বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর ১২তম চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, প্রাজ্ঞ-অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট অধ্যাপক আবদুল মান্নান। আগামী চার বছরের জন্য তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৬ মে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য মোঃ আবদুল হামিদ এ নিয়োগাদেশে স্বাক্ষর করেন। এরপর বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। ৭ মে নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা অধ্যাপক মান্নান দেশের একজন জনপ্রিয় কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
অধ্যাপক আবদুল মান্নানের বাবা আবদুস সালাম, মা সালেমা খাতুন। লেখাপড়া চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সেন্ট প্লাসিডস হাইস্কুল, সরকারি কমার্স কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জীবনের প্রত্যেকটি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৩ সালের ৬ আগস্ট তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৃত্তি নিয়ে সে দেশে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে যান। তিনি হাওয়াই, মায়ামি, অক্সফোর্ড, ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ফিরে এসে পুনরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীকালে অধ্যাপক মান্নান ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি, অনুষদের ডিন এবং সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, বোর্ড অব এ্যাডভান্সড স্টাডিস এবং ফাইনান্স কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকের ফেলোশিপ নিয়ে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর উচ্চতর গবেষণা করেন। ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক মান্নান নেদারল্যান্ডস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে রটারডামে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল ফেলোশিপের অধীনে চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উচ্চশিক্ষা প্রশাসন’ এর ওপরও বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি পরপর দু’বার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, একবার সভাপতি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এই পদে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়কালে তিনি স্ট্যান্ডিং কমিটি অব ভাইস-চ্যান্সেলরস ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি লন্ডনের এ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজেস এর নির্বাহী সদস্য ছিলেন। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের খ-কালীন সদস্য। প্রফেসর আবদুল মান্নান সার্ক চার্টার প্রাপ্ত এ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউশন ইন সাউথ ইস্ট এশিয়ার একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাছাড়া তিনি শামসুল হক শিক্ষা কমিশনেরও সদস্য ছিলেন। তাঁর অধ্যয়ন ও গবেষণার বিষয় হচ্ছে কৌশলগত ব্যবস্থাপনা। তার ত্রিশটির মতো আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রকাশনা রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়টি। বর্তমানে তিনি দেশে ও দেশের বাইরে ছ’টি জাতীয় দৈনিকে সমসাময়িক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে লেখালেখি করছেন।
তাঁর একমাত্র সন্তান ফারজানা মান্নান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রফেসর আবদুল মান্নানের গৌরবোজ্জ্বল দায়িত্বলাভে অভিনন্দন জানাতে তাঁর মুখোমুখি হন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। এ সময়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান তাঁর এ দায়িত্বলাভের অনুভূতি ব্যক্ত করার পাশাপাশি কথা বলেন উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণ, উচ্চশিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে। তাঁদের সে আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে এখানে সন্নিবেশিত হলো।
প্রফেসর আবদুল মান্নান তাঁর নতুন দায়িত্বলাভের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন ইউজিসি উচ্চশিক্ষার কোনো প্রতিষ্ঠান নয়; এ প্রতিষ্ঠান দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা প্রসারে সহায়তা করে। এটি কোনো পুলিশি প্রতিষ্ঠান নয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কর্মকান্ড সুচারুরূপে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা, মানসম্মত শিক্ষা বজায় রাখছে কিনা, কোথাও কোনো অনিয়ম হচ্ছে কিনা ইউজিসি তা পর্যবেক্ষণ করে, সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। সরকার ইউজিসি’র জন্য যেমনি আইন প্রণয়ন করেছে; তেমনি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও রয়েছে আলাদা আইন বা নীতিমালা। প্রত্যেকে সুষ্ঠুভাবে সেই আইন ও নীতিমালা অনুসরণ করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও নীতিমালা লংঘনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। পুরোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালিত করছে। নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে এখানেও দক্ষ শিক্ষা প্রশাসক ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে তারা দ্রুত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। কেউ কেউ অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে আইন-কানুনগুলো অনুসরণ করে না, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সঠিকভাবে পরামর্শ দেয়া। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ব্যত্যয় ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন তা পয়েন্ট আউট করে এবং তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দেয়। তবে আইন বা নীতিমালা লংঘন হলে তা মন্ত্রণালয়কে অবগত করে ইউজিসি।
তিনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যদি একাডেমিক ফ্রিডম না থাকে, তাহলে তারা তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে না। এজন্য ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হয়েছিল। আবার সরকারের সাথে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অর্থমঞ্জুরী কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে সরাসরি যোগাযোগ করতে না হয়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন গঠিত হয়; যার মাধ্যমে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত হয়।
তিনি আরও বলেন ৮৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের মঞ্জুরী বা অনুদান না পেলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অধীন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের অনেকেই সরকারের আইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নীতিমালা মেনে চলেন না; কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছামতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, যা আর চলতে দেয়া যায় না। এজন্য সরকার আইন প্রয়োগে কঠোরতা দেখাতে বাধ্য হবে।
প্রফেসর আবদুল মান্নান আরও বলেন বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে, সেইসাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বেড়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি সরকারি এবং ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। এদেরকে কোয়ালিটি শিক্ষা দিতে পারলে এরা দেশের সম্পদে পরিণত হবে, সাথে সাথে তারা বিদেশে কর্মসংস্থানের যোগ্য হয়ে বিশ্বের সম্পদেও পরিণত হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে প্রফেসর মান্নান বলেন আমাদের দেশে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ হয়, তারা বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন, তারা তাদের দেশ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির লোকজন নিয়ে আসেন। অথচ স্থানীয়ভাবে আমরা যদি এ চাহিদা পূরণ করতে পারি, তাহলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি স্থানীয় কর্মক্ষম লোকেরও কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীই তৈরি করে না, সেখানে দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষকও গড়ে ওঠে, শিক্ষকদের শিক্ষামানও বিশ্বমানের দিকে এগিয়ে গেলে আমরা বলতে পারব আমাদের শিক্ষামান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গেছে। এজন্য আমাদেরকে তৃণমূল থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রাইমারিতে যদি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী কে সরবরাহ করবে?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় মঞ্জুরী কমিশন কী ভূমিকা রাখতে পারে এমন প্রশ্নে দূরদর্শী শিক্ষাবিদ প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক মঞ্জুরী কমিশন চায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুচারুরূপে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করুক। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের আধার, এখান থেকে জ্ঞান বিতরণ হবে শিক্ষার্থীদের মাঝে, তা ছড়িয়ে পড়বে দেশের সকল অঙ্গনে এমনকি দেশের বাইরেও। পাঠদান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রাথমিক কাজ; এর বাইরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো গবেষণা কার্যক্রম। এটি না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় নাম ধারণের যোগ্যতাও তার থাকে না। নিত্য-নতুন গবেষণার উৎকর্ষে দেশ এগিয়ে যাবে, মানসম্পন্ন শিক্ষা দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে এটিই সকলের কামনা। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মানকে কি এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি? কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় সময়োপযোগী ও যুগের চাহিদা অনুযায়ী গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে? ১৬কোটি মানুষের দেশে ৩০ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত আমরা এমন একটি দেশে কি মেধাবী শিক্ষক তৈরি করতে, গুণগত মানের শিক্ষা প্রচলন করতে পারি না? নিশ্চয় পারব, আমাদের পারতেই হবে।
