লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল। বিশ্বমানবতার একটি শ্রেষ্ঠ প্লাটফর্ম। আরেকধাপ এগিয়ে বলা যায়, মানবসেবার অঙ্গনে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম যে প্রতিষ্ঠানটি ঈর্ষণীয়ভাবে স্বীকৃত তা হচ্ছে Lions clubs international. আর্ত-মানবতার কার্যক্রমে বিশ্বজুড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে মানুষের অন্তর জুড়ে বিস্তৃত এই প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে আর্তমানবতা বিপন্ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন, সেখানেই লায়ন্স ক্লাব। শিক্ষাহীন জীবনে আলোকবর্তিকা শিখা যেখানে বাঁধাগ্রস্ত, মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো যেখানে অনুপস্থিত, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভাবে যেখানে মানবিক কার্যক্রমগুলোয় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে -সেখানেই লায়ন্স ক্লাবের নিবেদিত লায়ন্সগণ সেবার হস্ত প্রসারিত করেছে। এটাই হচ্ছে লায়নদের মানবসেবার মূল্য ‘We Serve’।
আপনারা জেনে অভিভূত হবেন Lions clubs international এর একটি সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান জানলেন। এটি মানবসেবার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ সেবা সংগঠন। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ২১০টি দেশে লায়ন ক্লাবের কার্যক্রম বিস্তৃত। সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ হাজার লায়ন্স ক্লাব রয়েছে এবং ৯ শতটি লায়ন্স জেলা রয়েছে। এমনিভাবে বাংলাদেশেও লায়নদের সেবামূলক কার্যক্রমের ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। দেশে বর্তমানে নতুন একটি জেলাসহ সাতটি লায়ন জেলা রয়েছে। এই সাতটি লায়ন জেলার বেশ কয়েকজন মহিলা জেলা গভর্নর রয়েছেন। তবে মানবসেবামূলক নতুন লায়ন জেলার লেডি ফাউন্ডার গভর্নর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে ও বিদেশে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি মানবতার জন্য নিবেদিত, শিক্ষাকে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কর্মের ভেতর নিজেকে বিকশিত করেছেন। তিনি হলেন মানবিক, প্রান্তিক, বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতৃত্বদানকারী, মানবতাকে প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রত্যয়ী মহিয়সী, একজন সংগ্রামী মানুষ লায়ন অ্যাড. খন্দকার সেলিমা রওশন। তার জীবনের নানাদিকে রয়েছে সেবা ও মানবতার বিস্তৃত কার্যক্রম।
শিক্ষা থেকে মানব সেবা। লায়নিজমের মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আত্ম-প্রত্যয়ী মানবতার ফেরিওয়ালার বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় নানা জীবন-গাঁথার আজ, কাল এবং আগামীর নানা বিষয়ে প্রত্যাশা, পাওয়া-না পাওয়ার নানা বিষয়ে লায়ন খন্দকার সেলিমা রওশনের কাছে জানবো।
তিনি এই সময়ে লায়ন অঙ্গনে অত্যন্ত তাৎপর্যময় একজন লায়ন লিডার। বাংলাদেশে ৬টি লায়ন জেলা অব্যাহত থাকার পরও আরেকটি নতুন লায়ন জেলার আত্মপ্রকাশ ঘটে। আর এই লায়ন জেলার ফাউন্ডার অর্থাৎ প্রতিষ্ঠাতা জেলা গভর্নর লায়ন খন্দকার সেলিমা রওশন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত জেলার নাম হচ্ছে খরড়হং ঈষঁনং ওহঃবৎহধঃরড়হধষ জেলা ৩১৫ এ৩, বাংলাদেশ। তাঁর এই গভর্নর হওয়ার বিশেষত্ব হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশের লায়নিজমের ইতিহাসে একজন প্রথম ফাউন্ডার লেডি গভর্নর।
আসুন, তাহলে এবার মানবতার প্রতিকৃতি, শিক্ষার অঙ্গনে মহিয়সী নারী এবং সেবার ফেরিওয়ালার মুখোমুখি হই। একদিন এক পড়ন্ত বিকেলে তাঁর অফিসে মুখোমুখি হলে, তিনি আমাদের নানা প্রশ্নের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারই উল্লেখযোগ্য অংশ ক্যাম্পাস পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ বিশ্বব্যাপি করোনার এই ক্রান্তি লগ্নে আপনি কেমন আছেন?
