ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস এর আওতায় মাস্টার অব প্রফেশনাল এ্যাকাউন্টিং (এমপিএ) প্রোগ্রাম এর উদ্বোধন হয় গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাবি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন থাইল্যান্ডের নরেসুয়ান ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. সুজিন জিনাহিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশের কন্ট্রোলার জেনারেল অব এ্যাকাউন্টস মোহাম্মদ আবুল কাশেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বিজিনেস স্ট্যাডিজ এর ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিপার্টমেন্ট অব এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম্স এর চেয়ারম্যান এবং এমপিএ প্রোগ্রাম এর ডাইরেক্টর প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন আইসিএবি’র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুস সালাম এবং এসিসি এর কান্ট্রি ডাইরেক্টর মিসেস মহুয়া রশীদ। প্রোগামের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন এমপিএ প্রোগ্রাম এর ডেপুটি-ডাইরেক্টর প্রফেসর ড. মাহফুজুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিভাগীয় শিক্ষক তাহমিনা আহমেদ।
বিকাল ৫টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর অতিথিদের বক্তৃতার পরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শেষ হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে একাউন্টিং সিস্টেমস এর ছাত্র-ছাত্রী এবং এ পেশায় জড়িত ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ করেন। এরপর ডিপার্টমেন্ট অব এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম্স এর প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সবশেষে নৈশভোজে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
নতুন প্রোগ্রামের সাফল্য কামনা করে দেয়া অতিথিগণের বক্তৃতার চৌম্বক অংশ ক্যাম্পাস পত্রিকার কন্ট্রিবিউটর মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে সন্নিবেশিত হলো।
প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশীয় ও বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন তথ্য ও জ্ঞান আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমরা পরস্পর সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছে। আজ মাস্টার অব প্রফেশনাল এ্যাকাউন্টিং এর শুভ উদ্বোধন হলো। যুব-সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে এ পেশা আকর্ষণ করবে। তিনি বলেন, We look forward for bright future. আমি এ প্রোগ্রামের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
প্রফেসর সুজিন জিনাহিয়ন
থাইল্যান্ডের নরেনসুয়ান ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সুজিন জিনাহিয়ন সে দেশের একাউন্টিং সিস্টেমস এর ওপর আলোকপাত করেন। বাংলাদেশের সাথে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়, দু’দেশের মধ্যে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক বিনিময়ের সম্ভাবনার ক্ষেত্র উল্লেখ করেন। প্রফেসর সুজিন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, We are moving towards millinium goals. নরেনসুয়ান ইউনিভার্সিটি কোয়ালিটি শিক্ষার ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর গবেষণা কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসিত বলে একে ইউনিভার্সিটি অব ইনোভেশন বলেও উল্লেখ করা হয়।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম
বিজিনেস স্ট্যাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বাজারে এ্যাকাউন্টেন্টদের চাহিদা ব্যাপক, যা এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট মেটাতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আরেফিন সিদ্দিক এর নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটির অবস্থান দেশে বিদেশে সমান মর্যাদাপূর্ণ; র্যাংকিংয়েও এ বিভাগটি স্থান করে নিতে পারবে। এ সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমি উপাচার্য মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই।
মোহাম্মদ আবুল কাশেম
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বাংলাদেশের কন্ট্রোলার জেনারেল অব এ্যাকাউন্টস মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, Best of best idea হলো মাস্টার অব প্রফেশনাল এ্যাকাউন্টিং প্রোগ্রাম এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, সমাজ প্রগতি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য কাজ করা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে বর্তমান দায়িত্বে নিযুক্ত হয়ে গৌরববোধ করছি।
