প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যেকোনো মান-হুঁশ এরই জরুরি দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রতিশ্রুতি রক্ষায় যিনি যত সিরিয়াস বা যত দায়িত্বশীল, তিনি তত বড় মাপের সুউন্নত মানুষ। অন্যদিকে স্বার্থান্ধ কিংবা অসৎ চরিত্রের মানুষ অন্যকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা আবার অবলীলায় ভঙ্গ করে ফেলে। এটি নির্দয়-নির্মম-নিষ্ঠুর তথা পশু আচরণ বলে পরিগণ্য। এককথায় চুক্তি ভঙ্গ ও বিশ্বাস ভঙ্গ করা এবং অন্যের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনা অমনুষ্যচিত কাজ।
একজনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে অন্যের যে কত বড় ক্ষতি হয়ে যায়; হৃদয় ভেঙ্গে, জীবন ভেঙ্গে খান খান হয়ে অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, তা স্বার্থান্ধ অমানুষদের বোধেই আসে না। তারা নিজ স্বার্থের মোহে ও একতরফা বুদ্ধি-যুক্তির অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করীতে এত বিভোর ও অন্ধ থাকে যে, অন্যের দুঃখ-কষ্ট কিংবা হৃদয়ের বোবাকান্না কিংবা হাহাকারের রোনাজারি তার ভোগবাদী পাষাণ হৃদয়কে নাড়াও দেয় না।
একজন মানুষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে আরেকজন মানুষের জীবননাশ তথা মর্মান্তিক মৃত্যুও হতে পারে। বিদেশের মাটিতে ঘটে যাওয়া এরকম একটি মর্মন্তুদ ঘটনা বলছি, যেখানে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তা প্রতিপালন না করায় একজন অসহায় আর্তমানুষের বরফশীতল প্রচন্ড শীতের রাতে ঠান্ডায় জমে গিয়ে হৃদয়বিদারক করুণ মৃত্যু হয়েছে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সেই মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো-
প্রচন্ড বরফ শীতল রাতে শিকাগো শহরের এক ধনী ব্যক্তি তার বাড়ির সামনে এক হতদরিদ্র বৃদ্ধকে দেখতে পেলেন। সেই বৃদ্ধের গায়ে কোনো গরম কাপড় ছিল না। তবে গরম কাপড় না থাকা সত্ত্বেও সে নিজেকে পরিবেশের সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বৃদ্ধের এই অবস্থা দেখে ধনী ব্যক্তিটির মায়া হলো। তিনি বৃদ্ধের কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, বাইরে এত ঠান্ডা অথচ আপনার গায়ে কোনো উষ্ণ কাপড় নেই, আপনার কি কষ্ট হচ্ছে না? ধনী ব্যক্তিটির মুখে এমন কথা শুনে বৃদ্ধ হেসে বললেন- আমার কাছে তেমন কোনো উষ্ণ কাপড় নেই এটা ঠিক, কিন্তু আমি এই পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি; আমার শরীরে সয়ে গেছে। কথাগুলো শেষ করার পর বৃদ্ধকে বেশ উৎফুল্ল মনে হলেও বৃদ্ধের এমন উত্তরে ধনী ব্যক্তিটির মন ভরলো না। তিনি বৃদ্ধকে বেশ বিনয়ের সাথে বললেন, আপনি আমার জন্য একটু অপেক্ষা করুন; আমি এক্ষুণি আমার ঘর থেকে আপনার জন্য উষ্ণ কাপড় নিয়ে আসছি।
