বিশেষ খবর



Upcoming Event

বীমা শিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তী নাসির চৌধুরীর বর্নাঢ্য কর্মজীবন

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
img

বাংলাদেশের বীমাশিল্পে অনন্য সাধারণ গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত নাসির এ চৌধুরী পরিণত হয়েছেন জীবন্ত কিংবদন্তিতে। সুদীর্ঘ কর্মজীবনের বন্ধুর পথচলায় অসীম সাহস ও অতুলনীয় দূরদর্শীতার সাথে যিনি ক্রমাগত এগিয়ে চলেছেন, উত্তরসূরীদের জন্য নির্মাণ করেছেন স্বচ্ছন্দ চলার পথ। তাঁর নির্মিত পথেই জাতীয় অর্থনীতিতে এ শিল্প রেখে চলেছে উল্লেখযোগ্য অবদান।
সৌম্যকান্তি, নিরহংকার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বীমাব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরীর কাছে এ দেশের বীমাশিল্প অনেকাংশে ঋণী। আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, ক্যারিয়ারিস্ট বীমা সংগঠক হিসেবে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র এ ব্যক্তিত্বকে আধুনিক বীমাশিল্পের পথিকৃৎ বললেও অত্যুক্তি হবে না। এ শিল্পের পুনঃবীমা অঙ্গনে তিনি একজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল হুজ হু হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটি ২০০৭ সালে তাঁকে হুজ হু ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কনফারেন্সে অংশ নিয়ে একদিকে আধুনিক বীমার ধারণাকে বিকশিত করেছেন, সাথে সাথে বাড়িয়ে তুলেছেন দেশের পরিচিতি। বীমাশিল্পে সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে নাসির এ চৌধুরী দু’বার বাংলাদেশ বীমা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যবসায়ী সমাজের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই’র পরিচালক, বাংলাদেশ-জার্মান কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যকরী সদস্য এবং ডেল্টা ব্রাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর রূপকার নাসির এ চৌধুরী বীমাশিল্পে তাঁর কর্মজীবনের ৫৬ বছর পূর্ণ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্যদিকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর ২৫ বছর পূর্তিও একটি বিরল ঘটনা। ব্যক্তিত্ব, অধ্যবসায় এবং পেশাগত উৎকর্ষের গুণে তিনি লাভ করেছেন অসাধারণ সাফল্য, যা তাঁকে পরিণত করেছে চৌকস বীমা ব্যক্তিত্বে। নাসির এ চৌধুরী নিজেই বলেন, Like the country we are green. ৮১ বছর বয়সেও একই evergreen কর্মোদ্যমী ও কর্মযোগী মানুষটি অক্লান্তভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে চলেছেন, যা দেশের যুবসমাজের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁর ঈর্ষণীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে কর্মে একাগ্রতা, শ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কর্মপরিচালনা। তিনি কেবল বীমা শিল্পেরই স্বপ্নদ্রষ্টা নন, প্রগতিশীল ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থারও স্বপ্নচারী, একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক; এদেশের শিক্ষা, সাংবাদিকতা ও শিল্প-সাহিত্য-ক্রীড়া অঙ্গনে তাঁর অকৃপণ পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যাম্পাস’র ন্যায় বিভিন্ন জাতি জাগরণী প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা এবং আলোকিত জাতি গঠনে নিরলস কাজ করে চলেছে।
শিক্ষাজীবনঃ কৈশোরের চপলতায় জীবন গড়ার স্বপ্ন
ছোটবেলা থেকে নাসির এ চৌধুরী ছিলেন মেধাবী এবং যে কোন কাজে প্রবল উৎসাহী। তাঁর শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক দিনগুলো কাটে গ্রামের এমই স্কুলে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে নাসির এ চৌধুরী ভর্তি হন সিলেট গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে। সেই কিশোর বয়সেই তখনকার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে; তাই ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ এ সেøাগানে উচ্চকিত ছিল নাসির এ চৌধুরীর কিশোর কন্ঠ। দৈনিক আজাদ পত্রিকার পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হত ছোটদের পাতা মুকুলের মহফিল যার পরিচালক ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক মোহাম্মদ মোদাব্বের। ‘বাগবান’ এ ছদ্মনামে তিনি মুকুলের মহফিল সম্পাদনা করতেন। মাহমুদ আলী সম্পাদিত ‘নও বেলাল’ পত্রিকার ছোটদের পাতা সম্পাদনার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। সংগঠক হিসেবে পরিচালনা করতেন মুকুল ফৌজ। তাঁর এসব কাজে সার্বিক সহযোগিতা দিতেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বর্তমান অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত এবং সাবেক শিক্ষা সচিব হেদায়েত আহমদ।
স্কুল জীবনের স্মৃতিঃ
সাহিত্য চর্চা ও কিশোর ভাষা সৈনিক নাসির চৌধুরী

স্কুল জীবনের স্মৃতির কথা উঠলে নাসির এ চৌধুরী নস্টালজিক অনুভূতিতে পড়েন। সেসব প্রাণবন্ত দিনের কথা, জীবন খাতার সোনার পাতা উল্টাতে উল্টাতে নাসির এ চৌধুরী বলেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত ১৯৪৫ সালে স্কুলে আমার সহপাঠী ছিল। মুহিতের বাড়িতে ছিল আমাদের অবাধ বিচরণ। সেই বাড়িতেই একসাথে খাওয়া, গল্পগুজব করা, মুকুল ফৌজের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা হতো। মুহিতের বাবা-মা আমাদের দেখতেন, কিন্তু কখনও বিরক্ত হতেন না। আমরা যে ভালো কাজ করছি তা তাঁরা বুঝতেন। এ সময় আমরা হাতে-লেখা ম্যাগাজিন বের করতাম, যাতে আমাদের এবং অন্যান্য লেখকদের লেখা থাকতো। স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের ঢেউ সিলেটেও আছড়ে পড়লে আমি বন্ধুদের নিয়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়েছিলাম।
শিক্ষা জীবনে এক্সট্রা একাডেমিক কার্যক্রমঃ
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক

