্রান্ত যে সমস্যা ছিল সে সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছি। একইসাথে তাদেরকে আমরা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও অধিকতর যোগ্য করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী যারা আছেন, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা যারা আছেন; তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষিত করেছি। তাই আমি মনে করি, এসবই সেতু বিভাগ এবং সেতু কর্তৃপক্ষের অনন্য সুন্দর অর্জন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন। সেতু বিভাগ এবং সেতু কর্তৃপক্ষই একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেখানে শতভাগ ই-নথি কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি যে, ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমেই শতভাগ নথি নিষ্পত্তি করব। ইতোমধ্যে আমরা সেটি অর্জন করেছি। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে অদ্য পর্যন্ত বিগত কয়েক মাসে আমরা ই-ফাইলিংয়ের দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমার টেবিলে এখন আর কোনো ফাইল থাকে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল কর্মসূচির আওতায় আমরা ই-নথি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। এজন্য আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। আমাদের এখানে আসলে অনেক সম্ভাবনা আছে। আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। টানেল নির্মাণের জন্য এক সময় বলা হতো যে, আমাদের সয়েল কন্ডিশন অত ভালো না। আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল নির্মাণ করা যাবে না। আশি নব্বইয়ের দশকে এরকম একটা ধারণা ছিল। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে কিন্তু সে ধারণার অবসান হয়েছে। সেখানে একটা টিউব ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়ে গেছে। আরেকটা টিউবের ইতোমধ্যে ৮০০ মিটারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করি, ২০২২ সালের মধ্যে এটা উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। সকলের অবগতির জন্য জানাতে চাই, সেতু কর্তৃপক্ষের যে সাবওয়ে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলমান রয়েছে। সাবওয়ে প্রকল্প ১১টি লাইন, টোটাল ২৫৪ কিলোমিটার পুরোপুরি মাটির তলদেশে সাবওয়ে হবে। এটি কিন্তু করা সম্ভব। আমাদের এখানে একটি স্প্যানিশ কোম্পানি ‘টিপসা’ সাবওয়ের এই ফিজিবিলিটি স্টাডি বাস্তবায়ন করছে। তারা ইতোমধ্যে দু’টি অন্তঃবর্তীকালীন রিপোর্ট দিয়েছে। আমাদের দেশ আসলে একটি বিরাট সম্ভাবনার জায়গা। ঢাকা শহরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ভবিষ্যতে আমাদের আরো অনেক কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেতু নির্মাণ করলে সেখানে অনেক বেশি উচ্চতা নিশ্চিত করতে হয়। আমাদের নৌচলাচল অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে টানেল নির্মাণ করলে নদীর নাব্যতা, নদীর যে গতিধারা সেটা বাধাগ্রস্ত হয় না। সে কারণে আমাদের সেতু বিভাগের যে ম্যান্ডেট; ১৫০০ মিটার বা তার উপরের টানেল, ব্রিজ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কজওয়ে ইত্যাদি নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এটি আসলে বিরাট সম্ভাবনার জায়গা। সেই সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য রেখেই সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সেতু বিভাগের কাজ আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, অচিরেই কিছু কিছু প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি দৃশ্যমান হবে। বি ক্যাঃ সেতু বিভাগকে ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাচ্ছি। বেলায়েত হোসেনঃ আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যাপক। শরীয়তপুর-চাঁদপুর ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং বিবিএ মাস্টাপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে স্পেনের বিখ্যাত কোম্পানি Tecnica Y Proyectos S. A (TYPSA) এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এ সমীক্ষার আওতায় মাস্টারপ্ল্যানে ৪৭টি প্রকল্প রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সেতু নির্মাণ, টানেল নির্মাণ, দক্ষিণাঞ্চলের চারটি বড় বড় ব্রিজ নির্মাণ, ভোলা-লক্ষ্মীপুর ব্রিজ নির্মাণ, ভোলা-বরিশাল ব্রিজ, শরীয়তপুর-চাঁদপুর ব্রিজ, কারখানা ব্রিজ, আমতলী ব্রিজ, পায়রা নদীর উপর ব্রিজ, ভুলতা-আড়াইহাজারে মেঘনা নদীর উপর ব্রিজসহ আরো অনেক ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। এগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এছাড়া সাবওয়ের বা পাতাল রেলের কথা আমি আগেই বলেছি, যেখানে ১১টি লাইন থাকবে। ঢাকা শহরের মাটির তলদেশে এটি বাস্তবায়িত হবে। বিভিন্ন জেলায় আমাদের আরো ৪৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। বিশেষ করে ঢাকা শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায়, চট্টগ্রাম ও বরিশালে আমরা যে প্রকল্পগুলি গ্রহণ করেছি, সে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেটা বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের এই অবকাঠামোগুলো নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নিরলসভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বি ক্যাঃ মুজিববর্ষ নিয়ে আপনার একান্ত অনুভূতির কথা জানাবেন কী?

