ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি ল্যাবে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর গবেষণা করে নতুন প্রজাতির হাইব্রিড কলিজা কৃমির সন্ধান পেয়েছেন একদল গবেষক।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে ২.৪ মিলিয়ন মানুষ কলিজা কৃমি বা ফেসিওলা দ্বারা আক্রান্ত এবং আরো ১৮০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হবার হুমকিতে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে ৩.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয় কলিজা কৃমি বা ফেসিওলার আক্রমণে।
পরজীবী এই প্রাণিটির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সরাসরি কেউ মারা যায় না। কিন্তু পরোক্ষভাবে এরা অনেক মৃত্যুর জন্য দায়ী। কলিজা কৃমির রোগ সৃষ্টির মারাত্মক ক্ষমতার কারণে খাদ্য পরিপাক থেকে শুরু করে প্রজনন ও উৎপাদন এবং সম্পূর্ণ কলিজা নষ্ট করে অনায়াসে আক্রান্ত প্রাণির মৃত্যু ঘটায়। এই কলিজা কৃমি মধ্যবর্তী পোষক শামুক থেকে অতি সহজে গবাদি পশু, বন্য প্রাণি এবং মানুষে ছড়িয়ে পড়ে।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কলিজা কৃমির ফেনোটাইপিক (বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য) এবং জেনোটাইপিক (জীনগত) বৈশিষ্ট সফলভাবে উৎঘাটন করে নতুন প্রজাতির হাইব্রিড কলিজা কৃমির সন্ধান পেয়েছেন।
গবেষকরা জানান, কলিজা কৃমির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এবং রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃমির জেনেটিক বা কৌলিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ অপরিহার্য। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএ ই এ) আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে কলিজা কৃমির জিন রহস্য উৎঘাটনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যথলজি বিভাগের প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ও প্রফেসর ড. মোতাহার হোসেইন মন্ডল এবং প্রফেসর ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের সার্বিক সহযোগিতায় ডাঃ সৈয়দ আলী আহসান কলিজা কৃমি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি সারা বাংলাদেশের ১৪টি উপজেলা থেকে ২,০০০ এর অধিক কলিজা কৃমি সংগ্রহ করে প্যাথলজি বিভাগের জিন ল্যাবে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কাজ করেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার প্রফেসর ড. ডেভিড ব্লেয়ার এবং স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সান্টিয়াগো মাসকমার সহযোগিতায় কলিজা কৃমিটির প্রাপ্ত জীনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে নতুন প্রজাতি হিসেবে তা নিশ্চিত করা হয়।
গবেষণার সফলতার বিষয়ে ডাঃ সৈয়দ আলী আহসান বলেন, জিন প্রযুক্তির সর্বাধুনিক কৌশল ব্যবহার করে আমরা বাংলাদেশে ফেসিওলা জাইগান্টিকা ও ফেসিওলা হেপাটিকার মধ্যবর্তী ভিন্ন একটি প্রজাতি বা হাইব্রিড ফেসিওলার সন্ধান পেয়েছি। এই গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা এখন কলিজা কৃমির সংক্রমণের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের কলিজা কৃমি অন্য দেশের থেকে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই আমারা আশংকা করি, সঠিক অনুসন্ধান হলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এ রোগের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
প্রফেসর ড. মোতাহার হোসেইন মন্ডল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জুনোটিক এই রোগের প্রকৃতি আরো মারাত্মক হওয়ার আশংকা রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন আর কৃষকের অবলম্বন গবাদি পশু রক্ষা করতে এখনই কৃমি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
গবেষকরা আশা প্রকাশ করে বলেন, কলিজা কৃমির ফেনোটাইপিক এবং জেনোটাইপিক বৈশিষ্ট্য উৎঘাটনের এই সফলতা এই কৃমির প্রতিকার ও প্রতিরোধে এতদিনের ব্যর্থতা দূর করে দিবে।