বিশেষ খবর



Upcoming Event

বহুগুণে গুণান্বিত বিরল ব্যক্তিত্ব, সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রতিক্রিয়া
img

১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সর্বপ্রথম এএমএ মুহিতই সরকারি আমলা হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের হয়ে কাজ শুরু করেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহত্তর সিলেট জেলার অত্যন্ত পরিচিত, উচ্চশিক্ষিত এক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। আমি ছাত্র অবস্থায় গ্রাম থেকে যখন ঢাকায় আসি, তখন প্রথম জনাব মুহিত সাহেবের নাম শুনতে পাই। মেধাবী ছাত্র হিসেবে সেসময়ে তাঁর খুব নাম ছিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সফল ছাত্রনেতা ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছিলেন। চাকুরিজীবনে তিনি একজন প্রথিতযশা আমলা ছিলেন। পাকিস্তান আমলে ইসলামাবাদ সচিবালয়সহ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে উচ্চ পর্যায়ে তিনি কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সর্বপ্রথম এএমএ মুহিতই সরকারি আমলা হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের হয়ে কাজ শুরু করেন। আমি নিজেও একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তখন তাঁর নাম বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পেতাম। তবে তাঁর সাথে সরাসরি আলাপচারিতার সুযোগ হয় জেনেভায় ১৯৯৬ সালে। পরবর্তীতে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা থেকেু তাঁর সাথে দেখা করি। একটা সময় দু’জনেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। এভাবে তাঁর সাথে আমার চেনা-জানা ও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। মুহিত সাহেব যখন দ্বিতীয়বার অর্থমন্ত্রী হন, আমি তখন অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাই। সেই সূত্রে তাঁর সাথে আরও নিবিড় ও গভীরভাবে আমার কাজ করার সুযোগ হয়। তাঁর সঙ্গে অতিক্রান্ত সময়গুলো খুবই ভালো কেটেছে, কখনও কোনো বিরোধ হয়নি। মতভেদ যে একেবারে হয়নি তা নয়, তবে তাতে মনোবেদনা কিংবা বিরোধ ছিলনা। তিনি অত্যন্ত স্নেহ-পরায়ণ ছিলেন, আমাকে ছোট ভাইয়ের মত দেখতেন। কোনো মতভেদ থাকলে তিনি যেমন আমাকে বুঝিয়ে বলতেন, তেমনি আমিও তাঁর প্রতি অনুগত ছিলাম।

আবুল মাল আবদুল মুহিত অত্যন্ত সৎ, স্নেহপ্রবণ, বিশ্বাসী, আস্থাভাজন ও উদারপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। আদর্শিকভাবে তিনি ডান কিংবা বামপন্থী কোনো চেতনায় বিশ্বাস করতেন না। স্বাভাবিকভাবেই তিনি মধ্যমপন্থী ছিলেন। আমার মতে তিনি একজন সফল ও উঁচু মানের আমলা ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বিশ্বাস করতেন, সন্মান করতেন, তাঁর উপর আস্থা রাখতেন; এটি ছিল এএমএ মুহিতের বড় একটি সফলতা। বড় বাজেটের ধারণা তিনিই প্রথমে দেখাতে শুরু করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান তিনি রেখে গেছেন। সরাসরি অর্থনীতির ছাত্র না হয়েও অর্থনীতি সম্পর্কীত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় হাতে-কলমে কাজের সুবাধে বিশদ অর্থনৈতিক জ্ঞান তাঁর ছিল। Applied Economics অর্থাৎ প্রায়োগিক অর্থনীতির জ্ঞান তিনি অর্জন করেছিলেন। চমৎকার মেধা ও জ্ঞানের সমন্বয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন। সর্বদা হাসিখুশি ও পরমত সহিষ্ণু ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সময়কালে সরকারি চাকুরিজীবীরা প্রচুর সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, তাদের বিষয়ে তিনি খুব আন্তরিক ছিলেন।

এএমএ মুহিত সর্বদা বড় বড় সবকিছু করার পক্ষে ছিলেন। এ বিবেচনায় তাঁকে Expansionist Economist বলা যেতে পারে; এবং তাতে কাজও হয়েছে খুব। এতে করে আমাদের অর্থনীতির সুপ্ত জায়গাগুলো বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তাঁর মধ্যে অর্থনীতিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তোলার অসম্ভব এক ক্ষমতা বিদ্যমান ছিল। একই সাথে তিন অত্যন্ত সাহসী ও দূরদর্শী ছিলেন। পদ্মা সেতু নির্মানে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। স্বঅর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সেসময়টাতে পাশে থেকে তিনি সাহস যুগিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এএমএ মুহিতের যুগান্তকারী সব অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img