বেলায়েত হোসেনঃ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মুজিববর্ষ ঘিরে আমার অনুভূতি অত্যন্ত আবেগের ও অপরিসীম গর্বের। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, আর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। আমাদের অস্তিত্ব আর চেতনায় উজ্জীবিত ও সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই মহান বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মুজিববর্ষ আমাদের মধ্যে আনন্দ ও গৌরবের বার্তা নিয়ে এসেছে। আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করার বিরল সৌভাগ্যলাভে ধন্য হয়েছি। তাই মুজিববর্ষ ঘিরে আমার অনুভূতি অসাধারণ আনন্দের। মুজিবকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির বেগবান ধারায় এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যেই আমাদের দেশ একটি সুউন্নত দেশে পরিণত হবে। আর আজ এ সবকিছু সম্ভব হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্য। তিনি আমাদের একটি স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছেন, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার সুমহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষই হচ্ছে সৌভাগ্যময় মুজিববর্ষ। তাই এই মুজিববর্ষ ঘিরে আমার অনুভূতি অত্যন্ত আনন্দের ও অপরিসীম গর্বের। মুজিব চিরন্তন এ ধারণা বুকে লালন করে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আমার একটি মধুর স্মৃতি মনে পড়ে। আমার বাবা আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নোয়াখালীর চৌমুহনী হেলিপ্যাড ময়দানে জনসভায় এসেছিলেন। বাবা আমাকে ও আমার বড় ভাইকে বঙ্গবন্ধুর জনসভায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আমার বড় ভাই তখন ক্লাস ফাইভে আর আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমাদের খুব ইচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে তাঁকে কদমবুসি করা। কিন্তু আমরা সে সুযোগ পাচ্ছিলাম না। ’৭০ সালের নির্বাচনে নূরুল হক সাহেব ছিলেন এমপি পদপ্রার্থী। নূরুল হক সাহেবের বাসায় বঙ্গবন্ধু দুপুরের খাবার খাবেন। নূরুল হক সাহেব ও আমার বাবা আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বন্ধু। তাই বাবা নূরুল হক সাহেবের বাসায় আমাদের নিয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধু যে রুমে ছিলেন, সে রুমে নূরুল হক সাহেবের সাথে বাবা আমাদের নিয়ে গেলেন এবং বঙ্গবন্ধুকে কদমবুসি করতে বললেন। আমরা দেখলাম, বেশ কয়েকজন মুরুব্বি বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে বসে আছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের দেখে কোমলভাবে হেসে হাত নেড়ে কাছে ডাকলেন। আমরা দু’ভাই বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে তাঁকে কদমবুসি করলাম। তিনি আমাদের দু’ভাইকে সস্নেহে কোলে বসিয়ে আদর করলেন। বঙ্গবন্ধু আমার মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাতের সেই স্নেহের স্পর্শ যেনো আজও আমার হৃদয়ে অনুভব করি। আমার মাথায় বঙ্গবন্ধুর হাতের সেই সুকোমল সস্নেহ স্পর্শ আজও হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর হাতের সস্নেহ স্পর্শ এখনো আমার বুকে শিহরণ জাগায়, আমি অপার শ্রদ্ধা ও আবেগে অভিভূত হই। বঙ্গবন্ধুর সেই সুকোমল স্পর্শ আমার জীবনে এক অনুপম স্বর্ণোজ্জ্বল স্মৃতি। যতদিন আমি বেঁচে থাকবো, আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধুর সেই সস্নেহ স্পর্শস্মৃতি চিরজাগরুক হয়ে থাকবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কোমলহৃদয়ের শিশুঅন্তঃপ্রাণ মানুষ ছিলেন, তা এখনও আমাকে অভিভূত করে। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর সাথে এই স্বর্ণোজ্জ্বল স্মৃতি আর ১৯৭১ সালে পাক-হানাদার বাহিনীর সেই নারকীয় দুঃসহ স্মৃতি, দু’টি স্মৃতিই আমার জীবনের অবিস্মরণীয়; যা আমার আমৃত্যু মনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।

