এ এম এ মুহিত ॥ বিরল অনুকরণীয়
সিলেটের কৃতী সন্তান, সারাদেশের গৌরব, দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ, আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিবিদ, পরিবেশ আন্দোলনের মহান উদ্যোক্তা, জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ ভাষা-সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আব্দুল মুহিত যেন এক পরশপাথর; যেখানেই হাত দেন সোনা ফলে! এক জীবনে তিনি এত বেশি বলেছেন, এত বেশি লিখেছেন, এত এত গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তাঁর সমতুল্য ব্যক্তি খুঁজতে গেলে বেগ পেতেই হবে! রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করেও সৃষ্টি করেছেন বিপুল রচনাসম্ভার। কৃতি ও কীর্তিতে অনন্য এক মানুষ তিনি। চিন্তায়, কর্মে, সৃজনে সর্বদা সময়ের চেয়ে অগ্রসর। তাঁর চিন্তাজাত লেখনী সমাজকে করেছে আলোকিত; দিয়েছে দিকনির্দেশনা। বর্ণাঢ্য জীবনের আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত মুহিতের জীবন। ৮৩ বছরের শেষ প্রান্তে। তবুও যেন চিরতরুণ! কর্মে নবীন ও তেজোদীপ্ত। বয়সের ভার শরীরে পড়লেও তাকে পাত্তাই দিতে চান না তিনি।
বংশ পরিচয় ॥ অনন্য গৌরবময়
আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি, সিলেটে। তাঁর পিতা তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার এডভোকেট আবু আহমদ আবদুল হাফিজ, মাতা সিলেট মহিলা মুসলিম লীগের সভানেত্রী সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী। ৭ ভাই ও ৬ বোনের মধ্যে জনাব মুহিত ৩য়; ভাইবোনরা সবাই উচ্চশিক্ষিত, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত এবং দেশ-বিদেশে স্বনামে পরিচিত।
জনাব এ এম এ মুহিত ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। তাঁর দাদা খান বাহাদুর আবদুর রহিম ছিলেন আসাম সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা। অন্য দাদা আবদুল হামিদ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী। আরেক দাদা এস এম আকরাম পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। জনাব মুহিত’র নানা সৈয়দপুর অঞ্চলের প্রখ্যাত জমিদার সৈয়দ আবুল বাশার চৌধুরী। মুহিত’র প্রপিতামহ দানবীর মৌলভী আবদুল করিম, সর্বভারতীয় মুসলীম লীগের নেতা ছিলেন। মুহিত’র ফুফু ছিলেন সিলেট জেলার প্রথম মুসলিম মহিলা গ্র্যাজুয়েট।
শিক্ষাজীবন নতুন মাত্রা আলোর পথে আনন্দ অভিযাত্রা
জনাব মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে ১ম স্থান; ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ অনার্স পরীক্ষায় ১ম শ্রেণিতে ১ম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমপিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুহিত যখন ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র, তখন স্কুলে ডিপিআই’র আগমন উপলক্ষে সাহসিকতার সাথে ইংরেজিতে বক্তৃতা করেছিলেন। শৈশব-কৈশোরেই শিশু সংগঠন করেছেন, ছাত্র সংগঠন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালীন পাকিস্তান আন্দোলনে চাঁদা সংগ্রহ করেছেন। আবার সেই পাকিস্তানীদের শাসন-শোষণ বিরোধী আন্দোলন, বিশেষ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন পাকিস্তানী শাসনের শুরুতে, ১৯৪৮ সালে; আন্দোলনের এক পর্যায়ে তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন মুহিত। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এখন দেশের বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত যেমন তাঁকে নিতে হয়, তেমনি সেসময়েও সলিমুল্লাহ হলে সহপাঠীদের অনেকের জন্য টাকা ধার পাওয়ার উৎস ছিলেন মুহিত। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে শৈশব থেকেই অর্থমন্ত্রী হওয়ার পাঠ শুরু হয়েছিল মুহিত’র। তিনি প্রতিমাসে ৮০ টাকা পেতেন বাবার কাছ থেকে, যা দিয়ে হেসে-খেলে মাস চলত তাঁর। এই টাকা থেকেই তিনি অন্যদের ধার দিতেন। তবে শর্ত ছিল, কেউ একবার টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দিলে তিনি তাকে আর ধার দিতেন না। ফলে তাঁর কাছ থেকে টাকা ধারকারীরা তাঁকে টাকা ফেরত দিয়ে দিত; যাতে অর্থ প্রাপ্তির এমন উৎস নষ্ট হয়ে না যায়। এমনকি মুহিত অন্যের প্রয়োজনে অনেক সময় হাউজ টিউটরের কাছ থেকে নিজে টাকা ধার করে তারপর ধার দিতেন। আবার টিউটরকে তা ফেরত দিয়ে দিতেন যথাসময়ে। এভাবেই আজকের অর্থমন্ত্রী ছাত্রজীবনেই ছিলেন অনেক সহপাঠীর অর্থ সংক্রান্ত বিপদের বন্ধু।