ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে ৩ বাংলাদেশি কন্যা। প্রথমবারের মতো একই সাথে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ৩ বাংলাদেশি এমপি নির্বাচিত হওয়ায় দেশ-বিদেশে বইছে আনন্দ-উল্লাস। ৭ মে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় প্রথমে নাম আসে রূপা হকের, তারপর টিউলিপ সিদ্দিকীর, সর্বশেষ প্রত্যাশিত বিজয়ের খরব চলে আসে রুশনারা আলীর। এরপরই কাঙ্খিত জয়গাঁথায় আনন্দধারা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ব্রিটেনে। প্রাপ্ত ফলাফলে এলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টন থেকে লেবার প্রার্থী রূপা হক, ২২ হাজার ২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির এনজি ব্রে ভোট পেয়েছেন ২১ হাজার ৭ শত ২৮টি। হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন থেকে লেবার প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিক ২৩ হাজার ৯ শত ৭৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কনজারভেটিভ পার্টির সায়মন মারকিউস পেয়েছেন ২২ হাজার ৮শত ৩৯টি ভোট। বেথনালগ্রীণ এন্ড বো আসনে রোশানারা আলী ৩২ হাজার ৩ শত ৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ম্যাথু স্মিথ পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ২০ ভোট। প্রায় ২৪ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করেন রোশনারা আলী। এদিকে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রার্থীদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত নাম ছিল লেবার দলীয় প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিকীর। দলীয় নমিনেশন পাওয়ার আগ থেকেই একটি পক্ষ বিরোধিতা করে আসছিল। এমনকি নির্বাচনের দিন পর্যন্তও বিরোধিতা চলে। ব্রিটেনে যে কয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের প্রায় সকলেই একবাক্যে বাংলাদেশি হিসেবে সমর্থন পেলেও টিউলিপ সিদ্দিকির বেলায় তা হয়নি। তবে সব বাধা অতিক্রম করে বিজয়ের হাসিই হেসেছেন তিনি।
ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে দেশটির মূলধারার প্রধান ৩টি দল থেকে লড়েছিলেন ১২ জন বৃটিশ বাংলাদেশি প্রার্থী। এর মধ্যে ইংল্যান্ড থেকে ১০ জন, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস থেকে ১জন করে এমপি প্রার্থী হয়েছেন। এমপি পদে প্রার্থী হওয়া ১২ বাংলাদেশির মধ্যে ক্ষমতসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ১ জন, প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে ৮জন এবং লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন ৩ জন বাংলাদেশি। ২০১০ সালে রোশানারা আলী এমপি হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের অভিষেক হয়েছিলো। এর আগেও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. কবীর এইচ. চৌধুরীসহ অনেকে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু সফলতা আসে রোশনারা আলীর মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনে ৩ বাংলাদেশি বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তাদের সমৃদ্ধ পথ চলায় আগামী দিনে ব্রিটেনে রাজনীতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সেক্রেটারী সেলিম চৌধুরী বলেন, এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের বাঙ্গালীরা সামাজিক অবস্থানের পাশাপাশি রাজনীতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তিনি বলেন, বাঙ্গালী শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের যেকোন স্থানে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখে এটাই তার উদাহরণ। ওভারসিজ সেন্টার সিলেটের নির্বাহী কর্মকতা সামছুল আলম বলেন, যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে রাজনীতির মূল স্রোত হয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশিরা। এখন বাংলাদেশিদের সুখ-দুঃখ শুধু নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও তারা ভূমিকা রাখতে পারবে। তাদের পথচলার মধ্য দিয়ে আগামী দিন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশিদের সুনাম ও যোগ্যতা গৌরবজনক অধ্যায়ে পৌঁছবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। টিউলিপ সিদ্দিক বিলেতের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাঙ্গালী ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে তার পরিচয় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ রেহানার কন্যা। কিন্তু বিলেতের রাজনীতিতে প্রতিশ্রুতিশীল একটি নাম টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনের শীর্ষে রয়েছে হ্যাম্পস্ট্যাড এন্ড কিলবার্ন।
আলোচিত এই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। গত ২৩ বছর ধরে এই আসনটিতে টানা এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন অস্কার বিজয়ী বিখ্যাত অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন। ২০১০ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪২ ভোটে লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত হন তিনি। ওই নির্বাচনে ব্রিটেনে সবচেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে ফলাফল নির্ধারণের আসন ছিলো এটি। এবার ব্যবধান গুছিয়ে আসনটি জিতে নিতে মরিয়া ছিল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। কিন্তু লেবার পার্টির জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন দলটির নতুন মুখ টিউলিপ সিদ্দিক। হ্যাম্পস্ট্যাড এন্ড কিলবার্ন আসনে প্রায় ৮০ হাজার ভোটার ছিল। ২০১০ সালে লেবার পার্টির প্রার্থী গ্লেন্ডা জ্যাকসন ১৭ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২৩ বছর এমপি থাকার পর গ্লেন্ডা বার্ধক্যজনিত কারণে এবার অবসরের ঘোষণা দিলে আসনটিতে এমপি হওয়ার সুযোগ আসে টিউলিপের। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে লেবার পার্টির স্থানীয় সদস্যদের ভোটে টিউলিপ হ্যাম্পস্ট্যাড এন্ড কিলবার্ন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়ন লাভ করেন। শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকের মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিশুকাল কেটেছে ব্রুনেই, বাংলাদেশ, ভারত এবং সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী টিউলিপ সিদ্দিক মাত্র ১৬ বছর বয়সেই লেবার পার্টির সদস্য হন। ২০১০ সালে লন্ডন বারা অব ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশি মহিলা হিসেবে কাউন্সিলার নির্বাচিত টিউলিপ সিদ্দিক। পরে কাউন্সিলের সংস্কৃতি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, গ্রেটার লন্ডন অথরিটি ও সেইভ দ্যা চিল্ড্রেন ফান্ড চ্যারিটির সাথে কাজ করেন টিউলিপ। লেবার পার্টির লিডার এড. মিলিবান্ড-এর লিডারশীপ ক্যাম্পেইনে কাজ করেন তিনি। এছাড়া সাবেক এমপি উনা কিং, এমপি সাদিক খান, হ্যারি কোহেনের সাথে কাজ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনি ক্যাম্পেইনেও অংশ নেন তিনি। টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের ক্যামডেন এ্যান্ড ইজলিংটন এনএইচএস ট্রাস্ট (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস)-এর গভর্নর, রয়েল সোসাইটি অব আর্ট এর একজন ফেলো এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের একজন সদস্য। স্থানীয় পত্রিকা হ্যাম্পস্ট্যাড ও হাইগেইট এ-প্রেসের নিয়মিত লেখক টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটেনের প্রভাবশালী একশ বাঙালির তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। ব্যক্তিগত জীবনে টিউলিপ সিদ্দিক বিবাহিত এবং লন্ডনের ওয়েস্ট হ্যাম্পস্ট্যাডে বাস করছেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে হ্যাম্পস্ট্যাড এন্ড কিলবার্নে লেবার, কনজারভেটিভ এবং লিবডেম পার্টির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিলো। এই আসনে টিউলিপের সাথে লড়েন কনজারভেটিভ দলের সায়মন মার্কস এবং লিবডেম পার্টির প্রার্থী পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত মাজিদ নাওয়াজ। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সংবাদপত্রে দেয়া এক বক্তব্যে টিউলিপ সিদ্দিক বলেছিলেন, মানুষের সাথে সম্পর্ক ও বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়তে চান।
রোশনারা আলী বিলেতের বেথনালগ্রীন বো আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রোশানারা আলী। ইস্ট লন্ডনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিয়ে গঠিত বেথনালগ্রীন এন্ড বো আসনে দেশটির প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি তাকে পুনরায় মনোনয়ন প্রদান করেছিল। ২০১০ সালে এই আসন থেকেই তিনি বিজয় লাভ করে ইতিহাস গড়েছিলেন। তার এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশিদের অভিষেক হয়েছিলো। এবারও রোশনারার চ্যালেঞ্জ ছিল নিজের আসনটি রাখা। বেথনালগ্রীন এন্ড বো আসনকে বলা হয় লেবার পার্টির সবচেয়ে নিশ্চিত আসনের একটি। তবে ২০০৫ সালের নির্বাচনে ইরাক ইস্যু নিয়ে কথা তুলে এখানে তৎকালীন লেবার প্রার্থী উনা কিংকে হারিয়ে নির্বাচিত হোন রেসপেক্ট পার্টির জর্জ গ্যালওয়ে। সেই হারানো আসনটি উদ্ধার হয়েছিল ২০১০ সালে বর্তমান এমপি অক্সোফোর্ড গ্রাজুয়েট রোশানারা আলীর হাত ধরে। একই সাথে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলে নেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পদার্পণ করে। বেথনালগ্রীণ এন্ড বো আসনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম ও বাংলাদেশি ভোটারদের বসবাস। যা শুধু ইংল্যান্ড নয়, পুরো ব্রিটেনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই আসনে জনসংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি। এরমধ্যে ভোটার হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার। এবার বেথনালগ্রীণ এন্ড বো আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিভিন্ন দলের মোট ১১ জন। কিন্তুু মূলধারা দল থেকে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে লেবার পার্টি থেকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়েন রোশানারা আলী। ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানের মতে, রোশানারা আলী দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলমান মহিলাদের মধ্যে অন্যতম। যিনি ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও যোগ্যতা রাখেন।