বি ক্যাঃ মুজিববর্ষ ঘিরে সেতু বিভাগ যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেগুলো বলবেন কী?

বেলায়েত হোসেনঃ মুজিববর্ষ ঘিরে সেতু বিভাগ অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোভিড প্যানডেমিক পরিস্থিতির কারণে অনেক কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত আকারে করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত করার লক্ষ্যে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মুজিববর্ষের স্মারক হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে আমরা একটি ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছি। সেখানে ১৮ টি কম্পিউটার ও প্রিন্টার দেয়া হয়েছে। এই ডিজিটাল ল্যাবে আমরা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদের পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় যে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিষয়ে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকার সিরাজগঞ্জ অংশে আমরা ‘বঙ্গবন্ধুর উন্নয়নদর্শন’ শীর্ষক একটা ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছি। সেখানে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় শতাধিক স্টেকহোল্ডার অংশগ্রহণ করবেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সেতু বিভাগের যে স্থাপনাগুলো আছে- পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু, মুক্তারপুর সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ইত্যাদি প্রকল্প এলাকায় আমরা মুজিববর্ষের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সেতু বিভাগ একটি প্রকাশনা বের করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে সকল অবদান রেখেছেন, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর স্বপ্নের সার্থক বাস্তবায়নের প্রেক্ষিত তুলে ধরা হবে। সেতু বিভাগের উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রেক্ষাপট, অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে সেতু বিভাগের পরিকল্পনাধীন প্রকল্পসমূহ সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে। ‘পিতার স্বপ্নের সীমানায় সাহসী কন্যা’ শীর্ষক ভিডিও অবমুক্ত করা হবে। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে জাতির পিতার স্বপ্ন এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহসী উদ্যোগ সংক্রান্ত তথ্যাবলী সেই ভিডিওতে প্রদর্শন করা হবে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং সোনার বাংলা বিনির্মাণে ও যোগাযোগ অবকাঠামো ও আধুনিকায়নে সেতু বিভাগের ভূমিকা সম্পর্কে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এভাবে মুজিববর্ষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পর্যায়ক্রমে আমাদের সকল পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্ল‍াহ।

বি ক্যাঃ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণে আমরা কতটুকু অগ্রসর হয়েছি বলে আপনি মনে করেন?