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সমাজসেবাও করেছেন মুহিত। যেমন ১৯৫৪ সালে একটা বড় বন্যা হলো। মুহিতের অনার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাঁর শিক্ষক মি. টারনার এর অনুরোধে মুহিত বন্যা-দুর্গতদের মাঝে রিলিফের কাজ করতে রাজি হলেন। ৫০/৬০ জনের একটা ভলান্টিয়ার গ্রুপ হলো। ঢাকা মহানগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ কাজ পরিচালনা করলেন প্রায় ৩ মাস। তাঁদের কিছু টাকা ছিল, সেগুলো নিয়ে গেলেন ঢাকার দুর্গম অঞ্চলে অঞ্চলে, যেখানে ত্রাণ কর্মীরা সাধারণত যায় না। এসময় ছেলে-মেয়ে একসাথে ত্রাণ কাজে অংশগ্রহণেরও সূচনা হলো।
মুহিতের বেড়ে ওঠার বর্ম
এক্সট্রা কারিকুলার নানা কর্ম
পড়ালেখার বাইরে এক্সট্রা একাডেমিক কাজের প্রতিও মুহিত’র আকর্ষণ ছিল বেশি, সবরকম খেলাধুলায় তিনি অংশ নিতেন। কবিতা আবৃত্তি, নাটক, হাতে লেখা পত্রিকা, দেয়াল পত্রিকা ইত্যাদি প্রকাশে উৎসাহের সাথে কাজ করতেন। কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা বা রচনা প্রতিযোগিতা, বাংলা ও ইংরেজি নাটকে অভিনয় করে বেশ কিছু পুরস্কারও অর্জন করেন তিনি। তখনকার সিলেটের নামকরা প্রতিষ্ঠান মুসলিম সাহিত্য সংসদে সদস্য হন ১৯৪৫ সালে। ওখানে সাহিত্য সভা করতেন। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি ভলিবল, ফুটবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট খেলতেন। স্কুলে থাকতেই বড় বড় সব বই পড়ে ফেলেছিলেন তিনি। ইতিহাস ছিল মুহিত’র খুব প্রিয় বিষয়। সিলেটে মিলাদ উপলক্ষ করে স্কুলে প্রতিবছরই স্বরচিত প্রবন্ধ, কবিতা ও রচনা প্রতিযোগিতা হতো। এগুলোতে মুহিত নিয়মিত অংশ নিতেন; পুরস্কারও পেতেন। এসএম হলে থাকাকালীন ঢাকায় একটি রচনা প্রতিযোগিতা হয়েছিল রোটারীর গোল্ডেন জুবিলী উপলক্ষে; কলকাতা, ঢাকা, মুম্বাই থেকে প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছিল। এ প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়ে পুরস্কার পান মুহিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র-সংসদের নির্বাচিত ভিপি হিসেবে সে সময়ের ছাত্র-আন্দোলন ও সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন মুহিত।
বাংলাদেশ স্বাধীনের দায়
এবং পাকিস্তানের বিদায়
এ চৌকস মেধাবী ছাত্র কর্মজীবনে প্রবেশ করে জনসেবাকে বেছে নেন জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারে দায়িত্ব পালনকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র সাহসিকতার সাথে পেশ করেন মন্ত্রণালয়ে। আইয়ুব খান আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু যখন রাওয়ালপিন্ডি যান তখন তাঁর দলের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন জনাব মুহিত এবং তখন কতিপয় বাঙালি কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছিলেন বিভিন্ন তথ্য দিয়ে।
জনাব মুহিত’র জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সুদূর ওয়াশিংটনে মার্চ ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, ‘জয়বাংলা’ আওয়াজ তুলে জুন মাসে পকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সপরিবারে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। আমেরিকায় বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে তাঁর ছিল নেতৃত্বের ভূমিকা।
কর্মজীবনঃ
দেশপ্রেম-সততা-পরিশ্রম
বর্ণময় আত্মবিশ্বাস ও প্রজ্ঞার বর্ণাঢ্য সমন্বয়
