দুর্নীতিবিরোধী গণসচেতনতা গড়ে তুলতে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ-২০১৫’। এ কর্মসূচিতে এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবাই মিলে শপথ করি, দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করি।’
দুদক চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের নির্মূল করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দুদকের নানা প্রচেষ্টার ফলে আগামী দিনে দুর্নীতি দমনের সুফল দেশবাসীকে উপহার দেয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে। এর আগে সংস্থাটির নাম ছিল দুর্নীতি দমন ব্যুরো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ব্যুরোর কাজ হতো। তখন দুর্নীতি দমনে ঈপ্সিত ফল পাওয়া যায়নি। যার ফলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সর্বনিম্ন স্কোর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। ওই প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রত্যাশা, দাবি ও দাতা গোষ্ঠীর পরামর্শে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর তিন বছর কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। বস্তুতপক্ষে ২০০৭ সাল থেকে দুদক কার্যকরভাবে কাজ শুরু করে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পরোক্ষ সেনাশাসন ছিল বিধায় অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি আইন মেনে কাজ করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে উচ্চ আদালতে ওই সময়ের কাজগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তবে ২০০৯ থেকে গণতান্ত্রিক পরিবেশে দুদকের মূল কাজ শুরু হয়। এটা ঠিক যে, দুদকের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু অনেক সময় প্রতিকূলতা ও আইন প্রয়োগে দুর্বলতার কারণে সেই ফল পাওয়া যায়নি। আমরা এই দুর্বলতাগুলো ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এর ইতিবাচক ফল দেশবাসীকে দিতে পারব। দুর্নীতি প্রতিরোধ অভিযানের সাফল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এখন দুর্নীতি দমনের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধের ওপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশেষ করে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ আনকাগের সদস্য দেশ হিসেবে দুর্নীতিবিরোধী কাজে বিভিন্ন দেশের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগরসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ গঠন করা হয়েছে। প্রতিরোধ কমিটি ও সততা সংঘ বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতিবিরোধী জনসচেতনমূলক সেমিনার, আলোচনা সভা, রচনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে থাকে।
দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, জার্মান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সহায়তায় ময়মনসিংহ, রংপুর, কুমিল্লা, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জকে পাইলট জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলোতে নিবিড়ভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধের কাজ চলছে। এসব জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গণশুনানির কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের সমস্যা-সংকটের কথা শোনা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যা নিরসনের ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু আমাদের সমস্যা বহুদিনের পুঞ্জীভূত; সে কারণে দ্রুত সফলতা হয়তো আসবে না; কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টার ফল সাধারণ জনগণ পাবে বলে বিশ্বাস করি। দুদক ২৬ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ-২০১৫’ পালন করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছরই ২৬ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ’ পালন করে আসছি।
এ কর্মসূচি পালনের মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে দুর্নীতির ভয়াবহতা ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে অবহিত করা। এ উপলক্ষে প্রতি বছরই সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার করে থাকি। এবারের সেমিনারের বিষয়- ‘রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও প্রশাসনিক সংস্কার, দুয়ে মিলে হতে পারে দুর্নীতির প্রতিকার।’