প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস এর চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির জন্য বর্তমানে আমাদের প্রচুর সংখ্যক পেশাজীবী হিসাববিজ্ঞানী প্রয়োজন। অথচ এ দেশে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার পেশাজীবী হিসাববিজ্ঞানী আছেন। একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এমপিএ প্রোগ্রাম এই ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, মাননীয় উপাচার্যের অনুপ্রেরণায় এআইএস বিভাগ এ প্রোগ্রামটি চালু করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে প্রথম। তিনি বলেন, এই প্রোগ্রাম চালু করার অনুমিত প্রদান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন বলেন, এমপিএ প্রোগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্বচ্ছতার পথে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। দ্রুত বিকাশমান বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আগামী ২০ বছরের মধ্যে ২০% এ উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়। বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১৭%, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জিডিপি ৭% অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রশিক্ষিত পেশাজীবীদের প্রয়োজন। দেশে-বিদেশে ট্রেইনড প্রফেশনালের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে, যা মাস্টার অব প্রফেশনাল একাউন্টিং প্রোগ্রাম পূরণ করতে সক্ষম হবে।
প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম
ডিপার্টমেন্ট অব এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম্স এর প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম তাঁর ধন্যবাদ জ্ঞাপক বক্তব্যে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে এবং যারা এমপিএ প্রোগ্রাম সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, একে সফল করে তুলেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের শিক্ষক-শিক্ষিকা, সকল ছাত্রছাত্রীকে তাদের ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিদেশি বিজ্ঞ শিক্ষাবিদ থাইল্যান্ডের প্রফেসর সুজিন জিনাহিয়নকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
মহুয়া রশীদ
প্রান্তিক মঞ্চ থেকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন মহুয়া রশীদ। তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি ব্যতিক্রম। এমপিএ প্রোগ্রাম আমাদেরকে প্র্যাকটিকেল এডুকেশন দিবে।
এমপিএ প্রোগ্রাম সম্পর্কে কিছু কথা
এ কোর্সের সময়কাল ২ বছর, কোর্স সংখ্যা ১৬, ৪৮ ক্রেডিট। এ কোর্সের ভিত্তি হলো অতি প্রয়োজনীয় এ্যাকাউন্টিং নীতিমালা ও কৌশল আয়ত্ত করে বৃহত্তর ক্ষেত্রে অডিটিং, ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং, ইন্টারন্যাল কন্ট্রোল এবং ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টিং বিষয়ে দক্ষভাবে কাজ করার জন্য জনশক্তি গড়ে তোলা।
বৈশিষ্ট্যঃ
এমপিএ কোর্সে উচ্চ গুণসম্পন্ন ইন-হাউজ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এই প্রশিক্ষণার্থীরাই শিল্প-কারখানার অসাধারণ প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হবে।
অর্থনীতি, ফিন্যান্স ও আইন এর আনুষঙ্গিক জ্ঞানসহ ব্যবসায়ে শক্ত ভিত সম্পন্ন এ্যাকাউন্টিং জ্ঞান প্রদান করা হবে এবং ব্যবসায়-কমিউনিটি ও পেশাজীবী এ্যাকাউন্টিং বডির সাথে অতুলনীয় যোগাযোগ স্থাপন এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে।
প্রোগ্রাম কাঠামোঃ
বর্ষ-১ঃ সেমিস্টার-১, সেমিস্টার-২
বর্ষ-২ঃ সেমিস্টার-১, সেমিস্টার-২
প্রি-রিকুইজিট কোর্সসমূহঃ
প্রিন্সিপাল্স অব এ্যাকাউন্টিং, প্রিন্সিপালস্ অব ইকোনমিক্স, প্রিন্সিপালস্ অব ফাইন্যান্স কোয়ানটিটেটিভ এ্যানালাইসিস ফর বিজনেস।
এ প্রোগ্রামের মূল বিষয়সমূহ (Core Courses) হলোঃ কস্ট এন্ড ম্যানেজেরিয়াল এ্যাকাউন্টিং, এ্যাডভান্সড ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমন্ট, অডিট এন্ড এ্যাসিওরেন্স ইত্যাদি।
ঐচ্ছিক বিষয়সমূহ (Elective Courses)ঃ
এ্যাকাউন্টিং ফর ম্যানেজেরিয়েল কনট্রোল, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, এ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টিং, কর্পোরেট গভার্ননেন্স এন্ড এথিক্স, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, এ্যাডভান্সড্ ট্যাক্সেসন, এ্যাকাউন্টিং ফর ফিন্যানসিয়াল ইনস্টিটিউশন্স, কর্পোরেট রিপোর্টিং এন্ড এ্যাসিউরেন্স, বিজনেস এ্যানালাইসিস, গভর্নমেন্ট এ্যাকাউন্টিং ইত্যাদি।
প্রোগ্রামের খরচঃ
এ্যাডমিশন ফিঃ ১০,০০০ টাকা (এককালীন অফেরৎযোগ্য), টিউশন ফিঃ ৪,০০০ টাকা (প্রতিক্রেডিট), ল্যাব ফিঃ ৫,০০০ টাকা, সেমিস্টার ফিঃ ৮,০০০ টাকা (প্রতিসেমিস্টার)