চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এ চারজন কৃতী শিক্ষাবিদকে ৪ বছরের জন্য ভিসি পদে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে এসব মেধাবী শিক্ষক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে তারা যেমন সাফল্যের চমকে উজ্জ্বল, তেমনি শিক্ষাপ্রশাসক হিসেবেও তাদের অবদান হবে অনুসরণীয় -শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলের সবার এটি কাম্য।
উল্লেখিত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো না কোনো সময় সমস্যার মোকাবেলা করেছে, কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি কর্র্তৃপক্ষ; বৈরি অবস্থার মোকাবেলা করেছে সাহসের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করা, সব সময় শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ রজায় রাখা। এক্ষেত্রে নয়া উপাচার্যগণ শিক্ষার্থী এবং তাদের সচেতন অভিভাবক মহলের অকুন্ঠ সমর্থন পাবেন। স্থানীয় রাজনীতিকরাও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে, সন্তানদের কল্যাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আন্তরিক সহযোগিতা করবেন -এটি প্রত্যাশিত।
নব নিযুক্ত ৪ উপাচার্য সম্পর্কে পরিচিতিমূলক কিছু তথ্য নিচে উপস্থাপিত হলো।
প্রফেসর ড.
ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, উপাচার্য,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১২ (২) ধারায় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর ২ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে ১৭তম উপাচার্য নিয়োগ দেন। ১৫ জুন ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী চবি’র ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরে ড. ইফতেখার অনন্য মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ৫ম শ্রেণি ও ৮ম শ্রেণিতে মেধা তালিকায় জেলার শীর্ষ অবস্থানে সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি, ১৯৭২ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি বিএ ও এলএলবি এবং পরবর্তীতে ১৯৮১ সনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগ থেকে এমএ (১ম ও শেষ পর্ব) পরীক্ষায় ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান (একমাত্র ১ম শ্রেণি) অধিকার করেন।
এরপর ১৯৮২ সালে সমাজতত্ত্ব বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান ড. ইফতেখার। ২০১৩ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পান তিনি।
এ ছাড়া অধ্যাপক ইফতেখার চবি সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব, চবি ক্লাবের (শহর) সভাপতি এবং চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই শিক্ষাবিদ বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় তথা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসএ ফুলব্রাইট সিনিয়র স্কলার), সাউদার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসএ ফুলব্রাইট সিনিয়র স্কলার), ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-বার্কলে (ইউএসএ), ইংল্যান্ডের গ্ল্যাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, ডেনমার্কের অলবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওসাকা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের রিউকু বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বহু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর/স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ইউএনডিপি,
ইউএনসিএইচআর, ডিএফআইডি, ইউএসএআইডিসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত
বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শক ও গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশি ও
আন্তর্জাতিক জার্নালে তার বহু প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও তার তিনটি
মৌলিক বই রয়েছে।
উপাচার্যের দায়িত্ব লাভের পর অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের সাথে
মত বিনিময়কালে বলেন, বিশ্ব প্রতিযোগিতায়
বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগ্য
হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আধুনিক
ও বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী। আর এজন্য প্রয়োজন
অধ্যবসায়,
পড়ালেখায় মনোযোগী ও গবেষণাধর্মী
হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্র। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের
দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে তাদের মাঝে উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনার প্রতিফলন
ঘটাতে আমি আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর
চিন্তা চেতনার আলোকে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানচর্চা নিশ্চিত করতে চার বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করার চিন্তা রয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণার প্রসার কিভাবে ঘটানো যায়
সে বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। পরিকল্পনাটি এমনভাবে সাজানো হবে যাতে চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এক্ষেত্রে দল, মত নির্বিশেষে
সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। ’
তিনি
বলেন, ‘দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স এখন ৪৯ বছর। এ দীর্ঘ সময় ধরে দেশে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ
সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষকগণ নিবেদিত প্রাণে জ্ঞানের যে দ্বীপশিখা জ্বালিয়েছেন, এ আলোয় আমরা সকলে আলোকিত। বীর চট্টলার অহংকার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। মহান
মুক্তিযুদ্ধসহ বিগত সমগ্র বছরে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় চট্টগ্রামের
সূর্যসন্তানদের অবদান অনস্বীকার্য। সেই
সূর্যসন্তানদের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কর্মকা- বিকেন্দ্রীকরণের ঘোষণা দিয়ে ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পরিবার। এখানে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাগুলো
চিহ্নিত করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে সমাধান করা হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আমার প্রচেষ্টা থাকবে। ’
