ভাগ্যের অন্বেষণে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন, উন্নত দেশের চাকচিক্য চোখে ধাঁধা লাগিয়েছিল একসময়। ব্রিটেনের মাটিতে প্রবাস জীবনে গড়ে তুলেছিলেন সমৃদ্ধ জীবন। প্রায় ৪০ বছর এভাবে কাটলো। হয়ত ভেবেছিলেন শেষ জীবনটাও এভাবেই কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু না, পারলেন না সেভাবে চলতে। শেকড়ের টান বড় শক্ত, ফিরে আসলেন চির পরিচিত বাংলার মাটিতে। কবি জীবনানন্দ দাশের অমর কবিতা হয়ত তাকে উজ্জীবিত করেছিল- “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর মুখ দেখিতে চাই না”। “আমি বাংলার গান গাই” -কালজয়ী এ গানের অতলস্পর্শী মূর্চ্ছনাও হয়ত তাকে উদ্দীপ্ত করে থাকতে পারে। এসব চেতনার স্ফূরণ স্পন্দন তুলেছিল তাঁর মনে; বলেছিলো, ফিরে যাও মায়ের টানে, গাঁও-গেরামের শীতল ছায়ায়।
প্রবাসের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের মোহ ত্যাগ করে যিনি তাঁর জন্মভূমিতে ফিরে আসলেন তিনি মোহাম্মদ আলী তালুকদার (আঁখি), বাংলাদেশের একজন সিআইপি (Commercially Important Person), আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত সমাজসেবী, সচেতন রাজনৈতিক কর্মী। মানবদরদি, দানশীল ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলী তালুকদার (আঁখি) এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছিল ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রাজীব গুপ্ত, আলাপনের উল্লেখযোগ্য অংশ ক্যাম্পাস-কন্ট্রিবিউটর মোহাম্মদ মোস্তফার প্রতিবেদনে নিচে সন্নিবেশিত হলো।
আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, বাংলাদেশে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় বেছে নিলেন কেন- এমন প্রশ্নে দূরদর্শী উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আলী তালুকদার (আঁখি) বলেন, বায়োমেট্রিক এটেনডেন্স ও ওয়েবসাইট আধুনিকীকরণে কর্মচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষানীতি আধুনিক ও উন্নত ধ্যান-ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত, লাভ করেছে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমার মত একজন বৃদ্ধ হলেও এখনও বেশ সক্রিয় এবং কর্মঠ। দেশের শিক্ষামানকে বিশ্বমানে উন্নীত করার তাঁর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দেখে আমি অভিভূত, অনুপ্রাণিত এবং আশান্বিত। শিক্ষার এই মহাকর্মযজ্ঞে আমি ক্ষুদ্র হলেও কিছু অবদান রাখতে চাই।
তিনি বলেন, প্রবাস জীবন যাপন শেষে দেশে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছি। আমি বাংলাদেশের একজন সিআইপি। আমি লক্ষ্য করেছি এবং অবাক হয়েছি যে, বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের ওয়েবসাইট রয়েছে। ডিজিটালাইজেশন ছাড়া বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা অর্জন প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু আমাদের ওয়েবসাইটগুলোর সঠিক পরিচর্যা হয় না। এজন্য অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট প্যারালাইজড বা মানসম্মত নয়। একটি মানসম্মত ওয়েবসাইট শিক্ষার্থীর মেধা-মননের বিকাশে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ-মাদ্রাসায় বর্তমানে সম্মান ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রীতিমত ক্লাস করে না। জবাবদিহি নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা খেয়াল খুশি মত চলে। এরা একসময় বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, বিপথগামী হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি, Bio Metric Attendance এর মাধ্যমে এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়। দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ের উপর কাজ করছে। আমাদের ডিভাইসটি আধুনিক ও অত্যন্ত কার্যকর। এ সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের পর থেকে ছুটি পর্যন্ত সব রেকর্ড থাকে। কেউ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেলে তাও ধরা পড়ে। প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ অনুপস্থিতিও কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়।
আমি এ বিষয়ে দেশের জন্য কিছু একটা করব ভেবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এটেনডেন্স সিস্টেম চালুর বিষয়ে কাজ করছি। ইতিমধ্যে লালবাগ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, শ্যামপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এবং রূপনগর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সাথে আমার প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি ইসলামবাগ আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা এর অধ্যক্ষ জনাব শহীদুল্লাহ বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ফিঙ্গারপ্রিন্টের উদ্বোধন করেন।
মোহাম্মদ আলী আঁখি ঐতিহ্যবাহী তালুকদার পরিবারের সন্তান। তাঁর দাদা মরহুম আবদুল গণি তালুকদার সিরাজগঞ্জ জেলার খ্যাতিমান ভূস্বামী, যাঁর ভূমির পরিমাণ ছিল ৩হাজার ৫শ বিঘা। বাংলাদেশের গর্ব বঙ্গবন্ধু সেতুটি তাঁর দাদার ভূমির উপর দিয়ে নির্মিত। দাদা ছিলেন আজীবন সমাজসেবী, গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের বিপদের বন্ধু, তাদের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত। মোহাম্মদ আলী তালুকদারের মধ্যেও দাদার এ গুণটি প্রকাশ পায়।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- যুক্তরাজ্যে পরিচালিত রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের লক্ষ্য কি ছিল- জবাবে মানবহিতৈষী ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলী (আঁখি) বলেন, ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যে গমন করি। সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ে মতামত সৃষ্টি করি। পাশাপাশি প্রবাসীরা কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে সেই পরিকল্পনা নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে আসছি।
তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়, তখন আমার নেতৃত্বে অর্থ, ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ফিমেল একাডেমি, সুনামগঞ্জ শাখার সদস্য হই। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষায় ও কর্মসংস্থানে আর্থিক সাহায্যদাতা হিসেবে পর পর ৩ বছর Student Welfare পদকে ভূষিত হই। ২০১১ সালে ক্যান্সার সাপোর্ট কার্যক্রমে যুক্তরাজ্য ও সুইডেন এ ডোনেশনকারী হিসেবে পরিচিত লাভ করেন।
মোহাম্মদ আলী তালুকদার (আঁখি) ধর্মীয় কাজেও সহায়তা দিয়ে থাকেন। নিজ জন্মস্থান সিরাজগঞ্জসহ সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে আসছেন। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তিনি আর্থিক ও চিকিৎসা সাহায্য দিয়ে আসছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসার জবাবে দেশপ্রেমী আশাবাদী ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলী (আঁখি) বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে তাঁর সাথে যোগ দিয়ে সিরাজগঞ্জ ও এর খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। রায়গঞ্জ, তাড়াশ, সলঙ্গার মানুষের সেবায় শেষ জীবনটুকু কাটিয়ে দিতে চাই। জনগণ আমাকে সমর্থন দিলে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নমূলক সকল কাজে নিয়োজিত থাকবো, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে আমার পবিত্র দায়িত্ব।