কিশোর সংগঠন মুকুল ফৌজ এবং সাহিত্য চর্চার ফাঁকে ফাঁকে নাসির এ চৌধুরী রাজনৈতিক অঙ্গনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পাকিস্তান আন্দোলনই তাঁকে এবং তাঁর অন্যান্য বন্ধুবান্ধবকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করে। পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম স্তম্ভ ছাত্র-সমাজ দু’টি ধারায় বিভক্ত ছিল। বামঘেঁষা প্রগতিশীল ধারা এবং রক্ষণশীল ইসলামপন্থী ধারার মধ্যে নাসির চৌধুরী ছিলেন প্রগতিশীল ধারার সদস্য। তবে দু’ধারাই সম্মিলিতভাবে পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নেয়। সিলেটে নতুন ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস এডুকেশন কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে। সেই কমিটিতে নাসির চৌধুরী এবং আসাদ্দর আলী খান যুগ্ম আহ্বায়ক হন। নেপথ্যে ছিলেন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব পীর হাবিবুর রহমান, তসাদ্দক আহমদ, রুহুল কুদ্দুস, আবদুল হাই, তারা মিয়া প্রমুখ। ঐ বছর নভেম্বরে তারা সম্মেলন আহ্বান করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বঙ্গীয় মুসলিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরবর্তীতে তমুদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা জননেতা আবুল হাশিম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক সংবাদ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক খায়রুল কবীর। তাঁরা ছিলেন মুসলিম লীগের মধ্যে বাম ধারার অনুসারী। নাসির চৌধুরী রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার ইতি টানেন ছাত্রজীবনেই। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা এখনও বহাল রয়েছে। ব্যবসায়িক জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সমসাময়িক রাজনীতির খোঁজ-খবর রাখেন; ঘনিষ্ঠ মহলে রাজনীতির আলোচনা ও বিশ্লেষণ করেন। তবে পেশাগত জীবনে বা কর্মকান্ডে তাকে কোনো রাজনৈতিক দলের লোক বলে মনে হয় না এটি নাসির এ চৌধুরীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর নাসির এ চৌধুরীকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহে। সেখানে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন তিনি। এরপর চলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার প্রাঙ্গণে। সেখান থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ পাস করেন।
কর্মজীবনঃ বর্ণিল অভিজ্ঞতা ও বিরল সাফল্যে ভরপুর
এমএ পাসের পরপরই কর্মজীবন সম্পর্কে ভাবতে শুরু করেন নাসির চৌধুরী। খবরের কাগজে পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনে (পিআইসি) শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাড়ি জমান পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে তিনি বদলি হয়ে আসেন পিআইসি’র চট্টগ্রাম অফিসে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বীমাশিল্প পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তিনি এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৩ সালে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনের শিক্ষা, অভিজ্ঞতাকে তিনি নতুনভাবে কাজে লাগানোর পথ অন্বেষণ করলেন। এ সময়েই সরকার বেসরকারি খাতে বীমাশিল্প পরিচালনা আইন-’৮৫ পাস করে। নাসির চৌধুরী ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি কয়েকজন প্রতিভাবান পেশাজীবীর সমন্বয়ে শুরু করেন গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। সেই যে শুরু, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৯ বছরে গ্রীন ডেল্টা যেন শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত হয়েছে, ফলে-ফুলে সুশোভিত হয়ে একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। নাসির এ চৌধুরীর প্রজ্ঞা, নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং পরিচালন যোগ্যতার কারণে এ বীমা প্রতিষ্ঠান একুশ শতকের উপযোগী একটি আধুনিক বীমা শিল্পের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অসাধারণ সাফল্যের বরমাল্য শোভিত এ বীমা প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিস্তৃত পরিসরে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে নাসির এ চৌধুরী
আপনাকে বীমা শিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তি আখ্যায়িত করা হয় এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কীএমন প্রশ্নের জবাবে বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী নাসির এ চৌধুরী বলেন, ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত বীমা সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণা ছিল না, I was not at all interested in Insurance. এমএ ডিগ্রি লাভের পর হঠাৎ আমার জীবনের মোড় ঘুরে যায়; পত্রিকার পাতায় বিজ্ঞাপন দেখলাম পাকিস্তান ইন্সুরেন্স কর্পোরেশনে (পিআইসি) শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। উক্ত পদের জন্য আবেদন করলাম এবং মনোনীত হলাম। ১৯৫৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাড়ি জমাই পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে। করাচিতে পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ শেষে আরও উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য সুদূর ইংল্যান্ডে যাই। যেখানে বীমা ও পুনঃবীমা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিই। ইংল্যান্ডে এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্স্যুরেন্স ও রি-ইন্স্যুরেন্সের ওপর আবারো উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে জার্মানির বিশ্ববিখ্যাত মিউনিখ রি-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে দু’মাসের জন্য পাঠানো হলো। প্রশিক্ষণ শেষে আমাকে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান চাকরির অফার দিলেও আমি পিআইসিতে থেকে যাই।
নাসির এ চৌধুরী আরও বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের ঈর্ষা করতো। অনেকটা ষড়যন্ত্র করেই আমাকে ১৯৬৯ সালে ম্যানেজার হিসেবে বদলি করে চট্টগ্রাম শাখায় পাঠায়। এটি আমার জন্য শাপে বর হয়। নিজ দেশে নিজ মানুষের বীমাসেবা দেয়ার সুযোগ লাভ করি। একই সাথে শাখা প্রধানের দায়িত্বলাভ করায় নিজের পেশাদারিত্বের বিকাশ ঘটানোরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আমার নিজের চেষ্টায় বীমাকে আত্মস্থ করেছি, বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছি। আমার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতাকে মূল্য দিয়েছি, বীমাশিল্পের উন্নয়নে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি, লাভ করেছি আশাতীত সাফল্য। আমার শুভাকাঙ্খী-সুহৃদগণ আমাকে কিংবদন্তি বীমাবিদ বলতে চানআসলে আমি বীমাশিল্পের একজন নিবেদিত কর্মী।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী দেশের শীর্ষ বীমা কোম্পানী, এ ধরনের একটি বীমা কোম্পানীর প্রেরণা কোথা থেকে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্বপ্নদ্রষ্টা অগ্রণী বীমা উদ্যোক্তা নাসির এ চৌধুরী বলেন, ১৯৮৫ সালে সরকার যখন বেসরকারি খাতে বীমা-ব্যবসার অনুমতি দেন, তখন কয়েকজন বন্ধুর সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্তে আসলাম যে, বীমার মাঠে এখন কেউ আসেনি; আমরা যদি সুপরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যাভিসারী হয়ে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে সাফল্য আমাদের অনিবার্য। বন্ধুদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা লাভ করে আমি এগিয়ে যেতে সাহস করেছি। আমরা পুরোনো আসবাবপত্র দিয়ে শুরু করেছিলাম, জাঁকজমকভাবে শুরুর জন্য অপেক্ষা করিনি। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল প্রচন্ড, তাই প্রাথমিক বাধা বা অসুবিধা আমাদের যাত্রা পথকে বিঘিœত করতে পারেনি। যদি Sincerity, honesty & integrity থাকে, তাহলে সাফল্য ধরা না দিয়ে পারে না। This is an unique exampie of my life.
প্রতিষ্ঠালগ্নে সম্পদের অপ্রতুলতা ছাড়া আর কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কী এমন প্রশ্নের জবাবে পরম আত্মবিশ্বাসী বীমা বিশারদ নাসির এ চৌধুরী বলেন, তেমন বাধার সম্মুখীন হইনি। তবে মনে আশাবাদ থাকলেও শংকা ছিল বন্ধু-বান্ধবের টাকা নিয়ে যে কোম্পানী করলাম শেষ পর্যন্ত লাভজনকভাবে টিকে থেকে তাদের দেনা শোধ করতে পারবো তো! আমাদের আত্মবিশ্বাস, মনোবল, দৃঢ়প্রত্যয় আমাদেরকে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। অন্যান্য শিল্পে দেখা যায় নিজেরাই এমডি, নিজেরাই জিএম, ম্যানেজার কিন্তু আমি এখানে সবাইকে বললাম আপনারা উদ্যোক্তা, কোম্পানীর মালিক, আপনারা প্রশাসনে যাবেন না। আমার অভিজ্ঞাতার ভিত্তিতে আমাকে আপনারা এমডি বানিয়েছেন, আমি দৈনিক কাজকর্মসহ কোম্পানীর সার্বিক বিষয়ে নজর রাখছি। আমার কোনো সহকর্মী ভুল-ত্রুটি করলে তাকে গালমন্দ করবেন না; আমাকে বলবেন, আমি ব্যবস্থা নেব। এজন্য আমার সহকর্মীগণ হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে নিশ্চিন্তে কাজ করতে সক্ষম হয়েছে, কোম্পানীকে নিয়ে গেছে সাফল্যের শীর্ষে। বীমাশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন এমন জিজ্ঞাসার জবাবে কিংবদন্তি বীমা ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরী বলেন, আমি শুধু নিজ বীমা কোম্পানী নিয়েই ভাবছি না, দেশের পুরো বীমা ব্যবস্থাপনাকে নিয়েই চিন্তা-ভাবনা করছি। আমি মনে করি জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব না হলে দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন সুদূরপরাহত। দেশের অর্থনীতি যত সমৃদ্ধ হবে, সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে সরকার ততই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
নাসির এ চৌধুরী বলেন, বীমার লক্ষ্য হলো Maximum security at minimum Cost. আমি সারাজীবন এই মূলনীতিই অনুসরণ করে আসছি। গ্রীন ডেল্টার সাফল্যের পেছনে এই লক্ষ্য কার্যকর হয়েছে। আজ শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বের বীমা জগতে গ্রীন ডেল্টা প্রভূত সুনামের অধিকারী হয়েছে। একজন মানুষ তার কর্মক্ষেত্রে যদি sincere, honest and dynamic হয় তাহলে তার সাফল্য অনিবার্য। তিনি বলেন, আমি যখন কর্মক্ষেত্রে সফল মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেলাম তখন অন্যান্য পেশা থেকে আমাকে ভালো ভালো অফার দেয়া হলো। কিন্তু আমি এ বীমা পেশা ছেড়ে যাইনি, সুখের দিনে দুঃখের দিনে এ পেশায় জড়িতদের সঙ্গে থেকেছি, তাদের সুখ-দুখের অংশীদার হয়েছি।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কীভাবে মোটিভেট করে তাদের কাছ থেকে maximum output আদায় হয়এ কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে জাদুকরী প্রভাবের বিরল ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরী বলেন, কাজেকর্মে যারা খুব ব্রাইট তাদের পদোন্নতি এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে প্রেরণ ইত্যাদি লাভের জন্য তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। এজন্য তাদের পারফরমেন্স সব সময় ভালো হতো। বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ভালো কাজ শিখতে পারছে, নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করছে; আর্থিক দিক থেকেও তারা লাভবান হচ্ছে। এজন্য আমার প্রতি তাদের আস্থা, সহমর্মিতা রয়েছে যার ওপর ভিত্তি করে তারা এ কোম্পানীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে, অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছে।
সুদীর্ঘ বীমা জীবনে মধুময় কোনো স্মৃতির কথা জানতে চাইলে বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী প্রতিভাদীপ্ত বীমাবিদ নাসির এ চৌধুরী বলেন, আমার সমগ্র জীবনই স্মৃতিময়, বীমাময়। বীমা ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না, দেশের উন্নয়নও নির্ভর করছে বীমাশিল্পের উন্নয়নের ওপর। শুরুতে আমাকে কেউ কেউ নিরুৎসাহিত করেছিলেন, ভরাডুবির ভয় দেখিয়েছিল, আজ সাফল্যের চূড়ায় বসে তাদের বিরোধিতার স্মৃতি মনে পড়ছে; তাদের কথায় আমরা হতাশ হইনি, কখনও তাদের অকল্যাণ কামনা করিনি।
Like the country we are green আপনার এ বাণী কী এখনও ধারণ করেন এমন জিজ্ঞাসার জবাবে অনাবিল হাসিখুশির প্রাণবন্ত পুরুষ নাসির এ চৌধুরী সহাস্যে বলেন, আমি চিরদিনই নিজেকে তারুণ্যদীপ্ত মনে করি। তরুণ সমাজকে দেশের ভবিষ্যৎ বলে মনে করি। বিশ্বায়নের যুগে তরুণ প্রজন্মই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ছাত্র-তরুণরাই থাকবে সামনের কাতারে। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সব সময় মনের ভেতর সবুজের ছায়া অনুভব করি। আমাদের কোম্পানীতে এমপ্লয়ার-এমপ্লয়ী সম্পর্ক খুব মধুর। সিনিয়রদের প্রতি জুনিয়রদের যেমন শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে তেমনি তারা অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে যা শিখছে তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকছে। এজন্য আমাদের কোম্পানীতে কর্মপরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর এবং উৎপাদন বান্ধব।
স্বাধীন বাংলাদেশে বীমাক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে আধুনিক বীমা শিল্পের পথিকৃৎ নাসির এ চৌধুরী বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের অবসানের লক্ষ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার সমর্থক এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদান করি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর সদ্য স্বাধীন দেশে আমার চাকরি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে ন্যস্ত হলে দেশের বীমা খাতের পুনর্গঠনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাই। ১৯৮৩ সালে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করি। সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান ছাড়ার পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক পুনঃবীমা অঙ্গনের বিশেষজ্ঞ বীমাবিদ নাসির এ চৌধুরী বলেন, এ সময় বেসরকারি বীমা কোম্পানী প্রতিষ্ঠার কথা জানতে পেরে এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করি। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি সমমনা কয়েকজন পেশাজীবীর সমন্বয়ে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করি। এ কোম্পানীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করি। ২০১৩ সালের মে পর্যন্ত দীর্ঘ ২৭ বছর একটানা দায়িত্ব পালন করি। এখনও বীমা শিল্পকে ছাড়তে পারিনি। বর্তমানে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর চিফ এডভাইজারের দায়িত্ব পালন করছি।
সরকারি বীমা এবং বেসরকারি বীমার মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বীমাজগতের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরী বলেন, পার্থক্য অনেক আছে। সরকারি বীমায় আমলাতন্ত্র চলে। সরকারি বীমা সেক্টরের কর্মরতগণ সরকারি নিয়মে বেতন-ভাতা পান। ব্যবসা হলেও পান না হলেও পান; অন্যদিকে বেসরকারি খাতে জড়িতদের মাঠে কাজ করতে হয়, কাজের আউটপুট অনুসারে তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয়।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি বীমা কী ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে দূরদর্শী বীমা ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরী বলেন, অর্থনীতিসহ দেশের সকল খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন। কেউ নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করলে আমরা তার নিরাপত্তা দিচ্ছি। এটা বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয় বলে উদ্যোক্তাগণকে টেনশনে থাকতে হয় না, দুর্ঘটনা ঘটলে তারা যথানিয়মে বীমা দাবি আদায় করতে পারেন। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বীমাশিল্প অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, সরকার দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্ব দিলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাই দেশের অর্থনীতিকে হিমালয় সমান উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
ছাত্রজীবনে স্কুল ও কলেজে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকেও পরবর্তী জীবনে কেন রাজনীতি ছেড়ে দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মহতী বীমা উদ্যোক্তা নাসির এ চৌধুরী বলেন ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আমি ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম; এ সময় কলেজের প্রিন্সিপাল আমার বাবাকে আমার রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জানালে বাবা আমাকে আমার বড় ভাইয়ের কর্মস্থল ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দিলেন। এমসি কলেজে থাকলে অনার্স দিতে পারতাম, কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না। আমি এমসি কলেজ বার্ষিকীর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলাম; কি কারণে জানি না, প্রিন্সিপাল আমার ওপর রুষ্ট ছিলেন। পরীক্ষায় পাসের পর সকল ছাত্র-ছাত্রীকে একটি সার্টিফিকেট দেয়া হয় যাতে লেখা থাকে He was not engaged in any activities subversive of the state.. কিন্তু প্রিন্সিপাল সাহেব আমার সার্টিফিকেটে এ কথাটা উল্লেখ করতে রাজি নন। আমি এমসি কলেজে অনার্সে ভর্তির চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রিন্সিপালের জেদের জন্য আমার ভাগ্যে তা জুটলো না। অগত্যা আমাকে ময়মনসিংহে বড়ভাইয়ের কাছে যেতে হলো। সেখান থেকে বিএ পাস করে সিলেটে ফিরে আসলাম। সে সময় সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘নও বেলাল’ -এর ছোটদের পাতা’র সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করি। পত্রিকাটি ঢাকায় স্থানান্তরিত হবার পরও সে দায়িত্ব অব্যাহত রাখি। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাহমুদ আলী এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এ পত্রিকার শুরু থেকে ছোটদের বিভাগ ‘সবুজের পাতা’র আমি সম্পাদনা করি। ঢাকায় আসার পর ‘নও বেলাল’ এর সম্পাদনার দায়িত্ব প্রকৃতপক্ষে আমার ওপর অর্পিত হয়, যদিও সম্পাদক-প্রকাশক হিসেবে মাহমুদ আলী সাহেবের নাম ছাপা হতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে হলজীবন অথবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোনো ঘটনার কথা বলবেন কী এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির এ চৌধুরী বলেন, আমি এফ এইচ হলের সাথে এটাচ্্ড থেকে ভাইয়ের বাসা থেকে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করতাম। তবে হলে প্রায়ই আমাদের আড্ডা হতো; অবশ্য এখনকার মত খারাপ আড্ডায় আমরা যোগ দিতাম না। সেগুলো ছিল পিওর আড্ডা; মূলতঃ সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়েই আলোচনা হতো। রাজনীতিও আড্ডার আলোচনায় এসে যেত। আমাদের আড্ডাগুলো ছিল বেশ প্রাণবন্ত, নির্মল সেসব আড্ডা থেকে অনেককিছু শেখা যেত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল।
আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে যাঁরা সমাজের উচ্চস্তরে অধিষ্ঠিত তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলবেন কীএ প্রশ্নের জবাবে বন্ধুবৎসল নাসির এ চৌধুরী ক্ষণিকের জন্য অতীতে হারিয়ে যান। বলেন, সিলেট ভারতের আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর আমরা পাকিস্তানে যোগ দেই। সিলেট গভর্নমেন্ট হাইস্কুল ছিল আসামের নামকরা স্কুল। আমি সে স্কুলের ছাত্র ছিলাম। সেখানে সংস্কৃতিমনা, রাজনীতিসচেতন কিছু ছাত্রের সাথে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন হেদায়েত আহমদ, সরকারের সচিব হয়েছিলেন। হেদায়েত মারা গেছে, অন্যজন এ এম এ মুহিত, বর্তমান অর্থমন্ত্রী সেও আমার সহপাঠী ছিল। মাহমুদ আলী, বর্তমানে প্রয়াত, সেও আমার সহপাঠী ছিল। আমরা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মুসলিম লীগের জন্য কাজ করতাম, জিন্নাহ সাহেবের ছবি সংবলিত কার্ড বিক্রি করে পার্টির ফান্ড যোগাড় করতাম। তখন ছিল লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান -এর যুগ; যুগের হাওয়ার সাথে আমরা তাল মিলিয়ে চলেছি। অবশ্য পরবর্তী সময় মুসলিম লীগ সরকারের গণবিরোধী কার্যকলাপের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে ছিলাম। আমাদের সহপাঠীদের অনেকেই মারা গেছে। হাফ ব্যারিস্টার নামে খ্যাত নুরুল ইসলাম বর্তমানে লন্ডনে আছে, ব্যারিস্টারি পড়ার মাঝখানে আন্দোলন-সংগ্রামে যোগ দিয়ে সে আর পরীক্ষা দেয়নি। সে সুবাদে বন্ধু মহলে সে হাফ ব্যারিস্টার হিসেবে খ্যাত। ঘনিষ্ঠতমের মধ্যে মুহিত, নুরুল ইসলাম আর আমি আমরা তিনজন এখনও বেঁচে আছি, সক্রিয় রয়েছি বিভিন্ন কর্মকান্ডে। বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-যুবকদের প্রতি মূল্যবান পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে ছাত্র-তরুণদের কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরী বলেন, তাদের প্রধান কাজ হলোমনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা, জ্ঞানার্জন করা; মানবিক গুণাবলি অর্জন করা। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে, খেলাধূলায় তাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। তারা শিক্ষকদের প্রতি সম্মান দেখাবে, তাদের নির্দেশ মেনে চলবে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য কী ধরনের জীবনাচরণ প্রয়োজন আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলবেন কী এমন প্রশ্নের জবাবে সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী চিরতরুণ নাসির এ চৌধুরী বলেন, আমি সবসময় টেনশনমুক্ত থাকি, হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি, ধূমপান করি না, সকালে শয্যাত্যাগ করি, রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। পরিমিত আহার করি, মাছ-মাংস কম খাই, বেশি খাই শাক-সবজি, চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলি। এগুলো পালন করার ফলে আমাকে শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় না। অবসর সময় কীভাবে কাটান এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মবীর নাসির এ চৌধুরী বলেন, অবসর সময়ে পড়াশোনা করি, আমি চিরজীবনই একজন পড়–য়া। পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, প্রবন্ধ ও গল্পের বই পড়তে ভালোবাসি। টেলিভিশনেও চোখ রাখি।
প্রিয় ফুলঃ গোলাপ;
প্রিয় ফলঃ আম, কলা;
পৃথিবীর কোন্ দেশটি ভালো লেগেছেঃ নিজের দেশ বাংলাদেশ সবচেয়ে প্রিয়;
বর্হিবিশ্বেঃ ব্রিটেন, জার্মানী;
প্রিয় শিল্পীঃ হেমন্ত মুখার্জী, কণিকা ব্যানার্জি, কলিম শরাফী;
প্রিয় রংঃ সবুজ;
প্রিয় খবারঃ মাছে-ভাতে বাঙ্গালী;
প্রিয় চলচ্চিত্রঃ সত্যজিত রায়ের অপুর সংসার;
প্রিয় বইঃ রবীন্দ্রসাহিত্য, শেক্সপিয়ারের বই;
প্রিয় খেলাঃ ফুটবল।
স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকার
নাসির এ চৌধুরী সম্পর্কে সুধীজনের অভিমত