ধনী ব্যক্তিটির এমন আন্তরিকতা দেখে অসহায় বৃদ্ধটি মনে মনে খুশি হলেন। বৃদ্ধের জন্য উষ্ণ কাপড় আনতে ধনী ব্যক্তিটি তার বাড়ির ভিতরে ঢুকলেন। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং সেই অসহায় বৃদ্ধের কথা ভুলেই গেলেন। এমনকি কাজ করতে করতে একসময়ে তিনি ঘুমিয়েও গেলেন।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর হঠাৎ সেই অসহায় বৃদ্ধের কথা মনে হলো। তিনি সাথে সাথে বাইরে ছুটে গেলেন এবং বৃদ্ধকে খুঁজতে লাগলেন। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তিনি সেই অসহায় বৃদ্ধ লোকটিকে বাড়ির এক কোণে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এভাবে বৃদ্ধের মৃতদেহ দেখে ধনী ব্যক্তিটি ভীষণ কষ্ট পেলেন।
তিনি আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে ভগ্ন হৃদয়ে বৃদ্ধের কাছে গেলেন এবং সেখানে গিয়ে মৃত বৃদ্ধের হাতে একটি চিরকুট পেলেন। চিরকুটটি হাতে নিয়ে দেখলেন, তাতে লেখা রয়েছে-
‘যখন আমার গায়ে কোনো উষ্ণ কাপড় ছিল না, তখন আমার ঠান্ডার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা ছিল। কারণ, আমি তাকেই আমার নিয়তি বলে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন আপনি আমাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তখন আমি একটু উষ্ণ কাপড়ের খুব অভাব অনুভব করতে শুরু করলাম এবং তীব্র ঠান্ডার মধ্যে টিকে থাকার ক্ষমতা বা ঠান্ডা প্রতিরোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম।’
চিঠিটা হাতে নিয়ে ধনী লোকটি খুবই লজ্জিত, মর্মাহত, দিশেহারা হয়ে পড়লেন এবং বুঝতে পারলেন তার একটু ভুলের জন্য তথা প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার জন্য আরেকজনের জীবন চলে যাওয়ার মতো কত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো!
উপরোক্ত উদাহরণ থেকেও শিক্ষণীয় যে- কাউকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়ার আগে, কোনো স্বপ্ন দেখানোর আগে ভালো করে ভাবা উচিত। কেননা, মানুষ বাঁচে আশা নিয়ে; স্বপ্ন নিয়ে। তিলে তিলে তৈরি হওয়া আশার আলো যখন নিভে যায়, তখন মানুষ বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন পায় না। তখন সে দিশেহারা, গতিহারা, সর্বহারা হয়ে জীবনকে তুচ্ছ মনে করে তার আত্মার মৃত্যু ঘটিয়ে ফেলে। অনেকক্ষেত্রে আত্মঘাতি ও আত্মহত্যাকেই একমাত্র শান্তির পথ বলে বেছে নেয়। আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সমাজে ছাত্র-তরুণ-যুবকদের মাঝে এরূপ ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। এ প্রসঙ্গে একজনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে আরেকজনের জীবন নাশের একটি উদাহরণ দিচ্ছি। এ বাস্তব উপাখ্যানটা কিন্তু আমাদের দেশজ সংস্কৃতির অহরহ ঘটনার একটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে এবং পার্শ্ববর্তী কলেজের মেয়ে পরস্পরের প্রেমে পড়ে। সুগভীর আবেগে জড়িয়ে তারা উভয়েই পরস্পরকে কথা দেয় সারাজীবন এই একই প্রেমে থাকার। অর্থাৎ কোনোভাবে তারা কেউ কাউকে প্রেমচ্যুত করবে না। মেয়েটি ছেলেটিকে এমনও কথা দেয় যে, সে সারাজীবন তার প্রেম-ভালোবাসা, আবেগ-আহ্লাদ সবকিছু এই প্রেমিকের জন্যই রাখবে। এমনকি কোনো কারণে পরিবারের চাপে অন্য কোথাও বিয়ে করতে হলেও সেখানে সে শুধু ঘরসংসারের প্রয়োজনে যাবে; কিন্তু তার সকল আবেগ-অনুভূতি-আহ্লাদ সবই থাকবে এ প্রেমিকের জন্যে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত ও সংরক্ষিত।