সিলেটের বিশ্বনাথে ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণকারী রোশানারা মা বাবার সাথে মাত্র ৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন। দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রিধারী রোশানারা আলী থিংক ট্যাংক সংস্থা ইয়ূথ ফাউন্ডেশনের এসোসিয়েট ডিরেক্টর ছিলেন। লেবার পার্টির নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাবশালী একজন রোশানারা বর্তমান মেয়াদের শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টারী ট্রেজারী সিলেক্ট কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি লেবার পার্টির শ্যাডো এডুকেশন মিনিস্টার ও শ্যাডো মিনিস্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। রোশানারা আলী ১৯৯৭-১৯৯৯ সালে একই আসনের সাবেক এমপি উনা কিং-এর পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী হিসাবে কাজ করেন। ব্রিটেনে একটি টেলিফোন ইন্টারপিটিং সার্ভিস ল্যাঙ্গুয়েজ লাইন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। রোশানারা আলী মানবাধিকার বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের সাথে কাজ করেছেন। ইন্সটিটিউট অব পাবলিক পলিসি রিসার্চ এর রিসার্চ ফেলো, হোম অফিসের কমিউনিটি কোহেশন ইউনিটেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে রোশানারার। রোশানারা আলী ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইরাকে সামরিক হামলায় লেবার পার্টি সমর্থন দেয়ায় এর প্রতিবাদে শ্যাডো মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। গত প্রায় ৫ বছর বেথনালগ্রীণ এন্ড বো আসনে এমপি হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের বাসস্থান সমস্যা দূর করতে তিনি ব্যাপক কাজ করেন। যার ফলশ্রুতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিউ হোম বোনাস ফান্ডিং থেকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ১৬৫ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ করে। শ্যাডো মিনিস্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি মায়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে তাদের কষ্টের চিত্র প্রথমবারের মতো পশ্চিমা বিশ্বের নজরে আনেন। লেবাননে সিরিয়ার শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে তাদের সমস্যা লাঘবে ব্রিটিশ সরকার ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের সফল আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। বাংলাদেশের জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক জনমত গড়ার আন্দোলনে সক্রিয় ক্যাম্পেইনার রোশানারা আলী। এছাড়া দেশের গার্মেন্টস কর্মীদের ন্যায্য মজুরি এবং বহুল আলোচিত রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। গত ৫ বছর বিরোধী দলের এমপি থাকা সত্ত্বেও সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন তার নির্বাচনী এলাকার মানুষদের কল্যাণে কাজ করতে।
ড. রুপা হক লন্ডনে লেবার পার্টির অন্যতম ‘টার্গেট সিট’ ছিল ইলিং সেন্ট্রাল এন্ড একটন। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলোর মধ্যে এই আসনের অবস্থান দ্বিতীয়। গতবার রীতিমত লড়াই করে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির কাছে হেরে যান লেবার পার্টির প্রার্থী। এবার লেবার দলের হয়ে লড়েছেন যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত কিংষ্টন ইউনিভার্সিটির লেকচারার বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ড. রুপা হক। কিংষ্টন ইউনির্ভাসিটির সোশ্যালজির সিনিয়র লেকচারারার রুপা হক এর জন্ম ইলিংয়ে ১৯৭২ সালে। ষাটের দশকে তার মা বাবা খুলনার বাগেরহাট থেকে বিলেতে এসে বসবাস স্থাপন করেন।
ইলিং সেন্ট্রাল হচ্ছে লন্ডন বারা অব ইলিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং একটন হচ্ছে লন্ডনের অন্যতম ডিস্ট্রিক্ট টাউন। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মিলে গঠিত হয়েছে ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন নির্বাচনী আসন। গ্রান্ড ক্যানেলের পাশে ছোট ছোট অনেকগুলো পার্ক নয়নাভিরাম করেছে এলাকাটি। এখানে রাস্তার পাশে চমৎকার বাড়ি, ছোট ছোট বিজনেস পার্ক আর স্পোর্টস গ্রাউন্ড রয়েছে। এই এলাকাটিতে তরুণ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের বসবাস বেশি। আসনটি ফিরিয়ে আনতে কঠোর পরিশ্রম করেন রুপা হক। লেবার পার্টির প্রার্থী রুপা হক একসময় ইলিং বারা কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র ছিলেন। লেখক, কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ রুপা হক ১৯৯৩ সালে ক্যাম্ব্রিজ ইউনির্ভাসিটি থেকে পলিটিক্যাল, সোশ্যাল সায়েন্স ও আইন বিষয়ে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি কালচারাল স্টাডিজ এর ওপর ইউনির্ভাসিটি অব ইস্ট লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। রুপা হক মানচেস্টার ইউনির্ভাসিটিতেও দীর্ঘদিন লেকচারারের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে কিংস্টন ইউনির্ভাসিটিতে সোশ্যালজি ও ক্রিমিনালজিতে লেকচারারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ড. রুপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থীদের জন্য ক্যাম্পেইন করে আসছিলেন। রুপা ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক গার্ডিয়ান, সানডে অবজারভার ও ট্রিবিউন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেন। তিনটি বইয়ের লেখক রুপা হক ইংলিশনেস, রেইস ও কমিউনিটি রিলেশনসে লেবার পার্টির নীতি নির্ধারকদের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন। লেবার পার্টির শীর্ষ স্থানীয় নেতা টনি ব্যাংক এমপি, প্যাট্রিশিয়া হিউট এমপির রিসার্চার হিসাবেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কনজারভেটিভ দলের বাজেট কাটের কারণে বিগত দিনে তার নির্বাচনী এলাকায় দুটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। আরো দুটি বন্ধের ঝুঁকিতে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচেছ। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ক্ষোভ আছে। এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে মূলত এবার এ আসনটিতে জয় পেয়েছেন রুপার দল লেবার পার্টি।