নন্দিত বীমা ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরীকে সুধীজনরা বিভিন্নভাবে দেখেছেন। পেশাগত জীবনে কাছে থেকে দেখা বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, তাঁর স্বজনদের অনুভূতি এখানে তুলে ধরা হলো। এঁদের অনেকেই এই অত্ব্যজ্জ্বল বীমা-ব্যক্তিত্বের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘ, সফল, শান্তিময় জীবন কামনা করেছেন। কামনা করেছেন দেশের বীমাযোগ্য মানুষের সেবা অব্যাহত থাকুক। অনেকে বীমাশিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য জানিয়েছেন আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। খ্যাতিমান বাল্যবন্ধুগণ কামনা করেছেন কর্মময় বন্ধুবৎসল জীবন। এঁদের অভিমত থেকে উঠে এসেছে নাসির চৌধুরীর বর্ণিল কর্মজীবনের সাফল্য গাঁথা যিনি তাঁর যৌবনের উচ্ছল স্বপ্নকে রূপ দিয়েছেন উজ্জ্বল সাফল্যের কারুকার্যময় মোড়কে। নাসির এ চৌধুরীর ইন্স্যুরেন্স জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত success story of an icon গ্রন্থ থেকে কয়েকজনের অভিমত নিম্নে তুলে ধরা হলো।
আবুল মাল আবদুল মুহিত
অর্থমন্ত্রী