সুবোধ মেয়েটির এরূপ প্রেমময় আকাঙ্খা ছেলেটিকে এমনই ভীষণ আকৃষ্ট-বিমুগ্ধ-বিমোহিত করে তোলে, যার প্রেক্ষিতে সত্য-সুন্দরের চর্চায় অবিচল ও প্রেম-ভালোবাসার প্রতি উদার চিত্তের মহৎপ্রাণ ছেলে হিসেবে তার ভবিষ্যতের সকল পরিকল্পনা ও শখ-সাধনার ডালি সাজিয়ে তোলে। তাকে ঘিরে মেয়েটির এরূপ একান্ত আবদার-আহ্বানের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। বিভিন্ন সময়ে বহুবার বহুভাবে বজ্রকঠিন শপথে এমনকি ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন ছুঁয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা দু’জন দু’জনকে গ্রহণ-বিবাহ-মিলন সবকিছু করে।
প্রায় এক যুগ পার হয়ে যাবার পর হঠাৎ মেয়েটির ভাবোদয় হয় যে, আমিতো এ ছেলের প্রণয় বন্ধনে পড়ে সবকিছুতে বন্দী হয়ে যাচ্ছি। আমাকে এ বন্ধনমুক্ত হতে হবে। এভাবে সে অন্যত্র বিয়েও করে ফেলে। তদুপরি নিজের বিয়েতে দেরি হয়ে যাবার জন্যে উল্টোভাবে ছেলেকে নানা দোষারোপ করতে থাকে। তার একচেটিয়া যুক্তি ও কুটবুদ্ধির মতলব দেখে ছেলেটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারে না যে, এই মেয়েটিই তার ঐ প্রেয়সী; যে তাকে সমগ্র জীবনের জন্যে আকুল আবেগে গভীর প্রেমডোরে বেঁধেছে।
মেয়েটি তার প্রেম-মই দিয়ে ছেলেটিকে গাছে চড়িয়ে তারপর সেই মই নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার নির্লজ্জ বেলেল্লাপনা দেখে ছেলেটি লজ্জিত, স্তম্ভিত ও মর্মাহত হয়ে জীবনের মায়া হারিয়ে ফেলে; বুকের ভিতরের বোবাকান্না কিংবা হৃদয়ের ভাঙ্গন আর্তনাদ থামাতে না পেরে সবকিছু ভুলে থাকার প্রয়াসে নেশার আশ্রয় নিতেও বাধ্য হয়। তাতেও স্বস্তি না পেয়ে অবশেষে মরণ-বিষ সংগ্রহ করে এনে মৃত্যুর মহড়ায় প্রতিদিন একফোঁটা করে খেতে থাকে; যাতে যেকোনো সময়েই মৃত্যুর আলিঙ্গনে কোনো পিছুটান না আসে।
ছেলের এ চরম আত্মহনন ও আত্মহত্যার প্রস্তুতির কথা জানতে পেরে অবশেষে মেয়েটির বোধদয় হয়, এ ছেলের আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ-র্যাব-গোয়েন্দা ও সাংবাদিকরা তাকেই খুঁজে বের করবে... -এরূপ বিভিন্ন সংশয়ে মেয়েটি নিজকে রক্ষা করতে পূর্ব-প্রেমের নব্য অভিনয়ে ছেলেটিকে কৌশলী সঙ্গ দেবার চেষ্টা করে, যা একদিকে সাগরের বিশাল জলরাশির তুলনায় শিশির বিন্দুর সাহচর্য বলে ছেলেটি অনুভব করে এবং অন্যদিকে এতটুকুনের জন্যেও মেয়েটিকে কৃতজ্ঞতা জানায়। এতদসত্ত্বেও ধূরন্ধর মেয়েটি সর্বক্ষণ অসহায় ছেলেটিকে সন্দেহ করতে থাকে- ছেলেটি কিনা তার কোনো ক্ষতি করে ফেলে, তার ছবি কিংবা ভয়েস কিংবা এসএমএস