চৌকস ও মেধাবী ছাত্র মুহিত কর্মজীবনে প্রবেশ করে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেন জনসেবাকে। দেশপ্রেম, সততা, পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও প্রজ্ঞার বর্ণাঢ্য সমন্বয় মুহিত এর কর্মজীবন। ১৯৫৫ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে প্রভাষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু। এরপর ১৯৫৬-’৫৭ পর্যন্ত লাহোর সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে সিএসপি, ১৯৫৭ জুন-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লায় এসিসট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেট, ১৯৫৮-’৫৯ পর্যন্ত ফরিদপুরের এসিসট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেট, ১৯৫৯-’৬০ সালে বাগেরহাটের এসডিও; ১৯৬০-’৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রটোকল অফিসার; ১৯৬১-’৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণরের ডেপুুটি সেক্রেটারী; ১৯৬২-’৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ট্রান্সপোর্ট বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারী, ১৯৬৪-’৬৬ সালে করাচীতে অবস্থিত পাকিস্তান প্ল্যানিং কমিশনের চীফ অব প্রোগ্রামিং হিসেবে দায়িত্ব পালন; ১৯৬৬-’৬৯ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী পরিষদের ডেপুটি সেক্রেটারী; ১৯৬৯-’৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে ইকোনমিক কাউন্সিলর; ১৯৭১-’৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনে কাউন্সিলর, ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবাসী সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদেশ প্রতিনিধি; ১৯৭১ সালে বেসরকারিভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সেক্রেটারী; ১৯৭২ এর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে ইকোনমিক মিনিস্টার; ১৯৭২-’৭৩ সালে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের দপ্তরে বাংলাদেশ-ভারত ও শ্রীলংকার বিকল্প এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর; ১৯৭৪-’৭৭ সালে ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর; ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ সালের মার্চ মাসে জেনারেল এরশাদের স্বল্পমেয়াদী নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে জনাব মুহিত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে এরশাদ কর্তৃক দল গঠন, ক্ষমতা পাকাপোক্ত-করণের উদ্যোগ নেয়ায় জনাব মুহিত স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মন্ত্রী, যিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে ওঠে জনাব মুহিত’র নেতৃত্বে। তিনি প্রথমে ‘পরশ’ এবং পরে ‘বাপা’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশনেরও পরপর দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নিজ সম্পদের হিসাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়ে যেমন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন, তেমনি সহকর্মী অন্যান্য মন্ত্রী/উপদেষ্টা/প্রতিমন্ত্রীদেরও আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সম্পদের হিসাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা দিতে। এভাবেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের লক্ষ্যে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা।
ছাত্র-যুবকদের অনুকরণীয় ও প্রেরণা
ছাত্র-যুবকদের অনুকরণীয় ও প্রেরণা ব্যক্তিত্ব, হাস্যোজ্জ্বল ও চিরসবুজ আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষা ও ছাত্র উন্নয়নে একের পর এক ভূমিকা রেখে চলেছেন। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, বাজেটে তাদের জন্য গ্রহণ করেছেন নতুন নতুন প্রকল্প।
উদার-কল্যাণকামী রাজনীতি যার জীবনের সুকৃতি
পারিবারিকভাবেই রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতা জনাব মুহিতের, কিন্তু সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন অনেক পরে। ছাত্রদের কল্যাণে নানা সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন এবং সমাজ উন্নয়নের স্বতঃস্ফূর্ত নানা কর্মের সাথে তিনি শিক্ষাজীবন থেকেই জড়িত। উদারনৈতিক রাজনীতি ও সমাজ চিন্তার ধারক ও স্পষ্ট প্রবক্তা জনাব মুহিত। জনসেবা তাঁর সারাজীবনের সাধনা ও কীর্তি।