বেলায়েত হোসেনঃ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণে আমরা ইতোমধ্যে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই তিনি এ স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সারাবিশ্বে সুপরিচিত ও মহিমান্বিত করেছেন। এই অবিসংবাদিত মহান নেতাকে পঁচাত্তরের আগস্ট ঘাতকের দল সপরিবারে নির্মম, নির্দয় ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এজন্য আমরা জাতি হিসেবে লজ্জিত সারাবিশ্ব দরবারে। আমাদের মহাসৌভাগ্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সাহসীকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা আল্ল­াহর অসীম রহমতে বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গেছেন, আর নিয়তির কী আশ্চর্য পরিহাস যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সাহসীকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সেই নির্মম, নৃশংস ঘাতকের দলের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকরও হয়ে গেছে। বাকি যারা পলাতক আছে, তাদেরকেও ধরে এনে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া চলমান আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, ব্যাংকের রিজার্ভ শূন্য। এদিকে রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট সব বিধ্বস্ত। সড়ক যোগাযোগের বেহাল অবস্থা। ভাঙ্গা রেলসেতুর কারণে রেল যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। মোটকথা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটা বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ। সেই সদ্য স্বাধীন ধ্বংসাবশেষ বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের সেরা একটি সংবিধান আমাদের উপহার দিয়েছেন। সেই সময় যারা সাংসদ ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের দিয়ে তিনি সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। এই সংবিধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি অনন্য অবদান। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দক্ষ জনবলের ঘাটতি ছিল, পুঁজির ঘাটতি ছিল। এখন ভাবলে অবাক হতে হয়, বঙ্গবন্ধু অল্প পুঁজি দিয়ে স্বল্প জনবল নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভৈরব ব্রিজ, হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ দেশের অনেক ব্রিজ মেরামতের ব্যবস্থা করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার করে চালু করার ব্যবস্থা করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দারিদ্র্যমুক্ত ক্ষুধামুক্ত একটি সোনার বাংলা বিনির্মাণের। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা তিনি পূরণ করতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের উত্তরাধিকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে কাজ করে চলেছেন। তাঁর দুর্বার গতিশীল নেতৃত্বে আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি মাইলফলক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-৭৩ সালে ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছিলেন। আজকে আমাদের বাজেট ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এবার হয়তো বাজেট হয়ে যাবে ৬ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণে আমাদের আর্থিক সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালে আমাদের ব্যাংক রিজার্ভ ছিল ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আজকে আমাদের ব্যাংক রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের পার ক্যাপিটা ইনকাম এখন ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও অনেক বেশি। আমি মনে করি, আগামীতে পার ক্যাপিটা ইনকাম আমাদের আরো অনেক বেশি হবে। যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎখাতে আমাদের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। শিল্প-বাণিজ্য, আইসিটি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই আমরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। এ অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে পারলে আমরা আগামীতে আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে এদেশ আজ উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। আমাদের সেতু বিভাগের গতিশীল কার্যক্রমে পদ্মাসেতু, পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মত মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। উন্নয়ন অগ্রগতির এই বেগবান ধারায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে অচিরেই একটি সুউন্নত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সক্ষম হব।

বি ক্যাঃ ভিশন ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং সর্বোপরি ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে সেতু বিভাগ কতদূর অগ্রসর হয়েছে?

বেলায়েত হোসেনঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সাহসীকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সুউন্নত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ভিশন-২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ভিশন-২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মূলসূত্রই হচ্ছে সুউন্নত যোগাযোগ ও অবকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আর এ লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে চলেছে সেতু বিভাগ। সুউন্নত যোগাযোগ ও অবকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিবিএ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আমরা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি। ২০৪১ সালের আগেই এসব মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আমরা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সেই মহাপরিকল্পনায় ৪৭ টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। একইসাথে আমাদের সেতু বিভাগের যেসকল কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত আছেন, তাদেরকে আমরা এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপযোগী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলছি। আমরা যে মেগাপ্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করার সক্ষমতা অর্জন করেছি, পদ্মাসেতু তার একটা বড় প্রমাণ। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উন্নয়নকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান -২১০০ বাস্তবায়নের উপযোগী নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করছি। সেই সাথে সকল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে চলেছি। ঢাকা শহরে ১১টি সাবওয়ে লাইন ও কয়েকটি টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ইত্যাদি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি ভিশন-২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান -২১০০ এর লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আমাদের সেতু বিভাগের যে ম্যান্ডেট, সে ম্যান্ডেটকে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উন্নয়নকামী সাহসীকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে।

বি ক্যাঃ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাংলাদেশীদের কাছে আজ গর্বের বিষয়। পুরো ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখছেন?