নিয়ে। অথচ এসব নেগেটিভ বিষয় ছেলেটির ধ্যান-ধারণায়ই নেই। আপন স্বার্থে অন্ধ পাষাণ হৃদয়ের মেয়েটির বোধে কিছুতেই আসে না যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভাবান এ ছেলের জীবনতো খুবই প্রোজ্জ্বল-সুস্থ ও সুন্দর ছিল। সেই প্রতিভাকে তার প্রেমের স্বপ্ন-সাধের প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞায় আকৃষ্ট করে। ফলে ছেলেটি তার জীবন-যৌবনসহ সমগ্র জীবনের সকল বিশ্বাস মেয়েটির তরেই বিলীন করে সুদীর্ঘ ১২ বছর ধরে মিশতে মিশতে একেবারেই মিশে যায় সর্বকিছুতে। প্রণয়ডোরে দু’দেহ-মন এরূপ মিশে একাকার হয়ে গেলে তারপর যে কিছুতেই আলাদা করা যায় না; আলাদা করতে গেলেই যে ভেঙ্গে যায়, জখম হয় -তা মেয়েটি বুঝতেই চায় না। ফলে অসহায় গোবেচারা ছেলের জীবন এখন মেয়েটির প্রেম-কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বন্দী হয়ে তিলে তিলে দগ্ধ হয়ে নিঃশেষ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ রইল না।
উপরোক্ত উদাহরণ-পর্যালোচনায় লক্ষ্যণীয় যে, প্রথমতঃ ছেলেটিকে প্রণয়ডোরে বন্ধনের প্রতিশ্রুতি কিংবা প্রতিজ্ঞার বন্ধনে আবদ্ধ করার আগে চিন্তা-ভাবনা করা সাপেক্ষেই তা করা উচিত ছিল মেয়েটির। দ্বিতীয়তঃ যখন প্রতিশ্রুতি দিয়েই ফেলেছে, তখন তাকেই জীবন সঙ্গীরূপে গ্রহণ করা এবং সারাজীবন প্রেমের এ বন্ধন রক্ষা করা জরুরি ছিল। তৃতীয়তঃ এই ছেলের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ছেলের ঘাড়ে অযাচিত বিভিন্ন দোষারোপের বোঝা চাপিয়ে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ বসিয়ে ছেলেকে দিশেহারা করে অসহ্য কষ্ট-যন্ত্রণার গহীন সমুদ্রে ফেলে দেয়া একেবারেই উচিত হয়নি, বরং ছেলের সাথে সহানভূতিশীল ও গঠনমূলক সদাচার করা ছিল অত্যাবশ্যক।
তা না করে ছেলেটির জীবন হনন, ভাঙ্গন, ক্রন্দন বিপর্যয়; দু’টি জীবন, দু’টি পরিবার, এমনকি সমাজ-সংসারে উচ্ছৃঙ্খলার প্রলয়-প্রকম্পনের জন্যে তাকেতো ইহকালে-পরকালে-সর্বকালে-সর্বোতভাবে দায়ী থেকে যেতেই হবে।
ঐ ছেলেকে কথা দিয়ে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার অন্য অজুহাত তৈরি বা সৃজন করে সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে, মন ভেঙ্গে, জীবন ভেঙ্গে মানবজীবন চুরমার করার অমনুষ্যচিত নিষ্ঠুর নির্যাতন প্রলয়ের পাপ থেকে রেহাই পাবার কোনো পথ রয়েছে কি!
সারাজীবন একবৃন্তে দু’টি ফুল হয়ে থাকার এবং দু’টি হৃদয়ের একটি মন তৈরির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যখন মেয়েটির প্রতি ছেলেটির মন-মনন, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা একান্ত সকল পরিকল্পনা Concentrate বা কেন্দ্রীভূত করে ফেলেছে; তখন ছেলেটির পরিস্থিতি-পরিণাম বিবেচনা না করে মেয়েটি তার প্রেমিক-স্বামী পরিবর্তনের একক স্বার্থ চিন্তায় Betray বা প্রতারণা করা চরম অমানবিক ও মসজিদ ভাঙার কিংবা মনমন্দিরে আগুন লাগাবার ক্ষমাহীন ও জঘন্য ঘৃণ্য মহাপাপ বৈকি!
মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়া এই অসুস্থ ছেলেটিকে বাঁচানোর একমাত্র পথ হচ্ছে- যেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেলেটির অবুঝ-সবুজ মনকে জয় করা হয়েছিল, ছেলেটির জীবন-জগৎকে মেয়েটির প্রতি বিমোহিত-বিগলিত-কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল, শুধুমাত্র সেই প্রতিশ্রুতি এখন রক্ষা করা। কারণ-
সব রোগের সেরা রোগ, এর নাম প্রেমরোগ;
এই রোগের কোনো ঔষধ নাইরে,
ডাক্তারেও ফেল মারে ভাইরে।
ছেলেটি এখন তার স্বভাবজাত রকমারি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অটোসাজেশনে নিজকে কোনোরকম টিকিয়ে রাখছে মরিমরি, হরিহরি করেও। এটিতো তার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন নয় বরং বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক, স্বার্থপর অমানুষের নির্যাতন প্রলয়ের বিকলাঙ্গ ও অসুস্থ দেহ-মন নিয়ে কঠিন-অসহ্য-অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছে। ছেলেটি সরল মনের বলে মেয়েটির প্রতি তার অবুঝ-সবুজ ভালোবাসা নিজের পজিটিভ উপলব্ধিতে নিজের মনের কাছে এখনো এভাবেই উপস্থাপন করছে- ওতো আমাকে কোনো এক সময়ে ভালোবাসা দিয়েছে, সব দিয়েছে; এখন সে ভুল করছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যে, সে নিজেই তার ভুল বুঝতে পারবে এবং তখন আমাকে আর মরতে দেবে না বরং সান্ত¡নায় ও শান্তিতে ভরিয়ে দেবে।
মেয়েরা সাধারণত কোমলমতি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবতাবাদী ও স্নেহ-ভালোবাসাপ্রবণ মননের অধিকারী হয়ে থাকে। অন্যদিকে উপরোক্ত ঘটনার এ মেয়েটির মতো অমনুষ্যচিত এবং আপন স্বার্থে অন্ধ বহু নারী যুগে যুগে সরলমনা পুরুষের প্রেম-ভালোবাসার হৃদয়ে আঘাত হেনে কিংবা সহজ-সরল ও প্রাকৃতিক প্রেমের প্রতি উদাসীন, অবজ্ঞা, অবহেলা, নিষ্ঠুরতা করে ঐতিহাসিক কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছিল। তন্মধ্যে দু’একটির কথা বলে এ লেখা শেষ করবো, যেমন-
ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল এক নারীর কারণে। তার নাম হেলেন। এটা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। কিন্তু স্টেফানি ইসাক (ঝঃবভধহরব ওংধশ) নামটি আমরা অনেকেই জানি না। যে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক এডলফ হিটলারের অতি আকাক্সিক্ষত প্রেমিকা।
১৬ বছরের এই ইহুদী মেয়েটির কারণে সারা দুনিয়া ধ্বংস হবার উপক্রম হয়েছিল। ইহুদি মেয়ে কর্তৃক নিষ্ঠুর প্রেম প্রত্যাখ্যান হিটলারের বুকে যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সে আগুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে!