চিন্তাজাত লেখার স্ফূরণ সমাজে এনেছে জাগরণ
অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদ, কূটনীতিবিদ, পরিবেশবিদ বিশেষত চিন্তাবিদ ও বিশ্লেষকের পাশাপাশি মুহিত’র লেখকসত্ত্বাও প্রশংসনীয়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩১। দেশে-বিদেশে ২৫টি প্রকাশনায় তাঁর লেখা প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। ২০০০ সালে তাঁর রচিত বই ‘বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব’ ন্যাশনাল আরকাইভস এর বিচারে সেরা গ্রন্থ হিসেবে পুরস্কৃত হয়। তাঁর প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। বিভিন্ন আন্দোলন নিয়ে যেমন চমৎকার গ্রন্থ রচনা করেছেন তেমনি ভ্রমণকাহিনী, স্মৃতিকথা, রাষ্ট্র ও সরকারের রেখাচিত্রও অঙ্কন করেছেন স্বকীয় চিন্তায়। মৌলিক লেখার পাশাপাশি সম্পাদনাও করেছেন বেশ কয়েকটি বই। একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ এ উৎস প্রকাশন প্রকাশ করেছে আবুল মাল আবদুল মুহিত রচনাবলি, যা তাঁর এযাবৎ প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থের মহাফেজখানা।
মুহিত সম্পর্কে বিশিষ্টজন বলেন
আবুল মাল আবদুল মুহিত রচনাবলি সম্পর্কে এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখে তিনি সব শ্রেণির মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি দেশকেও তুলে ধরেছেন। সমকালীন জীবন-যাপন, অর্থনীতির পাশাপাশি অতীতের অনেক অজানা বিষয় তার লেখার মাধ্যমে উঠে এসেছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন আমি বিস্মিত, সারাজীবন ব্যস্ত থাকা এ মানুষ এতগুলো বই কীভাবে লিখলেন! তিনি নিজের অনন্য সাধারণ কর্মচঞ্চলতার মধ্যেই বইগুলো লিখেছেন। বাংলাদেশকে জানতে ও চিনতে হলে তাঁর বইগুলো পড়তে হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন অর্থমন্ত্রী রচনাবলির ভূমিকায় লিখেছেন, তিনি লেখক নন। কিন্তু আমি মনে করি, তিনি নেশায় ও পেশায় লেখক। তার লেখার প্রকাশগুণ অসাধারণ ও সহজবোধ্য। ফলে খুব সহজেই তার লেখা পাঠককে টানে।
স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত
১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশের আনুগত্য প্রকাশকারী সাহসী ভূমিকার জন্য এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতা পদক-২০১৬ এ ভূষিত হন ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।
২৪ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
সম্মাননা ও পদক
১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশের আনুগত্য প্রকাশে সাহসী ভূমিকার জন্য এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিতে আপনি স্বাধীনতা পদক-২০১৬ এ ভূষিত হন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী দেশের কৃতী সন্তান এ এম এ মুহিত; দেশের প্রয়োজনে তাঁর কর্মকৌশল, মেধা, সততা, দক্ষতা ও সেবা দেখিয়ে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সিলেটের এ সুসন্তান দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছেন, পরিচিত হয়েছেন সকলের কাছের মানুষ হিসেবে।
অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর মুহিত’র চিন্তায় আশাবাদের সুর
শত প্রতিকূলতার মাঝেও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও অংশগ্রহণ, উদ্দীপ্ত যুবশক্তির গঠনমূলক কর্মোদ্যোগ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে এক আলোকোজ্জ্বল আগামীর পথে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ বিশ্বসভায় পরিচিতি লাভ করবে একটি সমৃদ্ধ, আধুনিক ও কল্যাণ রাষ্ট্রের অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানেন স্বল্প সম্পদের দেশে উন্নত ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার সমীকরণটি অত্যন্ত জটিল। এ অবস্থায়ও বাংলাদেশকে উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়ার এরূপ প্রতিশ্রুতি বিস্ময় জাগায়। ম্যাজিক দিয়েই তিনি সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে চান। সত্যিই কি তাঁর হাতে যাদু আছে?