বাল্যবন্ধু নাসির এ চৌধুরী সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে অনেক চৌকস ব্যক্তিত্ব এ এম এ মুহিত বলেন, ১৯৪৫ সালে আমি যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, তখন নিকটস্থ একটি গ্রাম থেকে নাসির চৌধুরী আমাদের সাথে ভর্তি হন। তখন লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনের যুগ, কিশোর-তরুণ সমাজে সাড়া জাগানো আন্দোলনের ঢেউ এসে আঘাত হানলো সিলেটেও। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় নাসির চৌধুরী ঝুঁকে পড়লেন সাহিত্য-সংস্কৃতির দিকে অবশ্য আমাদেরকে সাথে নিয়েই। ১৯৫০ সালে অগ্রণী লেখক ও শিল্পী সংঘ গড়ে ওঠার সময় নাসির ছিলেন এর অন্যতম উদ্যোক্তা, ১৯৫১ সালে এ প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় মাসিক ‘নিশানা’। ১৯৫৪ সালে ঢাকা আসা পর্যন্ত তিনি এ পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। এরপর বীমা ব্যবসার দিকে মোড় ঘুরে যায় নাসিরের কর্মজীবনের। নাসিরের সাথে শিশু-কিশোর সংগঠন মুকুল ফৌজের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকতাম। মুকুল ফৌজ সংগঠনের ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা ও নির্দেশনা পেতাম সাহিত্যিক-সাংবাদিক মোহাম্মদ মোদাব্বের, পটুয়া শিল্পী কামরুল হাসান, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন এর কাছ থেকে। ১৯৫০ সালে সিলেটে গঠিত হয় একটি অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ছাত্র-সংগঠন সিলেট ছাত্র ইউনিয়ন। এর যুগ্ম আহ্বায়ক হন খন্দকার রুহুল কুদ্দুস ও নাসির চৌধুরী। নাসির চৌধুরী তাঁর জীবনকে বিভিন্নমুখী কর্মকান্ডে ভরে তুলেছিলেন। তিনি সবসময় ছিলেন সক্রিয়। এমন একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন ছাত্রজীবনেই। তবে তিনি সবসময় রাজনীতি-সচেতন, এখনও তা-ই আছেন বলেই মনে করি। কর্মজীবনে বীমাশিল্পে নাসির চৌধুরী অসাধারণ সফল মানুষ। জয়তু বাল্যবন্ধু নাসির চৌধুরী!
ফারুক চৌধুরী
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব

নাসির চৌধুরী আমার বন্ধু, তার সঙ্গে আমার পরিচয়ের দিনক্ষণ মনে নেই। আমাদের গ্রামে প্রতিবছর শীতের সময় পাহাড়ী বাঘের হামলা হতো; এজন্য বাঘ পাকড়াও করার আয়োজনও হতো বেশ জমজমাট। এমনি এক পরিবেশের মধ্যে নাসিরদের হাওড়াপাড়ার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নাসিরের সঙ্গে সেদিন হৃদ্যতার একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানে যুদ্ধকালীন পিতার কর্মস্থল শিলং এর পাহাড় থেকে আমরা নেমে এলাম সিলেট শহরের সমতলে। ভর্তি হলাম সিলেট গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে। নাসির সেই ক্লাসেই পড়ত, পূর্বপরিচিত বলে আমি বেশ স্বস্তিবোধ করলাম। শিলংয়ে পড়ালেখার সময় জুতা-মোজা পরতাম নিয়ম অনুসারে। সিলেট শহরের স্কুলে সবাই নগ্নপদে ক্লাসে আসত। তার মধ্যে আমি ব্যতিক্রম হয়ে সহপাঠীদের বাক্যবাণে বিদ্ধ হতে হতে একসময় সবার মত নগ্নপদ হয়ে গেলাম। ক্লাসের ছেলেগুলো ছিল দুষ্টপ্রকৃতির, নাসিরও বা কম যায় কিসে; তবে পূর্ব পরিচিত এবং পারিবারিক পরিচয়ের সুবাদে নাসির আমার প্রতি বাক্যবাণ নিক্ষেপ করতো না, আমার প্রতি তার ব্যবহার ছিল সমবেদনশীল। আমি, নাসির আর মুহিত ছিলাম একসুতোয় গাঁথা। লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনের প্রচার, জিন্নাহ টুপি, চাঁদ-তারা মার্কা টুপি বিক্রি করতাম আমরা, পাকিস্তান আন্দোলন প্রচারের টাকা সংগ্রহ করতাম। সাবেক সচিব ও বর্তমানে চৌকস মন্ত্রী মুহিত আর সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত হেদায়েত আহমদ ছিলো নাসিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কর্মক্ষেত্রে অবসরের এ বয়সেও আমি নাসিরের কাছাকাছি আছি। নাসির একজন উদারমনা ব্যক্তিত্ব, সে ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির জগতেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও বন্ধুত্বকে জিইয়ে রাখতে জানে। কোম্পানীর সহকর্মীদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর তাঁর সজাগ দৃষ্টি। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তারুণ্যের আগ্রহটি এখনও সজীব। পরিমিত ভোজন এবং সাধারণ জীবন-যাপন নাসির চৌধুরীর আদর্শ। কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত জাগ্রত একজন উদ্যোগী পুরুষ, কিন্তু সহকর্মীদের প্রতি ঔদার্যে অতুলনীয়। বীমাজগতে অর্ধশতক সক্রিয়ভাবে কাটিয়েছেন, উদ্যোগ আর উদ্যমে ভাটা পড়াতো দূরের কথা, এখনো জেগে ওঠে জোয়ারের টান। যতদিন সে বেঁচে থাকবে, ততদিন দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে।
এম মঈদুল ইসলাম
ফাউন্ডার চেয়ারম্যান, ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন

বর্তমান সময়ের শীর্ষে অবস্থানকারী বীমা প্রতিষ্ঠান গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী নাসির এ চৌধুরীর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং কারিগরি ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে।
পিটার উইলিয়ামস, আন্ডাররাইটার
লয়েড্স এজেন্সি অব মিটুসি সুমিটোমো

নাসির তাঁর কোম্পানী গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সকে বাংলাদেশের একটি অগ্রণী বীমা কোম্পানীতে পরিণত করেছেন। নাসির এবং তাঁর সহকর্মীরা প্রতিযোগিতামূলক বীমাক্ষেত্রে যে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছেন সেজন্য আমি সত্যিই গর্বিত। নাসির আমার বন্ধু একথা বলতে পেরে আমি গর্ব ও গৌরব অনুভব করছি।
এস এ কুমার
জেনারেল ম্যানেজার এবং সিইও এশিয়ান রি-ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন

নাসির চৌধুরীর গ্রাহক-কেন্দ্রিক আবেদন এবং কর্মচারী-ভিত্তিক প্রশাসন দীর্ঘসময়ব্যাপী গ্রীন ডেল্টার সাফল্যকে ধরে রেখেছে। তাঁর দূরদর্শীতা এবং নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকা বাংলাদেশের বীমাবাজারে বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকায় তাঁকে অধিষ্ঠিত করেছে।
স্টিফেন জে ওগডেন
ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, মার্শ, লন্ডন

নন্দিত বীমাব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরীর বীমাশিল্পে ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে তাঁকে মার্শ গ্রুপের বন্ধুদের পক্ষ থেকে অভিনন্দিত করে স্টিফেন জে ওগডেন বলেন, যেসব ব্যক্তির আপনার সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে, আপনার গৌরবময় কর্মজীবন সম্পর্কে জেনেছে, তাদের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন। আপনার সাথে আমার যোগাযোগের সময় আপনি নিজ বীমাজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাকে সিক্ত করেছেন, সেজন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
অতুল ডি বোদা
ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, জে বি বোদা গ্রুপ, ভারত

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বীমাশিল্প পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে নাসির এ চৌধুরী প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে গড়েছেন তিনি। নাসির এ চৌধুরী শুধু একজন বীমাব্যক্তিত্বই নন, তিনি একজন দানশীল ব্যক্তিও, যিনি অনেক সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। নিজ কোম্পানী গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে তিনি পিতৃস্নেহের আবহ সৃষ্টি করেছেন এবং বন্ধু-গাইড হিসেবে হয়েছেন সর্বজন সমাদৃত ও শ্রদ্ধাভাজন। তিনি একটি ইংরেজি কবিতার উদ্ধৃতিতে বললে বলতে হয় Life of Greatmen all remind us
We can build our lives sublime,
And departing leave behind us
Footprints on the sands of time.

মুস্তফা নূর উল ইসলাম
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ

পূর্ব পাকিস্তান সাংস্কৃতিক আন্দোলন আর ভাষা আন্দোলনের একজন তারুণ্যদীপ্ত সহযাত্রী হিসেবেই নাসির উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সাথে আমার প্রথম পরিচয় এবং যোগাযোগ। দেশের আলোকিত বীমাবিদ নাসির এ চৌধুরী সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই ঐ পূর্বতন চেহারাটাই ভেসে ওঠে। যে সড়কে ভাষা আন্দোলন ও দেশজ সংস্কৃতির আন্দোলনে আমরা একসঙ্গে রয়ে গেছি। পরে জানলাম তিনি ইন্স্যুরেন্স বিজনেসের সাথে যুক্ত। তিনি এখনও মনের ভেতর দেশজ সংস্কৃতির লালন করেন, পাশাপাশি তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে ব্যাপক সহযোগিতা প্রদান করে চলেছেন; এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আমার বিশ্বাস, একজন নাসির এ চৌধুরী সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে কর্মসুবাদে অতিব্যস্ততায় খানিক দূরে থাকলেও মনেপ্রাণে এখনো দেশজ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীটিই আছেন।
অধ্যাপক এমেরিটাস আনিসুজ্জামান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বাংলা একাডেমী

নাসির এ চৌধুরী চিরকাল প্রগতিশীল ধ্যানধারণার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মতো সহৃদয় ও সজ্জন কম দেখা যায়। কোনো মালিন্য তাঁকে স্পর্শ করতে পারে বলে মনে হয় না। পেশাগত ক্ষেত্রে তিনি সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত সেখানে তাঁর সততা সুবিদিত। মানুষের দুঃখকষ্টে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কারো মধ্যে গুণ দেখতে পেলে তার বিকাশে সহায়তা করেন।
এম শামসুল আলম
চেয়ারম্যান, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন

নাসির এ চৌধুরী সম্পর্কে বীমা ব্যক্তিত্ব এম শামসুল আলম বলেন, এ সময়ের আলোকিত বীমা ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরীর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৬০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। আমরা তখন পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের শিক্ষানবিশ অফিসার। স্বাভাবিকভাবে কাজের আসরে আমাদের মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ‘আপনি’ ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’ সম্বোধনে নেমে আসে এ সম্পর্ক। ১৯৮৩ সালে নাসির সাধারণ বীমা কর্পোরেশন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে যোগদান করেন। বেসরকারি খাতে বীমা কোম্পানী গড়ার সুযোগ এলে নাসির বেসরকারি খাতের অন্যতম অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী গড়ে তোলে। পেশার ক্ষেত্রে নাসির সবসময় সিরিয়াস। তার চিন্তা-চেতনায় সবসময়েই বীমা বিষয়টি ঘুরপাক খায়। কিভাবে বীমা শিল্প খাতকে এগিয়ে নেয়া যায়, কিভাবে বীমা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশার উন্নয়ন ঘটানো যায় নাসির তা নিয়ে রীতিমত গবেষণাও করে। ব্যক্তি নাসির একজন ধার্মিক, বিনয়ী এবং পরোপকারী। একজন প্রকৃত মানুষের সকল গুণই তার মধ্যে বিদ্যমান। নাসিরের আরও একটি গুণ হচ্ছে যে, সে শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানের বীমা ব্যবসার কথাই চিন্তা করে না, দেশের বীমা খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিয়েও ভাবে।
মোয়াজ্জেম হোসেন
সম্পাদক, দি ফাইনেন্সিয়াল এক্সপ্রেস