১৯০৬ সালে ভিয়েনা শহরে বসবাসরত মেয়েটির বয়স ছিল তখন ১৬ বছর। একদিন রাস্তার ধারে বসে থাকা এক তরুণ আর্টিস্টকে দিয়ে শখ করে মেয়েটি তার একখানা পোট্রেট আঁকালো। অসম্ভব রূপবতী এই মেয়ের ছবি আঁকতে গিয়ে মনের অজান্তে তরুণ আর্টিস্ট তার প্রেমে পড়ে গেল। আর্টিস্ট এর বয়স তখন ১৮। ছেলেটির স্বপ্ন চিত্রশিল্পী হওয়া। তার অবসর কাটে রাস্তার ধাঁরে ছবি এঁকে। পথচারীদের পোট্রেট এঁকে দু’চার পয়সা রোজগার করে।
শিল্পীদের মন অনেক রোম্যান্টিক হয়! এটাই স্বাভাবিক। ছেলেটি সুযোগ পেলেই মেয়েটিকে দূর থেকে দেখতো। কিন্তু প্রচন্ড লাজুক স্বভাবের কারণে কখনো সামনে গিয়ে প্রস্তাব দেয়ার সাহস করেনি। বেনামি প্রেমপত্রের মাধ্যমে মেয়েটাকে জানাতো তার নিগূঢ় ভালোবাসার কথা, উত্তর না এলেও দিয়ে যেত চিঠি! যদিও মেয়েটি বুঝে নিত চিঠি কে দিয়েছে। রাস্তায় দেখা হলেই ক্ষণিকের চাহনিতে মেয়েটি মিষ্টি হাসত তরুণের দিকে চেয়ে, এতে তরুণের মন ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ত। যেতে যেতে মেয়েটি একবার ফুল ছুঁড়ে মারে তরুণের উদ্দেশ্যে। তরুণের মনে হলো যেন পুরো দুনিয়া তাকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। ছেলেটি মেয়েটিকে চিঠিতে লিখল, যেন স্টেফানি এখনি বিয়ে না করে এবং তার গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তারপর সে মেয়েটির বাসায় প্রস্তাব দিবে।
কিন্তু স্টেফানি কিছুদিন পর ভিয়েনা চলে যায় এবং ছেলেটি আশায় থাকে কখন স্টেফানি ফিরে আসবে। মেয়েটির জন্মদিনেও পত্রিকার পাতায় ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দেয় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে, যাতে মেয়েটি বুঝতে পারে সে মনে রেখেছে তাকে। মেয়েটির ছুড়ে দেয়া সেই ফুল যত্ন করে রেখে দেয় নিজের কাছে। কিন্তু অন্যদিকে মেয়েটি ভিয়েনায় গিয়ে বিয়ে করে বসে এক আর্মি অফিসারকে, ভুলে যায় তরুণের জন্য অপেক্ষা করার কথা। ভেঙ্গে যায় তরুণের পবিত্র মন।
যাই হোক, প্রেমিক এই ছেলেটির নাম ছিল দুনিয়া কাঁপানো এক নাম- ‘এডলফ হিটলার’! এরূপ তরুণ বয়সে ইহুদি মেয়ের প্রেম প্রত্যাখ্যান এবং ইহুদিদের বিভিন্ন নির্দয় আচরণে স্বপ্ন আশা ভেঙ্গে যাওয়ায় সব ইহুদিদের প্রতি হিটলারের মনে তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি হয়, যার ফলশ্রুতিতে শুরু হয় হিটলার কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নিধনযজ্ঞ। ইহুদি মেয়েটির প্রেম প্রত্যাখ্যান হিটলারের বুকে যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সে আগুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে!
এভাবেই যুগে যুগে নারীর কারণে বহু কালজয়ী পুরুষ এবং পৃথিবীর সভ্যতা ধ্বংসের মুখে পতিত হয়!! এমনকি বর্তমান ডিজিটাল যুগেও পুরুষের জীবন ও সম্মান নিয়ে খেলা করছে কিছু নারী। বিয়ে ও তালাকের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা না থাকায় কিছু সুযোগসন্ধানী নারী এর ফায়দা নিয়ে বিয়ে-ব্যবসায় মেতেছে। নারী নির্যাতন আইনে মামলার ভয় দেখিয়ে পুরুষদের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা ও নানা অর্থ-সম্পদ। সম্প্রতি এসব দিক বিবেচনা করে বিয়ে-তালাকের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কেন নয়, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। তাতেও থেমে থাকেনি এসব ভয়ঙ্কর নারীদের বিয়ের নামে সীমাহীন প্রতারণা।
নারী কর্তৃক পুরুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বসান্ত করার কয়েকটি ঘটনা অতি সম্প্রতি ব্যাপক আলোচিত হয় এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তন্মধ্যে ক’টি ঘটনা এখানে তুলে ধরছি।
৩০ মার্চ ২০২১ সময় টিভি সংবাদে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল- আপত্তিকর ছবি দেখিয়ে ২৮ জনকে বিয়ে করে রোমানা!