দেশের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কী ব্যবস্থা নেয়া দরকার এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ চারশ’ বছর কার্যক্রম পরিচালনা করে বর্তমান অবস্থানে এসেছে; সেখানে মাত্র ৯৪ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান কম নয়। মান রাতারাতি গড়ে উঠবে না, তবে তার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষাকে আপডেট করতে হলে শিক্ষকের নিজেকে আপডেট করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস, কারিকুলামে সর্বশেষ তথ্য সন্নিবেশ করতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তির বর্তমান যুগ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, নিত্য-নতুন তথ্য আসছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যা ছাত্র-তরুণদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার যা ব্যয় করেন তা দেশের সর্বত্র সমভাবে পৌঁছে না; গ্রামের অনেক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই, তাদের অগ্রগতি মন্থর। আমাদের দেশে অনেক শিল্পপতি আছেন যারা শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার ইউজিসি’র মাধ্যমে যে বরাদ্দ দেয়, তার সিংহভাগই প্রশাসনিক খাতে ব্যয় হয়। ফলে গবেষণা খাতে খরচ হয় যৎসামান্য অর্থ। গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষান্নোয়নে নিবেদিতপ্রাণ প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যদিকের খরচ কাটছাট করে হলেও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, যার বিকল্প নাই। আমাদের সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার, এবারকার বাজেটে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। একসময় কৃষিতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হতো, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয় সেই বরাদ্দের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ, তারা বিদেশে খাদ্য রপ্তানিও করছে। অনুরূপভাবে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলে প্রাথমিক শিক্ষার মজবুত অবস্থা তৈরি, কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা পরিচালনা করে দেশকে দ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। এজন্য সরকারকে গবেষণাক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সরকারি বেসরকারি দু’ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
সবার জন্য উচ্চশিক্ষা, এ মতের সাথে আপনি কি একমত? যদি না হয়, তাহলে কেন এমন প্রশ্নে প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞ শিক্ষাবিদ প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, উচ্চশিক্ষার সংজ্ঞা বিভিন্ন রকম হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পড়ালেখাকে উচ্চশক্ষা বলা যেতে পারে। উন্নত দেশে দ্বাদশ শ্রেণির পর মেধানুযায়ী নির্বাচন করা হয় শিক্ষার্থীরা কোন্ দিকে অগ্রসর হবে। যদি শিক্ষার্থী তুলনামূলকভাবে কম মেধাসম্পন্ন হয় এবং দ্রুত অর্থ উপার্জন করার প্রয়োজনীয়তা থাকে, তবে তাকে কারিগরি শিক্ষা বেছে নিতে উৎসাহিত করা হয়। আর যারা জ্ঞান-বুদ্ধির বিকাশ তথা পান্ডিত্য অর্জন করতে চায় তাদের ফিলসফি বা দর্শন, ইতিহাস এসব বিষয় বেছে নিতে উৎসাহিত করা হয়। বিজ্ঞান বিষয়ে যারা আগ্রহী তারা ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি ইত্যাদি বিষয় বেছে নেয়। আমাদের শিক্ষা নিয়ে নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত আমাদের কত ডাক্তার, কত ইঞ্জিনিয়ার, কত টেকনিশিয়ান দরকার। সে হিসাবে প্রতি দশ বছর পর্যন্ত কত দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হবে, তা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিগ্রি প্রদান করলে আমাদের দক্ষ লোকবল সংকটে পড়তে হবে না।
কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ঘোষিত আইন বা নীতিমালা মানছে না, এদেরকে কিভাবে আইনের মধ্যে আনা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে কল্যাণকামী শিক্ষাব্রতী প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, এ সমস্যা অনেক পুরোনো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন আইন অমান্যকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আইনের আওতায় আসতে, নীতিমালা মেনে চলার সুযোগ দিয়েছে, এদের মধ্যে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সাড়া দিয়েছে, বাকিরা কোর্টে রিট করে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা খারিজ করানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতেও এ ধরনের ১৮টি মামলা ছিল, যার মধ্যে ১৫টির নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে নিজ পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে ছাত্রবৎসল দরদী শিক্ষক প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি সম্ভাবনাময় দেশ; এদেশকে দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে পরিচালনার জন্য ছাত্র-তরুণদের নিজেদেরকে দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে খেয়াল করতে হবে শিক্ষার বিকল্প নেই, মেধা বিকাশের বিকল্প নেই। মেধার লালন করে তার যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।