জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উপস্থাপন করেন। মহামারি করোনা ভাইরাস সংকটময় পরিস্থিতি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তায় রেখে এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণঃ ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।
সম্প্রতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন- জিডিপিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য রেকর্ড জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট প্রস্তাবে করোনা মোকাবিলায় যেকোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেটে সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ বছরে ৩ লাখ টাকা আয় হলে কর দিতে হবে না। চলতি অর্থবছরে যা আছে আড়াই লাখ টাকা।
এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৯তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় বাজেট।
আগের ধারাবাহিকতায় এবারও বৃদ্ধি পেয়েছে বাজেটের সামগ্রিক আকার ও খাতওয়ারি আয়-ব্যয়ের পরিমাণ। এ বছর মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণঃ ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’। সঙ্গত কারণেই এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে। পাশাপাশি কৃষিখাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে নানা ধরনের কৃষি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুদ্ধার করাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাবনা রয়েছে।
বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় রাখা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সরবরাহ ও সেবা বাবদ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সরকারি প্রণোদনা, ভর্তুকি ও অনুদান বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক অনুদান পাবে চার হাজার ১৩ কোটি টাকা। সবমিলে সরকারের আয় হবে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
বাজেট পেশ বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রথম নিজে উপস্থাপন করেন। এরপর ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়।