দেশের ক্রান্তিলগ্নে বীমা শিল্পকে দাঁড় করাবার কঠিন দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন নাসির এ চৌধুরী। এ শিল্পের নীতি ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখেছেন, অন্যায়-অনিয়মের সাথে আপোষ করেননি। সময়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন বলেই শেষ পর্যন্ত তিনি বীমা শিল্পের জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে অভিহিত হয়েছেন সুধীসমাজে।
মনজুরুল আহসান বুলবুল
সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন

জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এ কালের অসাধারণ বীমা ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরীর সাথে আমার পরিচয় একুশে টেলিভিশনের বোর্ড রুমে। তখন দেশে চলছে দুঃসময়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশ দাবড়ে বেড়ানো দাপটশালীদের শান দেয়া চাকুতে ক্ষত-বিক্ষত সবুজ প্রান্তর। তাদের সে উম্মাদীয় আঘাতে ধসে পড়লো সম্ভবত স্বাধীন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে সবচাইতে সফল অর্জন একুশে টেলিভিশন। সেই একুশে টেলিভিশনকে বন্ধ করে দেয়া হলো ২০০১ সালের ২৯ আগস্ট। সেই দিশেহারা অবস্থায় চেয়ারম্যান ছিলেন লন্ডনে। নাসির চৌধুরী একুশের হাল ধরলেন, আমাদের মনে সাহস যোগালেন। সেসময় তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষে বসতেন কিন্তু চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসতেন না, সোফায় বসে কাজ করতেন। একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান এএস মাহমুদ ছিলেন নাসির চৌধুরীর বাল্যবন্ধু। যে দেশে চেয়ারের দখল পেতে রক্ত ঝরে, যে দেশে চেয়ারের গদির উত্তাপে অনেকেই ভস্ম করে দিতে চায় সবকিছু সে দেশে একজন নাসির চৌধুরী বন্ধুর শূন্য চেয়ারের প্রতি যে সম্মান দেখালেন, তেমন একটি সংস্কৃতিকে যেন ধারণ করতে পারি, সে আশীর্বাদ চাই তাঁর কাছ থেকেই। দুর্যোগের সময় নাসির চৌধুরীর অপত্যস্নেহ আমাদের, সে সময়কার একুশে টেলিভিশনের কর্মীদের বাঁচিয়ে রেখেছে, নতুন ফ্রন্টে লড়াইয়ের সাহস জুগিয়েছে। নাসির চৌধুরীকে দেখে শিখেছি একজন মানুষের আসল সংস্কৃতি প্রকাশিত হয় তার প্রতিদিনকার জীবনাচরণের মধ্যদিয়ে। এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই তিনি খুঁজে পান তার আসল বান্ধবদের।
এ আর ভূঁইয়া
ডাইরেক্টর, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন

বিশাল মাপের বীমা ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরী সম্পর্কে এ আর ভূঁইয়া বলেন, পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের করাচী অফিসে ট্রেনিং গ্রহণকালীন নাসির এ চৌধুরীর সাথে আমার পরিচয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন। ১৯৭০ সালের দিকে নাসির চৌধুরী বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের চট্টগ্রাম অফিসে বদলি হয়ে আসেন। এমন ক্রান্তিকালে তাঁর সাথে কাজ করার আমার সৌভাগ্য হয়েছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনকে তখন সাধারণ বীমার সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। নাসির চৌধুরী তখন এর রি-ইন্স্যুরেন্স এবং আন্ডাররাইটিং ডিভিশনের দায়িত্ব লাভ করেন। এরপর গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে যোগ দেয়ার পর তাঁর সাথে আবার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগলাভ করি। মানুষ হিসেবে নাসির চৌধুরী অত্যন্ত দয়ালু এবং মানবিক। তাঁর দানের সীমা-পরিসীমা নেই। সবার জন্য তাঁর উদার হস্ত প্রসারিত, তাঁর সাথে যারাই আসতেন তিনি অল্পসময়ের মধ্যে তাদেরকে আপন করে নিতেন। এ দীর্ঘসময়ে দেশের বীমা শিল্পে তিনি যে অবদান রেখেছেন, তা বর্ণনা করে শেষ করা যায় না, সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। এ শিল্পে তাঁর নেতৃত্বের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে, অনাগত কালেও বীমাশিল্প তাঁকে স্মরণ করবে সগৌরবে।
সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা
সিনিয়র সাংবাদিক,
আরটিভি’র সাবেক বার্তা সম্পাদক

বীমাশিল্প আর নাসির চৌধুরী এক ও অবিভাজ্য। বেসরকারি বীমা কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করে তিনি যে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছেন সে রহস্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও অভিযোগ করতাম না, কোনো সমস্যার জন্য কাউকে দোষারোপ করার আগে আমি সমাধানের লক্ষ্যে সেই সমস্যার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতাম।’ স্বপ্নের বীমা কোম্পানী গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে তিনি গর্বের সাথে বলেন, গ্রীন ডেল্টা বাংলাদেশে একমাত্র বীমা কোম্পানী, যা পেশাজীবীরাই পরিচালনা করেন। এ কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠার সময় তার মনে নির্দেশের মত কাজ করতো সামনে তাকাও! তিনি বলেন, বিপর্যয়ের সময়ও আমি আমার আশা জাগ্রত রাখি। এই চিন্তা-চেতনাই তাঁকে উত্তরোত্তর সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
প্রফেসর ড. মোসলেহ উদ্দিন আহমদ
সাবেক ভিসি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মহৎপ্রাণ, নিরহংকার, মানবদরদি ব্যক্তিত্ব নাসির এ চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে প্রফেসর ড. মোসলেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁর নামের সাথে ছোটবেলা থেকেই পরিচয় থাকলেও চাক্ষুষ পরিচয় হয় ১৯৭৯ সালে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে। উনি তখন এর জেনারেল ম্যানেজার। আমি তখন ইংরেজি হলিডে পত্রিকার স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট। প্রথম পরিচয়েই তিনি আমাকে তাঁর স্নেহের বন্ধনে বেঁধে নিলেন, যা আজও অটুট। তাঁর সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দক্ষতার পাশাপাশি ন্যায়পরায়ণতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাবই তাঁকে বিভিন্ন সময় সম্মানজনক উচ্চআসনে আসীন করেছে।
সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে আমার গড়ে ওঠার পেছনে বাবার আন্তরিক প্রচেষ্টা আমাকে আজকের অবস্থানে এনে দিয়েছে
ফারজানা চৌধুরী
এমডি, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স