লায়ন অ্যাড. খন্দকার সেলিমা রওশনঃ এখন পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তা ভালোই রেখেছেন। সামনের দিনগুলো কি বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে, তা তো জানিনা।
বি ক্যাঃ একটি নতুন লায়ন জেলার ফাউন্ডার গভর্নর। ভাবতে কেমন লাগছে?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ একজন নারী হিসেবে একটি জেলার ফাউন্ডার গভর্নর হতে পেরে আমাদের দেশে লায়ন অঙ্গনে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ইতিহাসের অংশ হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
বি ক্যাঃ ফাউন্ডার জেলা গভর্নর হওয়ার নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাদের কাছে আপনি ঋণী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ আমি একজন এদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘ল পরিবারের সদস্য’। আমার দাদা ও বাবা দু’জনই খ্যতিমান আইনজীবী। আমি নিজেও একজন অ্যাডভোকেট। শিক্ষার জন্য কাজ করা, এটা ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। আপনারা জানেন, দেশের খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের আমি ভাইস-চেয়ারম্যান। সেখান থেকে লায়নিজমের হাতছানি। আমি আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এলাম। নিজেকে উজার করে মানবসেবায় উৎসর্গ করার একটি প্লাটফর্ম পেলাম। আর সেটি হচ্ছে Lions Clubs International. ক্যামব্রিয়ান ও লায়নিজমের মাধ্যমে এভাবেই আমি মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করে যেতে চাই।
আর্তমানব সেবার কাজে যে লায়ন ব্যক্তিত্ব আমাকে সামনে দিকে চলার পথ তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি আর কেউ নন। তিনি আমার সহযোদ্ধা লায়ন এম কে বাশার পিএমজেএফ। তিনি লায়ন অঙ্গনে আমার পথিকৃত। পথ চলার দিকনির্দেশক। তাঁর কাছে আমি ঋণী। আমার নিজ ক্লাব, আমার লায়ন নেতৃবৃন্দ, যারা আমার প্রিয় সহযোগী ছিলেন তাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।
বি ক্যাঃ লায়ন জেলায় প্রত্যেক গভর্নর তার এক বছরের কার্যসূচি সম্পাদনের অভিপ্রায়ে একটি ঈধষষ দিয়ে থাকেন। আমরা জানি, আপনার Call হচ্ছে Education for all অর্থাৎ সবার জন্য শিক্ষা। G Call এর উদ্দেশ্য কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ প্রাক্তন লায়ন গভর্নর এম কে বাশার কল দিয়েছিলেন Education for All বা সবার জন্য শিক্ষা। তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য আমিও ডাক দিয়েছি Education for All| এর মাধ্যমে আমি দুঃস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে চাই। যেসব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, যেমন গ্রাম বা বস্তি এলাকায় নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল না থাকলে সেখানে লিও’রা বিনা বেতনে স্কুল চালু করবে।
শিক্ষা কোনো ব্যক্তি, মানুষ বা শ্রেণির জন্য সীমাবদ্ধ নয়; শিক্ষা শুধু পুঁথিগত কিংবা পরীক্ষায় পাসের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষা যেমনি সামাজিকভাবে হয়ে থাকে, শিক্ষকদের মাধ্যমে হয়ে থাকে, ঠিক তেমনি পরিবার থেকেও মানুষ শিক্ষা নিয়ে থাকে। আমাদের দেশে বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭৪.৭০ শতাংশ। একটি জাতি তখনই পুরোপুরি আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে, যখন তার শিক্ষিতের হার ১০০% হবে। এখন এই ১০০% শিক্ষিতের হারের জন্য আমাদের সরকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে হবে না। কারণ সরকারের পক্ষে দ্বারে দ্বারে গিয়ে সবাইকে শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব নয়। যদি আমরা একজন আরেকজনকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকি, তাহলে তা সম্ভব হবে। তাই আমি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।
