বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ, মূল্যায়ন ও উন্নয়নের সার্বিক দায়িত্ব বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সকল পলিটেকনিক পরিচালনা করে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উদ্দেশ্য হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা কাঠামোর নুতন কোর্স অনুমোদন এবং উন্নয়ন সাধন; শিক্ষা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের যোগান এবং উন্নয়ন সাধন; কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার জন্য কোর্স বাছাইকরণে সহযোগিতা; অনুমোদিত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার আয়োজন এবং তদারকি করা; কৃতকার্য শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ প্রদান করা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। যিনি দেশে কারিগরি শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে উপযুক্ত জ্ঞানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষার গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর অনুভূতি জানতে একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন। তাঁদের আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে এখানে সন্নিবেশিত হলো।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা পরিচালন সংস্থা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বোর্ড চেয়ারম্যান ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম ছড়িয়ে রয়েছে সারা দেশব্যাপী। বিশ্বায়নের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। দিনদিন কারিগরি বোর্ডের অধীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে আমরা শিক্ষার গুণগত মানের ওপরও বিশেষ নজর রাখছি।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোকজন প্রকৃতপক্ষে দেশ গড়ার কারিগর। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মহাকর্মযজ্ঞে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকদের ভূমিকা হবে প্রধান। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী কারিগরি শিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহশীল। যদিও এটি সর্বজনীন বিষয় নয়, তবু একটি স্তর পর্যন্ত এ শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অনেক ভাগ্যবান যে, তার বিপুল কর্মক্ষম লোক রয়েছে। অন্য অনেক দেশ বিদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করে তাদের দেশের উন্নয়নমূলক, সেবামূলক কাজ করাচ্ছে। নিজের দেশে প্রয়োজনীয় জনবল নেই বলে তাদেরকে বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাংলাদেশ অনেক অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠায়, যারা ভালো পারিশ্রমিক পায় না, যারা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে বিদেশে যেতে পারে তাদের বেতন অনেক ভালো। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে, বিদেশে শ্রমশক্তি পাঠানোর আগে তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কারিগরি শিক্ষার ধরন-ধারণ অনেক পাল্টেছে। যুগের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদেরকেও কারিকুলাম আপডেট করতে হবে। আমরা উপযুক্ত জ্ঞানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষার গ্রাজুয়েট তৈরি করতে চাই, যাতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত জনবল বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। যারা দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসবে।
কারিগরি শিক্ষাকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে আপনারা কীরূপ সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে কারিগরি শিক্ষা প্রসারে নিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্ব ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন; শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। এ সহযোগিতাটুকু রাখলেই আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারব। মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে আসছেন আমাদের কার্যক্রম দেখতে, কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে; আমরাও বিভিন্ন প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করতে। কোনো ব্যাপারেই আমরা কালক্ষেপণ করি না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো আমরা চলি, আমাদের ভালো প্রস্তাব তারা গ্রহণ করেন, অনুমোদন দেন। আসলে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।
কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে আপনি যে স্বপ্ন দেখেন, যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন, সেক্ষেত্রে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা পেতে কোনো সমস্যা হয় কি এমন জিজ্ঞাসায় ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক্ষেত্রে বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত সবাই সচেতন। আমরা যদি যে যার অবস্থান থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করি, তাহলে প্রতিটি কাজই সুচারুরূপে সম্পন্ন হবে। কারণ আমরাত’ দেশের জন্য কাজ করছি, দেশকে কারিগরি শিক্ষায় এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমাদের বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করলে চলবে না, উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমাদের থাকবে সম্মিলিত প্রয়াস। আমরা এখানে চিরদিন থাকব না, আমাদেরকে একদিন চলে যেতে হবে। আমাদেরকে রেখে যেতে হবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।