বেলায়েত হোসেনঃ সত্যি এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সাহসীকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণে এবং অনন্য সাহসিকতার কারণে আমি মনে করি, আজ আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু পদ্মাসেতুই নয়, নিজেদের অর্থায়নে আমরা আরো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। পদ্মাসেতুর মতো মেগাপ্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, সাবওয়েসহ আরো অনেক মেগাপ্রকল্প আজ আমাদের নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এ সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসী সুদৃঢ় মনোভাবের গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। তাঁর অনমনীয় মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান এক অনন্য বাস্তবতা।

বি ক্যাঃ বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র দেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেতু নির্মাণের সক্ষমতা বাংলাদেশ কিভাবে অর্জন করতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

বেলায়েত হোসেনঃ বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র দেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেতু নির্মাণের সক্ষমতা বাংলাদেশ অবশ্যই অর্জন করতে পারবে বলে আমি মনে করি। শিক্ষা কারিকুলামেও এখন আপডেটের প্রয়োজন আছে। তবে পদ্মাসেতুর মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা এখনও আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। কেননা, আমাদের দেশে পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সাবওয়ে, মেট্রোরেলের মতো মেগাপ্রকল্প এর আগে কখনো হয়নি। তাই আমাদের বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তা এবং পরামর্শ অবশ্যই লাগবে। আমাদের পদ্মাসেতু একটি বিশালাকার দ্বিতল ব্রিজ। এই জাতীয় বিশালাকার দ্বিতল ব্রিজ নির্মাণের সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। তাই বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য এবং কনসালটেন্সি নেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্প পরিচালক থেকে বাকি সবাই আমাদের দেশের। বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার এবং কনসালটেন্টদের সাথে পদ্মাসেতু প্রকল্পে কাজ করছেন আমাদের চীফ ইঞ্জিনিয়ার, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারসহ বহু ইঞ্জিনিয়ার। পদ্মাসেতুর মতো এরকম মেগাপ্রকল্পে বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার ও কনসালটেন্টদের সাহায্য-পরামর্শ অবশ্যই লাগবে। আমাদের মেঘনা ব্রিজ, মুক্তারপুর ব্রিজ ইত্যাদি প্রকল্পগুলোতে আমরা আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ার ও কনসালটেন্টদের কাজে লাগাচ্ছি। বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার এবং কনসালটেন্টরা টেকনিক্যালি অনেক বেশি সাউন্ড, আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের মেগা প্রকল্পে এরকম টেকনিক্যালি সাউন্ড হতে আরও সময় লাগবে। পদ্মাসেতুর টেকনিক্যাল অনেক বিষয় আছে, যার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের নেই।

আমাদের পদ্মাসেতুর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে লংগেস্ট পাইল ড্রাইভ, এটা বিশ্বের আর কোথাও হয়নি; ১২২ মিটার অর্থাৎ ৪০ তলা ভবনের সমান মাটির নিচে। আর একটা হল পেন্ডুলাম বিয়ারিং, এর ওপরই পদ্মাসেতুর পুরো স্টিল অবকাঠামোটা বসবে। এই পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার ৫০০ টন। এটা সারাবিশ্বে একটা রেকর্ড। কেননা, সানফ্রান্সিসকো ব্রিজের পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের ধারণক্ষমতা ৭ হাজার ৫০০ টন। পদ্মাসেতুর পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের ধারণ ক্ষমতার এই বিশ্বরেকর্ড সত্যিই অনন্য। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের রিভার ট্রেনিং ওয়ার্ক, অর্থাৎ নদীশাসন। পদ্মাসেতুর জন্য নদী শাসনের যে ব্যাপার, সেটাও এক বিশ্বরেকর্ড। নদী শাসনের জন্য সবচেয়ে বড় একক চুক্তি যা বিশ্বে প্রথম।

বি ক্যাঃ সরকারের সচিব কিংবা প্রজাতন্ত্রের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী হিসেবে আপনার সুদীর্ঘ কর্মজীবনের দু-একটি সফল কর্মকা-ের কথা বলবেন কি, যা অন্যদেরকে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাতে পারে? বেলায়েত হোসেনঃ আমি সেতু বিভাগে যোগদানের আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে ছিলাম। তারও আগে আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত সচিবের দায়িত্বে ছিলাম।