বি ক্যাঃ লায়নরা দানে নয়, সেবায় বিশ্বাসী। এর অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ লায়নিজমের মূল মন্ত্রই হচ্ছে মানুষের সেবা করা। লায়নরা দান করে না, সেবার হাত প্রসারিত করে। সমাজের অসহায় মানুষগুলোকে কিছুটা সহায়তা দিয়ে আমরা জীবনযুদ্ধে তাদের পাশে দাঁড়াই। আমরা আমাদের সাহায্যের হাত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও প্রসারিত করতে চাই। আমরা আমাদের সাথে সাথে তাদেরকেও এগিয়ে নিতে চাই। আমরা হাত বাড়াতে চাই সেসব হাতের দিকে, যাদের মায়াভরা একটি সহৃদয় হাত দরকার। আমরা অকাতরে আমাদের মায়া বিলাতে চাই। প্রথম নারী ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর হিসেবে আরও বৃহত্তর পরিসরে মানবসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবো ভেবে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও ভীষণভাবে গর্বিত।
বি ক্যাঃ দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আর্ত-মানবতার সেবায় আপনার কার্যক্রমগুলো কী কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ লায়নরা বিভিন্ন জায়গায় চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা করে থাকে। লায়ন্সে অক্টোবরকে Service Month হিসেবে ধরা হয়। সেলক্ষ্যে অক্টোবর সার্ভিস মাসে আমরা ইতোমধ্যে ৮টি ক্যাম্প সম্পন্ন করেছি এবং সেখানে প্রচুর পরিমাণে পেসেন্ট অংশগ্রহণ করেছে। আমরা চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে চশমা ডিস্ট্রিবউিশন করেছি। নতুন লায়ন ডিস্ট্রিক্ট হিসেবে এই করোনা মহামারীকালীন সময়ে বেশি সার্ভিস দেওয়ার জন্য মাসব্যাপি সেবা কার্যক্রম চালিয়েছি। ডিস্ট্রিক্টের ৮১টি ক্লাব নিজ উদ্যোগে, নিজ এরিয়াতে সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। চাইল্ডহুড ক্যান্সার, ট্রি প্ল্যান্টেশন, আই ট্রিটমেন্ট, ডায়াবেটিক ট্রিটমেন্ট, এনভায়রনমেন্ট এর সবগুলো সেক্টর নিয়েই কাজ করছে আমাদের ডিস্ট্রিক্ট। এছাড়া যেখানে সেবার প্রয়োজন, সেখানেই কাজ করে যাবে লায়নরা।
বি ক্যাঃ ডিজিটাল এবং অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের যুগে তরুণ প্রজন্ম এর নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে আমরা আতংকিত। এই বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখবেন? সেই সঙ্গে এর প্রতিকারই বা কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুশিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার উপর সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। সামগ্রিক দিক দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। পাঠ্যশিক্ষার হার বাড়ছে দিন দিন। প্রতিবছর লক্ষাধিক সাধারণ গ্র্যাজুয়েট, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত মানুষ আমাদের সমাজে যোগ হচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষিত মানুষের এ সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র শিক্ষার আসল সুফল পাচ্ছে কি! একদিকে বাড়ছে শিক্ষার হার ও শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা, অন্যদিকে সমাজে বাড়ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়, হচ্ছে নৈতিকতার অধঃপতন। প্রকৃত শিক্ষার আলো, অনাচার, মাদক ও অবক্ষয় থেকে তরুণ প্রজন্মকে এবং সমাজকে কলুষিতমুক্ত করতে পারে।
অনৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোতে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। একটি সমাজের ইতিবাচক বিকাশের জন্য প্রয়োজন আদর্শ ও মনুষ্যত্ব বোধসম্পন্ন মানুষের। একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়ারও পূর্বশর্ত হলো নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদ। দেশে শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে সন্দেহ নেই; কিন্তু নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে না। ফলে নৈতিক ও মানবিক বোধ-বিবেচনা বর্জিত কোমলমতি শিশু, কিশোর ও যুবসমাজ জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্তি, অনাচারসহ মারাত্মক নানা অপরাধমূলক কাজে। পেশাজীবী ও কর্মজীবী মানুষ নির্দ্বিধায় ঘুষ-দুর্নীতির মতো অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে পুঁথিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার বাড়ছে। তবে প্রসার হচ্ছে না সুশিক্ষার। সুশিক্ষা বলতে মানবিক নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা। সুশিক্ষা হলো সেই শিক্ষা, যে শিক্ষা শিক্ষার্থীকে নৈতিক, মানবিক ও নীতিনিষ্ঠ মূল্যবোধসম্পন্ন করে তোলে। মানুষকে মিথ্যা, অন্যায় ও অসৎ পথ পরিহার করতে শেখায়। আর কুশিক্ষা মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে ফেলে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও শিক্ষার জন্য বৃহত্তর পরিসর রয়েছে। এ শিক্ষা স্থান ও সময় নিরপেক্ষ।