প্রত্যেক স্বামীর সাথেই সে নিত্যনবভাবে এমন প্রতারণা করে যে, অন্য স্বামীরা জানেই না সে আগে এতগুলো বিয়ে করেছে। বিশেষ করে প্রবাসীদেরকে ফাঁদে ফেলে বিয়ের নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা ও অর্থ-সম্পদ।
৩০ মার্চ ২০২১ আরটিভি নিউজে প্রকাশিত আরেকটি খবরের শিরোনাম ছিল- বিয়ের নামে সুন্দরীরা যেভাবে করছে প্রতারণা।
সুন্দরীদের রূপ লাবণ্যে মুগ্ধ সবাই; তবে বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন কেউ কোনো ভয়ঙ্কর সুন্দরীর ফাঁদে পড়ে যান! যে অসাধু সুন্দরীদের চেহারায় থাকে আভিজাত্যের ছাপ। প্রায়ই ব্যবহার করে বিলাসবহুল গাড়ি। এই সুন্দরী চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন বহু পুরুষ। তবুও কখনো কখনো একতরফা দোষ ভুক্তভোগী পুরুষের ঘাড়েই চেপে বসে। তবে সম্প্রতি কতিপয় খারাপ চরিত্রের সুন্দরীদের অপরাধের বিষয়ে দেরিতে হলেও মাথা ঘামাতে শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
৩০ মার্চ ২০২১ বাংলাদেশ জার্নালে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল- বিয়ের পর প্রতারণাই তার নেশা।
নরসিংদীর মাধবদীতে অভিনব কৌশলে এক যুবককে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে দেনমোহর দাবি করছেন এক সুন্দরী নারী। ওই নারীর ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে যুবকের মা ঘুরছেন বিচারকদের দ্বারে দ্বারে।
লোভ, স্বার্থ, বাহ্যিক বা শারিরীক সৌন্দর্য্য আর অহংকারের হুংকারে তাদের সঙ্গী, সরলমনা পুরুষকে বিভ্রান্তি ও অত্যাচার-নিপীড়নে ফেলে দিয়ে এরূপ কিছু নারী ভয়ঙ্করভাবে লিপ্ত রয়েছে সুন্দর-সুশীল নারী সমাজকে কলঙ্কিত করতে।
অবশ্য এটি যে কেবল কিছু অতি আধুনিকা নারীই করছে তা কিন্তু নয়; মানবসমাজ সৃষ্টির প্রথম থেকে এ ব্যতিক্রমটা লক্ষ্যণীয়, যা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত ক্রমবর্ধিষ্ণু।
মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিষিদ্ধ গন্ধম ফল খেয়েছিলেন বিবি হাওয়া। শয়তান তাঁকে লোভ দেখিয়েছিল- এ ফল খুবই মিষ্টি, খুবই উপভোগ্য...। অধিকন্তু ঐ নিষিদ্ধ গন্ধম ফল খেতে আদম (আঃ) কেও প্ররোচণা দিয়েছিলেন বিবি হাওয়া।
এভাবে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে দেখা দিল পায়খানা-প্রস্রাবের উপসর্গ। অথচ তৎপূর্বে বেহেশতি খাবারে তাঁদের কখনো পায়খানা-প্রস্রাব হতো না। এভাবে নিষিদ্ধ গন্ধম খাওয়ার পরিণামে তাঁরা মাটির পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন বেহেশতের সুখ-ঐশ্বর্য থেকে।
অনুরূপভাবে বিবি হাওয়ার মতো কিছু কিছু নারীর কুপ্ররোচণায় পড়ে যুগে যুগে বাবা আদমের মতো কত পুরুষ যে ধ্বংস হয়ে গেছে, সেই ইতিহাসের কোনো ইয়ত্তা নেই।
এ পৃথিবীর প্রথম হত্যাকান্ডটিও সংঘটিত হয়েছিলো কুপ্ররোচণাকারী নারীরই কারণে। হযরত আদম (আঃ) এঁর পুত্র হাবিল-কাবিলের মধ্যে নারীর কারণেই সংঘটিত হয় হত্যাকান্ড। তাদের সহোদরা নারীই প্ররোচিত করে ভাইয়ে-ভাইয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধে।
রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিলো ট্রয়ের হেলেনের কারণে। ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিলো। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়ে সহস্র বছরের সভ্যতা ধুলিস্মাৎ হয়েছিলো স্রেফ সুন্দরী হেলেনের কুমন্ত্রণায়।
রাশিয়ার জার নিকোলাস তার সুন্দরী পত্নী ব্যভিচারিণী জারিনার কারণে সাম্রাজ্যের সিংহাসনচ্যুত হয়েছিলেন। নিকোলাসের আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু রাসপুটিনের সাথে জারিনার ছিল অবৈধ ও গোপন প্রণয়।
নারীর কুমন্ত্রণা ও কুপ্ররোচণাকে ঘিরে অস্ট্রিয়ায় সূচিত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হিটলারকে মন্ত্রণা দিতো তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ইভা ব্রাউন। এভাবেই বিশ্বের বড় বড় বিপর্যয়ের মূলে রয়েছে কোনো না কোনো নারীর কুপ্ররোচণা এবং দূষিত ও বিষাক্ত ইন্ধন।
একজনের বুকে প্রেম-ভালোবাসার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তারপর নিজ স্বার্থ হাসিলে কেটে পড়ার কিংবা অন্য লোভ-লালসায় পড়ে পূর্ব-ভালোবাসা প্রত্যাখানের এ মানসিকতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কারণ, মন ভাঙ্গা মসজিদ ভাঙ্গার মতোই সমান অপরাধ।
এ নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে- যেকোনো মূল্যে সবাইকে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই হবে। এরূপ প্রতিশ্রুতি রক্ষা সকল ধর্মের কঠোর নির্দেশনাসহ বিশ্বজনীন অত্যাবশ্যকীয় পালনীয়। নিজের স্বার্থের মোহে অন্ধ কিছু বর্বর-উচ্ছৃঙ্খল ছাড়া সভ্য কোনো মানুষই এই প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারে না। প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এর চেয়ে কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। অন্যদিকে একবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেললে তা যেকোনো মূল্যেই রক্ষা করা অতীব জরুরি।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কিংবা বিশ্বাসঘাতকতার অমনুষ্যচিত প্রবণতা গোটা মানবজাতির জন্যই মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। অসচেতন-উড়নচন্ডীর মানুষরা এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে।
তাই আগামী প্রজন্মকে বিশেষত কোমলমতি শিশুদেরকে মানবিক গুণাবলীতে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার চর্চা তাদের চিন্তার জগতে সঞ্চারিত করে দিতে হবে; শেখাতে হবে প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা, যাতে প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতেও তারা কোনোরূপ দ্বিধাবোধ না করে। এমন শিক্ষাই দিতে হবে আগামী প্রজন্মকে, যাতে তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষার মতো অনুপম মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ হয়ে সুউন্নত চরিত্রের মহৎপ্রাণ আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ধন্য-সমৃদ্ধ করতে পারে দেশ-জাতি ও বিশ্ব সমাজকে।