এর আগে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে ভোলা জেলায় থাকাকালে জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্কুল ও মাদ্রাসায় বই পড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৮ লক্ষ টাকার বই বিতরণ করেছি। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকৃত প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের ‘লাল নীল দীপাবলি’ ও ‘কত নদী সরোবরে’ এই দুটি পুস্তক বিতরণ করা হয়। এই পুস্তক দুটি পড়ার জন্য তাদের ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। প্রথমে উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নেয়া হয়, উপজেলা পর্যায় থেকে ১৫ জন করে শিক্ষার্থীকে ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়। ভোলা জেলার ৭টি উপজেলা থেকে ১০৫জনকে ১৫ দিন প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সময় দেয়া হয়। পরে ১০৫ জনের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম ২০ জনকে রঙিন টিভি, ট্যাব, মোবাইল, বাইসাইকেল ইত্যাদি পুরস্কার এবং বই উপহার দেয়া হয়। একই সাথে প্রত্যেক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় লাইব্রেরি কার্যক্রম চাঙ্গা করার জন্য ১৮ লক্ষ টাকার বই বিতরণ করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যাভাস বৃদ্ধিতে এই বই পড়া প্রতিযোগিতা ভোলা জেলায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। প্রতিটি জেলায় এ কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

বি ক্যাঃ আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোনো স্মরণীয় স্মৃতির কথা বলবেন কি, যা এখনও মনকে দোলা দেয়?

বেলায়েত হোসেনঃ আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক স্মৃতি আছে। তার মধ্যে একটি বেদনাবিধুর স্মৃতি হলো ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হলের টিভি রুমের ছাদ ধ্বসে ৩৯ জন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা। আমি ছিলাম শহীদুল্লাহ হলের ১১৮ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র। রাত অনুমান ৮.৩০ ঘটিকায় হলের টিভি রুমে বাংলাদেশ টেলিভিশন ‘শুকতারা’ নাটক পরিবেশিত হচ্ছিল। জনপ্রিয় এ নাটকটি দেখার জন্য টিভি রুমে উপচে পড়া ভিড় ছিল। টিভি রুমটি ব্রিটিশ সময়ে টালিযুক্ত ছাদ ছিল। ঠিকাদার মেরামত কাজ করছিল। কিন্তু টিভিরুম বন্ধ করা হয়নি। এসময়ে একটু বৃষ্টি হয়েছিল। দিনের বেলায় টিভি রুমের ছাদের টালি খোলা হয়েছিল। বৃষ্টিপাতের ফলে টালির নিচের সুরকীতে পানি শোষণের ফলে বেশ ভারী হয়ে যায়। রাত অনুমান ৮.৩০ ঘটিকার দিকে বিকট শব্দে টিভি রুমের ছাদ ধ্বসে পড়ে পুরো মিলনায়তন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। আমরা কয়েক বন্ধু দৌড়ে জগন্নাথ হলের দিকে গেলাম। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীগণ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। উদ্ধার করে আহত-নিহতদের পার্শ্ববর্তী ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাই নেয়। প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। আমরা অনেকেই রক্তদান করেছি। টিভিতে রক্ত দেয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৩৫ ছাত্র এবং ৪জন গেস্ট ও কর্মচারী নিহত হন। প্রায় ৩০০ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের টিভি রুমের এ মারাত্মক দুর্ঘটনার স্মৃতি আজও আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় অম্লান হয়ে আছে, যা জীবনে কোনোদিন ভুলতে পারবো না।

বি ক্যাঃ মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে কার কি ভূমিকা আছে বলে আপনি মনে করেন?