বি ক্যাঃ এখন আর একান্নবতী পরিবার নেই বললেই চলে। একটি ছোট্ট পারিবারিক গন্ডির ভেতর আমাদের শিশু ও কিশোররা বড় হচ্ছে। এদের ভালো মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার বিষয় আপনার সুচিন্তিত অভিমত কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ একটি শিশুর শিক্ষার সূচনা হয় তার পরিবার থেকেই। প্রাথমিকভাবে শিশুদের নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার পাঠ তার পরিবারের মাধ্যমেই শুরু হয়। সত্য বলা, কর্তব্যবোধ ও শৃঙ্খলাপরায়ণতা, সৎকাজ করা, অনৈতিক ও মূল্যবোধ গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন, আত্মত্যাগের মনোভাব, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, সর্বোপরি দেশপ্রেম ও সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধ ইত্যাদি বিষয়ে একজন শিশুর প্রাথমিক পাঠ তার পরিবার থেকেই হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের অধিকাংশ পরিবারেই এখন আর এসব সুনীতির চর্চা হয় না।
একজন শিশু বা কিশোরের নৈতিকতা ও সুকুমার বৃত্তির অনুশীলনের ক্ষেত্রে পরিবারের পরই কার্যকর অবদান রাখতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। বাংলাদেশে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয় প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যথার্থ শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শিশুদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসহ সার্বিক দিক দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের উন্নত চরিত্র গঠনের উপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা অন্তত মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রসারিত করতে হবে। Education for All স্লোগানের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার সেই মানবিক স্তরেও পৌঁছে দিতে চাই।
বি ক্যাঃ মানব সম্পদ উন্নয়নে মূল ভিত্তি কী হওয়া উচিত? এ জন্য এ সময়ে আমাদের কিভাবে এগুতে হবে।
লায়ন সেলিমা রওশনঃ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো সুপ্ত মানবিক গুণাবলির সম্যক বিকাশ। এটি না হলে শিক্ষার উদ্দেশ্যই কেবল ব্যহত হবে না, নৈতিক গুণাবলি, মানবিকবোধ ও চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন মানবসম্পদও তৈরি হবে না। সামাজিক অবক্ষয় রোধ, সমাজ সভ্যতার বিকাশ, সর্বোপরি দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য এরূপ মানবসম্পদের প্রয়োজন এখন সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। তবে যে শিক্ষা মানুষকে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধে তাড়িত করে না, যে শিক্ষা মানুষে মানুষে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ তৈরি করে, ভালোবাসার পরিবর্তে ঘৃণাকে উসকে দিয়ে সহিংসতার প্রসার ঘটায়, এমন শিক্ষা সুশিক্ষা নয়। আর এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষও প্রকৃত নয়, বরং ‘তথাকথিত শিক্ষিত’। এরূপ শিক্ষিত মানুষ সমাজ-সংসার ও দেশের জন্য উপকারী নয়, বরং ক্ষতিকর। এরা শিক্ষিত বটে, তবে দুর্জন। আর দুর্জন শিক্ষিত হলেও পরিত্যাজ্য। বাংলাদেশ নামক যে স্বাধীন দেশটি আমরা পেয়েছি, এ দেশ অর্জনে ৩০ লাখ মানুষের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। এ দেশটিকে টেকসই উন্নতি এবং আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে দেশ থেকে দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচার দূর করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক চরিত্র বলে বলীয়ান, মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানবসম্পদের। আর এ কারণেই এখন প্রয়োজন গুণগত ও মানবিক শিক্ষার প্রসারে মনোযোগী হওয়া।