ছাত্র সংগঠনগুলোর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হয়ে উঠার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলোর
মধ্যে অন্তর্কোন্দল বা অস্থিতিশীলতা শিক্ষার পরিবেশকে বিনষ্ট করে। তাই এ অস্থিতিশীলতার কারণগুলো চিহ্নিত করে
রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করবো। এর ফলে শিক্ষার্থীরা অন্তর্কোন্দল ভুলে গিয়ে
ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বলে আশা
রাখি। ’
সেশনজটের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আগে
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমি এ কমিটির প্রধান ছিলাম। আমি ও কমিটির অন্য সদস্যরা মিলে সেশনজটের
কারণগুলো খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এছাড়া সেশনজট নিরসনে কিছু সুপারিশও আমরা
দিয়েছিলাম। সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে আমি দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট শূন্যের কোটায় নিয়ে আসব। ’
ড. ইফতেখার উদ্দিন বলেন, উপাচার্যের একার
পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব নয়। উপাচার্যের অভিভাবক হিসেবে নেতৃত্ব
দেয়ার যোগ্যতা এবং গুণাবলি থাকা প্রয়োজন। দল ও মতের উর্ধ্বে উঠে সকলের সহযোগিতার
মাধ্যমে সুন্দর, অসাম্প্রদায়িক ও
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবো।
প্রফেসর ড. আলী আকবর, উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পশুপুষ্টি বিজ্ঞানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবরকে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ২৪ মে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর
হিসেবে আগামী ৪ (চার) বছরের জন্য নিয়োগ দান করেছেন ।
প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম ভাইস-চ্যান্সেলর। এর আগে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের অন্যতম প্রবীণ প্রফেসর হিসাবে পশুপুষ্টি বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর ১৯৫২ সনের ১০ মার্চ
বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত
মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশিষ্ট সমাজসেবী মোঃ আলাউদ্দিন মুন্সি ও মাতা সারা খাতুন।
শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের অধিকারী প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর ১৯৭৫ সনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদ থেকে
কৃতিত্বের সাথে বিএসসি ইন এএইচ (অনার্স) এবং ১৯৭৭ সালে এমএসসি (এ.এইচ.)
ইন এনিম্যাল নিউট্রিশন ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের
ইউনিভার্সিটি অব এবারডিন থেকে ১৯৮৪ সনে পিএইচডি ও ১৯৯২-৯৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে পোস্ট ডক্টরেট অর্জন
করেন। এছাড়াও তিনি ২০০০ সালে জাপানের তহুকু ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল এক্সপেরিমেন্ট স্টেশন এর ভিজিটিং ফেলো
হিসেবে কাজ করেন।
প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর ১৯৭৬ সনে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পুষ্টি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান
করেন। পরবর্তীতে আগস্ট ১৯৯৩ সনে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। এ ছাড়াও তিনি ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া
কেলানটানে প্রফেসর হিসেবে
কর্মরত ছিলেন।
প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওর্য়াকশপ ও কনফারেন্সে যোগদান করে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং
বিভিন্ন টেকনিক্যাল সেশনে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গবেষণা ও শিক্ষা সংক্রান্ত
কাজে পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর, বাকৃবি’র সিন্ডিকেট সদস্য, পশুপালন অনুষদের ডিন, ডিন কাউন্সিলের
কনভেনর, পশু পুষ্টি বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্ট, পরিচালক বাউরেস, পরিচালক আইসিএফ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন
কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব
পালন করেন। তিনি পশুপুষ্টি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এফএও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়,
বিশ্ব ব্যাংক, ইউএসডিএ, ডিএফআইডিতে কাজ করেছেন।
একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষাবিদ পশুপুষ্টি
বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর ২০১১ সনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্য, ২০১২ ও ২০১৩ সালে বাকৃবি’র মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের শিক্ষক সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের এডভাইজারি কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও
তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পেশাগত
সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে জড়িত।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা
করবো। সেই সঙ্গে
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান পরিস্থিতিকে শিক্ষা ও গবেষণা উপযোগী করে তোলাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সামনের
দিনগুলোতে কাজ করে যাবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ধরে রাখা ও চ্যালেঞ্জ
বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
প্রফেসর ড. ইমামুল হক, উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
পদশূন্য হওয়ার ৩৭ দিন পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের আদেশক্রমে ২৫ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-২) লায়লা আরজুমান্দ ভানু স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
ড. এসএম ইমামুল হক বাংলাদেশের মৃত্তিকা বিজ্ঞান সোসাইটি এবং দি এডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি। ফরিদপুরের এ কৃতি সন্তান কৃষি এবং জীব বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পেয়েছেন বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণ পদক। এছাড়াও তিনি ইউজিসি পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন।
