॥ রাইসা হেলাল ॥
স্নাতক (সম্মান), ১ম বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পর্ব ২
লেখক, কলামিষ্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল রচিত ‘সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি এবং সাফল্যের শীর্ষ পথে’ বইটির যে অধ্যায় সম্পর্কে আজ আমি লিখব সেটি খুব মজার। অধ্যায়টির নাম- অন্যকে সাহায্য করতে থাকুন, আপনার সমস্যাও কেটে যাবে। নাম শুনে অধ্যায়টি বেশ Interesting মনে হচ্ছে, তাই না? চলুন তাহলে দেখি, এ অধ্যায়ে লেখক কি বলতে চেয়েছেন।
এ অধ্যায়টি শুরু হয় লেখকের ব্যক্তিগত কয়েকটি অভিজ্ঞতা দিয়ে। নিজ জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, নিজ অফিস পরিচালনার কৌশল -এসব থেকেই লেখক স্পষ্টভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, কিভাবে অন্যকে সাহায্য করতে থাকলে নিজের সমস্যাও কেটে যায়।
লেখক তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, অন্যের সাহায্যে এগিয়ে এলে তাতে অন্যের উপকার যতটুকুই হোক না কেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পরিপূর্ণ সাহায্য হয়ে যায় নিজের। অন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে কিংবা অন্যের মঙ্গল কামনায় নিজের মস্তিষ্কে যে পজিটিভ নিউরন প্রজ্জ্বলিত হলো, তাতে অন্যের উপকার হোক বা না হোক অন্তত নিজের প্রোজ্জ্বল মস্তিষ্কের প্রভাবে নিজ দেহ-মনে অনেক আনন্দ ও প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে, নিজের সৃজনশীলতা, ভারসাম্য ও সুস্থতা বেড়ে যায় এবং নিজের রোগমুক্তিসহ সর্ববিষয়ে সাফল্য বেড়ে যায় এক্ষেত্রে।
উদাহরণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানী পিলে’র একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখক এম হেলাল। একটি স্টেশনে অপেক্ষার সময় পিলে দেখতে পেলেন যে- সেখানে হুইল চেয়ারে বসা দু’ব্যক্তির একজনের চেয়ার শিকলে আটকে যাওয়ায় সে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, আর অন্যজন বসে বসে তামাশা দেখছে। পিলে ২য় জনের কাছে গিয়ে বললেন- তুমি ওকে সাহায্য করো, তাতে তোমার সমস্যা কেটে যাবে। তখন ঐ ব্যক্তি ১ম ব্যক্তিকে শিকলের ফাঁসমুক্ত হতে সাহায্য করে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে পিলেকে বলল- ‘সাহায্য করা ভালো’ বলে শুনেছি। কিন্তু অন্যকে সাহায্য করলে নিজের মধ্যে যে এত আনন্দ তৈরি হয় তা কখনও বুঝিনি। কয়েক মাস পর ঐ ২য় ব্যক্তির সাথে পিলের আবার দেখা। এবার হুইল চেয়ারে নয়, পায়ে হেঁটে চলছে সে। পিলে জানতে চাইলেন, তোমার হুইল চেয়ার কই? লোকটি উত্তর দিল- তুমি আমাকে যে পথ দেখিয়েছ ‘অন্যকে সাহায্য করতে’, সে পথ ধরে যেতে যেতে এবং অন্যের অসুবিধা দূর করতে করতে নিজের মধ্যে এত যে আনন্দের জোয়ার বইছে, সে জোয়ারে আমার শারীরিক ও মানসিক সকল অসুবিধাই চলে গেছে।
এভাবেই সাহায্যকারী ব্যক্তির সাহায্যে সরাসরি এগিয়ে আসেন প্রকৃতি ও স্রষ্টা। তাই প্রাকৃতিক শক্তি (Power of Nature) এর সাথে নিজেকে যুক্ত করার পথ হচ্ছে অন্যকে সাহায্য করা। আর এরূপ প্রাকৃতিক শক্তি যার ভেতর যত বেশি, সে তত বেশি সফল মানুষ। এ কারণেই লেখক বলেছেন, সফল মানুষ হবার সহজ মন্ত্র হলো অন্যের সাহায্যে নিজকে নিবেদিত করা।
এরপর লেখক ধর্মীয়ভাবেও বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সকল ধর্মেই এ দর্শন রয়েছে যে, মানবজাতি একে অপরের অতি আপনজন। তাই তাদেরকে পরস্পরের সাহায্যে নিবেদিত হতে হবে। মানুষকে সাহায্য করলেই স্রষ্টার আনুকূল্য পাওয়া যায়। তাই স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও সাহায্যলাভ করতে চাইলেও মানুষ ও মানবতার সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের খেদমত করার মাধ্যমে ¯্রষ্টার কৃপা পাওয়া সহজ। সমাজে প্রতিটি মানুষ যদি অন্যকে সাহায্যের কথা চিন্তা করে তাহলে সে সমাজে কেউ কষ্টে থাকতে পারেনা, সকলেই সুখী হতে পারে।
লেখক একটি সুন্দর উদাহরণের মাধ্যমে আলোচনাটিকে উপসংহারের দিকে নিয়ে গেছেন। সেটি হল, ‘আমাদের ৫ জনের নিকট থাকা ৫টি প্রদীপ যদি আমরা জ্বালিয়ে দেই অথবা ৫ মাথার ৫টি চিন্তার আলোয় যদি ৫ লক্ষ মানুষকে আলোকিত করি, তাহলে সামাজিক বা জাতীয় আলোর পরিমাণ এত বেশি হবে যে- আমাদের ৫ জনের মধ্যে কোনো একজনের নিজের প্রদীপ নিভে গেলেও তাতে ক্ষতি নেই; আমরা সবাই সামাজিক বা জাতীয় আলোয় আলোকিত থাকব এবং সেই আলো হবে অফুরন্ত ও দীর্ঘস্থায়ী।’
এম হেলাল এর সুনিপুণ ও অনন্য সৃষ্টি ‘সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি এবং সাফল্যের শীর্ষ পথে’ বইয়ের একটি মাত্র অধ্যায় নিয়ে আজকের লেখায় আলোচনা করলাম। কিন্তু জীবন গঠনমূলক এমন অনেক আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয় বিষয় সহজভাবে বর্ণিত হয়েছে এ বইয়ের নানা অধ্যায়ে। আগামী লেখায় আরও একটি আকর্ষণীয় অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করব। এর মধ্যে কেউ চাইলে ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বইটি কিনে পড়ে ফেলতে পারেন এবং সে বইয়ের জ্ঞানালোকে উজ্জীবিত হয়ে আমার মত লেখালেখি শুরু করে দিতে পারেন।