বি ক্যাঃ আপনার সমগ্র জীবন কেন্দ্রিভূক্ত শিক্ষাকে নিয়ে। আমাদের দেশের শিক্ষা। যাদের দিয়ে এই শিক্ষা, তারা হলেন-শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক। এদের দিয়ে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ শিক্ষা হলো একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, একজন অনুপ্রাণিত ছাত্র এবং একজন উদ্যমী অভিভাবকের মিলিত প্রতিশ্রুতির সমন্বয়। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দেন, একজন শিক্ষক সে সন্তানকে যোগ্যতর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। একজন আদর্শ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর কাছে দার্শনিকের মতো। শুধু পাঠদানই নয়, শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও তাদের মধ্যে মানবিক দিকগুলোকে উদীপ্তকরণে একজন শিক্ষক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। একজন শিক্ষকের জীবন শিক্ষার্থীদের সামনে খোলা বইয়ের মতো। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা বই পড়ে যেমন জ্ঞানার্জন করে, তেমনি একজন নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন আদর্শ শিক্ষকের জীবনদৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একজন শিক্ষার্থী নীতিনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তাই একজন প্রকৃত শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়মিতভাবে সেসব শিক্ষা দেবেন, যা তার মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরিতে সহায়তা করবে। তবে এ কথা সত্য যে, আজকাল শিক্ষার্থীদের সামনে অনুকরণীয় হওয়ার মতো শিক্ষকেরও অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকে আবার শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের বিষয়ে তাদের কোনো চেষ্টা বা উদ্যোগ নেই। অথচ চিত্তবিকাশ না ঘটলে, ভালো ও মন্দের বিচারবোধ তৈরি না হলে কারও পক্ষে যথার্থ শিক্ষিত হওয়া সম্ভব নয়।
বি ক্যাঃ বিএসবি ফাউন্ডেশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের শিক্ষাঙ্গনে ঈর্ষণীয়ভাবে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। বিশেষ করে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের। এই প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যত কার্যক্রম নিয়ে কোন পরিকল্পনা আছে কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ ক্যামব্রিয়ান হচ্ছে শিক্ষার এক স্বপ্নের ঠিকানা। ক্যামব্রিয়ান তার শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজে স্বপ্ন দেখে এবং অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে সহযোগিতা করে। যেমন লেসন প্লান, একাডেমিক ক্যালেন্ডার, নোট গাইড, ডিজিটাল কন্টেন্ট, ক্যামব্রিয়ানের নিজস্ব পাঠদান পদ্ধতি, স্মার্টবোর্ডসহ আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদানে বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত এসব সুযোগ-সুবিধা ক্যামব্রিয়ান থেকে গ্রহণ করছে যা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যাশা করা যায় না।
আমরা প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডে একটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছি। এর উদ্দেশ্য আরো বেশি করে আদর্শ মেধাবী এবং গ্রামীণ ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপের মাধ্যমে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি সেতুবন্ধন তৈরির ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ক্যামব্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এটা এখন সময়ের দাবি। আমাদের এ ব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি সুসম্পন্ন।