প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নতুন হলেও এর ভীত অনেক মজবুত। এখানে যে সকল শিক্ষার্থী রয়েছে, তারা অনেক মেধাবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাদের আন্তরিকতাও অনেক বেশি। অভিভাবকরা (শিক্ষকরা) আন্তরিক হলে এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কোনোক্রমেই বাধাগ্রস্ত হবে না এটা সকলের বোধগম্য। এখানে কর্মরত অভিভাবকরা তাদের ধ্যান, জ্ঞান, মননশীলতা এবং দায়িত্বজ্ঞান দিয়ে যেভাবে শিক্ষাদান করছেন, তাতে অচিরেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় স্থান করে নেবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা নিজেদের মনপ্রাণ দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটিকে আগলে রেখেছে। আমি যোগদান করার পর এটা বুঝেছি। তবে তাদের একজন যোগ্য অভিভাবক প্রয়োজন ছিল। আমি সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো সমৃদ্ধিশালী করার প্রচেষ্টায় কাজ করার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে ৩১ মে সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল বিমানবন্দরে পৌছালে নতুন উপাচার্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। পরে তিনি সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বৈঠক করেন। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করেন।
তবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, আবাসিক ছাত্রাবাসসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ধীরগতি দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন নতুন উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়সহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন নতুন উপাচার্য।
ইমামুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আরও এক বছর আগে। কিন্তু অধিকাংশ কাজের এখনো ২০ থেকে ৩০ ভাগ অসম্পূর্ণ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগিরই ছেলেদের জন্য এক হাজার আসনের দুটি ছাত্রাবাস ও মেয়েদের জন্য ৫০০ আসনের ছাত্রাবাসের কাজ শেষ হবে। পরিবহন সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ডিনসহ আরও কিছু দায়িত্ব উপাচার্য পালন করছেন। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, অধিকাংশ বিভাগে মেধাবী শিক্ষক থাকলেও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপর কোষাধ্যক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ইমামুল হক বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বাস্তবতায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাণী ও মৎস্য বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মনোবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিভাগ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান, উপাচার্য, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. এম অহিদুজ্জামানকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
৩১ মে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ১০(১) এবং (২) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেন।
অধ্যাপক অহিদুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান সহকারে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এমএড (শিক্ষা প্রশাসন) এবং ডিপ-ইন-এড (১ম শ্রেণি) ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্বখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. ডাব্লিও জে মরগানের অধীনে তিনি যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে কৃতিত্বের সাথে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আই ই আর-এর অধ্যাপক রওশন আরা চৌধুরীর অধীনে মাস্টার্স থিসিস করেন। দেশ বিদেশে তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় জার্নালে। একজন গবেষক হিসাবে তিনি ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক, নটিংহাম, নিউজিল্যান্ডের কেন্টারবেরী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তথা ইউনেস্কোর সাথে গবেষণার কাজ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্সে তিনি বাংলাদেশ ও উপমহাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। পাশাপাশি তিনি এসকল সেমিনার কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন।
ড. অহিদুজ্জামান একজন স্বনামধন্য গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তত্ব। তিনি UK Alumni Association of Bangladesh-এর আহবায়ক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিনেটে তিনবার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ড. অহিদুজ্জামান ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু’র ‘সম্পাদক’ নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও ইউনেস্কো কর্তৃক পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণার (Quality and Status of Female Teacher and their impact on EFA in Asia) টিম লিডার হিসেবে কাজ করেছেন। সোস্যাল সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলের অধীনে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রকল্পের (Health Care Promotion through Mass Media: A Study among the Ethnic Communities of Bangladesh) ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অধীনে (The role of Bangladesh Betar in Promiting girls education and women empowerment) গবেষণা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
ড. অহিদুজ্জামান ঝালকাঠি জেলার আমুয়ার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা আজহার উদ্দীন আহমেদের ৩য় পুত্র এবং মুন্সীগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কে. এম. সামছুল হুদার বড় জামাতা। দেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা তার সহধর্মিণী।
৭ জুন ড. অহিদুজ্জামান নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে উপাচার্য পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সকাল ৯টায় উপাচার্য ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি তাঁর দপ্তরে প্রবেশ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন বিভাগ, অফিসার্স এসোসিয়েশন, কর্মচারীবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।