স্নেহময় পিতা নাসির এ চৌধুরী সম্পর্কে তাঁর মতামত ব্যক্ত করে কন্যা ফারজানা চৌধুরী এক চিলতে ইংরেজি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করেন
The greatest gift that I ever had Comes from God, I called him Dad
ফারজানা চৌধুরী বলেন স্মৃতির দর্পণে পেছনের দিনগুলোর কথা মনে করলে দেখতে পাই, আমাকে সর্বোতভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাবার ছিল বিরাট অবদান, একজন সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে আমার গড়ে ওঠার বিষয়ে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা, যা আমাকে আজকের অবস্থানে এনে দিয়েছে। তাঁর মত একজন স্নেহময় পিতার জন্য আমি সত্যিই গর্বিত। তাঁর ব্যস্ততম জীবনের দিনগুলোতেও দেখেছি আমরা, পরিবারের সদস্যরা তাঁর কাছে হীরের টুকরা তাদেরকে তিনি কোনোদিন দ্বিতীয় স্থানে নামিয়ে দেননি। পরিবারের সদস্যগণ যখনই প্রয়োজন হয়েছে তাঁকে কাছে পেয়েছে। এ বয়সেও তিনি বাসায় ঢোকার আগে অফিসের কাজ অফিসে রেখে আসেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি তাঁর সমস্ত ভালোবাসা, নিষ্ঠা এবং স্নেহের ঝাঁপি খুলে দেন, মুখমন্ডলে ছড়িয়ে থাকে অনাবিল মধুর হাসি, মনে থাকে না উদ্বেগের কোনো ছাপ।
বাবার কর্ম ও জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে ফারজানা তা উপস্থাপন করেন নিন্মোক্ত শৈল্পিক উপস্থাপনায়।
আস্থাসহকারে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ
আমার বাবা জীবনের অনেকটা বছর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে কাটিয়েছেন, আর্থিক সংকটের মোকাবেলা করেছেন কিন্তু তিনি কোনোদিন বুঝতে দেননি যে, তিনি কঠিন সময় অতিক্রম করছেন। কর্মজীবনে তিনি করাচীতে পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন, পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশকে ভালোবাসেন বলেই তিনি ১৯৬৯ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং দেশসেবার কঠিন পথ বেছে নেন। মাঝখানে একটি জার্মান কোম্পানীতে যোগ দিলেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই। আমি উপলব্ধি করতে পারি কত বেদনাদায়ক ছিল তাঁর সেদিনকার সিদ্ধান্ত। কিন্তু তিনি আবার পরিচিত অঙ্গন বীমাশিল্পে ফিরে আসেন, ১৯৮৫ সালে বেসরকারি বীমা কোম্পানী গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স গড়ে তোলেন।
কঠোর ন্যায়-নীতি
আমার বাবা নাসির এ চৌধুরী কঠোর ন্যায়-নীতি অনুসরণের মানুষ। পেশাগত জীবনে, এমনকি পরিবারের সদস্যদের বেলায়ও তিনি এ নীতি অনুসরণ করেন। দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি তাঁর ত্যাগী মনোভাবের জন্য গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী দেশের সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
কৃতজ্ঞতাবোধ
বাবাকে দেখেছি একজন দয়ালু ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে। তিনি শুধু পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য, পাড়া-প্রতিবেশি এমনকি তাঁর নিজ জেলার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর কাছে যে কেউ সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা পরামর্শের জন্য যান তিনি সবাইকে অকাতরে সাহায্য-সহযোগিতা করেন।
বিশাল হৃদয়ের বিশ্বস্ত মানুষ
আমার বাবা তাঁর প্রাণস্পর্শী হাসি, সদয় অন্তর এবং মানুষকে সাহায্য করার প্রবণতার জন্য ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষ। সাহায্যের জন্য এসে কেউ তাঁর কাছে বিরূপ ব্যবহার পেয়েছেন এমন নজির নেই। ২০০৪ সালে তাঁর হৃদরোগে আক্রান্ত হবার খবরে লিফ্টম্যান থেকে শুরু করে দেশ ও দেশের বাইরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মন্ত্রী-আমলা-বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন এবং তাঁর আশু রোগমুক্তি কামনা করেন। তাঁর প্রাণজুড়ানো সোনালী হাসি একবার যিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, সারাজীবন তা ভুলতে পারেন না।
স্বাপ্নিক মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে বাঁচেন যিনি
দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এমন অনেক ব্যক্তিত্ব তাঁর ডাইনামিক নেতৃত্বের ফলে তৈরি হয়েছেন। তিনি তাঁর নিজের মত করে নেতৃত্ব সৃষ্টি করেছেন যারা দেশকে সমৃদ্ধি ও উত্তরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
সবুজ আত্মার মানুষ
তাঁর হৃদয়ের সোনালী আভায় তিনি শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত সবাইকে আপন করে নিতে পারেন। তিনি যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেন কারণ তারাই সত্যিকার অর্থে দেশের নেতৃত্বে আসবে, দেশকে নিয়ে যাবে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।
শ্রেষ্ঠ পিতা, পথপ্রদর্শক, ধারণা প্রদানকারী এবং উদ্বুদ্ধকারী
আমার বাবা কখনো আমাকে সরাসরি বলেননি কীভাবে বাঁচতে হবে, বরং তিনি আদর্শ জীবন-যাপন করে আমাদেরকে তা অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কঠোর জীবন-যাপন করতে হলেও আমাকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য বাবার নিজের কঠোর অবস্থার তুলনায় আমার অবস্থা তত কঠোর নয়। জীবন চলার পথে তিনি আমার জন্য যে কষ্ট স্বীকার করেছেন তাতে মনে হয়, আমি যেন এখনো তাঁর ৫ বছরের ছোট্ট মেয়েটি। আমার কাছে বাবা একশ’ স্কুল-শিক্ষকের চেয়েও বেশি। তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক, বন্ধু, উদ্বুদ্ধকারী এবং সেরা সঞ্চালক যা আমার জীবনে পেয়েছি। স্কুল জীবনে আমি ছিলাম খেয়ালী, বেশি সময় ব্যয় করতাম গল্প ও কবিতা লেখায়। তিনি দিনের পর দিন আমাকে পড়ালেখার প্রতি সিরিয়াস হতে এবং একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেসময় থেকে আমার জীবনে পরিবর্তন আসে। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে জীবনে স্বনির্ভর হওয়া যায়, নীতি-নৈতিকতাহীনের সাথে আপোস না করে কিভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা তিনি সারাজীবন পালন করে চলেছেন। আমি বাবাকে ভীষণ ভালোবাসি, তাঁর নির্দেশিত সাফল্য ও গৌরবের পথ ধরে অগ্রসর হতে চাই যা সমগ্র জাতির জন্য একটি রোল মডেল। সর্বশেষে বলতে চাই পৃথিবীর সব বাবাদের ভালোবাসার হাতগুলো যদি আমার দিকে বাড়িয়ে রাখেন আমি তখনো আমার পিতার স্নেহময় হাতখানাই ধরে রাখবো। আমার আব্বুকে আমি সমস্ত অন্তর দিয়ে ভালোবাসি।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img