২০০৪ সালে ক্যামব্রিয়ান কলেজ প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার ক্ষেত্রে ক্যামব্রিয়ানের অনেক শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি লাভ করেছে। ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের আওতায় প্রায় ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ক্যামব্রিয়ান ওঝঙ সার্টিফিকেটধারী একটি প্রতিষ্ঠান এবং ASIC, UK কর্তৃক স্বীকৃতি (প্রিমিয়ার স্ট্যাটাস) প্রতিষ্ঠান।
ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ) ছাড়া এই গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কিংস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেট্রোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইনসাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নর্থ সিটি কলেজ, ক্যামব্রিয়ান ইন্টা. কলেজ অব এভিয়েশন, ক্যামব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টার, আরাবি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মাদ্রাসাতু ছালেহা খাতুন, ক্যামব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ সেন্টার, ক্যামব্রিয়ান কালচারাল একাডেমি ইত্যাদি।
বি ক্যাঃ ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দেশের শিক্ষাঙ্গনে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। এই দাবীর পেছনে যৌক্তিক কোন কারণ আছে কী? আপনার অভিমত কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ দেশের শিক্ষাঙ্গনে এক নন্দিত নাম। আদর্শ, আধুনিক, ফলাফল, যুগোপযোগি এডুকেশন টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ক্যামব্রিয়ানকে এগিয়ে রাখতে হবে। ক্যামব্রিয়ানের শ্রেষ্ঠত্বের নেপথ্যে বহুবিধ কারণ অন্তর্নিহিত। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় টপ টেনে ক্যামব্রিয়ানের অবস্থান। বহুবিধ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম ছাত্র ঃ শিক্ষক অনুপাত ১০ঃ১, ৩০ থেকে ৪০ জনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট ক্লাস রুম। কোচিং-এর পরিবর্তে ঝঝচ সুবিধা, ইঘঈঈ, স্কাউট ও খেলাধুলার অংশগ্রহণের সুযোগ, ১০১টি শিক্ষা উপকরণ ফ্রি এবং উচ্চশিক্ষায় বিএসবি ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ও ভিসা সাপোর্ট ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে পাঠদান, অভিজ্ঞ ও নিবেদিত শিক্ষকম-লী, বাংলা ও ইংরেজিতে পাঠদান, ক্লাসে আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার, গাইড ও শ্রেণি শিক্ষকের নিবিড় পরিচর্যা, নিয়মিত অভিভাবক সভা, ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং কম্পিউটার ল্যাব, ইন্টারনেট ও স্মার্ট ক্লাসরুম ব্যবহারের সুবিধা।
আরো রয়েছে ডিবেট, ল্যাংগুয়েজ, আবৃত্তি ও বিজ্ঞান ক্লাবে অংশগ্রহণের সুযোগ। ক্যামব্রিয়ান একাডেমির মাধ্যমে নাচ, গান, আবৃত্তি, অংকন ও অভিনয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বিশেষ সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ, হোম টিচিং সাপোর্ট, গাইড টিচার সাপোর্ট, হোস্টেল ও ট্রান্সপোর্ট সাপোর্ট ইত্যাদি। এসব কারণে অভিভাবকদের কাছে ক্যামব্রিয়ান প্রিয় কলেজ এবং শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।
বি ক্যাঃ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্যামব্রিয়ানের রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। বাস্তবে কি তাই? ক্যামব্রিয়ানকে নিয়ে এমনটি ভাবার যৌক্তিক কোন কারণ আছে কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্যামব্রিয়ান ইতোমধ্যে শিক্ষাঙ্গনে খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রথম ডিজিটাল ক্যাম্পাস হিসেবে দাবীদার ক্যামব্রিয়ান। দেশের স্মার্ট ক্লাস রুম প্রবর্তনে ক্যামব্রিয়ান প্রথম। এভাবে আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহারে শিক্ষাঙ্গনে ক্যামব্রিয়ান এখনো অগ্রগামী।
স্মার্টবোর্ড, স্মার্ট ক্লাস রুম, ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট ব্যবহার, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির জন্য ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবহার, হেলথ কার্ড, স্মার্টওয়াচ, স্মার্ট জঋওউ কার্ড প্রদান (যা বাংলাদেশে প্রথম) করা হয়। এভাবে ক্যামব্রিয়ান শিক্ষা ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