ডিজিটাল মন্ত্রী
কর্মে সুদৃঢ় উদার গণতন্ত্রী
১৯৮২ সালে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করার সময় অনেক দ্বিধাবোধ ছিল জনাব মুহিতের। সামরিক সরকারের একজন হতে খুব আপত্তি ছিল। তাই অনেক রিজার্ভেশনসহ তখন মন্ত্রী হন। কিন্তু এরপর শেখ হাসিনার সরকারে তিনি আনন্দের সাথে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন এই ভেবে যে, এবার তিনি কিছু করতে পারবেন এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারবেন। সে লক্ষ্য অর্জনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত। মেধাবী, ডায়নামিক, দূরদৃষ্টির এ অর্থনীতিক ১০ বার বাজেট পেশ করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন; জাতীয় বাজেটে দেখিয়েছেন প্রবৃদ্ধির বিরল রেকর্ড। বিশিষ্টজনদের অটোবায়োগ্রাফী ধরনের বই পড়ে অবসর কাটান এ বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব।
বৈবাহিক ও পারিবারিক জীবন
জনাব মুহিত ১৯৬১ সালে তাপুরের উসমানপুর গ্রামের এডভোকেট সৈয়দ মদরিস আলীর কন্যা সৈয়দ সাবিয়া বেগমকে বিয়ে করেন। সাবিয়া বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রী ছিলেন এবং ইতিহাসে বিএস অনার্স এবং এমএ-তে শীর্ষ পর্যায়ে পাস করেন। তিনি একজন ডিজাইনার হিসেবে নিউইয়র্কের পারসন্স স্কুলের প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ। তাঁদের ৩ সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, বড় ছেলে সাহেদ বাস্তুকলাবিদ ও নির্মাণশিল্পে নিয়োজিত এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির শিক্ষকতায় নিয়োজিত।
বহুমুখী প্রতিভায় প্রোজ্জ্বল, সৎ ও নীতিনিষ্ঠ প্রাজ্ঞ এ ব্যক্তিত্বকে ক্যাম্পাস’র সততা পুরস্কার
চিরসবুজ আবুল মাল আবদুল মুহিত বার্ধক্যকে পরাভূত করে এগিয়ে চলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিয়ে এসেছেন টেকসই অবস্থানে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের অর্থনীতির নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বমন্দা এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার ভেতরও বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করা ৮৩ পেরুনো যুবক এ এম এ মুহিতের পক্ষেই সম্ভব। নিয়মিত দৈনিক ১৬ ঘন্টা কাজ করেন, কোনো কোনো সময় তারও বেশি। ১৯৭০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি ৩৪ বছরে দিনে মাত্র ৪ ঘন্টা করে ঘুমিয়েছেন। সৎ, স্বচ্ছ ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ায় অগ্রণী ভূমিকার ব্যক্তিত্ব আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল তরুণ প্রজন্মের কাছেই নয়, তিনি আমাদের সকলের আদর্শ এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
জনাব মুহিত এর অজস্র গুণগ্রাহীর মত আমরা ক্যাম্পাস পরিবারও স্রষ্টার কাছে সর্বান্তকরণে তাঁর সুখ-শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি এবং সেসাথে তাঁর সততা, নীতিনিষ্ঠ ও বর্ণিল গুণাবলির কর্মময় জীবনকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ও শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে অনুকরণীয় ও স্মরণীয়-বরণীয় করতে তাঁকে পরম শ্রদ্ধা ও অসীম ভালোবাসায় সততা পুরস্কার অর্পণ ও বিনম্র শ্রদ্ধায় সম্মাননা জ্ঞাপন করছি।