বেলায়েত হোসেনঃ মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে আমরা যে যেখানে আছি, আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। আমরা যে যেখান থেকে যে কাজ করছি, সেই কাজের মাধ্যমে আমাদের দেশকে তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে, বঙ্গবন্ধুর জীবনে আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করার পরে এদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। ইতিহাসের চাকাকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এ দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরে আসে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করার নতুন অধ্যায়। তবুও এখনকার নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস এখনো পুরোপুরি সঠিকভাবে জানেনা, তাই তাদেরকে স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সঠিকভাবে জানাতে হবে। স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সরকার পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তবুও আমি মনে করি, আরও ব্যাপকভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা লাভ করেছে। এই ঐতিহাসিক ভাষণটিও নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপকভাবে সঞ্চারিত করার লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে আমি মনে করি। এছাড়া বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগ-তিতিক্ষার সংগ্রামী ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে অবহিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস যদি আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে না পারি, তাহলে আমরা তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব না। প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারব না। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের ঋণ শোধ করাও হবে না। বঙ্গবন্ধু আমাদের এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি আমাদের উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আমরা সকলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততার সাথে নিজ দায়িত্ব পালন করলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হবে।

বি ক্যাঃ ছাত্র-যুবকদের উদ্দেশ্যে আপনার মূল্যবান পরামর্শ জানতে চাই।

বেলায়েত হোসেনঃ ছাত্র যুবকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হলো, পড়াশোনার প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আবার শুধু পুঁথিগত পড়াশোনা করলেই হবেনা। পুঁথিগত পড়াশোনার বাইরে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল বই পড়তে হবে। একটা ভালো বই হচ্ছে একটা ভালো ভুবন। আর অনেক ভালো বই মানে অনেক ভালো ভুবন। যে অনেক বই পড়ে, সে একই সাথে অনেক ভুবনে অনেক জীবন লাভ করে। এভাবে আত্মার প্রশান্তি হয়। জীবন গৌরবান্বিত হয়। এক জীবনে অনেক জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। তাই বেশি বেশি করে ভালো বই পড়তে হবে। পাশাপাশি কো-কারিকুলার একটিভিটিসের প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে। ইংরেজি ভালো জানতে হবে। ইন্টারনেটে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কম্পিউটারের ওপরও ভাল দখল থাকতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ভাল দিকও আছে, খারাপ দিকও আছে। ভালো দিকটা গ্রহণ করতে হবে, খারাপ দিকটা বর্জন করতে হবে। কেননা, ফুল থেকে মৌমাছি নেয় মধু, আর মাকড়সা নেয় বিষ। কাজেই ইন্টারনেট থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। ইন্টারনেটে আজ সারা পৃথিবীর বড় বড় সব লাইব্রেরির ভালো ভালো বই পাওয়া যায়। তাই মোবাইলে অযথা ফেইসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি ঘাটাঘাটি না করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভালো ভালো বই পড়তে হবে। তাহলেই জীবন সফল হবে।

বি ক্যাঃ জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের পাশাপাশি শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ও ক্যাম্পাস সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে, এ প্রতিষ্ঠানের তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে আপনার পরামর্শ ও মূল্যায়ন জানাবেন কি?

বেলায়েত হোসেনঃ জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের পাশাপাশি শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ও ক্যাম্পাস সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সাথে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন থেকেই পরিচিত। এমনকি মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের দায়িত্বে যখন ছিলাম, তখনও এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুবই গঠনমূলক একটি পত্রিকা। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সুউন্নত জীবন গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা শিক্ষা বিষয়ক অনবদ্য আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে। যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ক্যাম্পাস পত্রিকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলসমূহের তথ্যবহুল সংবাদ, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশ করে, যা পড়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকবৃন্দ খুবই উপকৃত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা সুদীর্ঘ তিন যুগ ধরে এদেশের শিক্ষান্নোয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা অসীম অবদান রেখে চলেছে। ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক ড. এম হেলাল অত্যন্ত সাহসী এবং প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব। আমি তাঁর সুদীর্ঘ কর্মময় জীবন এবং সাফল্য কামনা করি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার নেপথ্যের কলাকুশলীদের আমি অভিনন্দন জানাই। আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার ধারাবাহিক সাফল্য-সমৃদ্ধি কামনা করি।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img