বি ক্যাঃ বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তি, ভিসা সাপোর্ট স্কলারশিপ ইত্যাদি বিষয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর যাবৎ বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক আমাদের দেশের শিক্ষার্থীর দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছে। এই দীর্ঘ পথযাত্রায় আপনিও একজন নিবেদিত বিএসবি’র ভাইস-চেয়ারম্যান। ২৭ বছরের এই দীর্ঘ কার্যক্রমকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, দীর্ঘ ২৭ বর্ষ ধরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করে আসছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গনে উচ্চশিক্ষার পথকে সুগম করতে ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ২৭বছর যাবৎ বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ৭০,০০০ শিক্ষার্থীকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামের ৩০০ এর অধিক বিষয়ে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছে।
বিএসবি গ্লোবাল নেটওর্য়াক উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর যেসব শিক্ষার্থী দেশের পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারে না, তাদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে বিদেশের ভালো ভালো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। যারা দরিদ্র কিন্তু মেধাবী, এমন শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছে। বিএসবি শুধু নিজের লাভই দেখে না, শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নও দেখে। সে লক্ষ্যে সুদীর্ঘ ২৭ বছর যাবৎ বিএসবি কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও কাজ করে যাবে ইনশাল্লাহ।
বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাইকে সমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে। তাই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকবৃন্দ বিএসবি’র উপর নির্ভর করেন। এভাবেই বিএসবি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বে তারা বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রেখেছে। বিএসবি চ্যালেঞ্জকে ভয় পায় না। তারা চ্যালেঞ্জকে মনে করে ‘নেক্সট অপরচুনিটি’। বিএসবি ২৭ বছরের পথ চলায় অনেক মহৎপ্রাণ মানুষের সান্নিধ্যলাভে ধন্য হয়েছে। তাদেরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো একান্ত কর্তব্য।
বি ক্যাঃ বিএসবি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার পিএমজেএফ। তিনি একজন দেশের বরেণ্য শিক্ষা সংস্কারও আধুনিক শিক্ষার একজন প্রবক্তা। তাঁর সম্পর্কে আপনার অভিমত বা মূল্যায়ন কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ বিএসবি’র কর্ণধার লায়ন বাশার এমন একজন মানুষ, যিনি ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েও স্বপ্ন দেখতে পারেন। তিনি একজন দিকনির্দেশক, একজন সাহসী মানুষ। সাহসী মানুষের নেতৃত্বের গুণে আজ বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ২৭ বছর পূর্তি উদযাপন করতে পারছে। তিনি সব সময় দেশের শিক্ষা উন্নয়ন, শিক্ষার প্রযুক্তি ব্যবহার এবং দেশের শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর সেরা অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতা ব্যবহার করে থাকে। আমরা আশা করবো, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং এর শতবর্ষপূর্তিও একদিন হবে। এজন্য আমরা সবার সহযোগিতা এবং দোয়া চাই। আমরা যেন সবার সহযোগিতা এবং দোয়া নিয়ে আগামী দিনগুলোতে সফলতার আরও উচ্চ শিখরে উঠতে পারি। আমরা লায়ন বাশারের জন্য আপনাদের দোয়া চাই, যেন তিনি সুস্থ দেহে সুস্থ মনে দেশ ও জাতি গঠনের কাজ করতে পারেন, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এবং ক্যামব্রিয়ানসহ সকল মাধ্যমে।
বি ক্যাঃ আমরা জানি, দেশের সুবিধাবঞ্চিত অর্থাৎ প্রান্তিক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষে শিক্ষা নিয়ে আপনার এবং জনাব লায়ন এম কে বাশার স্যারের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে জানাবেন কী?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ শিক্ষার অগ্রদূত লায়ন এম কে বাশার দেশকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপ। রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের পর বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের ফাউন্ডার লায়ন এম কে বাশার তাঁর শিক্ষা-উদ্যোগের উদারহস্ত প্রসারিত করেছেন নিজ গ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়ার দরুইনে যে গ্রামের কাছে তাঁর জন্মঋণ। সেই ঋণ শোধ করার একটি মহৎ প্রয়াস তিনি চালিয়েছেন দরুইন গ্রামে ক্যামব্রিয়ান কলেজ, আখাউড়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
দরুইন গ্রামে বিশ্বমানের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-হাসপাতাল ও পাঁচ তারকা হোটেলসহ অত্যাধুনিক নাগরিক সুবিধা সংবলিত সবকিছু প্রতিষ্ঠার দূরদর্শী লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২৫০ বিঘা জায়গা জুড়ে পরিবেশ-বান্ধব সুপরিকল্পিত এডুকেশন সিটি গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশে ডিজিটাল শিক্ষার স্বপ্নদ্রষ্টা লায়ন এম কে বাশার।
সবুজ-শ্যামল-শস্যে ঘেরা ২৫০ বিঘা জায়গার বিশাল প্রান্তরে লায়ন বাশার ইতোমধ্যে গড়ে তুলেছেন মৎস্য খামার, সুবিশাল কলাবাগানসহ নানা ধরণের প্রাকৃতিক ও পরিবেশ-বান্ধব প্রকল্প। অদূর ভবিষ্যতে তিনি দরুইন গ্রামকে একটি হাই-টেক ডিজিটাল এডুকেশন সিটিতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
এডুকেশন সিটির চারদিকে থাকবে পানির লেক। মাঝখানে থাকবে দরুইন এডুকেশন সিটি। সেখানে থাকবে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। জলবেষ্টিত এই এডুকেশন সিটি হবে স্বনির্ভর। এর একদিকে যেমন বিভিন্ন ফল-ফসল ও মাছের চাষ হবে, অন্যদিকে জলবেষ্টিত নগরীতে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করবে দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীরা।
বি ক্যাঃ আধুনিক শিক্ষার প্রবক্তা লায়ন এম.কে বাশার স্যারের মহা পরিকল্পনার সঙ্গে আপনি কিভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন?
লায়ন সেলিমা রওশনঃ দরুইন গ্রামে ক্যামব্রিয়ান কলেজ, আখাউড়া স্থাপনে আমি লায়ন বাশারকে নিরন্তর উৎসাহ জুগিয়েছি। লায়ন বাশারের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো তাঁর নিজ এলাকা দরুইন গ্রামে ক্যামব্রিয়ান কলেজের একটি শাখা স্থাপনের। যে শাখায় তাঁর এলাকার এসএসসি পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ সার্থক হলো। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ক্যামব্রিয়ান কলেজ সফলতার সাথে ডিজিটাল সিস্টেমে স্মার্ট ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করে শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। সেই সফলতা এই দরুইন গ্রামের ক্যামব্রিয়ান কলেজের শাখা থেকেও অর্জিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমাদের প্রত্যাশা
আমাদের প্রত্যাশা লায়নিজম এবং ক্যামব্রিয়ান এর কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্ত-মানবতার সেবা ও প্রকৃত শিক্ষা বিস্তারের যে সেতুবন্ধন রচনা করেছেন লায়ন সেলিমা রওশন, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের সেবা করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ খুঁজে পান এই মহীয়সী নারী। তাঁকে অনায়াসেই এ যুগের নারী কল্যাণের নেত্রী বলা যায়। যিনি সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান প্রকৃত শিক্ষার আলো। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন, এই দেশকে উন্নয়নের শীর্ষ চূড়ায় পৌছানোর একমাত্র চাবিকাঠিই হচ্ছে শিক্ষা। তাই লায়ন গভর্নর হিসেবে তাঁর দীপ্ত শপথ Education for All শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের মনে জাগিয়েছে আশার প্রদীপ। বিশ্বাস রাখা যায়- অশিক্ষার অন্ধকারে আর পথ হারাবে না বাংলাদেশ। লায়ন সেলিমা রওশনের পথ ধরে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সামিল হোক আরো শতপ্রাণ, তাঁর প্রতি আমাদের এই প্রত্যাশা রইলো।